somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এসএসসি, এইচএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে মেডিকেলে ভর্তিঃ আরেকটি কালো অধ্যায়ের হতে যাওয়া সূচনা

০৮ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে মোটামুটি সকল শ্রেণির মানুষই বিশাল ক্ষিপ্ত। হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না। এদেশের ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনের সবচেয়ে বড় দুইটি পাবলিক পরীক্ষা, এসএসসি ও এইচএসসি উভয়েই সম্পুর্ণ সাজেশন নির্ভর। ফলে জিপিএ ৫ এর মহামারী কলেরার থেকে তীব্র হলেও, দেশ মেধাশুন্যের দিকে প্রতিবছর দুইবার লম্ফ মেরে এগিয়ে যাচ্ছে, এতে সমর্থন দিবে না এমন লোক হয়তো নেই। এরই মাঝে, দেশে সত্যিকার অর্থে যদি পাঠ্যবই আত্মস্থতা ও মেধা যাচাই জনক একটি পরীক্ষা থেকে থাকে, তা হলো বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা। তুমুল প্রতিযোগীতামুলক এ পরীক্ষায় বই এর প্রতিটি লাইন যেনো একেকটি প্রশ্ন। আর তাই, যে ছাত্রের পাঠ্যপুস্তকের উপর যতো বেশী আধিপত্য, যে যতো ভালো করে তার এইচএসসি এর দুইটা বছরকে কাজে লাগিয়েছে, বুঝে পড়াশুনা করেছে, তার জন্য ভালো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকতে পারার নিশ্চয়তা ততোই বেড়ে গিয়েছে।

কথা হলো, এসব ধ্রুব সত্যগুলো আবার কেনো বলছি? অবাক হয়ে বলছি, কারণ দেশের নীতি-নির্ধারক পর্যায়ের পদবীধারীদের এক অভূতপুর্ব সিদ্ধান্ত হতে যাচ্ছে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়া। এর বদলে তারা চাচ্ছেন, যাতে এসএসসি ও এইচএসসি এর রেজাল্ট, অর্থাৎ জিপিএর ভিত্তিতে মেডিকেল কলেজ গুলোতে ভর্তি নেয়া হয়। এর পেছনে তাদের যুক্তি -

গত বছর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ছাপাখানা থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের চেষ্টা, পরীক্ষার আগে ভুয়া প্রশ্নপত্র বেচাকেনাসহ নানা ধরনের সমস্যা হওয়ায় এবার পরীক্ষা না নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন বেশির ভাগ অধ্যক্ষ। তাঁরা বলেছেন, ভর্তি পরীক্ষা না হলে কোচিং সেন্টারগুলোর দৌরাত্ম্য বন্ধ হবে। সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে যেসব কোচিং সেন্টার নানাভাবে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের প্রতারণা করছে, তাও বন্ধ হবে।

কিন্তু প্রশ্নপত্র ফাঁস হবার জন্য তো দায়ী এর সাথে জড়িতরা! এখানে ভর্তি পরীক্ষার দোষটা কোথায়? ভর্তি পরীক্ষার্থীদেরই বা দোষটা কোথায়? আর কোচিং সেন্টার? তারা কোঁচিং সেন্টার গুলোর লাইসেন্স ক্যান্সেল করে দিক! আর না হয় কোচিং সেন্টার বন্ধের ঘোষনা দেয়া হোক। কিন্তু, ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের সাথে এসবের কি সম্পর্ক? আবারও সেই পুরানো কথা বলতে হয়, “মাথা ব্যাথায় ঔষধ খাওয়া লাগে, নাকি মাথা কাটা লাগে?”

