বেশ কিছু দিন ধরেই মাথা ব্যথাটা নস্টালজিক । শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে কি যেন ভাবি, কি যেন দেখি যা নিজেরই বোধগম্য হয় না ।
কিন্তু বহুদিন বয়ে গেছে, প্রিয়তার কথা ভাবা হয়নি । 'প্রিয়তা' আমার কল্পনার গৃহিণী, যাকে কখনো দেখা হয়নি, 'ভালোবাসি' এ কথাটিও বলা হয়নি ।
শরীরের ভিতরে যে ভাবুক অথবা বৈরাগী ভাবটা আছে, যা লুকিয়ে রাখতে চাই কিন্তু প্রায়শই হয়ে উঠে না । অথচ, প্রিয়তা আমার এই ভাবুক ভাব টা বেশ পছন্দ করতো, নির্বাক চোখে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতো, কি যেন বুঝার চেষ্টা করতো!
অনেকদিন হল কবিতা আবৃত্তি করা হয় না, আগে একা বাসায় প্রিয়তা কে একের পর এক কবিতা শোনাতাম । কবিতায় 'ভালোবাসি' শব্দটি এলেই কেমন যেন লজ্জা কিংবা আবেগে তাঁর ভাব-ভঙ্গিমা বদলে যেতো, কিছু একটা বলতে চাইতো কিন্তু বলতে পারত না কখনোই ।
একদিন ধানমণ্ডি লেকে, শত কাপলের ভিড়ে আমিও প্রিয়তা কে নিয়ে আছি । তো হঠাৎ করেই প্রিয়তা আমার দুর্দান্ত বাজে কণ্ঠে গান শোনতে চাইলো, আমি গাইলাম- 'ইচ্ছে হলে ভালোবাসিস, না হয় থাকিস- যেমন থাকে স্নিগ্ধ গাঙচিল' । গানটি শেষ না হতেই, প্রিয়তা কেন যেন আমার কল্পনা থেকে হারিয়ে যায়, এরপর আমি গান থামিয়ে চুরুটে চুমুক লাগাই । উল্লেখ্য, প্রিয়তা আমার চুরুট খাওয়ার ধরণটাকেও বেশ উপভোগ করতো, ধোঁয়া উড়ানোর দৃশে অদৃশ্য হয়ে যেতো ।
আমি ঘুমে কখনো স্বপ্ন দেখি না, বা বানিয়েও দেখতে পারি না । একদিন ঘুম স্বপ্নে প্রিয়তাকে দেখেছিলাম, ও আমার পাশে মাথা রেখে আমার মতোই উপরের দিকে তাকিয়ে শুয়ে ছিল । সে রাতে মনটা খুব চেয়েছিল, প্রিয়তার হাত দুটি ধরতে, দু'চোখে দুটি চুমু, অথবা এরচেয়েও বেশী কিছু? ঘুম ভেঙে দেখি, বুকের মধ্যে কিসের যেন একটা হাহাকার । এরপর থেকে আর কখনোই প্রিয়তাকে ঘুম স্বপ্নে দেখা হয়নি, এমনকি ঘুমে কিংবা অ-ঘুমেও স্পর্শ করা হয় নি ।
অন্য আরেকদিনের কথা, প্রিয়তা আমার সাথে এতো রাগ করেছিল যে, আমার কল্পনা থেকে তিন দিনের জন্য উধাউ হয়ে গিয়েছিল । এমন সিলি ম্যাটার নিয়ে কেউ কখনো এভাবে রাগ করে, কখনো দেখি নি! ব্যাপারটা ছিল- আমি কেন বালিশে না ঘুমিয়ে কোলবালিশ সাথে নিয়ে ঘুমাই, তাই । কিন্তু কেন যে এমন করেছিল, যা আমি আজও উত্তর খুঁজে পাই নি । তারপর আমি সেই যে বালিশ-কোলবালিশ ছেড়েছি, এখন কাঁথা গায়ে নিতেও আতঙ্ক হয় ।
প্রিয়তা ভাল ভেজিটেবলস পাকুরা বানাতে পারে, অবশ্য আমাকে মাত্র একদিনই বানিয়ে খাইয়েছিল । সর্বশেষ পাকুরার পিস টা শেষ হয়ে যাবে বলে আমার আর কখনোই খাওয়া হয় নি ওইটা; রেখে দিয়েছিলাম কালো শার্টটার বুক পকেটে ।
এমনই করেই কেটে গেছে আমার অথবা আমাদের তিন-চার বছর ।
হঠাৎ ব্যস্ততায় সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যায়; ব্যস্ততাকে সাথী করে প্রিয়তাকে ফাঁকি দিয়ে ভুলে যাই এতদিনের এতকিছু । বড়ই অদ্ভুত লাগে, অবান্তর মনে হয় সবকিছু ।
প্রিয়তাকে আজ মিস করছি ভীষণরকম, নিশ্চয়ই প্রিয়তাও আমাকে । কিন্তু প্রিয়তাকে কি আর পাওয়া হবে কখনো?
প্রশ্নের উত্তরে, দীর্ঘনিঃশ্বাসে মিশিয়ে একটি গানই শুনছি_
মনো দিল না বধু
মনো নিল যে শুধু
আমি কি নিয়ে থাকি
মহুয়া মাতাই দোলক
দোলে পলাশের নোলক
বাঁধে কেউ বাহুরও রাখি
আমি কি নিয়ে থাকি
প্রিয়া তোর অবুঝ হিয়া
খুঁজে কোন সবুজ টিয়া
দিতে চাস আমায় ফাঁকি
আমি কি নিয়ে থাকি
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:২৬