somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

@ সূরা আল-ফাতিহায় উল্লেখিত ইবাদাতের তিনটি রুকন বা স্তম্ভ

১০ ই মে, ২০০৯ রাত ১০:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের র্পব: ইবাদাতের অর্থ ও বুনিয়াদ Click This Link

বিগত লেখায় আমাদের নিকট সুস্পষ্ট হলো যে, ইবাদাতের ভিত্তি তিনটি স্তম্ভের উপর স্থাপন করা হয়েছে। সেগুলো যথাক্রমে- পরিপূর্ণ ভালবাসা, সর্বোচ্চ আশা ও চূড়ান্ত ভয়।
মানব জাতিকে সঠিক পথ প্রদর্শনের জন্য যুগে যুগে প্রেরিত নবী-রাসূলগণ ও নাযিলকৃত কিতাবসমূহের ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ নবী ও রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর নাযিল হওয়া কিতাব আল-কুরআনের সর্বপ্রথম যে পরিপূর্ণ সূরাটি নাযিল হয়, তা হচ্ছে সূরা আল-ফাতিহা। আল-কুরআনের প্রারম্ভে সন্নিবেশিত এ সূরাতেই আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর ইবাদাতের উপরোল্লেখিত তিনটি রুকন বা স্তম্ভ তুলে ধরেছেন এভাবে-
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ * الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ * مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ *
“সমস্ত প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য, যিনি দয়াময় পরম দয়ালু, প্রতিদান দিনের মালিক।” [সূরা আল-ফাতিহা: ১-৩]

মানুষ স্বভাবতই দাতাকে ভালবাসে; চাই তা প্রাপ্তির আনন্দে হোক, কিংবা কৃতজ্ঞতার প্রকাশ হিসেবে হোক। তারপর সে ভালবাসার পরিমাণ নিরুপিত হয় প্রাপ্তির পরিমাণ বা ব্যাপকতার ভিত্তিতে। চিন্তার বিষয় যে, যে মহান স্রষ্টা কোন প্রকার আবেদন নিবেদন ছাড়াই আমাদেরকে কোনরূপ জীব জানোয়ার, গাছপালা, পোকা মাকড় না বানিয়ে তাঁর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ রূপে সৃষ্টি করে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন, যিনি মহাকাশে ঘুর্ণয়মান বিলিয়ন ট্রিলিয়ন গ্রহ নক্ষত্রের মধ্য হতে পৃথিবীকে এমন এক অবস্থানে স্থাপন করেছেন যেখানে আমাদের বসবাস পরিপূর্ণ নিরাপদ ও আরামদায়ক, যিনি জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত অজস্র দয়া-মমতায় আমাদেরকে প্রতিপালন করে যাচ্ছেন; সর্বোপরি লিখে শেষ হবার নয় এত বিশাল পরিমাণ নেয়ামতরাজি দান করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত, সেই মহান সত্তার প্রতি যদি মানুষেরা তাদের কাছে সঞ্চিত সবটুকু ভালবাসা দিয়ে সারা জীবন ভালবেসে যায়, তারপরও উল্লেখিত নেয়ামতের কিঞ্চিত কৃতজ্ঞতাও আদায় করা হবে না। তথাপি আমাদের সাধ্যানুযায়ী পরিপূর্ণ ভালবাসার প্রকাশ ঘটানোর উল্লেখ রয়েছে الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ আয়াতে। ইবাদাতসমূহে বান্দা যখন গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনুধাবন করে তার প্রভুর প্রতি ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে, তখন তাতে পরিপূর্ণতা আসবে।

