“খারাপ লাগছে?”
নবীনের এই কথা শুনে হামিদ ওর দিকে একবার তাকালো, ওর চোখটা কেন জানি কোন কথা বলছে না। সাধারনত মানুষের কিছু কথা মুখ দিয়ে বলবার আগে চোখ তার সামান্য পুর্ভাভাস জানায়। কিন্তু হামিদের চোখ নিশ্চুপ। নবীন ওর থেকে লম্বা হওয়াতে ওর দৃষ্টি উপরের দিকে। ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে আছে।
ওদের সামনে যা আছে, কিছুক্ষন আগে তার নাম ছিলো ফারুক। এখন একে যে কি বলে সম্বোধন করা যাবে, তা কেউ বলতে পারবে না। মাংসপিন্ড? নাকি তাও সঠিক হবে না। মনে হচ্ছে যে সমগ্র ধান ক্ষেতে যেন রক্ত ছড়িয়ে পড়ছে। মাটি যেন এখানে লাল, ফারুকের রক্তে লাল।
পরিকল্পনাটার শুরু টা হামিদের। হামিদ চেয়েছিলো যেন ফারুকের শাশ্তি হোক, উচিৎ শাশ্তি। সে কিনা কাকলির দিকে নজর দেয়! সাহস কত বড় ছেলের। হোক সে ভালো ভদ্র ছেলে, কিন্তু হামিদ তো গ্রামের মোড়লের ছেলে। আর হামিদ কাকলিকে প্রচন্ড পছন্দও করে। রোজ ওকে দেখে কলেজে যেতে, রোজ। মাঝে মাঝে ওকে দেখে ওর সখিদের সাথে হেসে হেসে কথা বলতে। সে মিস্টি হাসি যেন হামিদকে এক ঘোরে নিয়ে যায়। আর এই কৃষকের পোলা ফারুকের সাহস ওর সাথে কথা বলে! তাও হামিদের চোখের সামনে!
হামিদ এ দৃশ্য দেখে তখন কিছু না বললেও ও অপেক্ষা করে। খবর দেয় নবীন কে। নবীন ওর বন্ধু, এবং পাড়ার ছোট খাট মাস্তান। এ ছাড়াও নবীন কে বলার আর একটা কারন ছিলো, ফারুকের বাড়ির পাশে নবীন রা গাজার আসর করতো। ৭ দিন আগে ফারুক তার বন্ধু দের নিয়ে নবীনদের শুধু ধাওয়াও দেয় না, পুলিশের কছে রিপোর্টও করে। তবে নবীন পলিটিকাল ক্ষমতা নিয়ে চলায় তেমন কোন সমস্যা হয় নাই। তবে নবীন গ্রামের উত্তর অংশে যেতে পারছিলো না।
তবে ফারুকের এই পরিনতি হামিদ চায় নাই। ফারুকের একটা পা, আর একটা হাত অকেজো করতে চেয়েছিলো সে। কিন্তু নবীনের সাথে আসা কালু যে দুটা দা নিয়ে আসবে আর ওরা যে এভাবে মারবে তা কল্পনাও করে নি ও।
তবে নবীনের ইচ্ছা অনুযায়ী কালু এ কাজ করেছে। মোড়ল সাহেবের ছেলে আছে তো ঠেকায় কে! নবীন তার প্রতিশোধ তো এতো কমে নিতে পারে না।
এই মঞ্চে আরও একজন আছে, সে হলো সবুজ। ফারুকের দুই বাড়ি পরেই থাকে সে। ধান ক্ষেতে কেউ আছে, এই বলে সে ফারুক কে নিয়ে এসেছিলো। সবুজ খুব ভালো ভাবে তার কাজ করেছে, ফারুক কে বলেছিলো যে কুদ্দুস সবাই কে জানান দিছে, আর এক রকম তাড়ার উপর রেখেছিলো ফারুক কে, যেন ফারুক কোন প্রস্তুতি না নিয়ে আসতে পারে। এর পর যা করার কালু ও নবীন ই করেছে।
“এই উজবুক,শুনতাসিস?”
হামিদ যেন ফিরে এলো। নবীনের দিকে ভালো ভাবে তাকালো। পুর্নিমার আলোয় ওর চেহারা বেশ ভালো ভাবেই হামিদ দেখতে পারছে। নবীনের চোখ চক চক করছে। চোখে উন্মাদের দৃষ্টি। একবার হামিদ কোন মতে কালুর দিকেও তাকালো, কালু হাসছে, নিশব্দ হাসি হাসছে। যেন কিছুই হয় নাই।
“এ এ এটা কি হোল ......” হামিদ যেন কথা বলতে পারছে না।
“আবে শালা যা হইছে ভালো হইছে, এই শালায় শেষ। আর গেঞ্জাম করবো কেডায় আমার সাথে!” যেন এইটা নবীনের জয়, বিশাল জয়।
হামিদের মনে হচ্ছে ও বমি করবে, ওর মাথা প্রচন্ড ঘুরাচ্ছে, ও কোন মতে বললো, “বাড়ি যাবো”।
“ওই কাল্লু, সবুজ রে লইয়া তুই রহমত মিয়ার বাড়ির দিকে যা, সবুজ, তোরে যেইটা ওয়াদা করছি, সেইটা পাবি তুই, আমি হামিদ রে লইয়া মোড়ল বাড়ির দিকে গেলাম।” কালুর দিকে তাকিয়ে নবীন বললো,সাথে তার চোখও কিছু বললো, যা কালুই একমাত্র বুঝলো।
সবাই মঞ্চ থেকে চলে গেলো, শুধু রইলো ফারুক নামক মাংসপিন্ড আর রক্তে ভেজা ধান ক্ষেতের মাটি, যে মাটি পরম মমতায় রক্তবিন্দু গুলো কে নিজের ভিতরে নিয়ে নিচ্ছে।
[চলবে]