তাঁদের প্রস্তাব নিয়ে কিছু বিবেচনায় যাওয়া যাক। “তাঁদের” বলবার সময় চন্দ্রবিন্দু যোগ করবার কারণ, এ সিদ্ধান্ত ২২টি সরকারি মেডিকেল ও ২টি বেসরকারি মেডিকেলের অধ্যক্ষের এক সভায় নেয়া। তাঁদের প্রস্তাব ছিলো, এসএসসি ও এইচএসসি এর জিপিএ এর উপর ভিত্তি করে ভর্তি সম্পন্ন করা। গত কয়েক বছরের জিপিএ ৫ এর মেলা দেখা যাক।

এসএসসিঃ

২০১০ সালে জিপিএ ৫ পেয়েছে = ৬২ হাজার ১৩৪ জন।
২০১১ সালে জিপিএ ৫ পেয়েছে = ৭৬ হাজার ৭৪৯ জন
২০১২ সালে জিপিএ ৫ পেয়েছে = ৮২ হাজার ২১২ জন।

এইচএসসিঃ

২০১২ সালে জিপিএ ৫ পেয়েছে = ৬১ হাজার ১৬২ জন
২০১১ সালে জিপিএ ৫ পেয়েছে = ৩৯ হাজার ৭৬৯ জন
২০১০ সালে জিপিএ ৫ পেয়েছে = ২৮ হাজার ৬৭১ জন।
২০০৯ সালে জিপিএ ৫ পেয়েছে = ১৮ হাজার ২২২ জন

এটি ছিলো সমগ্র দেশের রেজাল্টের একটি ঝলক। এ ক্ষেত্রে নীতি-নির্ধারকদের একটি কথা উল্লেখযোগ্য -

প্রতিবছর ভর্তির জন্য ৫০-৬০ হাজার ছাত্রছাত্রীর পরীক্ষা নেওয়ার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) যেখানে একটি আসনের বিপরীতে সর্বোচ্চ তিন-চারজনের পরীক্ষা নিচ্ছে, সেখানে গত বছর এমবিবিএস/বিডিএস কোর্সে তিন হাজার আসনের বিপরীতে ৫০ হাজার ছাত্রছাত্রীর পরীক্ষা নিতে হয়েছে।


প্রশ্ন হলো, ৫০-৬০ হাজার ছাত্রছাত্রীর পরীক্ষা নেয়া সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে, ৬১ হাজার ১৬২ জন (২০১২ সালের কথাই না হয় বললাম, আগামী বছর চক্রবৃদ্ধিহারে বাড়বে, জানা কথা) এর মধ্যে থেকে অধিকতর যোগ্য খুজে বের করা কতোটা যৌক্তিক, যেখানে কিনা সকলেই জিপিএ ৫ প্রাপ্ত? আর যারা জিপিএ ৫ এর থেকে কম পেয়েছে, তারা কি মেডিকেলে পড়বার যোগ্য নয়?

আমার একটি ব্যক্তিগত ব্যাপার শেয়ার করি। ২০১১ সালের ভর্তি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর ছিলো ৬৯.৫। আমার জিপিএ ৫ ছিলো এবং আমি পেয়েছিলাম ৬০.৫, এবং আমি ঢাকা মেডিকেলে বর্তমানে পড়াশুনা করছি। আমারই ক্লাসমেট, রিয়াজুল ইসলাম শাওন। তার জিপিএ ছিলো মাত্র ৪.৫০। কিন্তু, ভর্তি পরীক্ষায় সে পেয়েছে ৬৬.৫ এবং সেও আমার সাথে এখন ঢাকা মেডিকেলে পড়ছে। আমার কথা এখানেই, যদি শুধু জিপিএ এর ভিত্তিতে ভর্তি নেয়া হয়, তাহলে “বাজে সিস্টেম” এর ভেতরে হারিয়ে যাওয়া প্রতিভাবান ছেলে-মেয়েগুলো কিভাবে নিজেদের যোগ্যতাকে প্রমান করবে?

আরেকটু ভুল যা বলা হয়েছে, তা হলো, বুয়েটে কখনোই প্রতি আসনের বিপরীতে ৩-৪ জন পরীক্ষার্থী থাকে না। ২০১১ সালেও ৮০০০ পরীক্ষার্থী প্রায় ১০০০ সীটের বিপরীতে পরীক্ষায় অংশ নেয়। ৮০০০ কে ১০০০ দিয়ে ভাগ দিলে উত্তর “আট” হয়। ২০১১-১২ সালে শাবিপ্রবিতে প্রতি আসনের বিপরীতে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ২৩ জন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক-ইউনিটেই প্রতি আসনের বিপরীতে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো ২৯ জন। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শুধু একটি ইউনিটেই যদি প্রতি সিটের বিপরীতে ২৯ জন অবস্থান নিতে পারে, সারা দেশে প্রায় সকল বিজ্ঞান শিক্ষার্থীই অংশ নেয়া ৩ হাজার সিটের বিপরীতে ৫০০০০, অর্থাৎ প্রতি সিটের বিপরীতে সাড়ে ১৬ জন অংশ নেয়া অযৌক্তিক, ব্যাখ্যা দিবেন কি তাঁরা?

আঞ্চলিক রেজাল্টঃ

২০১২ সালের এসএসসি রেজাল্টের ক্ষেত্রে আমরা জানতে পারি যে -
সব বোর্ডের মধ্যে ঢাকা বোর্ডে জিপিএ-৫ এর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৫ হাজার ৬২৯ জন। আর সবচেয়ে কম জিপিএ-৫ পেয়েছে সিলেট বোর্ড। এ বোর্ডটিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ৬১১ জন।


তাহলে কি স্বাভাবিকভাবেই ঢাকার ছেলে-মেয়েরা অতিরিক্ত সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে না? সম্ভাব্যতা তো তাই বলে !

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাঃ

বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের জিপিএ ৫ অনেকখানিই নির্ভর করে, প্র্যাক্টিকেলের নাম্বার এর উপর। আমি ২০১১ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করি। য়ামার সিট পরে ফার্মগেটের কোনো একটি কলেজে, নাম জানাতে ইচ্ছুক না হওয়ার সঙ্গত কারণ আছে। রসায়ন এর প্র্যাক্টিকেল মানেই ছিলো মামাদের কে ১০০-৫০ টাকার নোট ধরিয়ে দেয়া ও তারা লবন পরীক্ষা করে দিবেন। জীববিজ্ঞান প্র্যাক্টিকেলে তো তেলাপোকার মুখোপাংগ ও পরিপাক এর স্লাইড আগে থেকেই তৈরী থাকে, মামাকে ১০০-৫০ টাকা দেয়া লাগে আর কী! কাহিনী এখানেই শেষ নয়। একই এলাকায় দুইটি কলেজ, একের সিট আরেকটিতে পরেছে। তো ঐ কলেজে কড়া গার্ড দেয়ার কারণে, এ কলেজে প্র্যাক্টিকেলের নাম্বার কম করে দিয়েছে, ভাইবায় নাম্বার কম দিয়েছে। এই যে মানব আবেগে চলা রেজাল্ট, এই রেজাল্ট কিভাবে নির্ধারণ করবে, কে মেডিকেলে পড়বার যোগ্য, আর কে নয় ?

তারিক আদনান মুন – ভাইয়ার এ সম্পর্কিত লেখার লিঙ্ক দিলাম


লেখাটির লিংকঃ Click This Link

কোচিং সেন্টারঃ

আমার গ্রুপমেট, নাম শোয়েব। সে কাচিপাড়া নামের অতি দূরবর্তি একটি অতি অনাধুনিক গ্রাম থেকে পাশ করে এসেছে, যেখানে কি না ২০১১ সালে সেই একমাত্র জিপিএ ৫ প্রাপ্ত ছাত্র এবং সেই সর্বপ্রথম। সে কোনো কোচিং করার সুযোগ পর্যন্ত পায় নি, আজ সে ঢাকা মেডিকেলের একজন গর্বিত ছাত্র।