আশা স্বপ্ন দেখায়, স্বপ্ন কর্মে নামায় এবং কর্ম মানুষকে সাফল্য এনে দিতে পারে। ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র বিষয় নিয়েও মানুষ আশা করে, আকাংখার বীজ বোনে অন্তরে এবং পৃথিবীর শেষ দিন পর্যন্ত তাতে জীবনের নির্যাস ঢেলে ঢেলে বাস্তবে পেতে চায় প্রাপ্তিকে, চাওয়াকে। কিন্তু কার কাছে চাইছি, কি চাইছি, কেন চাইছি; অনেকেই এসব ছোট ছোট প্রশ্নগুলো ভেবে দেখছি আবার অনেকেই উপেক্ষা করছি। তাই অনেক সময় পাওয়াও নাপাওয়ায় রূপান্তরিত হয় কিংবা প্রাপ্তিকে অপ্রাপ্তি ভেবে কষ্ট সহ্য করে যেতে হয় এবং ক্ষেত্র বিশেষে সীমালংঘন করে বসি। পৃথিবীতে মূলতঃ কেউই কাউকে কিছু দিতে পারে না; পারে শুধু ইচ্ছা করতে ও চেষ্টা করতে। কেননা, প্রাপ্তির বিষয়টি বিশ্বস্রষ্টা আল্লাহ্ তাঁর নিজ হাতে রেখেছেন। যদি তাই না হতো, তবে মানুষ চেষ্টা করেই প্রত্যেক বিষয়ে সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হতো, প্রাণান্ত সাধনার পরও এবং কোন ত্রুটি না করার পরও ব্যর্থ হতো না কখনো। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন, এখানে অনেক সময় না চাইতেই পাওয়া যায়, আবার কখনো চেয়েও পাওয়া যায় না। কখনো একটু চেষ্টাতেই সফল, আবার কখনো সারা জীবনের সাধনাও ব্যর্থ হয়ে পড়ে। তাই চাওয়া-পাওয়ার বিষয়গুলোর চূড়ান্ত পর্যায়ে একথা অকাট্য যে, চেষ্টার সাথে সাথে আশাও করতে হবে।

আশা-আকাংখার পাত্র নির্বাচনে ভ্রান্তি মানুষকে পৃথিবীর জীবনে চরম লাঞ্ছনা এনে দিতে পারে, এমনকি পৃথিবী-পরবর্তী জীবনে এনে দিতে পারে চূড়ান্ত ব্যর্থতা। তাই যে অন্যের মুখাপেক্ষী তার কাছে চাওয়ার মত বোকামী জ্ঞানবান ও বুদ্ধিমান মানুষেরা কখনো করে না। বরং এক্ষেত্রে নির্বাচন করতে হবে এমন এক সত্তা যিনি সবকিছু থেকেই অমুখাপেক্ষী। বিশ্ববিবেক নানা পন্থায় হলেও সেই একজন হিসেবে চিনে থাকেন সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ তা‘আলাকে। এ প্রসঙ্গে কুরআন বলছে- اللَّهُ الصَّمَدُ “আল্লাহ্ অমুখাপেক্ষী।” [সূরা ইখলাছ: ২] সুতরাং আশা’র সর্বোচ্চটুকু তো অবশ্যই; বরং সবটুকুই নির্ধারণ করা সৃষ্টি হিসেবে মানুষের জন্য তার স্রষ্টার একান্ত পাওনা।

আশা তার কাছেই করা যায় যে তা পূরণের যোগ্যতা রাখে এবং যারা আশা করে তাদের প্রতি যে সে পরিমাণ দয়া পোষণ করে। সূরা আল-ফাতিহার আয়াত الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ এ “দয়াময়, পরম দয়ালু” বলে আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর সৃষ্টিকে জানিয়ে দিচ্ছেন যে, তোমরা যে অমুখাপেক্ষী, দয়াময় ও পরম দয়ালু কাউকে খুঁজছো তোমাদের আশা-আকাংখাগুলো পেশ করার জন্য, তিনি একমাত্র তোমাদের স্রষ্টা ও প্রতিপালক আল্লাহ্। একমাত্র তাঁর উপরই তোমরা সর্বোচ্চ আশা-ভরসা করতে পারো। সর্বোপরি, এরূপ জাগ্রত অনুভবের আশা-আকাংখাই পারে ইবাদাতে পূর্ণতা সাধন করতে।

