somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুদ্ধতম পরকীয়া (উপন্যাসিকা)

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ সকাল ১১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শুদ্ধতম পরকীয়া
চতুর্থ অধ্যায় / (প্রথম অংশ)এইখানে ক্লিক করুন -
Click This Link

(পূর্ব প্রকাশনার পর )
চতুর্থ অধ্যায় / (দ্বিতীয় অংশ)

এলানো হাতখানি আমার বুকের উপর পড়ে আছে ফুল্লরার । আজ এ হাতখানিকেই খুব ভারী মনে হলো । যে হাত আমার সকাল বিকেল আর রাতের সঙ্গী ছিলো হঠাৎ হঠাৎ , যে হাত আগলে ছিলো আমার সংসার ভালোয়-মন্দোয় সে হাতখানা আজ ভারী ভারী লাগছে কেন ! আমি কি নষ্ট হয়ে গেছি ! এ কোন অধঃপাতে আমার নেমে যাওয়া ! হালকা আলোয় সে হাতখানার দিকে তাকালাম । প্রথম যেদিন এই হাতখানি ধরেছিলাম তার ছিলো মোমের মতো পেলব দেহখানি । উজ্জল ছিলো তার বর্ণ । আজ এই রাতে তাকে যেন আবার নতুন করে দেখতে হলো । সময়ের দাগ লেগেছে সে হাতে । তন্বী দেহে লেগেছে শিথীলতা, বর্ণ অনুজ্জল কিছুটা । একি তার দোষ নাকি সময়ের । সে হাতের স্পর্শ আগের মতো আমার তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে বেহালার ছড়ের মতো টেনেটেনে সুর তোলে কি ? কে জানে ! নাকি, আমার অপরাধ যদি কোনও হয়েই থাকে আজ, তার স্বপক্ষে এ আমার অনুচিত অভিযোগ ।
ফুল্লরা আড়মোড়া ভাঙ্গলো, চমকে উঠলাম আমি । ঘুমের অতল থেকে ফুল্লরা আমার ভাবনাগুলোর সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে চৈতন্যে ফিরে এলো যেন !
“তুমি ঘুমাওনি” জড়ানো গলায় তার প্রশ্নটি এতোই আচমকা যে অন্তরাত্মা কেপে উঠলো । ধরা পড়ে গেলাম !
মিনমিন করে বলি – “নাহ, ঘুম কেটে গেছে । এ্যাসিডিটি’র ব্যথাটা আবার চাগিয়ে উঠলো । ঔষধ খাবো ? একটু পানি খেতে পারলে ভালো লাগতো বোধহয় ।”
ধরা পড়া চোরের মতো আত্মপক্ষ সমর্থনের কসরত করতে গিয়ে বুঝলাম, উত্তরের প্রয়োজন ছিলোনা । আবার ঘুমিয়ে গেছে ফুল্লরা । বেশ ভারিক্কি লাগছে দেখতে । দু’দুটো বড় হয়ে যাওয়া সন্তানধারিনীর যেমনটা হওয়া উচিৎ তেমন দেহের কাঠামো । মেদ জমেছে পেটে আর যেখানে জমার সেখানে । পঁচিশ বছর আগের ফুল্লরা আর নেই । যে দেহের ভাজে ভাজে একদিন তুমুল ঢেউয়ের ভেঙ্গে পড়া ছিলো, ছিলো তরী বাওয়া তা আজ ক্ষয়ে যাওয়া পদ্মার মতো চরে ছেয়ে গেছে । নাব্যতা গেছে কমে । এও কি তবে পদ্মার থেকে চোখ সরিয়ে নেয়ার আর একটা কারন আমার ! নিজের স্বপক্ষে কারন জড়ো করতে থাকি ।
ফুল্লরার হাতখানি সরানোর প্রয়োজন ছিলোনা । আড়মোড়া ভাঙ্গতে গিয়ে সেখানি আপনিই সরে গেছে । সাবধানে বিছানা থেকে নামলাম । গলা শুকিয়ে গেছে । জল খেতে হবে । বেডরুমে জলের গ্লাস নেই । আমিই এনে রাখি প্রতিদিন । এটা আমার কাজ । আজ এমোন ভুলটি হলো কেন ?
আজ শীলার সাথে কথা হয়েছে অনেকদিন পরে । “তোমাকে ছেড়ে আমি কি করে যাই বলো ?”
