somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

10. তলা'আল বাদরু 'আলাইনা (আমাদের মাঝে পূর্ণ চাঁদের উদয়)

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৬ রাত ৮:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পূর্ব পর্বগুলো পড়ুন-
1 >>2 >>3 >>4 >>5 >>6 >>7 >>8 >>9

[সাইজ=8]রাসূলের শহরে ইফতারীর নিমন্ত্রণ-দৃশ্য[/সাইজ]

যখন ছিলাম মদীনা থেকে বহু দূরের শহরগুলোতে, যখন অতীষ্ট হয়ে উঠতাম আরবীয় দুষ্টগুলোর মনিবসুলভ অত্যাচারে, যখন আরবদের চারিত্রিক প্রচ্ছন্নতা বিশেষ করে অধিনস্তদের সাথে ভাল ব্যবহারের ব্যাপারে, তখনি আলোচনার এখান-ওখান থেকে কেউ কেউ বলে উঠতো- 'মদীনার লোকেরা আরবের অন্যান্য লোকদের চেয়ে অনেক ভাল'। মনটা তখনি নড়ে চড়ে উঠতো, হুট করে ডুব দিত ইতিহাসের পাতায়। কেন হবে না মদীনার লোকেরা আরবদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, তাদের মাটিতে যে ঘুমিয়ে আছেন আজো আমার প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম। যখন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ছেড়ে চলে গেছেন তার সুখ-দুঃখের সাথী স্ত্রী খাদিজা রাদিয়াল্লাহু 'আনহা, যখন চলে গেছেন সেই শিশুকাল থেকে ছায়া স্বরূপ চাচা আবু তালেব, যখন মক্কার মুশরিক সমপ্রদায়গুলো একত্রিত হলো মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যা করার সিদ্ধান্তে, যখন তার পরম প্রভু আল্লাহ্র পক্ষ থেকে আদেশ এলো হিজরতের, তখন এবং তারও আগে তো মদীনার মানুষেরাই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আপন করে মাথায় তুলে নিলেন। মদীনার অলি-গলিতে এখনো তাই বাজে- [গাঢ়]"তলা'আল বাদরু 'আলাইনা, মিন সানিয়াতিল ওয়াদা'আ........"[/গাঢ়]

একটা সাধারণ কথা যে, কোন মানুষকে কিংবা কোন জনগোষ্ঠীকে বুঝতে হলে কাজকর্ম দিয়েই বুঝতে হবে। মদীনাবাসীদের সাথে দীর্ঘ 'ছ/সাত বছরের কাজের অভিজ্ঞতার সূত্রে অন্যান্য শহরের মানুষদের চাইতে মদীনার মানুষদের কাছ থেকেই সবচেয়ে বেশী ভাল আচরণ, সহমর্মিতা এবং সম্মাননা পেয়েছি। তার চেয়েও বড় ব্যাপার আমার জন্য যে, মদীনা শুধু অর্থোপার্জনের জায়গাই নয় আমার জন্য; বরং জ্ঞানার্জনের এক নব দিগন্তের সন্ধান পেয়েছি। যে কেউই এমন সুযোগ নিতে পারে, কিন্তু জ্ঞানার্জন করে আনন্দিত হওয়ার মত মানসিকতা তো থাকতে হবে। এখন রমাদান মাস, সিয়াম সাধনার মাস, কুরআন নাযিলের মাস, রহমত-বরকত-মাগফেরাতের মাস। তাই সারা মুসলিম বিশ্বেই এ মাসের গুরুত্ব এবং মর্যাদা অপরিসীম। কিন্তু মদীনায় যে দৃশ্য অবলোকন করলাম আন্তরিকতার, ভালবাসার, মেহমানদারীর, তা আর কোথাও দেখিনি; এমনকি মক্কায়ও না। শা'বান মাস থেকেই শুরু হয়ে যায় প্রস্তুতি, মসজিদুন নববীতে কে কে ইফতারীর মেহমানদারী করানোর জন্য সুযোগ পাবে, কে ভেতরে জায়গা পাবে তা নিয়ে রীতিমত প্রতিযোগিতা। যেমনটি হয় ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে ঠিক তেমনি হয়ে থাকে কল্যাণ অর্জনের ক্ষেত্রে।

