খুব জানতে ইচ্ছে করে..............
(যা "খুব জানতে ইচ্ছে করে...." তা শুধু আমার একারই নয়, মনে হয় সবারই তেমন ইচ্ছে করে।)
মৃত্যু এক অমোঘ নিয়তি । সে আসবে হয় অতি লঘু পা'য়ে নয়তো হামলে পড়বে দস্যির মতো! লুটেপুটে নিয়ে যাবে এতোদিনের যত্নে-অযত্নে গড়ে তোলা মহার্ঘ্য জীবনখানাকে ।
করোনার দিন থেকে এযাবৎ চারিদিকে চেনা-পরিচিতদের হঠাৎ বেশী রকমের মৃত্যু দেখে কেন যেন নিজের চলে যাওয়ার পরের কথাগুলো নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে করে !
একদিন হঠাৎ করেই চোখের সামনে থেকে যখন হারিয়ে যাবে প্রতিদিনকার ওঠা সূর্য্য, ফুৎকারে নিভে যাবে সান্ধ্যপ্রদীপ তখন আমার কথা আর কেইবা মনে রাখবে!
যখন ফুরিয়ে যাবে এই লেখালিখি, মুছে যাবে দেখা - অদেখা ব্লগারদের স্মৃতি, ধারে কাছের মানুষদের মুখের আদল তখন আমার পায়ের চিহ্ন খুঁজবে কি কেউ!
খুউব জানতে ইচ্ছে করে!
যখন ব্লগের সুন্দর-অসুন্দর লেখাগুলো আর দেখা হবেনা, করা হবেনা কোনও মন্তব্য, বসে থাকা হবেনা কোন প্রতিমন্তব্যের আশায়, তখন আমায় না দেখে কেউ কি একবারও শুধাবেন - "দেখছি না যে!!!"
আমিই বা কি করে বলবো- "এতোদিন কোথায় ছিলেন ?"
“যখন পড়বেনা মোর পায়ের চিহ্ণ এই বাটে ………”
তখন আর কি শোনা হবে ইটপাথরের মাঝে জেগে থাকা জীবনের যতো গান, পথের কোলাহল, রিক্সার ঠুংঠাং, রাস্তায় অবর্ণনীয় জ্যামের হা-হুতাশ ! দেখা হবে কি গার্মেন্টস'য়ের হাড় জিরজিরে মেয়েদের দলবেঁধে চলা, টোকাইদের খুনসুটি, ঘেমে নেয়ে ওঠা শ্রান্ত বাসযাত্রীদের ঠেলাঠেলি? তখন এই পথের পাঁচালীতে আমি নেই দেখে কারো কি একটু দীর্ঘশ্বাস পড়বে !!!!
যখন আর কোনদিন মোড়ের টংঘরের রানাকে বলা হবেনা- "ওই রানা, এট্টু কাঁচাপাত্তি মাইররা এককাপ চা দে.....।"
যখন কাছের বন্ধুটিকে ফোন করে বলা হবেনা - " কিরে তোর আইতে কতোক্ষুন ? রানার দোকানে আয়....." তখন তারা কি আমায় না দেখে উতলা হবে !!!!!
খু….উ….ব জানতে ইচ্ছে করে!
জানি, জীবনের পাতায় পাতায় যতোই হিসেব-নিকেষ লিখে রাখিনে কেন, রইবে না কিছুই । সেদিন, কোনখানে আমি নেই এটা জেনে আমারও কি কিশোরকুমারের গানের মতো ভাবতেই ব্যথায় ব্যথায় মন ভরে যাবে.....? আমি নিজেই বা সে ব্যথার কথা জানবো কেমন করে ?
আমার যে খুউব জানতে ইচ্ছে করে, সেদিন কি আমার জন্যে ব্লগের পাতায় শোকগাঁথা লিখবেন কেউ! যদি লেখেনও তবে আমিইবা তা জানবো কি করে? তা জানতে আমায় কি আবার ফিরে আসতে হবে শঙ্খচিল-শালিকের বেশে না কি ভোরের কাক হয়ে ?
তাই, নতুন পুরোনো সব লেখা পুতে রেখে যাই ব্লগে যদি কোনদিন সেখান থেকে কিছু সতেজ দূর্বাঘাস মাথা তোলে! তবে সে-ই হবে আমার এপিটাফ।
ছবির কৃতজ্ঞতা - ইন্টারনেট
উৎসর্গ-
সহ ব্লগার “জুল ভার্ন”কে যিনি অতি সম্প্রতি তার এই পোস্টে……তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে.....
জীবনের করুণ অধ্যায়খানির অনুরণন করে গেছেন।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ৮:৪৩