somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিশু

১৬ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ১১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ল্যাব রুমে সবাই অনেক আনন্দিত, সবার চোখ মুখ দেখে যেন মনে হচ্ছে যে আজ ঈদ। শুধু ঈদ না, হয়তো আরও বড় কিছু। সকলে যেন লাফাচ্ছে, ঠিক যেন ছাগল ছানারা মহা আনন্দে তিড়িং বিড়িং করে লাফায়। ল্যাবের সেন্ট্রাল কোন্ট্রলের সামনে যে হুতকো টা ২টোর জায়গা বসে আছে, সে আনন্দে না ভয়ে না দুঃখে কাপছে তা দেখার মতো কেউ নাই, আসলে কারো হুশই নাই। সমগ্র ল্যাবে মনে হয় সর্বসাকুল্যে ২১ টা জীবন হবে, ১ টা বাদে সবাই যেন পাগল হয়ে যাচ্ছে। কেউ কেদে ফেলছে, কেউ লাফাচ্ছে, কেউ বা অপরকে যে কি বলছে তাই বুঝতে পারছে না। ল্যাব রুমের দরজা দিয়ে ঢুকতে বাম দিকের দেয়ালে এক বড় স্ক্রিন, তাতে রিপোর্টার সমানে তার কথা বলে যাচ্ছে। তার চোখ মুখেও সেই ঈদের আনন্দ।সে বিগত ৫ মিনিট ধরে ব্রেকিং নিউজ দিয়েই যাচ্ছে। তবে রিপোর্টার বা এই ল্যাবের সবার মত সারা গ্রহ আনন্দিত নয়, অনেকেই আনন্দিত, অনেকেই দ্বিধায় ভুগছে যে আনন্দিত হবে, না প্রতিবাদ করবে এই আবিস্কারের।
কিন্তু যাকে নিয়ে এত কিছু, সে কিন্তু কিছুই বুঝছে না। একটা বড় টেস্টটিউবে সে বন্দী বলতে গেলে, তাতে তার আক্ষেপ বা ভ্রুক্ষেপ, কিছুই নাই। সে আলো দেখছে। তার বন্দীশালা, তথা টিউবের উপর আলো পড়ে একটা কিরকম আজব বর্নালীর সৃস্টি করছে, সে সেটাকেই এক দৃস্টিতে দেখছে। মাঝে মাঝে সে চেস্টা করছে তার নরম কচি হাতে সেটাকে ধরার জন্য, তার হাত টিউবটার দেয়াল ছুতে পারছে না, কিন্তু কিছু ক্ষন পর পর সে চেস্টা ঠিকই করে যাচ্ছে, আলোকচ্ছটা টা ধরার জন্য। আর কি যেন বলার চেস্টা করছে, আর হাসছে কিছু ক্ষন পর পর।

সেন্ট্রাল সিস্টেম যখন বললো যে সকল প্রাইমারী টেস্ট শেষ হয়ে গেছে, ক্লিরা, দাইসি আর ম্যাভেন যেন একরকম ছুটে গেলো টিউবটার সামনে, যদিও তারা এখনো টিউবটা খুলে বন্দীটাকে মুক্ত করতে পারবে না, বাহিরের পরিবেশ তার জন্য এখনো অনুকূল নয়, তার পরেও টিউবে হাত না দিয়ে তারা বন্দীর কান্ড কারখানা দেখতে থাকলো। সবার মুখে হাসি, কারন এদের তিন জনের কারনে আর এই প্রজেক্ট এত বড় একটা মুখ দেখলো। তারাই আজকের হিরো বলতে গেলে।

তবে একটা ছোট সমস্যা হয়ে গেছে। ওরা এসে দাড়ানোতে আলোটা আর টিউবে পরছে না। বন্দীটার খেলাও বন্ধ হয়ে গেলো। সে একটু বিরক্ত বোধ করলেও তাকে যারা দেখতে আসছে তাদের দিকে চোখ পড়ে গেলো। আর বন্দীমহাশয় ও আলোর কথা ভুলে গিয়ে তাদের দিকে দেখতে থাকলো। আসলে বুঝার চেস্টা করছে যে তারা কে? কেনই বা ওকে আটকে রেখেছে? আর কেনই বা আলোটাকে ওর কাছ থেকে নিয়ে গেলো?