এই কথাটুকুতে যে পৃথিবীর সব মধু লুকোনো । আমি তো ভাসছি সেই থেকে । নতুন ওড়নার মতো মনখানা উড়ছে ফুরফুরে হাওয়ায় । শীলার ছোঁয়া লেগে ভেতরের নিভুনিভু প্রদীপখানি যে তার সব রোশনাই জ্বেলে আমার অন্তরাত্মার গভীরে লুকানো ভালোবাসার ঘর-গেরস্থালী আবারো উদ্ভাসিত করে দিয়ে গেল, সে খবর যে শীলা পেলোনা । সে ভালোবাসা মনে মনে ছড়িয়ে গেল সবখানে । আমার ঘরে, ফুল্লরার কাছে, ছেলেমেয়েদের আঙ্গিনায় । সবাইকে আবার যেন বেশী করে ভালোবাসতে ইচ্ছে হলো । আরো বেশী করে যেন সবাই জড়িয়ে গেল আমার রক্তমাংশে । সত্যিকারের ভালোবাসা বোধহয় এমোন করেই শেকড় প্রোথিত করে দেয় মাটির গহন অবধি !
খুশিতে রাস্তার মোড়ের ফুলওয়ালী মেয়েটির কাছ থেকে একগোছা রজনীগন্ধাও কিনে ফেললাম ফেরার পথে । নির্ভেজাল, কাটাবিহীন, স্নিগ্ধ । গোলাপ কিনিনি কারন তা ভুরভুরে গন্ধে ভরা আর কাটাওয়ালা । চোখ জুড়ানো রঙের অন্য অনেক ফুল আছে, কাটা নেই কিন্তু গন্ধবিহীন । রজনীগন্ধা রাতের নিভৃতচারী, কাটাবিহীন আর রঙহীন সাদা , রঙের ভীড়ে তার জৌলুষ নেই । সাদা সমর্পনের রঙ । আমি শীলাতে সমর্পিত বা শীলা আমাতে । খুচরো কিছু আলাপ ও করলাম ফুলওয়ালীর সাথে । মেয়েটি হয়তো অবাক খানিকটা ।
“ছার, আপনে কারে দেবেন ফুলগুলা ? এত্তোগুলি ফুল কেনলেন” নির্মল প্রশ্ন । উত্তরটা এই মূহুর্তে গুলিয়ে গেলো । অবচেতনে মনে হলো তাইতো, কার জন্যে ফুল কিনলাম ! শীলার জন্যে ? তা কি করে হবে, শীলার ঠিকানা যে আমার জানা নেই । খুব সন্তর্পনে এড়িয়ে গেছে শীলা ঠিকানার প্রশ্নটি । মনটা উদাস হয়ে গেলো মেয়েটির কথায় ।
এই মূহুর্তে কাকে উদ্দেশ্য করে ফুল কিনেছি তা চট্ করে মনে পড়লোনা । অথচ ফুল্লরার জন্যে নেয়া যেতে পারে ভেবেই আমি ফুল কিনেছি, একথাটুকুও মনে এলোনা । আমি জানি ফুল্লরা অবাক হবেনা । তির্যক চোখে আমাকে পড়ে নিতে চাইবে । ইদানীং ও যেন কেমন করে তাকায় আমার দিকে । সেই দিন থেকে যেদিন ফুল্লরা আমাকে গভীর রাত জেগে কম্পিয়্যুটারের সামনে বসে থাকতে দেখেছে । “এই বুড়োকালে এতো রাত জেগে কি করছো কম্পিয়্যুটারে ? দু’দুবার ডাকলাম ঘুমুতে আসতে, খবর নেই ।” শরীরে ঘাম দিয়ে যেন জ্বর এলো । ফুল্লরা এগিয়ে আসছে আমার ঘরের দরজা ঠেলে । একনজর চোখ বুলিয়ে ঘুরে যেতে যেতে ঝাঝালো গলায় বলে গেল – “ভীমরতি, এতো রাত্তিরে কার সাথে চ্যাট করছো ?” সেদিন থেকে, শীলার সাথে যোগাযোগের দ্বিতীয় দিন, ফুল্লরার চাহনি যেন বদলে গেল । সন্দেহ ? সন্দেহ বড়ই সংক্রামক । ভাইরাসের মতো ডরম্যান্ট আর সুযোগ পেলেই ডালপালা ছড়ানোতে জুড়ি নেই ।
ফুলের জন্যে একটা যুৎসই উত্তর খুঁজতে খুঁজতে ঘরে ঢুকতেই জিনিয়া দৌড়ে এলো । পরিপাটি সাজ । বাইরে যাবে কোথাও, এমোন ।
“ওম …মা, বাবা তুমি আজ ফুল কিনে এনেছ ? কি ব্যাপার বাবা , আমাদের তো কারোই জন্মদিন না আজ, তবে ?”
