পৃথিবীর বুকে আমরা মানুষ বসবাস করি। সেটা হঠাৎ করে নয় বা একসাথেও নয়। যুগ যুগ ধরে একের পর একের, এক ঘর থেকে এক বাড়ি, এক গোত্র থেকে আরেক গোত্র, পালাক্রমে বংশ, এলাকা, দেশ, এক দেশ থেকে আরেক দেশ, এভাবেই পৃথিবী। অর্থাৎ সামন্য থেকে অনেক। সে হযরত আদম (আঃ) বা এডাম থেকেই হোক আর ডারউইন মতবাদে বানর থেকেই হোক, আজকের পৃথিবীতে প্রায় ৭বিলিয়ন এর উপরে মানুষের বসবাস, এই মানুষগুলো একসাথে আসে নাই, এক-দুই-তিন-চার করে দশ-শত-হাজার-লক্ষ-কোটি-বিলিয়নে রূপান্তরিত হয়েছে।
সেই প্রাচীন কালকে আজকের কম্পিউটার যুগের সাথে তুলনা করলে চলবে না। আর পৃথিবীতে একটা সভ্যতায়ও মানুষ বসবাস করছে না। যুগে যুগে কত সভ্যতা এসেছে আর বিলীন হয়েছে। মনে করে দেখুন মিশরীয় সভ্যতার কথা, ফেরাউনদের দাপটের কথা, গ্রীক সভ্যতার কথা, সেই দূর্দান্ড প্রতাপশালী আলেকজান্ডারের কথা, আর আমি আপনি চুয়াল্লিশ-পয়তাল্লিশ বৎসরের বাংলাদেশ নিয়ে অতীতকে স্মরণে রেখে পথ চলা উচিৎ। আপনি যে বাঙালী সভ্যতার কথা বলেন, সেটা শুধু আপনার বাংলাদেশের না, কারণ বাংলাদেশ বাঙালী জাতীয়তাবাদে নয়, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে চলমান। বাংলাদেশে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতি বিদ্যমান, আর সব জাতি মিলেই বাংলাদেশ।
আপনাকে আমি শ্রদ্ধা করি। আপনার কলাম পড়া আমার একটা শখ বা নেশাও ধরতে পারেন। আমার মনে পড়ে, যখন আপনার কলাম পড়তাম, অনেক বন্ধু-বান্ধব আপনাকে পছন্দ করতো না বলে আমাকে নিষেধ করতো। অনেকে আপনাকে নাস্তিক মনে করে আর আমি আপনার কলাম পড়ি বলে আমাকেও নাস্তিক বলতো। এর মধ্যে কিছুদিন আগে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সাবেক মন্ত্রী জনাব কাদের সিদ্দিকী সাহেবের বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী সাহেব ইসলাম ধর্ম নিয়ে মন্তব্য করে বসলেন, ঠিক আছে আরব সমাজ নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে, তাদের খারাপ দিক নিয়ে সমালোচনা করা যেতে পারে, তাইবলে কারো বিশ্বাস নিয়ে মন্তব্য করা কি ঠিক? খুব সাধারণ ভাবে, কোন মানুষ যখন কাউকে ভালোবাসে যেমন ধরেন কোন মেয়েকে, সে কখনো তার ভালোবাসাকে নিয়ে সমালোচনা করে না বরং কেউ করলে তারও প্রতিবাদ করে। আর ধর্ম, যারা পালন করে, তাদের সর্বোচ্চ বিশ্বাসের জায়গা। আপনাকেও দেখলাম ইসলাম ধর্ম নিয়ে সমালোচনা হোক আর আলোচনা হোক, করে বসলেন। তাইলে কি ধরে নিবো লতিফ সাহেব যে শ্রেণীতে বাস করেন, আপনিও সেখানে অবস্থান করছেন। কিন্তু আমিতো আপনার স্থান অনেক উপরে দিয়ে রেখেছি।
এরমধ্যে কিছু দিন আগে করলেন সিলেট বাসী নিয়ে কটুক্তি। বাজে মন্তব্য। আপনার বুঝা উচিৎ ছিল, বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী (দেলু রাজাকার) সিলেটি নিয়ে একবার মন্তব্য করে ক্ষমা পর্যন্ত চেয়েছে। আপনার কি অনুমান করা উচিৎ ছিল না যে আপনি একটা গোষ্টী, একটা গোত্র, একটা জাতির বিরুদ্ধে কথা বলছেন।
আপনার আরো মন্তব্য আছে। একবার পড়েছি শেখ হাসিনাকে নিয়েও মন্তব্য করেছেন। লিখেছেন, জাতির জনক শেখ মুজিব সাহেব জীবিত থাকলে, আপনি দেশে গেলে অতি আদর করে ডেকে নিতেন। কিন্তু শেখ হাসিনা আপনাকে পাত্তা দিচ্ছেন না বলে বুঝাতে ছেয়েছিলেন, সেটা ১৯৯৬ থেকে ২০০০ সালের আওয়ামিলীগ ক্ষমতার সময়। আরতো রইলো অন্য দলের লোকদের সমালোচনা।
আপনি আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী। কোন ব্যক্তি নয়, এক সম্মান। আপনার অনুসারীর সংখ্যা কম নয় কিন্তু। আপনি সেই ব্যক্তি যার রচিত কবিতা আজ গান হয়ে বাংলাদেশের শহীদ দিবসে ব্যবহৃত হয়। আপনার কি মনে হয় না, যে লোকও আপনাকে পছন্দ করে না, সেও মহান শহীদ দিবসে বাধ্য হয়ে মুখস্ত না করলেও ঠোঁটস্ত করে গাইতে হয় 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী....' যেটা আজ পৃথিবীকে মানুষের কাছেও পরিচিত হচ্ছে মহান আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসে।
দয়া করে আপনি কোন পক্ষের পক্ষে লেখা বাদ দিন। ঠিক আছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে লিখবেন। লিখেন। এটাতো কোন পক্ষ না, এটা বাংলাদেশের পক্ষে। যে মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করবে, সেতো বাংলাদশেকেই অস্বীকার করবে। আর এই মুক্তিযুদ্ধ হঠাৎ করে আসেনি, যুদ্ধ করে এসেছে। আর যুদ্ধ করেছে অনেক যোদ্ধা। তাই যোদ্ধাদেরও সমালোচনা করা ঠিক না। এ নিয়ে পরে আরেকদিন লিখবো।
আমি আপনাকে সম্মান করি। আশা রাখি আরো সম্মান করার সুযোগ করে দিবেন। ধন্যবাদ। আর কোন ভূল ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন।