somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার বউ কখনো মা হবে না

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সিজার অপারেশন জিনিসটা ভাল করে বুঝতাম না। কথা প্রসঙ্গে একদিন এক বন্ধু বলে, এই অপারেশনের মাধ্যমে নাকি পেট কেটে বাচ্চা বের করা হয়। শুনেই আমার খারাপ লাগে। আমি কখনো আমার বউয়ের সিজার অপারেশন করাব কীনা? বন্ধুটি এ ব্যাপারে জানতে চাইলে; আমি বলি, না এটা তো কিছুতেই সম্ভব না।
কেন?
বউয়ের এত সুন্দর পেট আমি কোন পাগলামীতে কাটতে দেব?
সে হেসে জানায়, পেট কাটলেও ডাক্তাররা এমন ভাবে জোড়া লাগিয়ে দেবে যে তুই ধরতেই পারবি না। তবে, শুনেছি দুবারের বেশি সিজার অপারেশন করানো যায় না।
তুই কী তোর বউকে দুবার সিজার অপারেশন করাবি?
দরকার হলে অবশ্যই করাবো।
আমি মাথা নাড়ি আর মনে মনে সিদ্ধান্ত নেই, আমার যেন কোনোদিন সেই দরকার না পড়ে।
সেদিন পড়ন্ত বিকেলে কলেজ মাঠের এক কোণে দাঁড়িয়ে উষ্ণ উজ্জল আকাশ দেখছিলাম; আর বিষয়টা নিয়ে ভাবছিলাম। হঠাৎ এক ছোট ভাই এসে জিগ্যেস করে, ভাইয়া নির্ঝরের বাসায় গিয়েছিলেন?
আমি অবাক হয়ে ঘুরে দাঁড়াই। জানতে চাই, কেন?
নির্ঝরের ছোট আপুটা তো মারা গেছে।
শামা?
হুম।
কিভাবে?
সন্তান জন্ম দেওয়ার সময়।
কি দূর্ভাগ্য! কখন?
দুই দিন হয়েছে। এ জন্যই তো নির্ঝর আমাদের সাথে খেলতে আসে না।
ওহ, লক্ষ্য করিনি।
ভেবেছিলাম আপনি শুনেছেন। এখন আমরা সবাই ওর বাসায় যাব। যাবেন?
আমি অপারগতা জানাই, না এখন না। সন্ধার পরে একবার যাব।
কথা শুনে সে চলে যায়। ছেলেদের সন্ধা পর্যন্ত ভলিবল খেলার কথা। কিন্তু আজ আগে আগেই নেট গুটিয়ে ফেলা হয়েছে। দেখতে দেখতে সবাই চলে যায়। আমি তবুও থেকে যাই।
জানতাম, সন্ধার পর আমার আর যাওয়া হবে না। যাওয়ার ইচ্ছেও ছিল না। তা ছাড়া আজকাল মানুষের মৃত্যু আমাকে আর ভাবনা তাড়িত করে না। তবুও একবার মনে করতে চেষ্টা করি, জীবনে সর্ব প্রথম কাকে মরতে দেখেছিলাম। মনে পড়ে সেই ছয় কি সাত বছর বয়সে হবে। আমাদের এলাকার মেয়র মারা গিয়েছিলেন। তাঁকে দেখতে অনেক বড় বড় মানুষ এসেছিলেন। আমি ভীড়ের মধ্যে সেটা উপভোগ করতে গিয়েছিলাম।
এরপর আর ওই বিষয়টা নিয়ে আমার মাথা ঘামানোর আগ্রহ ছিল না। মাথা ঘামাইও নি। তবুও দুদিন পর ব্যাপারটা আবার আমার চোখের সামনে চলে আসে। সকাল বেলায় দেখি, নির্ঝরের মেজো বোনটা রাস্তার পাশে স্বজনদের ধরে হাউমাউ করে কাঁদছে। দীর্ঘদিন সে আমার ক্লাসমেট ছিল। আমার এক বন্ধুর সাথে অনেক দিন প্রেমও করেছে। তাঁরপর আর এক ছেলের সাথে সম্পর্কে করে সরে গেছে। এখন এক জার্মান প্রবাসী স্বামীর সাথে সংসার করছে। তাঁকে এভাবে দেখে, না চাইতেও আমার বুকের ভেতর একটা অচিন ব্যাথা অনুভূত হয়। আমি জানি না, এর অর্থ কী?
