পিরিয়ড-মাসিক-ঋতুস্রাব নিয়ে কথা বললেই একপক্ষ মনে করেন আহা নিজেকে আধুনিক দেখানোর জন্য এখন গোপন বিষয় নিয়ে ফেসবুকে বা ব্লগে লেখা শুরু করেছে! ছ্যাঃ ছ্যাঃ!
বেশিরভাগ বন্ধু বিশেষত যারা নিজেদের রক্ষণশীল দেখিয়ে আনন্দ পান; তারা বলেন, আমাদেরও তো ঘরে মা-বোন ছিল, তাদেরও তো মাসিক হতো, কোনদিন এত আদিখ্যাতা করতে দেখিনি তো! বরং মাসিক হলে তারা একটু চুপচাপ আলাদা হয়ে যেতেন। মাসিক যেন খুব লজ্জার বা গোপন কিছু তাই তা যত লুকিয়ে রাখা যায়, ততই তার সম্ভ্রম রক্ষা পায়! আহা, আর এখনকার নারীদের দেখো, বেশরমের মতো প্যাড কিনছে আবার সবার সামনে বলছে, আমার মাসিক হয়েছে, বিরক্ত কম করো!
অথচ নারী শরীরে ঋতুস্রাব বা ঋতুচক্র না থাকলে মানুষের জন্মপ্রকিয়াটাই বন্ধ হয়ে যেত। এত যে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বড়াই তাই থাকতো না- পৃথিবীটা বন্ধ্যা হয়ে যেতো- যদি না নারী ঋতুস্রাবের আশীর্বাদে পূর্ণ্য হতো। ঋতুস্রাব হলে নারীদেহে স্বাভাবিক ব্যাপার হলেও - বেশিরভাগ নারীর ক্ষেত্রে মাসিক শুরুর প্রথম দিনটা ভয়াবহ। অসম্ভব ব্যাথা- এর বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। ঋতুস্রাব বা মাসিকের সময় তলপেটে কোনো ব্যাথা বা কষ্টদায়ক অনুভূতি হয় না, এমন নারীর সংখ্যা কম। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় এ ব্যাথার পরিমাণ যখন এমন হয় যে তা দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত করে, তখনই কেবল এটাকে অসুস্থতা বা ডিজমেনোরিয়া বলে গণ্য করা হয়।ডিজমেনোরিয়া দুই ধরনের প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি।
প্রাইমারি ডিজমেনোরিয়া:
সাধারণত ১৮ থেকে ২৪ বছরের তরুণীরা এতে বেশি ভোগেন। এর নির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা নেই, তবু কারণ হিসেবে কিছু বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়ে থাকে। যেমন, মাসিকের সময় ব্যথার প্রতি সংবেদনশীলতা বেড়ে যাওয়া, ঘরে-বাইরে অশান্তি, পরীক্ষার চাপ, বেকারত্ব, ভগ্নস্বাস্থ্য ইত্যাদি। এ ছাড়া গবেষণায় কিছু হরমোনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তবে অন্তত একবার গর্ভধারণ এবং স্বাভাবিক প্রসবের পর এ সমস্যাটি আপনা আপনি সেরে যায়। (সূত্র: হেলথবাংলা.কম)
সেকেন্ডারি ডিজমেনোরিয়া:
অনেক গাইনি রোগের কারণে মাসিকের সময় ব্যথা হতে পারে, যেমন-তলপেটের ইনফেকশন, জরায়ুর টিউমার, পলিপ, জন্মগত ত্রুটি ইত্যাদি। বিবিধ কারণ থাকায় মাসিকের সময় ব্যথার ধরনও ভিন্ন হয়ে থাকে। (সূত্র: হেলথবাংলা.কম)
ঋতুস্রাবে কর্মজীবী নারীদের জন্য প্রথমদিনে ছুটি ঘোষণা:
এখানেই শুরু হয়ে যাবে এক পক্ষের- তোমরা নারী-পুরুষ সমানিধিকার চাও আবার মাসিকের প্রথম দিনে ছুটি চাওয়া কেন ভাই?
সোজা উত্তর দিন, তুমি তাহলে তোমার শরীরে ঋতুস্রাব প্রক্রিয়া ঘটিয়ে ভবিষ্যতে একজন মা হওয়ার দায়িত্ব নাও- এবং ১০ মাস ১০ দিন গর্ভে ধারণ করার দায়িত্বখানা নাও, আমি আর ছুটি চাইবো না। তুমি যদি ব্যাথা নিয়ে কাজে আসতে পারো, তাহলে আমিও পারবো।
যেখানে সমাজ-সংস্কৃতি ও ধর্মে ঋতুস্রাব হওয়া মানে অচ্ছুত/অচ্ছৎ সেই ভারতে একটি মিডিয়া কোম্পানি তাদের মহিলা কর্মীদের জন্য মাসিক ঋতুস্রাবের প্রথম দিনে সবেতন ছুটি দেওয়ার নীতি ঘোষণা করেছে। 'কালচার মেশিন' নামে ওই সংস্থাটি বলছে, মাসিকের প্রথম দিনটি যে মেয়েদের জন্য শারীরিকভাবে অস্বস্তিকর এবং কাজের জন্য আদর্শ নয় - এই বাস্তবতাকে স্বীকৃতি দিতেই তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। -(সূত্র: বিবিসি)
এমন একটি অসাধারণ সিদ্ধান্তকে আমি সাধুবাদ জানাই। আশা করছি, এমন একটি সিদ্ধান্তের অনুকরণ বাংলাদেশেও অচিরেই ঘটবে। নারীদের এই একটি দিন ছুটি দিয়ে তাদের প্রতি দয়া বা করুণা করা হয় না। বরং এই একটি দিন ছুটি পেলে নারীরা পরেরদিন দ্বিগুণ প্রাণশক্তি নিয়ে কাজে নামতে পারবে। তাই আসুন, আমরাও কালচার মেশিনের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই এবং আমাদের নিজ নিজ কর্মসংস্থানে দাবী জানাই- এই একটি দিনের ছুটির জন্য।
মাসিকের প্রথম দিনে যে কোম্পানিতে ছুটি পাবে মেয়েরা
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৬