somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেলজিয়ামের পথে ঘুরাঘুরি

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৭ ভোর ৬:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



হাতে যেহেতু সেনজেন ভিসা আছে তাই যতটুকু পারা যায় ঘুরে নেওয়ায় ভালো। আমাদের প্ল্যানে বেলজিয়াম ঘুরা ছিলোনা, কিন্তু হাতে আরো একদিন সময় আছে তাই ট্যুর অফিসে গিয়ে বেলজিয়ামের ব্রুজেস ঘুরার টিকেট কেটে নিলাম। ট্যুর অফিস থেকে বলে দিয়েছে পরদিন সকাল সাতটার আগেই যেন তাদের মিটিং পয়েন্টে থাকি, ঠিক সাতটায় তাদের বাস আমষ্টারডাম থেকে বেলজিয়ামের ব্রুজেসের দিকে ছেড়ে যাবে। আমরা সাতটার আগেই মিটিং পয়েন্টে চলে এলাম। আমার আবার চলতি পথে বাইরের দৃশ্য দেখতেই মজা লাগে তাই বাসের দোতলায় বসলাম। বাস ছাড়ার সময় গাইড তার পরিচয় দিয়েছে, আমাদের সব ট্যুরিষ্টদের হাতে একটা করে ইয়ারফোন দিয়েছে যাতে পথে যেতে যেতে গাইড যা বলে সব আমরা শুনতে পারি। আমি ইয়ারফোন ইউজ করতে পারিনা বলে ব্যাগেই রেখে দিলাম। ছেলেকে বললাম বাবা তুমি শুনে রাখো, পরে সব আমাকে বলবে। ছেলের আবার সব কিছু জানার বিশাল আগ্রহ।


আমরা এই পথে চলেছি বেলজিয়ামের পথে




বাস থেকে নেমে এই ব্রিজ পার হয়েই আমরা বেলজিয়ামের ব্রুজেস যাচ্ছিলাম। বাসের কাছে ফিরে আসার জন্য এগুলি সব মনেও রাখছিলাম।

গাইড আমাদের বললো যে তিন ঘন্টায় আমরা ব্রুজেস পৌঁছে যাবো। বাস যখন চলা শুরু করেছে সবাই কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে নিয়েছে, আর আমি বাইরে তাকিয়ে দেখি। আমাষ্টারডাম শহর ছেড়ে আমাদের বাস চলছে ব্রুজেসের পথে। রাস্তার দুইপাশে শুধু সবুজ ঘাস, মাইলের পর মাইল সবুজ আর সবুজ, কিছু কিছু আবার হলুদ ফুল ফুটে আছে, এসবই গরুর খাবার। আবার টিউলিপের ফিল্ড ও দেখতে পাচ্ছিলাম। এত সবুজ চারপাশে যে চোখ ভরে দেখতেই ইচ্ছে করে।



এটা নাকি ব্রুজেসের লাভ লেক


লাভ লেকের পাড়ে উনারা বিশ্রাম করেন, কেউ কেউ আবার পানিতে ভেসে বেড়ান



এক সময় আমাদের বাস বেলজিয়ামের রাস্তায় প্রবেশ করলো। কোন চেকিং নাই, ইমিগ্রেশন নাই কিচ্ছু নাই। একই রাস্তা শুধু সামনের সাইন বোর্ডে লেখা বেলজিয়াম। বাসে এক দেশ থেকে আরেক দেশে এটাই আমার প্রথম জার্নি।সবচেয়ে আশ্চর্য যা লেগেছে তা হচ্ছে আমি রাস্তার আশে পাশে দেখার সাথে ফেইসবুকিং ও করছিলাম, যেই বাস বেলজিয়াম লেখা সাইন বোর্ড রাস্তায় চলা শুরু করেছে এক সেকেন্ডেই নেদারল্যান্ড এর মোবাইল ও ইন্টারনেট কানেকশন বন্ধ হয়ে গেলো। এক হিসাবে ভালোই লাগছিল, যতক্ষন ব্রুজেস থাকবো ততক্ষণ নেট ওয়ার্কের বাইরে থাকবো।


এটা ব্রুজেসের মার্কেট স্কয়ার, এখান থেকে ঘোড়ার গাড়ি ভাড়া করে আমরা ব্রুজেস ঘুরতে বেড়িয়ে পরলাম।










পুরা ব্রুজেস জুড়েই রেষ্টোরেন্ট। ভেতরে, বাইরে সবখানেই বসে খাওয়া যায়।













ঠিক তিন ঘন্টায় আমরা ব্রুজেস পৌছে গেলাম। বাস থেকে নামার আগে গাইড আমাদের কিছু কথা বললো, বললো যে এখন যেখানে বাস পার্কিং করা আছে, ঠিক ৫টায় আবার বাস এখান থেকে আমষ্টারডামের দিকে রওনা দিবে, কেউ যদি এক মিনিট দেরি করেও আসে সে বাস মিস করবে, আর যে বাস মিস করবে সে আজ আর আমষ্টারডাম ফিরে যেতে পারবেনা কারন ৫টার পর কোন বাস আমষ্টারডাম ফিরে যায়না, তাকে রাতে ব্রুজেস থাকতে হবে, পরের দিন ট্রেনে সে আবার আমষ্টারডাম ফিরতে পারবে। অনেক ট্যুরিষ্টদের সাথেই নাকি এমন হয়, এক দুই মিনিট দেরি করে বাসের কাছে এসে অনেককেই থাকতে হয়েছে, ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। আমরা ঠিক করলাম সাড়ে চারটার মধ্যেই বাসের কাছে চলে আসবো, কোনভাবেই বাস মিস করা যাবেনা, কারন পরেরদিন সকালে আমাদের সুইজারল্যান্ডের ফ্লাইট।

