কোচিং করাটা কখনোই নিজে পড়াশুনা করবার বিকল্প হতে পারে না। সহায়ক হতে পারে। কেউ যদি মনে করে, তার কোনো বড় ভাই-বোনের সাহায্য দরকার পড়াশুনার ক্ষেত্রে, সেটাও কি সরকার আইন করে বন্ধ করে দিবে? সরকার এর যদি মনে হয়, কোচিং ব্যাবসায়ীরা অতিরিক্ত অর্থ নিচ্ছে, তাহলে একটি অর্থের স্কেল তৈরী করে দিক, আর যদি অবৈধ মনে হয়, তাহলে বন্ধ করে দিক। কিন্তু, এরকম সম্ভাবনাময় ছেলে-মেয়েগুলোর ভবিষ্যত কেড়ে নেবার অধিকার তাদের কেউ দেয় নি, তারা যাতে ভুলে না যায়।

প্রশ্নপত্র বেঁচা-কেনাঃ

প্রশ্নপত্র বেঁচা কেনা? কিছু ব্যাপার স্পষ্ট হয়ে নেয়া ভালো। যতোটুকু জানি, বুয়েটের প্রশ্নপত্র ছাপা হয় পরীক্ষা যেদিন সেদিন মধ্যরাতে। অর্থাৎ, যদি ১০ তারিখে সকাল দশটায় পরীক্ষা হয়, তবে ১০ তারিখ মধ্য রাতে ছাপানো শুরু হয়। লোকমুখে এও শুনেছি, সদ্য ছাপাখানা থেকে প্রাপ্ত গরম প্রশ্নে পরীক্ষা দেবার সৌভাগ্যও তারা পেয়েছেন!

আর মেডিকেল? সারা বাংলাদেশের ২২টি সরকারি ও ৫৩টি বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তির জন্য একই সময়ে একই প্রশ্নে পরীক্ষা হয়। ফলে, প্রশ্ন দু-একদিন আগেই ছাপানো হয় ও সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া লাগে। ফলে, এ হাত ও হাত করে প্রশ্ন বেঁচা কেনা হয়ে থাকে, মাঝে মাঝে। কিন্তু, এর জন্য ভর্তি পরীক্ষা কি দায়ী? নাকি দায়ী এর সাথে সংস্লিষ্ট মানুষেরা? আপনারা তাদেরকে শুদ্ধ করেন। ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা হবার কথা ছিলো ২৩শে সেপ্টেম্বর, কিন্তু প্রশ্ন ফাঁস হবার গুজব উঠলে, নতুন প্রশ্নে ৩০ সেপ্টেম্বর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এবং হঠাত নতুন প্রশ্ন ও সম্পুর্ণ ভিন্ন ফরম্যাটে প্রশ্ন সাহায্য করেছে, প্রকৃত মেধাকে খুজে বের করতে।

ইংলিশ মিডিয়ামঃ

কথা হলো, মেডিকেল কলেজে কি শুধু বাংলা মিডিয়ামের ছেলে-মেয়েদেরই পড়াতে চায় কিনা তাঁরা। এ লেখাটি আমার এক ক্লাসমেটের, যে কি না ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে, এখন আমাদের সাথে ঢাকা মেডিকেলে অধ্যয়ন করছে।

আমি যখন জানতে পারলাম যে, তাঁরা এসএসসি ও এইচএসসি এর রেজাল্টের ভিত্তিতে মেডিকেল ভর্তি নিয়ে পরিকল্পনা করছেন, আমি অবাক হয়ে গেলাম। তাহলে ইংলিশ মিডিয়ামের ছাত্র-ছাত্রীদের কি হবে, যারা আমার মতো ডাক্তার হবার স্বপ্ন দেখে? নাকি আমাদের ডাক্তার হবার ইচ্ছেটা অপ্রয়োজনীয় কিংবা তারা আমাদের ব্যাপারে ভুলেই গেছেন? আমি মনে করি, ও-লেভেল এবং এ-লেভেলের রেজাল্টের সাথে এসএসসি ও এইচএসসি এর রেজাল্টের তুলনা করাটা অসম্ভব। কারণ -

