somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুভি রিভিউ: Le Cercle Rouge (1970)

১৯ শে নভেম্বর, ২০১১ ভোর ৪:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কিছুদিন আগে দেখলাম Le Samouraï (1967), আর এইটা দেখে এতোটাই মুগ্ধ হয়েছিলাম যে ভাবলাম একই হিরো আর একই ডিরেক্টরের করা Le Cercle Rouge (1970) মুভিটাও দেখতে হবে।এইমাত্র দেখে শেষ করলাম, পরিচালক Jean-Pierre Melville এর আরেকটি মাস্টারপিস ক্রাইম-থ্রিলার মুভি।উল্লেখ্য Le Cercle Rouge ছিলো Jean-Pierre Melville এর বানানো দ্বিতীয় সর্বশেষ মুভি।এই প্রতিভাবান পরিচালক ১৯৭৩ সালে ৫৫ বছর বয়সে মারা যান।ওনার সর্বশেষ পরিচালিত মুভিটি ছিলো Un Flic যাতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে ছিলেন সেই Alain Delon, যিনি যথাক্রমে Le Cercle Rouge আর Le Samouraï এরও মূল ভূমিকায় অভিনয় করেছেন।এই মুহূর্তে Alain Delon আর Jean-Pierre Melville এর বিশাল ফ্যান হয়ে গেছি, ভাবছি তাদের আরো কিছু মুভি দেখে ফেলা দরকার।

যাই হোক, এইবার আসি Le Cercle Rouge (1970) মুভিটির ব্যাপারে। Le Cercle Rouge এর অর্থ হলো, The Red Circle। এইখানে মুভিটির শুরুতে এপিগ্রাফে এই The Red Circle সম্পর্কে একটি কোটেশানকে দেখানো হয় আর তা হলো, "Siddhartha Gautama, the Buddha, drew a circle with a piece of red chalk and said: 'When men, even unknowingly, are to meet one day, whatever may befall each, whatever the diverging paths, on the said day, they will inevitably come together in the red circle.'"----যদিও গৌতম বুদ্ধ আদৌ এই ধরনের কোনো উক্তি করেন নি, পরিচালক Melville এইটা নিজে থেকেই বানিয়ে নেন।

কোটেশানটির পুরো প্রতিচ্ছবিটিই এই মুভিটিতে যেনো অন্যভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক।আগেই বলেছি মুভিটি ক্রাইম থ্রিলার জেনারের, মুভিটির রানিংটাইম বেশ লম্বা, প্রায় ২ ঘন্টা ২০ মিনিট। কিন্তু পরিচালক Melville এতোটাই পটু আর সিদ্ধহস্ত যে কোন ফাঁকে সেই সময়টুকু কেটে গেলো বুঝতেই পারলাম না, মনে হচ্ছিলো মুভিটা আরো কিছুক্ষন চললে ক্ষতি কি? মুভিটির স্টোরি তেমন একটা জটিল কিছু না, তবে স্টোরিটেলিংটা এজ ইউজ্যুয়ালি চমৎকার লেভেলের।আর পরিচালক Melville এর একটা আলাদা স্টাইল আছে, তার গোটা মুভিটিতে সংলাপ বলতে গেলে তেমন কিছুই থাকে না, বিশেষ করে স্টার্টিংয়ের ১০-১৫ মিনিটতো একেবারেই চুপচাপ।আর ক্যামেরাওয়ার্ক আর এডিটিং এতোটাই সুন্দর যে মুভিটির ভিতরে ঢুকতে তেমন একটা সময় লাগে না। Le Cercle Rouge মুভিটিও তাই, গল্পের ফ্লো অসাধারন লেভেলের।

এবারে মুভিটির প্লট সম্পর্কে কিছু বলি, গল্পের শুরুতে আমরা Corey আর Vogel নামের দুইজনের সাথে আলাদাভাবে পরিচিত হবো।Corey একটু কুল টাইপ ক্যারেক্টর যে কিনা একটি চুরির দায়ে জেল খাটছিলো, কিন্তু জেলখানায় ভালো ব্যবহারের ফলে সে নির্ধারিত সময়ের বেশ আগেই মুক্তি পায়।ঐ একই দিনে Vogel নামক এক মার্ডারারকে পুলিশ সুপারইনটেন্ডেন্ট Matte এর কাস্টডিতে ট্রেনে করে নিয়ে যাওয়ার সময় Vogel সুকৌশলে ট্রেন থেকে পালিয়ে যায়।শুরু হয় তাকে খুঁজতে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান।ঐসময় Vogel এর সাথে Corey এর ঘটনাক্রমে পরিচয় হয়, এবং একজন আরেকজনের পরিচয় জানতে পেরে উভয়ই মোটামুটি ভালো বন্ধু হয়ে যায়।এদিকে Corey তার বসের কাছ থেকে বেশ ভালো এমাউন্টের টাকা জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়।পথিমধ্যে সেই বসের লোকজনের সাথে Corey আর Vogel এর এনকাউন্টার হয়।Corey এর পিছু নিয়েছে বসের লোকজন আর Vogel এর পিছনে লেগে রয়েছে পুলিশের বিশাল ফোর্স।Vogel এর এইরকম পালিয়ে যাবার দরুন চাকরি নিয়েই টানাটানি পড়ে যায় বুড়ো পুলিশ অফিসার Matte এর। এরইমধ্যে Corey আর Vogel একটি জুয়েলারির দোকানে প্রায় ২০ মিলিয়ন টাকার সমমূল্যের জুয়েলারী ডাকাতি করবার দারুন একটা প্ল্যান করে।আর এভাবেই চোর-পুলিশ-বাবু-ডাকাতের মতো চলতে থাকে কাহিনী।সবমিলিয়ে ভজঘট অবস্থা। আর সবকিছুর শেষ যেনো হয় সেই কোটেশানটার মতোই, একটি লাল বৃত্তের গন্ডীর মাঝে ।

এবার মুভিটি সম্পর্কে একান্ত নিজের কিছু বিশ্লেষনী বলি।প্রথমত, এইটার এন্ডিং মোটামুটি অনুমান করা গেছে, যেটা আমি Le Samouraï (1967) এর বেলায় একেবারেই পারি নাই।আর সত্যি বলতে কি, Le Cercle Rouge (1970) মুভিটিতে যে এন্ডিং দেখানো হয়েছে আমি জানতাম এমনই হবে, কিন্তু তা মন থেকে মেনে নেওয়াটা একটু কষ্টকর ছিলো।আরেকটু বাড়তি টুইস্ট হলে আরো জমতো।যদিও মুভিটিতে টানটান কিছু মুহূর্ত আছে, যেমন Vogel এর ট্রেন থেকে পালানোর মুহূর্ত, তারপরে Corey এর গাড়ি চেকিংয়ের দৃশ্যটা, তবে সবচেয়ে আলাদা করে যেটা বলতে হয়, তা হলো, জুয়েলারির দোকানে ডাকাতির দৃশ্যগুলো।এতো ডিটেইলড আর চমৎকার চিত্রায়ন, ভীষন ভালো লেগেছে ঐ জায়গাটা।

পরিচালকের মেকিংয়ের ব্যাপারে আমি আগেই বলেছিলাম, Melville ভীষন কুল আর স্টাইলিস্ট একজন মেকার।এতো সীমিত ডায়ালগ নির্ভর মুভিকে প্রানবন্ত করতে গেলে স্টোরিটেলিংটা বেশ নিখুঁত আর শক্তিশালী হতে হবে।Melville এর কাজ এই দিক দিয়ে বেশ ভালো।মুভির শুরুতে ট্রেনের একটা লং শর্ট ছিলো, ঐটা দারুন লেগেছিলো।আরেকটা জিনিসের প্রশংসা করতে চাই, সেটা হলো কোনো চরিত্রকে কিভাবে এতোটা সুনিপুন এবং অন্যরকমভাবে প্রকাশ করা যায় তা দেখে ভীষন অবাক হয়েছি।এখানে প্রত্যেকটা ক্যারেক্টারই সুপার কুল।এখানে সবার ব্যাক্তিগত জীবনের নানান দিক ফুটে এসেছে,কিন্তু সেটার রিপ্রেজেন্টেশান এতোটাই মোলায়েম আর চমৎকার, কি বলবো।যেমন পুলিশ সুপারইনটেন্ডেন্ট Matte এর জীবনের একাকীত্ব বুঝাতে তার পোষা বিড়ালগুলোর উপস্থিতি, তারপর এক্স পুলিশ অফিসারের মানসিক দুরবস্থা বুঝাতে তার অবচেতন মনে বিভিন্ন পশুর উপস্থিতি, Corey আর তার বসের তিক্ত সম্পর্ক বুঝাতে Corey এর প্রাক্তন প্রেমিকার কয়েকটি ছবি আর মুক্তির পর বসের শোবার ঘরে সেই মেয়ের উপস্থিতি------এটাকেই বলে স্টোরিটেলিংয়ের সৌন্দর্য।