বেলজিয়াম জার্মানির পাশের ছোট্ট এক দেশ। ভ্রমণের জন্য অনেকেই বেলজিয়াম বেছে নেন, তার মধ্যে অনেকেরই পছন্দের জায়গা বেলজিয়ামের ব্রুজেস। বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলস থেকে মাত্র আধা ঘন্টার পর ব্রুজেস। ব্রুজেসের চকোলেট, ওয়েফল, বিয়ার আর ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বিশ্ব বিখ্যাত। ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের সাথে মেয়নিজ আর টমেটোর একটা সস দেয়, আসলেই অনেক মজার। ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খাওয়ার জন্য দিতে হয় বিশাল লাইন। ব্রুজেসে আছে সমুদ্র , আছে অনেক ক্যানেল। ব্রুজেস ইউরুপের অন্যান্য শহর থেকে আলাদা, এই ব্রুজেসকে বলা হয় ‘ ভেনিস অফ দ্যা নর্থ’ মানে উত্তরের ভেনিস।











আমাদের গাইড আমাদের পথ দেখিয়ে একটা জায়গায় এনে ছেড়ে দিয়েছে, একটা পার্ক আর সাথে একটা দোকানের সাইনবোর্ড দেখিয়ে বললো এখন তোমরা ফ্রি, নিজেদের মত করে ব্রুজেস ঘুরবে, পুরা ব্রুজেস ঘুরতে পারো, চকোলেট ওয়েফল আর বিয়ার খেতে পারো, বিখ্যাত ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খেতে কেউ ভুলবেনা, সাগর পাড়ে গিয়ে জাহাজে করে ঘুরতে পারো, ক্যানেল ট্যুর দিতে পারো এবং সব শেষ করে এই পার্ক আর এই দোকানের সাইনবোর্ড দেখে বাস পার্কিং এ ফিরবে। আমরা তো কিছুটা ভয়ই পেয়ে গেলাম, সব রাস্তা একই রকম, সব বাড়ি একই রকম, কিভাবে সব মনে রাখবো। তাই গাইডের মোবাইল নাম্বার নিয়ে নিলাম।







অনেক ট্যুরিষ্ট আমরা এক বাসে এসেছি, সব মিলে প্রায় ৭০ জনের মত হবে, গাইড চলে যাওয়ার পর যে যার মত বেড়িয়ে পরেছে ঘুরার জন্য। পুরা ব্রুজেসেই দেখলাম ট্যুরিষ্ট গিজগিজ করছে। সব দিক থেকে নাকে এসে লাগছিলো ওয়েফলের মন মাতানো গন্ধ। সব খাবারের দোকানেই সামনের বাইরে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। সতের আঠারো শতকের পাথুরে বাড়ি ঘর, ভবন, চার্চ দেখছিলাম হেটে হেটে। আমরা হাঁটতে হাঁটতে ব্রুজেসের মার্কেট স্কয়ারে এসে ওদিকের আশেপাশে কিছুক্ষন ঘুরে ঘোড়ার গাড়ি ভাড়া করলাম, এই ঘোড়ার গাড়িই আমাদের ব্রুজেসের পথে পথে ঘুরে দেখাবে। ঘোড়ার গাড়িতে বসে বসে দেখছিলাম ব্রুজেস আর ঘোড়ার গাড়ির চালক আমাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিল নানা রকম ভবন, ঐতিহাসিক স্থাপনাসহ আরো অনেক কিছুর সাথে।






এখানে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই সহ আরো নানা কিছু বিক্রি করে।


ফ্রেঞ্চ ফ্রাইটাই মেয়নিজের সাথে আসলেই অনেক মজার


ওয়েফলের দেশে এসে এটা না খেলে কি চলে। ওয়েফলের সাথে বেলজিয়ামের পতাকাও থাকে


চকোলেটের দেশে কত রকমের যে চকোলেট








প্রচুর শীতের কারনে একটু পর পর হট চকলেট আর চা কফি হাতে নিয়েই ঘুরতে হয়।

আমরা ঘোড়ার গাড়িতে ঘুরে আবার মার্কেট স্কয়ার চলে এলাম। ওখানে টুকটাক খাবার খেয়ে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই কেনার জন্য লাইন দিলাম। ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খেয়ে ওয়েফল খেলাম। সেদিন প্রচুর ঠান্ডা আবার গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিও হচ্ছিল তাই হাতে হট চকোলেট নিয়ে আমাদের বাস পার্কিং এর দিকে রওনা দিলাম। দুয়েকবার পথ ভুল করলেও শেষ পর্যন্ত ঠিকই বাসের কাছে চলে এলাম পথ চিনে। পার্কিং এর এখানেও আছে ওয়েফল, হট চকোলেট সহ আরো কি কি বিক্রি করার একটা দোকান। আর সাথে আছে ওয়াস রুম। বেশ সুন্দর পরিষ্কার ওয়াশ রুম। সব ট্যুরিষ্ট বাসে উঠার আগে এখানে এসে ফ্রেস হয়ে নিয়েছে। ওয়াশ রুম ব্যবহার করার জন্য একেকজনকে দিতে হয় ২ ইউরো করে। বাস ঠিক পাঁচটায় ছেড়ে দিয়েছে, আমরা ৮টায় এসে পৌঁছলাম আমষ্টারডাম।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৭ ভোর ৬:৩৬
৪০টি মন্তব্য ৪০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৪৯

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।

রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×