somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনেকদিন ধরেই একটা মন কেমন ও মাতাল করা ঘন ঘোর বরিষণে , এই ধরনের একটা মুভি দেখতে ইচ্ছে করে যা হৃদয় বীণার তন্ত্রীতে নিখাদ ,গভীর , মায়াময় ও খেপাটে জলতরঙ্গের সৃষ্টি করবে ...

০৩ রা মার্চ, ২০১৭ দুপুর ২:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মুভি রিভিউ ::: জাতিস্মর

আপনি হয়তো এক্ষেত্রে আমাকে বিশ্বাস করবেন , খুব ছোট্ট একটা ঘটনা ,গান ,কয়েক ছত্র লেখা , কবিতা বা মুভির কয়েকটি খন্ডদৃশ্য আপনার হৃদয়তন্ত্রীতে হয়তো নেহায়েত আচমকাই জোর আন্দোলন তুলে দিল। আপনাকে মাতাল করে দিল আর আপনি হয়তো সুদীর্ঘ একটা সময় ধরে সেই ভালোলাগার মুহূর্তগুলোর স্মৃতি রোমন্থন করতে চাইবেন ।

মুভি দেখা আমার হবি নয় । আমার অনুর্বর মস্তিষ্কের জট ছাড়াতে গোটা পচিশেক মুভি নিয়ে বসলাম তিনদিনেই একসাথে দেখবো বলে । বুঝুন !! মেরেকেটে , টেনেটুনে এই মুভিৎসব ভালোই চলছিল। বেশিরভাগই মিডিওকোর । তবে, একটা মুভিতে গিয়েই আটকে গেলাম । ট্রাস্ট মি , ফরোয়ার্ড করতে গিয়েও পারছিলাম না । বিমোহিত, নির্নিমেষ নয়নে টানা দেখতে বাধ্য হয়েছি সৃজিত মুখারজির ' জাতিস্মর'।

আর নিজেকে কোনভাবেই দমাতে পারছিলাম না , অভাজনের হৃদয় ঝঙ্কারের শব্দ আপনাদের ও একটু শোনাতে !! তায় এই ভক্তিভরা নিবেদন ...:-)

জাতিস্মর ২০১৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত, বহুল আলোচিত ও ৪টি ক্যাটাগরিতে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ।কাস্টিং : প্রসেঞ্জিত , যীশু ও স্বস্তিকা । এর আঠারোশ শতকের পটভুমিতে নির্মিত কবিয়াল গানের লড়াইয়ের চলচিত্রের দৃশ্যায়ন এতোটা দৃষ্টিমধুর ও অপার্থিব হতে পারে ভাবা যায়না ! কাহিনীর বুনটটা এবার একটু শোনাই , যেটা বর্তমান ও অতীত এই দুঅধ্যায়ে বিভক্ত :::

হ্যান্সম্যান অ্যান্টনি (জন্ম:১৭৮৬ - মৃত্যু:১৮৩৬)। একজন পর্তুগীজ হয়েও তিনি বাংলা কবিগানের জন্য বিখ্যাত ছিলেন । ১৮শতকের প্রথম দিকে বাংলাতে এসে বসবাস শুরু করেন ও সৌদামিনি নামক এক হিন্দু ব্রাহ্মন মহিলাকে সতীদাহ হওয়ার থেকে উদ্ধার করে বিয়ে করেন। অ্যান্টনি ৫টি স্তরে বিভক্ত কবিয়াল লড়াইয়ে অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের হারিয়ে স্বমহিমায় অধিষ্ঠিত হন ও একসময় দুর্গাপূজা করার প্রস্তুতি নেন।কিন্তু গ্রামবাসী তা মেনে নেয়না কারণ সে একজন ফিরিঙ্গি এবং তার হিন্দুদের দুর্গাপূজা করার কোন অধিকার নেই। একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে গেলে ধর্মান্ধ গ্রামবাসী এন্টোনির বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিলে স্থাবর সম্পত্তিসহ সৌদামিনী পুড়ে মারা যায় । এরপরে এই বিখ্যাত কবিয়ালের জীবনটাই এলোমেলো হয়ে যায় ও একসময় ঋণগ্রস্থ হয়ে তিনি লোকান্তরিত হন ।

