একটি সমাজের রুগ্নতা,নগ্নতা,বিকলঙ্গতা তখনই স্পষ্ট হয় যখন দেখা যায় দায় মুক্তির তাড়নায় একটার পর একটা বৃদ্ধাশ্রম সৃষ্টি হয় আর সেই মমতাহীন বন্দীশালার ঘর গুলো মমতাময়ী মা বাবাতে পুর্ন হয় ।দামী গাড়ীতে চড়ে দামী সন্তানরা যখন মুল্যহীন বাবা মাকে এখানে ছেড়ে যায় ষাটোর্ধ বৃদ্ধার দীর্ঘশাষে প্রভুর আরশও বুঝি কেপে ওঠে অথচ নাড়ী ছেড়া ধনগুলো থাকে নির্বিকার !এদেশে বছর পাচ আগেও তো চাইল্ড কেয়ার সেন্টার ছিল না তবে কেন আজ ভুরি ভুরি বৃদ্ধাশ্রম তৈরি হবে,বাবা মায়েরা বাতিলের জঞ্জালে পরিনত হবে ।সামনে ঈদ,প্রতিটি টেলিভিশন চ্যানেলে শত আনন্দের খবরের ভীরে একটি খবর অনাদর আর অযত্নেই প্রচারিত হবে ।বৃদ্ধশ্রমে বিচ্ছিন্ন মানুষগুলোর ঈদ ।সাংবাদিকরা নাটকীয় ভাবে সংবারটি পচার করবে ।হৃদয়স্পর্ষী আবহাওয়া সঙ্গীত,ভালো লাগার মতো কিছু কথা,ক্যামেরার ক্লোজ ইন শর্ট,বৃদ্ধগুলোর চকচক করা চোখ,বিপর্যস্থ বিধ্ধস্ত মানুষগুলোর হাড় জিরজিরে রুগ্ন হাতে চোখের জল মোছার প্রানন্তকর চেষ্টা !
নগরায়ন,শহুরে ব্যাস্ততা আর সামাজিকতা রক্ষার দোহাই দিয়ে মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে তুমি কি অতি সামাজিক হতে চাও ?নাহ !বড়জোর একটা সামাজিক জানোয়ার হতে উঠতে পার ।বাবা মাকে বৃদ্ধাশ্রমে ফেলে ঈদের দিন মিষ্টি শরবতে চুমুক লাগাবে ? নাহ,যেটা খাবে ওটা শরবত নয়, মা বাবার চোখের জল,গায়ের রক্ত।মনুষত্ববোধের হয়ত আর কিছুই বাকী নেই তারপরও বলি, ঈদের দিনটা অন্তত মা বাবাকে দেখতে যাবার নামে আর উপহাস করো না ।তোমার বিচার তোমার বাবা মা নয় তোমার সন্তানই করবে কথা দিলাম ।বড় হচ্ছো বুড়ো হচ্ছো কিন্তু মানুষ হচ্ছো না ।দুটো জানা গল্প দিয়ে শেষ করি :
গল্প ১ : শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে এক সন্তান তার মাকে খুন করতে চলেছে ।শয়তান বলেছে সে যদি তার মাকে খুন করে তার কলিজা কেটে তার হাতে দিতে পারে তবে তাকে বহু স্বর্নমুদ্রা পুরস্কার দেয়া হবে ।লোভে অন্ধ হয়ে সন্তান চলল বাড়ীর দিকে ।ঘরে ঢুকে দেখে মা আলনায় পিছন ফিরে কাপড় গোছাচ্ছে ।কোন কথা না বলে সন্তান তার মায়ের পিঠে একটার পর একটা কোপ দিতে লাগল ।মৃত্যু নিশ্চিত করে সন্তান মায়ের বুক চিড়ে কলিজা বের করল । তারাহুরা করে ঘর থেকে বের হতে গিয়ে দরজার কপাটির সাথে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পড়ে হাত থেকে কলিজাটা পড়ে গেল !রক্তাত্ব মায়ের কলিজাটি তখন বলে উঠল খোকা ব্যাথা পেয়েছিস ?
গল্প ২ :মৃত্যুর একেবারে পুর্বমুহুর্তে বাবা তার সন্তানকে কাছে ডেকে বলল,খোকন,আমি মরে গেলে আমার আলমিরার মধ্যে একটা চিঠি আছে ওটা পড়বি কেমন ?বাবা মরে যাবার দুদিন আর চিঠির কথা খোকনের মনে নেই ।দুদিন ধরে কিছুই খায় নি ,কাদতে কাদতে খোকন অসুস্থ হয়ে পড়েছে,ঠান্ডা লেগে জ্বর এসেছে ।দুদিন পর মনে হল চিঠিটার কথা ।তারাতারি চিঠিটা খুলে দেখল তাতে লেখা "খোকন নিশ্চয়ই তুই কিছু খাস নি, এখনই যেয়ে খেয়ে আয় বাপ,তোর তো অল্পতে ঠান্ডা লেগে গলা ব্যাথা হয়,জ্বর হয় ।এই ড্রয়ারে সব ঔষধ রাখা আছে,যা ভাত খেয়েই অসুধগুলো খেয়ে নে ।
এই হল আমাদের বাবা মা !এদের বৃদ্ধাশ্রমে ফেলে আপনি ঈদ করবেন ?কিভাবে করবেন ।আমার বিশ্বাস আমার ফ্রেন্ডলিস্টে এমন কেউ নেই যদি থেকেও থাকে বিনীত ভাবে বলছি যান, মা বাবাকে বাড়ীতে নিয়ে আসুন ।অন্তত ঈদের দিনটাতে তাদের মুখে হাসি ফোটান ।তারা তো সারাজীবনই আপনার জন্য করলেন আপনি অন্তত একটি দিনের জন্য কিছু করুন ।আল্লাহ খুশি হবেন ।
কোন বাবা মায়ের শেষ আশ্রয় যেন বৃদ্ধাশ্রমে না হয় ।সেই সমস্ত কুলাঙ্গার মন্তানকে সামাজিক ভাবে বয়কট করুন ।যে বাবা মায়ের হাত ধরে প্রথম হাটতে শিখেছেন জীবনের শেষ প্রান্তের সেই বৃদ্ধার হাতটি ছাড়বেন না ।এটা আপনার করুনা কিংবা মহানুভবতা নয় আপনার দায়িত্ব আর তাদের প্রাপ্য ।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ২:৫৮