মতিউর রহমান নিজামী। জামায়াত নেতা। সাবেক ছাত্র ফ্রন্ট নেতা, ছাত্র ফ্রন্টকে আজ ছাত্র শিবির নামে জানি।
আমি তৎকালীন পত্রিকায় দেখেছিলাম, নিজামী সহ আলী আহসান মুজাহিদ বলেছিলেন, 'আসামকে দখল করে বাংলাদশের সাথে যুক্ত করা হবে।' হায়রে হলো না! কি আর করা, শক্তিতে পারা যায় নাই। কেউ বলে তারা নাকি ক্যাম্পে বসে বসে ছক করতেন। ইয়ং বয়স ছিল, একটু কাতুকুতু মন করবেই, ঐ কাতুকুতু মিটাইছেনও শুনেছি। ইতিহাস থেকে জানা, রুমি (জাহানারা ইমামের ছেলে), আলতাফ মাহমুদ (আমার ভাইয়ের একুশে ফেব্রুয়ারী গানের সুরকার) সহ অনেককে নাকি তারা ধরে নিয়ে বেহেশত পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে এসছেন। ইসলাম ধর্ম যদি সত্যি হয়ে থাকে, তবে মাতৃভূমির জন্য যে যুদ্ধ করে মারা যায়, সেতো কোন হিসাব ছাড়াই বেহেশতে যাবার কথা। তাইলেতো মুক্তিযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন, তারা অবধারিত বেহেশত বাসী।
ভাগ্যিস ম্যাডাম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় নয়। নইলে এখানেও কোন ফতোয়া আসতো। তবে যে জন্য লিখা, এক দিক দিয়ে আমি নিজামী সাহেবের ভক্ত, মিষ্ট বাসীর জন্য। উনি প্রত্যেক কথা এমন সুন্দর করে বলেন যে, উনি যা করেছেন সব আল্লাহ করাইছেন। আমি যখন হাই স্কুলের ছাত্র, তখন এমন প্রশ্নও আমি করতাম। বন্ধুদের সাথে যুক্তি দিয়ে বলতাম, স্বয়ং মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন শরীফে বলেছেন, উনার অনুমতি ছাড়া একটি গাছের পাতাও নড়ে না। তাই আমি যা মন্দ কাজ করছি, তার জন্য মহান আল্লাহ তায়ালাই ওয়াকিবহাল আছেন। এই যুক্তির জন্য মসজিদের হুজুরের ধমক খেয়েছি, উনি বলেছিলেন, মানুষের বিবেককে মহান আল্লাহ তায়ালা এমন ভাবে সৃষ্টি করেছেন যে, সে চাইলে তার মনকে ভালো পথ থেকে সরিয়ে মন্দ পথে নিয়ে যেতে পারে, এবং এর জন্য তাকে শান্তিও পেতে হবে। সত্য। তা না হলে, সবাই ভালো কাজ করলে, দুনিয়ায় এত মারামারি-কাটাকাটি থাকতো না। বুঝাই যেত না যে আমরা দুনিয়ায় আছি। দুনিয়াটাই বেহেশত হয়ে যেত।
আমি তেমন কিছুই জানি না। তাদের ভাষায় ধর্মী বিষয়ে আলাপ করা আমাকে মানায় না, কারণ আমি ধর্ম নিয়ে জ্ঞান রাখি না। তবে তাদের গুরু আবুল-আলা-মওদুদী কোন সার্টিফিকেটে তাফসির করেছেন জানি না। আমি আজো সন্দেহ পোষণ করি, দেলোয়ার হুসাইন সাইদি পবিত্র কুরআন শরীফ-এর তাফসির নিয়ে কোথায়, কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে সনদ নিয়েছেন। তবে ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে একটু কথা না বললে মনে হয়, একজন মুসলিম হিসেবে প্রতিবাদ না করে আল্লাহর কাছে জবাবদিহির সুযোগ করে দিলাম নাতো।
তারা ইসলামী ঐক্রজোট সহ বললেন, আওয়ামীলীগকে ভোট দিলে দোজখে যাবেন। আবার ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগের সাথে দলবদ্ধ ভাবে (যদিও ভিন্ন প্লাটফর্ম থেকে) নির্বাচন করেছিলেন। তারা বাংলাদেশের বহু মানুষকে যারা নারী নির্যাতন করেন নাই, ঘুষ খান নাই, কিন্তু মুক্তমনা লেখক হিসেবে পরিচিত তাদের কাফের-মুরতাদ বলেন। অথচ তারা আসিফ নজরুলের মতো একটা লোককে যে নিজের মুখে বলেছে যে তার মাথায় এত চুল নাই, তারচেয়ে বেশি নারীকে ভোগ করেছে: সেই আসিফ নজরুলকে তারা এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ করেছে। তারা আবার লন্ডনে দেখলাম, মদ বিক্রির টাকা নিয়ে ইসালামী জলসা করেন, বড় বড় মৌলানাদের সালামী দেন এবং নেন। তারা বাংলাদেশে গণতন্ত্র, ইসলাম তন্ত্র নিয়ে ওয়াজ নসীহত করেন, কিন্তু মন্ত্রী হয়েও কিছু করলেন না, সৌদি রাজতন্ত্র (রাজত্ন্ত্রকে ইসলাম হারাম বলেছে), অর্থাৎ মধ্যপ্রাচ্যের রাজতন্ত্র থেকে চাঁদা নিয়ে আসেন, তাদের দাওয়াত গ্রহণ করেন, তাদের গুনগানও ওয়াজ নসিহতে বয়ান করেন। আরো কতো কিছু।
তারা এমন ব্যক্তি, তারা নিজেদের হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর তুলনা করে বসেন। সম্ভবত ২০১০ সালে নিজামীর চরিত্রকে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর তুলানা করাতে মামলা হয়েছিল এবং তিনি কারাবন্দী হোন। পরে যুদ্ধাপরধীর বিচার শুরু হয়। আল্লাহ ওদের বিচার করুন।