প্রথম প্রথম মসজিদুন নববীতে ইফতারের পূর্বে প্রবেশ করতে গিয়ে রীতিমত বিরক্ত হয়ে যেতাম। কারণ, মসজিদের সীমানার বাইরে থেকেই শুরু হয়- "ফাদ্দাল মা'আয়ী" অর্থাৎ, 'আমার (ইফতারীর) নিমন্ত্রণ কবূল করুন'। কি ছেলে কি বুড়ো, তার উপর রয়েছে বিভিন্ন দেশী কর্মচারীগণ, যারা সবাই এমনভাবে এমন আন্তরিকতার সাথে ডাকে যে, ফিরিয়ে দেয়ার মত মানসিকতাই খুঁজে পাই না। প্রাথমিক বিরক্তির কারণ ছিল, ছোট ছোট ছেলেগুলো দু'জন দু'হাত ধরে দু'দিকে টানতে শুরু করতো, এ বলতো আমার সাথে আসুন, আর ও বলতো আমার সাথে; এখন যাই কোন দিকে? কিন্তু যখন কাউকে ইফতারী করানোর কল্যাণটা চিন্তা করলাম এবং মেহমানদারীর এই বিরল আন্তরিকতাকে উপলব্ধি করলাম, তখন থেকে বিরক্তির বদলে আপ্লুত হতে থাকলাম। আহা! যখন দেখি সবগুলো দাঁড়ি সাদা বৃদ্ধ, শুধুমাত্র আমাকে তার মেহমান বানানোর জন্য আমার জুতোগুলো নিজ হাতে কুড়িয়ে নিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে চলছে ইফতারী সাজানো মসজিদে তার জন্য নির্দিষ্ট অংশের দিকে, তখন দু'চোখে অশ্রু এসে যায়। ইসলামের এই সৌন্দর্য আর কোথাও কি আছে?

আজকের কথা বলি, ঘুম থেকে উঠেছি দেরী করে, তার উপর ব্লগে সময় দিতে গিয়ে একটু বেশীই নিয়ে ফেলেছি নির্ধারিত সময়কে। যখন মসজিদুন্ নববীতে পেঁৗছুলাম, তখন আযানের মাত্র কয়েক মিনিট বাকী আছে। মসজিদ মোটামুটি পরিপূর্ণ, তাই প্রতিদিন যেখানে বসি-'মাকতাবাতুল উমার'-এর সামনে-সেখানে এখন ঢোকাই সম্ভব নয়। তবুও কম বয়সী অনেককেই ফিরিয়ে দিয়েছি এই বলে যে, আমাকে ভেতরে যেতে হবে। কিন্তু দরজার কাছাকাছি আসতেই জড়িয়ে ধরলো এক জন বাকশক্তিহীন বয়সী মানুষ। তার আকার-ইঙ্গিতে নিমন্ত্রণের ভাষা দেখে আমি আর না বলতে পারলাম না, হাতে ফাইল, পায়ের জুতা খুলছি মাত্র, দু'হাতে কুড়িয়ে নিয়ে আমাকে ফেলেই ছুটতে শুরু করলো। আমি হতবাক হলাম, আপ্লুত হলাম, শ্রদ্ধাসিক্ত হলাম, দৌড়ে গিয়ে আমার জুতাগুলো তার হাত থেকে নিলাম, তখন আমার এক হাতের প্রায় পুরোটাই তার দু'হাতে অাঁকড়ে ধরে নিয়ে চললো যতক্ষণ না আমাকে বসিয়ে দিল তার আয়োজনের সামনে। সোবহান আল্লাহ্! পৃথিবীর আর কোথায় আছে এমন ভালবাসা, এমন ভ্রাতৃত্ববোধ, এমন কল্যাণের দৃশ্য? যেখানে কল্যাণের তরে, ভালবাসার টানে, ভ্রাতৃত্ববোধের আন্তরিকতায় কর্মচারীর (বিদেশী হিসেবে আমরা এদেশীদের কাজ করছি, সব পর্যায়েই) জুতা বয়ে নিয়েও মেহমান করে নিচ্ছে আপনার আয়োজনে মালিক পক্ষ! এটাই ইসলাম, এটাই সৌন্দর্য, এটাই আল্লাহ্র আলোকচ্ছটা।

(চলবে)

ছবির জন্য [link|http://www.yanabi.com/media/IslamicImages/Prophets_mosque/images/NABAWI6.jpg|K
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয় দিবসের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে, প্রতিবাদ ও ঘৃণা জানিয়ে । সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান ২০২৫, ১৬ই ডিসেম্বর।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১৯




দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে ত্রিশ লক্ষ তাজা প্রানের এক সাগর রক্তের বিনিময়। দুই লক্ষাধিক মা বোনের সম্ভ্রম হারানো। লক্ষ শিশুর অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত‍্যু। এক কোটি মানুষের বাস্তুহারা জিবন। লক্ষ কোটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×