মানুষ স্বভাবতঃই তার গুণাবলীতে ভয় পোষণ করে থাকে। বিবিধ রূপ ভয়ে জর্জরিত থাকে মানব জীবন। সকল ভয়েরই চূড়ান্ত পরিণতি হয় মৃত্যু। হাঁ, যদি মৃত্যুর মাধ্যমে মানব সত্তার পরিসমাপ্তি ঘটতো, তবে কোন কথা ছিল না। কিন্তু সর্বযুগেই স্রষ্টা মহান আল্লাহ্ মানুষকে নবী-রাসূলগণের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন যে, পৃথিবী অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী একটি জায়গা মাত্র। একটি কর্মক্ষেত্র, একটি শস্য ক্ষেত। এখানকার শ্রম-ঘামের প্রতিদান এখানে তেমন পাওনা থাকে না; বরং তা অপেক্ষিত থাকে আখেরাতের জন্য, যা অনন্ত, চিরস্থায়ী। তাই মানব জীবনে পার্থিব ভয় কোন ভয়ই নয়, কেননা এর চূড়ান্ত পরিণাম মৃত্যু যার স্বাদ প্রতিটি প্রাণীকেই আস্বাদন করতে হবে। বরং মানবাত্মার জন্য সবচেয়ে বড় ভয় হচ্ছে তার স্রষ্টা ও প্রতিপালক আল্লাহ্ তা’আলার তার প্রতি অসন্তুষ্টি। কেননা, তিনি যুগে যুগে সবার কাছে নবী পাঠিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন যে, তাঁর অসন্তুষ্টির পরিণাম জাহান্নাম, যেখানে রয়েছে অকল্পনীয় দুর্ভোগ এবং যা (সরিষা পরিমাণ ঈমান যাদের থাকবে তারা ছাড়া বেঈমানদের জন্য) হবে চিরস্থায়ী! সূরা আল-ফাতিহায় مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ বা “বিচার দিনের অধিপতি” বলে স্রষ্টাকে ভয় করার সংবাদের যে প্রকাশ ঘটিয়েছে আল-কুরআন, তা কোন বান্দার নির্ভেজাল ইবাদাতের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখতে পারে। মানুষের মধ্যে আল্লাহ্-ভীতি সৃষ্টি করতে পারে আখেরাতের চিন্তা। সূরা আল-ফাতিহায় আল্লাহকে বিচার দিনের মালিক ঘোষণার মাধ্যমে মূলতঃ মানবজাতির অন্তরে আল্লাহর ভয় জাগ্রত করা হয়েছে; যা তার ইবাদাত পালনের জন্য মহা উপকারী। কেননা এ তিনটি আয়াতে ইবাদাতের তিনটি স্তম্ভ ঘোষণা করার পরপরই আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের শিখিয়ে দিচ্ছেন এই বলে: إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ “আমরা শুধুমাত্র আপনারই ইবাদাত করি এবং শুধুমাত্র আপনারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি।” [সূরা আল-ফাতিহা: ৪]

মানবজীবন বেষ্টিত হয়ে আছে মূলতঃ এ তিনটি চারিত্রিক গুণ দ্বারা- ভালবাসা, আকাংখা ও ভয়। কিন্তু এসবকে যথার্থ স্থানে পেশ করতে হবে, কেননা এসব ক্ষেত্রে যথার্থতা বিচার করতে ব্যর্থ হলে জীবনটাই ব্যর্থ হবার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই যে মানুষ যত দ্রুত এবং যত দীর্ঘ সময় তথা মৃত্যু পর্যন্ত এ তিনটি সম্পদকে এসবের যথাযোগ্য হকদার মানুষের স্রষ্টা আল্লাহর জন্য নির্ধারণ করতে পারবে এবং তাতে পরিপূর্ণতা আনতে পারবে, সে মানুষ তত বেশী সফল বলে বিবেচিত হবে তাদের প্রভু আল্লাহর দরবারে। কুরআন ও সুন্নাহ্ আমাদেরকে সে দিকনির্দেশনাই দিয়ে আসছে চৌদ্দশতকেরও বেশী সময় ধরে।
১০ মে ২০০৯, ঢাকা, বাংলাদেশ।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০০৯ রাত ১১:৩৭
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×