somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জননেত্রী শেখ হাসিনা- আপনি তো কবি বোঝেন, গায়ক বোঝেন, লেখক বোঝেন, সান্তাল বোঝেন না?

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দারুণ এক পূর্ণ চাঁদের নীচে একদল বাড়িঘর হারানো ক্ষুধার্ত সান্তাল, আপনজনদের হারিয়েও তারা মন শক্ত করে বসে আছে। এবারের সংগ্রাম তাদের ভিটেমাটি ফিরে পাবার সংগ্রাম। যে শিশুটা না ক্ষেতে পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে মাকে ধরে খোলা আকাশের নীচে ঘুমিয়ে পড়েছে- তাদের দিকে তাকিয়ে দেখ বাঙলাদেশ, ওরাই তোমার ভূমিপুত্র- প্রান্তিক সন্তান; যারা তাদের অধিকার হারিয়েছে।
১৯৬২ সালে যখন সরকার ওদের জমি চিনিকলের নামে যেকোন সময় জমি ফিরিয়ে দেবার মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে অধিগ্রহণ করলো, তখন থেকে বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ভেসে বেড়াচ্ছে ওরা। নিজের বলতে কিছু নেই ঐ পুরোনো ভিটে-মটি ছাড়া। সরকারকে ভগবান মানে, তাই বার বার ঠকেও সরকারের কাছে ফিরে যায় অধিকার বুঝে নেবার দাবীতে।

দেশ স্বাধীন হলো, কত সরকার এলো গেল, কিন্তু ভগবান মুখ ফিরে তাকান না। সব সরকার অনেক রকম কথা দেয়, নির্বাচনের পর আবার সবাই তাদের প্রতিশ্রুতি জলান্জ্ঞলী দেয়, যেন এমনটাই হবে, এমনইতো কথা ছিল।
কিন্তু কিছুকাল আগে শাহজান আলী নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি মামলায় জয়ী হয়ে অধিগ্রহণকৃত জমি ফেরত পান। এরপর সাঁওতালদের মধ্যে নতুন আশাবাদ সঞ্চার হয়। (- সূত্র: ব্লগপোষ্ট- মানুষের মেরুদন্ডযুক্ত মানুষ চাই- লেখক: সাংবাদিক পুলক ঘটক।)
দুই বছর ধরে সান্তালরা আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলন শুরু করে নতুন করে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করে বাঁচার আশায়।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ এলাকার ২০ গ্রামের (১৫টি সাঁওতাল পল্লী এবং ৫টি বাঙালি পল্লী) এক হাজার ৮৪২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল, সেই জমিতে আজ শুধু আঁখ চাষ হয় না। ২০০৪ সাল থেকে চিনিকল বন্ধ, আঁখের বদলে সেই জমিতে আজ কখনো তামাক চাষ হয়, কখনো বা ধান চাষ হয়। আর এসব জমিতে চাষের অধিকার সান্তালদের নেই। আছে চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল আউয়ালের, যিনি দীর্ঘকাল যাবৎ স্থানীয় এমপি, চেয়ারম্যান ও অন্যান্য ক্ষমতাধরদের সঙ্গে নিয়েই ঐ দখলকৃত সম্পত্তি সম্ভোগ করছিলেন। জমিতে চাষ ভরপুর চাষ হলেও সরকারের কোষাগারে সে আয় জমা হবার কোন হদিস পাওয়া যায় না।

ফিরে আসি ভোটের রাজনীতিতে। দুই বছর আগে গোবিন্দগন্জ্ঞ এলাকার এমপি সংসদ সদস্য আলহাজ্ব অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদের শ্যালক, ছাত্রলীগ নেতা শাকিল আলম বুলবুল এলাকার চেয়ারম্যান নির্বাচনে দাঁড়ায়। এই বুলবুল বনে যায় সান্তালদের নেতা। তার দেয়া সাহসেই সান্তালরা সাহেবগন্জ্ঞগ্রামে আবার পরিবার নিয়ে বসবাস করতে শুরু করে। আবারো তারা স্বপ্ন দেখে, নতুন করে ঘর তোলে, প্রয়োজনে ধারদেনাও করে। নির্বাচন শেষ, সব শেষ। ফুরিয়ে যায় সমস্ত দেয়া নেয়া। এবার শুরু হয় নতুন খেলা। সান্তালদের তথাকথিত নেতা বুলবুল এবার চলে যান সান্তালদের বিপক্ষে। কাটাবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রফিক, গোবিন্দগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল হান্নান , হেবগঞ্জ থানার ওসি সুব্রত কুমার সরকার, এরা যারা সেই ১৯৬২ সালে রংপুর চিনিকলের প্রয়োজনে অধিগ্রহণ করা জমির সম্ভোগ করছিলেন, তাদের অনুমতি ও সহযোগিতা নিয়েই সান্তালদের ঘরে আগুন দেয়, গুলি চালায় সান্তালদের ওপর। (সূত্র: ব্লগপোষ্ট- মানুষের মেরুদন্ডযুক্ত মানুষ চাই- লেখক: সাংবাদিক পুলক ঘটক।)

এক সময় পূর্ব পাকিস্তানে আমাদের ওপর গুলি চালানো হয়েছিল। আজ স্বাধীন দেশে আমরা আদিবাসী সান্তালদের উচ্ছেদে ও হত্যায় গর্বিত বাংলাদেশী। ভূমিপুত্ররা আমাদের কেউ না। ওদের রক্ত আমার হাতে। আমার রাষ্ট্র আদিবাসীদের অস্বীকার করে, আমার রাষ্ট্র সংখ্যালঘুদের উচ্ছেদ করে। সান্তাল পল্লীতে খাবার নাই, মায়েরা শিশুদের শামুক কুড়িয়ে খাওয়াচ্ছেন। হিন্দুদের ঘর নাই, মাথার ওপর চাল নাই। পুরো বাংলাদেশেই আসলে সংখ্যালঘুদের অবস্থা এমন। ১৪ নভেম্বর ওদের ঘরে আগুন দেয়া ইউএনও আব্দুল হান্নান সান্তালদের জন্য ২০ কেজি চালের নামে সরকারী সাহায্য নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন। তারা সেই মুখোশধারীর সরকারী সাহায্য ফিরিয়ে দিয়েছে। কারণ ওরা জানে, দানা ঢেলে আবারো ওদের ঠকাবে তারা।

এমন এক পরিস্থিতিতে একজন মানুষই এই ভূমিপুত্র সান্তালদের পাশে দাঁড়াতে পারেন। হ্যা, আমি গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথাই বলছি। একজন প্রধানমন্ত্রী শুধু তার দলের হয় না, হয় জনগণের। সান্তালরা আমাদের মানুষ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বিনীতভাবে অনুরোধ করি, ওদের জমি ফিরিয়ে দিন। ফিরিয়ে দিন, নিজের জমিতে চাষ করে ভাত খাবার অধিকার। একজন মানুষ হিসেবে এ পৃথিবীতে বাঁচার অধিকার।

জননেত্রী শেখ হাসিনা- আপনি তো কবি বোঝেন, গায়ক বোঝেন, লেখক বোঝেন, সান্তাল বোঝেন না?

ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা
১৫/১১/২০১৬
(সাংবাদিক, সমাজকর্মী, সমাজ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:০৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×