“ও না আমার দিকে তাকিয়ে আছে!” ম্যাভেন বললো।

“নাহ আমার দিকে তাকিয়ে আছে।“ দাইসি সাথে সাথে চ্যালেঞ্জের সুরে জবাব দিলো।

ক্লারা কোন কথা বলছে না। কারন সে যেন একটা ভ্রমের মদ্ধ্যে আছে। কারন সে বন্দীটি তার দিকেই এক নয়নে তাকিয়ে আছে। ক্লারার যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে দেখে, মনে হচ্ছে ও যেন এখানে নেই, ও যে কোথায় টাও বুঝতে পারছে না। এটাকেই কি মায়া বলে? এটাকেই কি ভালোবাসা বলে? ক্লারা বুঝতে পারছে না। বন্দীটিও তার দিকে অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে। কিন্তু বন্দীটি ক্লারা কে দেখে ভয় পায় নি, বরং আর দুই জন থেকে ক্লারাকেই কেন জানি তার আপন লাগছে।

ম্যাভেন আর দাইসি যখন তাদের অযোক্তিক যুক্তির দ্বারা এক নতুন কিছু বলে উঠবে তখন বন্দিটি অব্যদ্ধ ভাষায় কি জানি বলে উঠলো। ওর গলাটা এত মিস্টি যে ম্যাভেন আর দাইসি তাদের শুরু হতে যাওয়া ঝগড়া টাকে থামিয়ে দিয়ে বন্দীর দিকে মননিবেশ করলো। শুধু তারাই নয়, ল্যাব রুমের সবাই যে যা করছিলো থামিয়ে দিয়ে টিউবের দিকে মননিবেশ করলো।

“ও আমাকে মা বলে দেকেছে” ক্লারা আস্তে আস্তে বললো। ওর গলার কাপুনি ম্যাভেন আর দাইসি ভালো করেই বুঝতে পারলো। দাইসি ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ল্যাবের সবাই যানে, ক্লারা এমন এক কপ্রিতান, যে নতুন কপ্রিতানের জন্ম দিতে পারে না। এরকম কপ্রিতান খুব কমই আছে, যে কয়জন আছে তাদের জন্য এটা আসলেই খুব পীড়াদায়ক। আর থেকে ৫ বছর আগে এক কপ্রিতান শীপ যখন সিস্টেম ১৮১৯২৪ এর ৩য় গ্রহ থেকে জীবাশ্ন সংগ্রহ করে আনে, তখন ক্লারা সুপ্রিম কাউন্সিল কে আবেদন জানায় যে সে এই জীবাশ্ন থেকে ওই গ্রহের প্রানীগুলাকে বানাতে পারবে। অনেক কস্টের পরে সে অনুমতি পায়। কপ্রিকা, লাইজেন আর ফারসিন গ্রহের সেরা কপ্রিতান আর ফার বিজ্ঞানীদের ৩ বছরের প্রয়াসের পর এই শিশুটির জন্ম হয় আজ সকালে, আর সবাই কে অবাক করে ১৫ মিনিট ধরে সে বেচে আছে। ফার বিজ্ঞানীরা বলেছিলো যে ৫ মিনিটও বাচানো যাবে না প্রসিক্রেটেড করার সময়, কিন্তু ক্লারার বিশ্বাস ছিলো, শিশুটি বাচবে। আর শিশুটি, যদিও টিউবে বন্দি, কিন্তু বেচে আছে এখনো।

ফার বিজ্ঞানীদের প্রধান ও ক্লারার কথা শুনে অবাক হলো। ক্লারাকে মা বলবে কেন এই প্রানী? আর এই প্রানীর বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে এখনো তাদের কোন ধারনাও নাই। এখনো এর উপর অনেক প্রক্রিয়া করা বাকি, যদি বেচে থাকে তাহলে অনেক কিছু জানা যাবে ওই গ্রহ সমপর্কে। ওই গ্রহের উপর ফার রা দখল নিতে চাচ্ছে, কিন্তু কপ্রিকা এতে সায় দিচ্ছে না। আর প্রানীটাকে খেতে কেমন লাগবে, ব্যাক্তিগত ভাবে এটাও তার জানার ইচ্ছা আছে।

ম্যাভেনের মস্তিকে সেন্ট্রাল সিস্টেম একটা সিগনাল পাঠালো, সকল গ্রহের সংবাদ প্রতিনিধিরা অপেক্ষা করছে লবীতে। সে দাইসি কে বললো, “ যেতে হবে আমাদের, সবাই অপেক্ষা করছে।“ দাইসি যেতে লাগলো, ম্যাভেন এবার ক্লারার দিকে তাকিয়ে বললো, আপনি আসবেন না?

ক্লারা ম্যাভেনের দিকে তাকিয়ে বললো, তুমি যাও, আমি এখানেই থাকি।
ম্যাভেন কিছু বললো না। কেন জানি মনে করলো যে ওর এখানে বলা উচিং হবে না। তাই ও ধিরে ধিরে বের হলো ল্যাব রুম থেকে।

ক্লারা ধীরে ধীরে টিউবের কাছে চলে আসলো। ওর তিন আঙ্গুলে হাতটাকে টিউবের উপরে রাখলো। শিশুটা যেন ধরার নতুন কিছু পেলো। সে আবার ধরার চেস্টা করতাছে।

ক্লারা আর শিশুটি একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×