১) মার্ক দেবার সিস্টেমটাই আলাদা। হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীর একই জিপিএ রয়েছে, এ কারণে যা করা লাগবে, নম্বর দেখতে হবে। এখানেই আসল ঝামেলা। সব ছাত্র-ছাত্রীর বিষয় সংখ্যাও তো সমান না। আরও সমস্যা হলো, তুলনামুলক গ্রেডীং সিস্টেম। যেমন, ইংরেজীতে ৬০ পেলে এ গ্রেড, যেখানে ম্যাথ এ ৮০তে এ গ্রেড। এভাবে তো ইংলিশ মিডীয়ামের ছাত্র ছাত্রীরা সম্পুর্ণ অযাচিতভাবে পিছিয়ে পরবে।

এ লেভেলে আমাদের পছন্দ মতো আমাদের ৩-৫টি বিষয় থাকে, এবং প্রতি বিষয়ে ৬টি পেপার থাকে। এবং আমাদের পরীক্ষা হয় ৬০০ নম্বরের ভিত্তিতে। এ পৃথিবীতে এমন কেউ কি আছেন, যে কি না এই সিস্টেমের সাথে এসএসসি ও এইচএসসি রেজাল্টের তুলনা করতে পারেন?

৩) ও লেভেল/ এ লেভেলের সিলেবাস, এসএসসি/ এইচএসসি থেকে সম্পুর্ণ ভিন্ন। তাহলে, কিভাবে আপনি দুইটি সম্পুর্ণ আলাদা সিলেবাস এর স্টুডেন্টদের রেজাল্টের মাঝে তুলনা করবেন? অথচ, ভর্তি পরীক্ষার আগে আমরা এইচএসসি সিলেবাস পড়বার ৩-৪ মাস সময় পাই এবং একটি “একই” পরীক্ষায় অংশগ্রহন করি। অর্থাৎ, সম্পুর্ণ সমান প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহন করেই আমরা মেডিকেল্র পড়বার প্রত্যাশা করি।

প্রতিবছরই অনেক সমস্যা সম্মুখীন হয়েও এ লেভেলের ছাত্রছাত্রীরা মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে, এবং কেউ কেউ সফল ও হয়। আমি নিজেই তাদের একজন জলজ্যান্ত প্রমান, ইংলিশ মিডীয়ামের হয়েও আমি এখন ঢাকা মেডিকেলে পড়ছি। কিন্তু, ভর্তি পরীক্ষা বন্ধ করে দেবার মানে হলো, সেই শেষ সুযোগটুকুও কেড়ে নেয়া আমাদের থেকে। আমি মনে করি, একজন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে, আমার ছোটো ভাই-বোনদেরও সম্পুর্ণ অধিকার আছে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে, নিজ যোগ্যতায় মেডিকেলে অধ্যয়ন করবার।