আমতা আমতা করতে থাকি – “না.. এই আসছিলাম হেটে হেটে, পথের মোড়ে ঐ যে ফুলওয়ালীটা আছে না , কি যেন নাম…. ।“ মুখের কথা মুখেই আটকে থাকে ।
জিনিয়া এগিয়ে আসে খুব কাছে, “খুব ভালো হয়েছে বাবা । ফুলগুলো আমাকে দাও, আমি এক বান্ধবীর বার্থ-ডে পার্টিতে যাচ্ছি । গিফট কিনেছি একটা মোটামুটি চলে যায়, সাথে ফুলগুলো হলে দারুন । আগেই ইচ্ছে ছিলো কেনার কিন্তু গিফট কিনতে গিয়ে দেখি অতো পয়সা হবেনা একটা ফুলের বুকে কেনার । দাও দাও । আচ্ছা ঠিক আছে, অর্ধেকটা আমি নিচ্ছি বাকীটা তোমার ।” একনাগাড়ে কথা বলতে বলতে হাত বাড়ায় জিনিয়া । হাঁপ ছেড়ে বেঁচে যাই যেন । প্রগলভ হয়ে উঠতে চেষ্টা করি, “তাহলে বল একটা টেলিপ্যাথীর ঘটনা ঘটে গেল ? তোর মনের কথা তাহলে আমি পড়তে পারছি ?”
জিনিয়ার মুখটা একটু লাল হয়ে গেল যেন । এমনিতেই সুন্দরী আর ফর্সা মেয়েটি আমার । লালের লালিমা লাগতেই আরো সুন্দর লাগলো । লজ্জা পেয়েছে বোধহয় । বললাম, যেখানে যাচ্ছিস যা । আর সব ফুলগুলিই তোকে দিলাম, নিয়ে যা ।
তবুও সবগুলো নেয়নি জিনিয়া । কয়েকটা ষ্টিক রেখে গেলো পেপসির খালি বোতলে পানি দিয়ে । সেই থেকে যতোবারই চোখ যাচ্ছে ষ্টিকগুলোর দিকে অন্যমনষ্ক হয়ে পড়ছি । একটা অপরাধ বোধ হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকে পড়তে চাইছে যেন মনের দেয়াল ডিঙ্গিয়ে । আর সে কারনেই প্রতিদিনের অভ্যেস, জলের গ্লাস আর জল আনার কথা বেমালুম ভুলে বসে আছি ।
জল আনতে ডাইনিং এ যেতে হবে । যেত যেতে আবার ফুল্লরার দিকে তাকালাম । নিশ্চিন্তে ঘুমুচ্ছে । গেল কয়েকটা বছর ও এরকমই নিশ্চিন্ত আর নির্লিপ্ত । নিজের ভেতর নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে যেন । আমার প্রতিও ওর টান আগের মতো নেই ।বরং খবরদারী, হম্বি-তম্বী বেড়েছে যেন । সাংসারিক ঝুট ঝামেলা তো প্রতিটি সংসারে থাকেই । কোন সংসারে নেই ! আমার ঘরে আজকাল একটু বেশী বেশী হচ্ছে যেন, অহেতুক । এত্তো রাতে এগুলো নিয়ে আর ভাবতে ভালো লাগছেনা । এ যেন অনুচ্চারিত অনুযোগের পাতা উল্টে উল্টে দেখা ।
জল খেয়ে আবার ফিরে আসতে হয় নিজ ঘেরাটোপে । কিছু শুদ্ধ আর কিছু কিছু ভুল-ভ্রান্তির রেখা টেনে টেনে এ তো আমারই আঁকা দিনপঞ্জীর তৈলচিত্র ।

(চলবে..... অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন)
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ সকাল ১১:১১
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×