আরেকটার দৃশ্যের কথা আলাদা করে না বললেই নয়, যখন সেই এক্স-পুলিশ জেনসেন জুয়েলারীর দোকানের লকটি ভাঙ্গার জন্য স্ট্যান্ড থেকে বন্দুকটা নিয়ে নিজেই এইম করে লক্ষ্যভেদে সমর্থ হয়----সিম্পলি অসাধারন একটা দৃশ্য।একজন মানুষ পতনের ঢালে হারিয়ে যেতে যেতে যখন খোলস ভেঙ্গে বের হয়ে আসে তার কি দারুন একটা বহিঃপ্রকাশ।তার উপর একজন মার্ডারার আর চোরের মাঝে সিকি পরিমাণ খারাপ দিক কিংবা খারাপ কোনো আচরন দেখতে পাওয়া যায় নি। এইখানে কোনো চরিত্রের মাঝে ইমোশনাল বহিঃপ্রকাশ নেই, প্রত্যেকের লাইফলাইন আর কোড যেনো একেবারেই আলাদা।হালের হলিউডি গ্যাংস্টার মুভিগুলোতে যেমন মার মার কাট কাট আর গালিগালাজ আর গোলাগুলির যথেচ্ছ ব্যবহার দেখি, আর এই Jean-Pierre Melville কতোটা গ্র্যান্ড স্টাইল আর প্যাশনের মাধ্যমে সেই জগৎটাকে দেখিয়েছেন যে তাকে আলাদা করে একটা বাহবা দিতেই হয় !!!!

এবার আসি কাস্টিংয়ের ব্যাপারে। Corey এর চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেছেন Alain Delon। Le Samouraï (1967) তে যেমন Alain Delon একাই টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন, Le Cercle Rouge (1970) মুভিটিতে এইরকম চারজন শক্তিশালী চরিত্রের দেখা পাই।এবং তারা প্রত্যেকেই অসাধারন পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন।একজনের নাম তো বললামই, বাকি তিনজন হলো, Vogel এর চরিত্রে Gian Maria Volonte, এক্স পুলিশ অফিসার এবং এক্সপার্ট শ্যুটার Jansen এর চরিত্রে Yves Montand এবং Andre Bourvil যিনি Mattei এর চরিত্রে ছিলেন।

সবশেষে বলবো, Le Cercle Rouge (1970) একটি চমৎকার ফ্রেন্চ নয়ের মুভি।এন্ডিংটা আরেকটু অন্যরকম হলে আরো ভালো হতো।মুভিটির আইএমডিবি রেটিং ৮.১, আমার পার্সোনাল রেটিং ৮/১০।

মুভিটির ডাউনলোড লিংক: 720p - 1GB ---

মেগাআপলোড: http://safelinking.net/p/be48ed6e90

ফাইলসনিক: http://safelinking.net/p/f4814197e8

ফাইলসার্ভ: http://safelinking.net/p/7afe9c3988

মিডিয়াফায়ার কোথাও খুঁজে পেলাম না,পেলে পোস্টের সাথে এড করে দিবো।

সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০১১ রাত ১১:৪৫
২৩টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×