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন-পত্রঃ



অনেকের মাঝে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন নিয়ে একটা চিন্তা কাজ করে, তা হলো, মুখস্ত নির্ভর এ নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষার মানে কী। মেডিকেল অধ্যয়নরত ছাত্র হিসেবেই বলছি, মেডিকেলে প্রচুর তথ্য আপনাকে মাথায় রাখতে। ইয়া মোটা মোটা বই এর এতো তথ্য আপনাকে মাথায় রাখতেই হবে, এটি বিশ্বাস করেই তো একজন ছাত্র মেডিকেলে পড়তে আসতে চায়। তবে, শুধু মুখস্ত করে কেউ ভালো ডাক্তার হতে পারবে না, পরীক্ষায় ভালো নাম্বার পেতে পারে। কারণ, বিভিন্ন প্যাথলজিকেল কন্ডিশনে অনেক অনেক ডায়াগনোসিস এর যৌক্তিক বিন্যাস-সমাবেশ করে আপনাকে চিকিৎসা করতে হবে। এতো বড় দায়ীত্ব নিতে হবে যাকে, তাকে মাথায় পড়া রাখবার মেন্টালিটি নিয়েই তো আসতে হবে! তবে, ২০১১-১২ সালের ভর্তি পরীক্ষায় সম্পুর্ন ভিন্ন ফরম্যাটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, যাতে কি না মুখস্ত নির্ভরতার বদলে কনসেপ্ট এর উপর জোর দেয়া হয়। এ উদ্যোগকে আমি বিশাল ভাবে সাধুবাদ জানাই।

শেষ কথাঃ

সবশেষে কথা একটাই, অনিয়মের এই দেশে, একটা মাত্র সুনিয়ম এখনও শিক্ষা ক্ষেত্রে বাকি আছে, তা হলো এই ভর্তি পরীক্ষা। যেখানে কিনা, সমান মেধার প্রতিযোগীতায়, নিজের যোগ্যতা প্রমান করবার সুযোগ দেয়া হয়ে থাকে। শুধু মাত্র কোচিং ব্যবসায়ীদের প্রতারনার দোহাই দিয়ে হাজারও পরিশ্রমী ছাত্র-ছাত্রীদের কপাল পোড়াবেন না। কোচিং তো এখন ক্লাস ওয়ানের ভর্তি পরীক্ষার জন্যও করানো হয়, তাই বলে কি ক্লাস ওয়ানেও ভর্তি পরীক্ষা হবে না? সব ভর্তি পরীক্ষা বাদ দিয়ে কি তবে টাকা ওয়ালাদের রাস্তা আরও সুগম করে দিতে চান? ভর্তি পরীক্ষা হবে না, ফলে অসৎ শিক্ষকদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাবে, টাকার বিনিময়ে তখন জিপিএ ৫ হবে বড়লোকের হাতের মোয়া। ধনীদের ডাক্তার আর গরীবদের রোগী বানানোর এই প্রস্তাব আপনারা বন্ধ করুন। পরিশ্রমী ও প্রকৃত মেধাবীদের ডাক্তার হবার পথ দয়া করে রোধ করবেন না। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা বন্ধ করে আরেকটি কালো অধ্যায় সূচনা করবেন না।
মূল ব্লগ Click This Link


বাকি অংশ আমার কথা

কয় দিন ধরে প্রচণ্ড রাগ লাগছিল কারন এই দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভাগ্য কিছু শুয়োরের বাচ্চার হাতে। তারা সারা বছর নাকে তেল দিয়ে ঘুমায় আর পরীক্ষার আগে উদ্ভট নিয়ম চালু করে। এক বার ও ভাবে না এই সব ছোট ছোট ছেলে মেয়ে দের কি হবে??

