somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কালো তিল এর উপাখ্যান.....

২২ শে মার্চ, ২০২২ দুপুর ১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



“শবনম”কে আমি পাইনি, যে তার গায়ে-গতরে হাত বুলিয়ে তার রূপ-রস চেখে নেবো!
নীল আকাশ থেকে কোন একদিন, কোন এক শবনম ঝুপ করে নেমে এসে আবার ধরা দেবে কিনা জানিনে। তবে ধাঁধার চরে এক পড়ন্ত বিকেলে একজন “নমানুষ” এর দেখা মিলেছিলো। লাশ হয়ে ভাসছে পানিতে, কচুরীপানার আড়ালে। নাকফুলের পাশে কালো তিলওয়ালীর ফুলে ঢোল হয়ে আসা দেহটি থেকে যে পচা গন্ধ বেরুচ্ছে তা ঠিক যেন সমাজ নামের একদঙ্গল মানুষের মন-মগজ থেকে উঠে আসা গন্ধের সাথে মিলে গিয়ে শীতলক্ষার কালো দূর্গন্ধময় জলে ঘুরপাক খেয়ে মরছে আমাদের চলিষ্ণু জীবনের মতোই।

বইয়ের পাতা ওল্টাতেই এমন কিছু ধরা পড়লো চোখে। বইটি এসেছে সুদূর চট্টগ্রামের আনোয়ারার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কর্ণফুলির পাড় থেকে। যিনি ভালোলাগা থেকে শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে এক পরম নির্ভরতায় বইটি আমাকে পাঠিয়েছেন, তাকে আমি কখনও দেখিনি। তবে তার সাথে অহরহ দেখা হয়েছে লেখায় লেখায়। নিঃসন্দেহে তরুন রক্ত তার গায়ে। জড় - যান্ত্রিক বিষয় আসয় নিয়ে যার কাজ কারবার তারও যে অজড় মানুষের চলন্ত মনঘড়ি নিয়ে খেলতে ইচ্ছে করে বোঝা যায় তার সব লেখায়।
এই বইখানিও তাই। অন্তত বইয়ের “কিছুকথা” অংশে তারই আভাস।

এই বইখানি নিয়ে আমি কি করবো !!!!!
একটানে পড়ে নিয়ে একখানা রিভিউ লিখবো নাকি যিনি পাঠিয়েছেন তার স্তুতি গাইবো? কোন বইয়ের রিভিউ আমি কখনও লিখিনি। ওটা আমার যোগ্যতার বাইরে।
আমি শুধু প্রেরকের আন্তরিকতার ছোঁয়ায় আমার ভেতরে যে আলোড়ন তার শব্দ শোনাতে পারি!

নীল আকাশ যেমন বিপুল পরিসরে ব্যপ্ত, বইয়ের প্রেরককেও মনে হয়েছে তেমনি। বিপুল বিস্তারে তিনি যেন নিজেই নিজের মনে বিভোর। আকাশের মতো উদারও বটে! নইলে আমার মতো অতি সাধারণ একজনকে তার “গুরুজী” বলে ডাকার কথা নয়। পাঠানো বইটির শুরুর একটি পাতাতে নিজ হাতে তা লিখেও দিয়েছেন। এমন শব্দটি তিনি প্রায়ই উল্লেখ করেন ব্লগ পোস্টের মন্তব্যে- প্রতিমন্তব্যেও। আমি বিব্রত বোধ করি। সে কথা আমি বলেছিও তাকে। কিন্তু স্বেচ্ছায় যিনি অমন উচ্চারণ করেন তাকে ফেরাই, সাধ্য কি !

বলছি সহব্লগার “ নীল আকাশ” কে নিয়ে। “নমানুষ” তার দ্বিতীয় প্রকাশিত উপন্যাস। যদিও উপন্যাসে লেখকের পুরো নামটি এভাবে লেখা আছে - “মহিউদ্দিন মোহাম্মাদ যুনাইদ”। সেই বইয়ের একখানা কপি তিনি আমাকে পাঠিয়েছেন ভালোবাসা-শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে।
এ প্রাপ্তি রাখার জায়গাটুকু আমার আছে তো! ভালোবাসাবিদ্ধ শহরকে ভিজিয়ে কোন ভাষায় বৃষ্টি পড়ে? সে ভাষা আমার জানা আছে কি!
নেই হয়তো তবুও বলি-কখনও মানুষকে মনে হয় বড় সুন্দর, তাদের অবয়বে নয়, কি সব বলে তারা তাতেও নয়, শুধু তারা যা তাতেই।