টুইস্টেড কাহিনীর অন্য অংশটি বর্তমান সময় নিয়ে , যেখানে ড্যাম স্মার্ট ভার্সিটি পড়ুয়া স্বস্তিকা বাংলাপূজারী ।গুজরাটি ছেলে যীশু যে ভালো করে বাংলায় একটা শব্দও বলতে পারেনা প্রেমের অফার দিলে অত্যন্ত রূঢ়ভাবে স্বস্তিকা দ্বারা অপমানিত ও প্রত্যাখ্যাত হয়ে হিস্ট্রিতে হায়ার স্টাডিজ করতে পর্তুগীজ যায় ।

দুবছর পর অ্যান্টনির ওপর থিসিস করতে পশ্চিমবঙ্গে এলে কোর্স রেফারেন্স জোগাড় করতে লাইব্রেরীতে গেলে সে দেখে এসিসট্যাঁন্ট লাইব্রেরিয়ান কুশলরুপী প্রসেঞ্জিত একজন অদ্ভুত মানুষ, যিনি নিজেকে অ্যান্টনির পুনর্জন্মকারী বলে দাবি করেন। কুশল বিলাপ করে বলে যে , আগের জন্মের দৃশ্য তাকে হামেশাই তাড়া করে বেড়ায় এবং ধীরে ধীরে বর্তমান জীবনের স্মৃতি কেড়ে নিচ্ছে।

এরপর ফ্ল্যাশব্যাকে কুশলের মুখ দিয়ে অ্যান্টনির জীবনের বিভিন্ন ফেজগুলো রূপায়িত হতে দেখা যায় যা আমি আগেই বলেছি। এদিকে এই দুবছরে যীশু প্র্যাকটিস করে চোস্ত বাংলা আয়ত্ব করে আর একটা মিউজিক কম্পিটিশনে কবীর সুমনের সঙ্গীতআয়োজনে একটি বিখ্যাত বাংলা গান পরিবেশন করে , যেখানে রেডিও জকি স্বস্তিকা ছিল প্রোগ্রামটির অরগানাইজারের একজন প্রতিনিধি । যীশুর সত্যিকার ভালোবাসা আর ডেডিকেশন স্বস্তিকাকে অনুতপ্ত করায় আর ওর কাছে আবার ফিরিয়ে আনে।

এতো জটিল একটা কাহিনী , পুনর্জন্মের কনসেপ্ট , দুশ বছর আগের কবিয়াল লড়াই ভিজুয়ালাইজ করা, যীশুর মৌন কিন্তু তেজস্বী ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ আর দমে না গিয়ে তিল তিল করে ভালোবাসার মানুষের সামনে নিজেকে প্রেজেন্ট্যাবল করা , প্রসেঞ্জিতের অ্যান্টনি ও জাতিস্মর কুশলের উভয় ভুমিকায় রোল প্লে যার কিনা পূর্বজন্মের মেমোরি বারবার রিকল হতে গিয়ে পুরো জীবননাটাইয়ের সুতো ছিঁড়ে যায়, এই প্রত্যেকটা সুক্ষ বিষয় বিশ্বাসযোগ্যভাবে সেলুলয়েডের পর্দায় উপস্থাপন কতটা দুরূহ তা পাঠকমাত্রেই নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন ।

ছবির পাত্র-পাত্রীরা সফল তাই সৃজিত অত্যন্ত মুন্সিয়ানার সাথে একটা ইতিহাসকে সার্থকভাবে আমাদের সামনে তুলে ধরতে পেরেছেন ।

শেষ পাতে কড়া পাকের সন্দেশ হিসেবে ছিল , কবিয়াল যজ্ঞেস্বরীর ভূমিকায় অনন্যা চ্যাটারজির অনবদ্য অভিনয় । ৩ মিনিটের একটি গানে স্বল্প সময়ের উপস্থিতি হলেও আমার বিশ্বাস আপনার হৃদয়ে তা গভীর জলতরঙ্গের সৃষ্টি করবেই । জয়তু সৃজিত , জয়তু এই ফিল্ম সংশ্লিষ্ট সব্বাই ... হুম , সব্বাই , এই নেহায়েত ধন্যবাদটুকু আপনাদের পাওনা ।

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১৭ দুপুর ২:৩৮
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×