মাথার উপর থেকে হঠাৎ একটা আপেল পড়লে
নিউটন ভাবে, আরে ! এটা উপরের দিকে না গিয়ে নীচে নেমে এলো কেন ?
আর কোন হুজুর ভাবে, এটা খাওয়া কি জায়েজ নাকি নাজায়েজ হবে ?
নিজেদের উদ্ভাবিত জ্ঞান বিজ্ঞানের সাহায্যে পৃথিবীর যাবতীয় বস্তু ও শক্তিকে করায়ত্ত্ব করে আধুনিক মানুষ যখন জীবনকে আরও সহজ, আরও মসৃন, আরও উপভোগ্য করার প্রচেষ্টায় নিরলস সময় পার করছে, নিজেদেরকে এলিট মুসলমান মনে করা কিছুসংখ্যক আলেম-ওলামা-মাশায়েখ তখন ইলমের সংজ্ঞাকে সংকুচিত করে শুধুমাত্র কুরআন হাদিসের ভেতরে বন্দী করে বসে আছে ।
‘জ্ঞান অর্জন ফরজ’ ঘোষনা দিয়ে তারা আঙুল তুলে শুধুমাত্র কুরআন আর হাদিসগুলিকে দেখিয়ে দেয় । পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য যে আরও বহুবিধ জাগতিক জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করা অত্যাবশ্যক সে বিষয়ে তারা একেবারেই অনাগ্রহী ও উদাসীন ।
ফলে বেঁচে থাকার জন্য অনিবার্য্যভাবে তাদের অধিকাংশকেই মানুষের দান, সাদকা, উপহার কিংবা দয়ার উপর নির্ভর করতে হচ্ছে ।
আলেম ওলামারা হয়তো জানেনই না কিংবা ভুলে গেছেন যে, আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধনে ইবনে সিনা, আল বিরুনি, আল খোয়ারিজমি কিংবা জাবির ইবনে হাইয়ানের মত জগৎ বিখ্যাত মুসলিম বিজ্ঞানীরা কত বিশাল ভূমিকা রেখে গেছেন ।
তিক্ত হলেও সত্যি যে, ইহুদি-নাসারা-কাফেরদের করায়ত্ত্বে চলে যাওয়া আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান থেকে প্রাপ্ত সুফল ও সুবিধাগুলি আমাদের আলেম ওলামারা চোখ বন্ধ করে চুটিয়ে উপভোগ করেন আর ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে শুকরিয়া প্রকাশ করেন । আবার ভেতরে একটু জিহাদি জজবা আসলে ইহুদি-নাসারা-কাফেরদের পণ্যই বর্জনের হুংকার দেয়া কিংবা তাদের ধ্বংশ কামনা করে দোয়া শুরু করেন ।
তবে কি তারা কুরআনের ভেতরে থাকা আল্লাহর নির্দেশাবলী নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেন না ?
আলেম ওলামার কি দেখেননি পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বিজ্ঞান চর্চায় তাদেরকে কীভাবে উৎসাহিত করছেন ?
আল্লাহ বলেন,
''মহাকাশ এবং পৃথিবীর সৃষ্টি রহস্য, দিন ও রাতের আবর্তনের মধ্যে জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন লোকদের জন্য রয়েছে ভাবনার অনেক খোরাক ।
যারা সারাক্ষন আল্লাহ্র কথা ভাবে আর পৃথিবী এবং মহাকাশের যাবতীয় বস্তুর ধর্ম ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে গবেষনা করে, তারা বিস্ময়ে বলে উঠে,
মালিক, আপনিতো এসব দেখছি অপ্রয়োজনে তৈরী করেননি মোটেও । আপনি অনর্থক কোন কিছু সৃষ্টি করার উর্দ্ধে ।''
--সুরা আল ইমরান, আয়াত ১৯০-১৯১ ।
শুধুমাত্র মসজিদ মাদ্রাসায় বসে বসে জ্ঞান অন্বেষন আর ইবাদত বন্দেগী করা যথেষ্ট হলে আল্লাহ বলতেন না,
''তারপর সালাত শেষ হলে তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহের জীবিকা সংগ্রহের উদ্দেশ্যে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো ।''
---সুরা জুমআ, আয়াত ১০ ।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০২০ বিকাল ৫:৫৩