আকাশে যেমন মেঘের ঘনঘটা থাকে, থাকে বজ্র-বিদ্যুতের ঝলকানি তেমনি তারও মেজাজ মর্জিতে হঠাৎ হঠাৎ সে সবের দেখা মেলে। তখন আকাশটাকে অচেনা মনে হয়। তবুও আকাশ আকাশের মতোই, হরেক রংয়ের মেলা নিয়ে উদ্ভাসিত। সকালে তার স্নিগ্ধ রূপ, অসহিষ্ণু তাপ ছড়ানো আর এক রূপ তার মধ্যাহ্ণে , সাঝবেলায় সমাহিত তার রূপ।

সে রূপগুলো আবার দেখার চেষ্টা করলুম।
বলেছেন , “ সাহিত্য হচ্ছে দর্পণের মতো যেখানে দেশ ও সমাজের সুষ্পষ্ট বাস্তব প্রতিফলন ফুটে ওঠে।” এ নিয়ে লেখকদের দায়বদ্ধতার কথাও বলেছেন তিনি। তাই নিজের দায়বদ্ধতা থেকে “নমানুষ” বইটির জন্ম দিয়েছেন ।

চোখ না থাকলেই অন্ধ হয়না, অন্ধ হয় যখন দৃষ্টিতে কিছু ধরা পড়েনা।
জীবনকে তিনি যে চোখে দেখেছেন, সাহিত্য সেই জীবনের প্রতি তাকে আগ্রাহান্বিত করে তুলেছে হয়তো! মানুষ, প্রকৃতি, সাহিত্য, সঙ্গীত নিয়ে ঋদ্ধ এই পৃথিবী যে নিরন্তর টগবগিয়ে থাকে এর রুপ-রস-গন্ধ নিয়ে, সে দৃশ্য তার দৃষ্টিতে ধরা পড়েছে আর তাকে টেনেছে বলেই বই প্রকাশের তাগাদা অনুভব করেছেন তিনি । যদিও তিনি পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে দৃশ্যগুলোকে শীতলক্ষার জলের মতোই গড়িয়ে যেতে দিয়েছেন, যেটাকে তার সীমাবদ্ধতা হিসেবে ধরে নিলে তেমন ক্ষতিবৃদ্ধি হয়না।
সমাজের যে অসংগতি আর অবক্ষয়ের কথা তিনি বলেছেন বইয়ের “কিছুকথা” অংশে আর তুলে এনেছেন মুখোশধারী হিংস্র পশুর মতো মানুষগুলোর গল্প , তাতে বোঝা যায় তিনি চাইছেন সমাজের এমন শত্রুরা যেন পরাস্ত হয়। কিন্তু এটা তো জানা কথা -আপন ইচ্ছামতো আপন দস্তুর দিয়ে বিবেকবান মানুষেরা সেসব মানুষরূপী পশুদের পায়ের তলায় যে পিষে মারতে চান, সেই বিবেকবান মানুষদের পা অতো লম্বা নয়!

তবুও লেখকের মতো আশায় থাকি, তাদের পা হোক আরও লম্বা এবং হোক শক্তিশালী।
এই যে পৃথিবীটা যা সম্পূর্ণ আলাদা একটা পৃথিবী- গাঁথুনিহীন, পথহীন, আলোহীন, নিয়মহীন, বন্য, বিপদজনক এক পৃথিবী, যেখানে বাস, ট্রাক, রিকসা, সাইকেল , ভ্যান , ঠেলাগাড়ী আর পথচারীরা টিকে থাকার জন্যে গুতোগুতি করছে দিনরাত, তেমন বাস্তবতার মাঝেও এই আশার প্রতিফলনই হয়তো আমরা দেখতে পাবো এই বইয়ে। এটা আমার অনুমান মাত্র কারন বইটি নেড়েচেড়ে দেখার সুযোগ হলেও পুরোটা পড়ে ওঠার সুযোগ ঘটেনি। তবে “ নাকের বামদিকে নাকফুলের পাশেই ছোট একটা কালো তিল।” বাক্যটি পড়ার পরে মনে হলো এই তিল নিয়েই তেলেসমাতি কিছু আছে এই উপন্যাসে।

এই যে রিভিউটা লেখা হয়ে ওঠেনি তাতে আপনারা বলতেই পারেন - যে ফুলে পুজো হয়না , তা গাছে থাকলেই বা কি আর না ফুটলেই বা কি!
সেক্ষেত্রে বলতেই হবে , স্বপ্ন সেটা নয় যেটা মানুষ, ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখে; স্বপ্ন সেটাই যেটা পূরনের প্রত্যাশা, মানুষকে ঘুমাতে দেয় না।

ভালো থাকুক কালো তিলের জনক নীল আকাশ। আকাশের মতোই অবারিত থাকুক তার সাহিত্যানুরাগ।সেখানে চলুক রংধনুর খেলা………………..

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০২২ দুপুর ২:০৯
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×