সর্বত্র রব উঠেছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই। কিন্তু এ নির্বাচনের সাথে আমাদের দৃষ্টি সুদুরেও নিবদ্ধ হওয়া দরকার। জামাতপন্থী আয়ানশাহ্ সগর্বে ঘোষণা করেছেন - ‘‘সেদিন বেশী দুরে নয়, যেদিন বিএনপি, আওয়ামী লীগ সহ সকলেই ঐক্যবদ্ধ হবে একটিমাত্র এজে¨ায়, আর তা হবে শুধু জামাত ঠেকাও’’। আমি এর ওপরে কাজ করি, আমি বিলক্ষ্মণ জানি এ বধ্যভুমি-গণহত্যা-গণধর্ষণের দেশে আজ এ দম্ভ তাঁকে কেন মানায়। এর পেছনে প্রকাশ্য-গোপন অসম্ভব শক্তি আছে, এর শেকড় অত্যন্ত গভীরে প্রোথিত। যে একাগ্রতায়, যে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের শক্তিতে তাঁরা এত বছর ধরে কাজ করেছেন তা শুধুমাত্র আমাদের স্পিরিট দিয়ে পরাস্ত করা সম্ভব নয়।
বাংলাদেশে কিভাবে বর্তমান আইনের ভিত্তিতেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্ভব তা অনেকেই দেখিয়েছেন। শুধু চাই সরকারের ইচ্ছে ও উদ্যোগ। আমাদের প্রজন্ম গত হলে এ কাজ আরো কঠিন হয়ে পড়বে।
বিশ্বময় জামাতের অগ্রগতি আজ প্রায় অপ্রতিহত, জাতিসংঘ সহ। মধ্য সত্তর-শতক থেকে তার উত্থানের যুগ। বাংলাদেশে জামাত ভালো করেই জানে দুর্নীতিবাজ ও অযোগ্য রাজনীতিকদের ক্রমাগত পাপে জনগণ এতই বিপর্য্যস্ত যে আমাদের একটা অংশ বিকল্পের জন্য মরিয়া হয়ে উঠবে। এবং সেই বিকল্পের গায়ে যদি ‘‘ইসলাম’’-এর লেবেল লাগানো থাকে তবে জনগণ বিষের বোতলও গিলবে। জামাত এগোচ্ছে এই নেগেটিভ শক্তিতেই। আমাদের অলক্ষ্যে সামাজিক বিবর্তনের কয়েকটা তন্ত্রী সে এর মধ্যেই কব্জা করে ফেলেছে এবং সে প্রক্রিয়া নিরন্তর ক্রিয়াশীল। যেমন- (১) প্রতি বছর ওদের হাজার হাজার মাদ্রাসা থেকে বেরোচ্ছে হাজার হাজার ‘‘ষ্ট্রীট পাওয়ার’’, (২) মধ্যপ্রাচ্যে লক্ষ লক্ষ চাকুরিরত বাংলাদেশীরা ওদের মতবাদে বিশ্বাসী হচ্ছেন এবং নিজ এলাকায় টাকা ও সম্মানের প্রভাব খাটানোর সুযোগ পাচ্ছেন, (৩) নিজ পয়সায় প্রাইভেট মাদ্রাসা স্থাপন করছেন যা থেকে আরও ‘‘ষ্ট্রীট পাওয়ার’’ বেরোচ্ছে, (৪) সেনাবাহিনীতে উল্লেখ্য সংখ্যক মাদ্রাসা-জোয়ান ঢোকাতে সক্ষম হয়েছে, (৫) সব সময়, বিশেষ করে মন্ত্রী থাকার সময় সরকারী ও বেসরকারী পদগুলোতেও তাঁদের সমর্থকদের ঢোকাতে সক্ষম হয়েছে (৪ ও ৫-এর ব্যাপারে কয়েক দশক আগে থেকেই তাঁদের মুফত ‘ট্রেনিং সেন্টার’ ছিল বলে কোথাও পড়েছিলাম যেন), (৬) গো-আজমের ছেলে সেনাবাহিনীতে আছে, সে নিশ্চয় অলস হয়ে বসে নেই, এর মধ্যে তার কিছুটা হলেও উচ্চ পর্যায়ে যাবার কথা, (৭) রাজনীতির বাইরেও আর্থিক, সামাজিক, দাতব্য, সংবাদ মাধ্যম ইত্যাদি সংগঠনের মাধ্যমে জাতিকে প্রভাবিত করে চলেছেন, (৮) আটকে পড়া বিহারীরা দেশের নাগরিকত্ব পাছে এবং সম্পুর্ণ পাবে - তারা জামাতের ভোটশক্তি হবে, (৯) অমুসলিমরা কোনকালেই জামাতকে ভোট দেবেনা - তারা দেশে ছেড়ে চলে যাক এটা জামাতের কৌশল না হবার কোন কারণ নেই - যদিও এটা প্রমাণ করা কঠিন……..ইত্যাদি। তারা আমাদের সামাজিক বিবর্তনকে রাজনীতি-নিরপেক্ষভাবে তাদের পক্ষে নিতে পেরেছে। অর্থাৎ রাজনীতি-নির্বাচনে যা-ই ঘটুক, নির্বাচনে যে-ই জয়ী হোক, আমাদের সমাজ ধীরে ধীরে ওদের খপ্পরে চলে যাচ্ছে।
জামাত চায় জনগণ আরো বিপর্য্যস্ত হোক এবং অমুসলিমরা দেশে ছেড়ে চলে যাক, এ দু’টো হল যৌক্তিক সিদ্ধান্ত মাত্র - এটা প্রমাণ করা যাবে না কিন্তু এ না হবার কোন কারণ নেই।
ধন্যবাদ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