যদিও স্পষ্ট মনে করতে পারি, আর একবার আমার এমন হয়েছিল। যেদিন এই মেয়েটার বাবা মারা গিয়েছিল। আমার বন্ধুটি আমাকে তাঁর প্রেমিকার সাথে দেখা করার জন্য সাথে নিয়ে গিয়েছিল। তাঁদের বারান্দায় দাঁড়িয়ে মেয়েটার সাথে দেখা করেছিলাম। সেদিনও সে ছিল বিধ্বস্ত। তাঁর চাহনীতে ছিল অসহায়ত্বের গভীর ছাপ। মনে হয়েছিল সে প্রায় নিঃস্ব। বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয়তা বোধ ক্রমশ হারিয়ে ফেলছে। যেকোনো সময় তীব্রভাবে ভেঙে পড়তে পারে। তখন আমার মূখে সান্তনা দেওয়ার কোনো ভাষা ছিল না। আজও নেই।
আনমনে ভাবি, মৃত্যু কেন এত নিষ্টুর?
মাঝ রাতে স্বপ্নে দেখি, প্রায় এক দশক পেছনে চলে গেছি। ছোট নির্ঝর আমাদের ভয়ংকর ফাস্ট বোলিং পিচে তাঁর বন্ধুকে নিয়ে খেলতে এসেছে। ব্যাটিং করার সময় আমাদের সাইজের ব্যাটটা সে ঠিকমতো তুলতেই পারতো না। তবুও পিচে টিকে থাকার জন্য কী চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞাই না ছিল ওঁর। অবশ্য আমরা ওঁকে খুব আস্তে আস্তে বল করতাম। যেন ব্যাথা না পেয়ে যায়।
সে সময়, প্রতি বিকেলে মাঠের পাশের রাস্তা দিয়ে নির্ঝরের ছোট বোনকে তাঁর মায়ের সাথে ঘুরে বেড়াতে দেখতাম। মহিলা বাসায় বাসায় খুব বেড়াতে পছন্দ করতেন। তারপর দেখতে দেখতে নির্ঝরের ওই বোনটা বড় হয়ে উঠেছিল। আমার ক্লাসমেটের কিছুদিন পরই তাঁর বিয়ে হয়ে যায়।
আজ সে কবরের বাসিন্দা।
হঠাৎ করে স্বপ্নের মাঝ পথে ঘুম ভেঙে গেলে, কথাটা ভেবে আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলি। অনেক্ষণ আর চোখে ঘুম আসে না। একবার পাশে ঘুমের দেশে তলিয়ে থাকা রিহানীর দিকে তাকাই। কী নিষ্পাপ চাহনী। আমার খুব মায়া হয়। যদি সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে সেও একদিন?
আমি আর ভাবতে পারি না।
এক সময় মনে হয়, ওঁকে জাগিয়ে তুলি। কয়েকটা কথা বলি। খুব গুরুত্বপূর্ণ সেই কয়েকটা কথা। আবার মনে হয়, ওঁর সুন্দর ঘুমটা কেন ভাঙাবো? সকালেই তো বলতে পারি। কিন্তু রিহানীকে না জাগিয়ে আমার আর ঘুম আসে না। না বলতে পারা কথাগুলো যেন বের হতে না পেরে, ভেতরে গরম আগুন হয়ে হল্কা তুলছে। আমি এ যন্ত্রণা কিছুতেই সহ্য করতে পারি না।
অবশেষে তাই রিহানীকে জাগিয়েই তুলি।
কী হয়েছে?
জেগেই সে জানতে চায়।
আমি গম্ভীরভাবে বলি, তোমাকে একটা কথা বলতে চাই। মনে হচ্ছে খুব গুরুত্বপূর্ণ।
আমার কথা শুনে সে খানিক বিরক্ত হয়। ওঁর কপালে কুঁচ পড়েছে। বুঝতে পারি, এই মুহুর্তে জাগার জন্য সে প্রস্তুত ছিল না। টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে দিতে দিতে তবুও সে বলে, কী বলবে বল।
আমি বলি, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা কোনোদিন সন্তান নেব না।
মানে?
রিহানী ভ্রু কুঁচকে তাকায়। এখন সে আরও বেশি বিরক্ত।
আমি আর কিছু বলতে পারি না।
সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে একটা মেয়ের আসলে ঠিক কতটা সমস্যা ফেস করতে হয়, সে সম্পর্কে আমার কোনো ধারণাই নেই। আমি জানি না কী থেকে কী হয়। কেন তাঁরা মারা যায়? তাই নিজের বউয়ের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আমাকে আতংকিত করে তুলে।
আমি শুধু সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখি, আমার বউ কখনো মা হবে না।

(প্রিয় ডট কমে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল)
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×