এই দেশের পরীক্ষা সিস্টেম এর কারনে কোচিং চালু আছে
২/৩ তা পদক্ষেপ নিলেই কোচিং বন্ধ হয়ে যাবে। আপনে কি জানেন মেডিকেলে চান্স পাওয়ার জন্য ৩ টা সাবজেক্ট এর ৬ পার্ট এর ১২-১৬ টা বই পড়তে হয় ?? এছাড়া ইংলিশ ,সাধারন গ্যান তো আছেই। এবং এক এক বই এর এক এক রাইটার এক এক তথ্য দিছে??
মাত্র একটা উদাহরণ দেই
বায়লজি বইতে দেয়া বেগুনি আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ৩৯০ ন্যানোমিটার
কেমিস্ট্রিতে এক পার্ট এ দেয়া ৩৮০
আরেকটাতে দেয়া ৪০০
ফিজিক্স এ দেয়া ৪১০
আরেক পার্টে দেয়া ৩৮৫
পরীক্ষায় আসলে কি করবেন??
গতবার পরীক্ষায় প্রশ্ন আসছে ১৯৮৮ সালের সিলেবাস থেকে। বুঝেন অবস্থা । আসছে কালা জ্বরের পরজীবী নিয়ে। এই গুলা আছে মেডিকেল ফাস্ট ইয়ারে
১ ভর্তি পরীক্ষার আগে পরীক্ষা কমিটি ঠিক করে দিবে কোন কোন বই থেকে প্রশ্ন আসবে। নির্দিষ্ট ৬ টা বই
২ সকল প্রশ্ন আগের রাতে ছাপান হবে
৩ পরীক্ষা কেন্দ্রীয় ভাবে শুধু ২-৩ জায়গায় হবে
এর চে ভালো কোন সিস্টেম হতে পারে কি বলেন ??
আমার নিজের এক ফ্রেন্ড এর কথা বলি
ও কলেজে ২ বছর কিছু পরে নাই
টেস্টে আটকায়ে গেল
পরে স্যারদের হাত পা ধরে পার করল
পরীক্ষার আগে দেখি ১০ পাতার একটা সুপার সর্ট সাজেশন ৫০০০ টাকায় কিনে আনল
বাংলা থেকে ম্যাথ সব
ঐ পোলা এ + পাইসে
আপনি বিশ্বাস করতে পারেন??
কিন্তু ভর্তি পরীক্ষায় ঐ পোলা সারা বাংলাদেশে কোন জায়গায় ওয়েটিং এ আসলো না
আমার আরেক ফ্রেন্ড কলেজে সব সময় ভাল করত
সারা বছর পড়ল । অর সারা জীবন সখ ডাক্তারিতে পড়া
পাইল ৪.৮!!!
কিন্তু ও হাল ছাড়ল না
গতবার একটুর জন্য মেডিকেল এ চান্স পায় নাই
এই বার ১ বছর দরজা জানালা বন্ধ করে পড়ছে
এখন পরীক্ষার দেড় মাস আগে নতুন নিয়ম!!!
আগের বার পরীক্ষার ১ মাস আগে জানাইসিল যারা আগে মেডিকেলে ভর্তি হয়ে আছে এবং আবার পরীক্ষা দিতেছে তাদের ৫ মার্ক কাটবে। ঐ প্রস্তাবটা ভাল ছিল কারন ঐ টার ফলে কোন মেডিকেল এ আসন শূন্য থাকবে না। কিন্তু পরীক্ষার দেড় মাস আগে কেন ?
এই বার আবার বলছে যারা ২য় টাইম পরীক্ষা দিবে, কোথাও আগে চান্স পাক বা না পাক তাদের ৫ মার্ক কাটবে!!!
এইটা কেমন কথা!!!
তারা যদি আগের বছর মেডিকেল পরীক্ষার পর এই সিদ্ধান্ত জানাইত তাহলে অনেক ছেলে মেয়েই অন্য কোথাও ভর্তি হয়ে যেত । মেডিকেল এ আর পরীক্ষা দিত না
আগে সব সময় যারা ১ম টাইম পরীক্ষা দিত, মেডিকেলের ৮০ পারসেন্ট সীট তারা নিত
কিন্তু ২০০৭ সালে প্রশ্ন ফাস হয়ে যারা ভাল তারা কেউ চান্স পাইল না
তাই ২০০৭ এর ব্যাচ ২০০৮ এ পরীক্ষা দিয়ে ৮০ পারসেন্ট মেডিকেল সীট দখলে নিল আর নতুনরা খাইল বাঁশ
তখন থেকে ৮০-৯০ পারসেন্ট সেকেন্ড টাইম চান্স পাইতেসে
যদি নতুন নিয়ম করবে তাহলে আগে বলবে
এখন সব প্রস্তুতি শেষ
শেষ মুহূর্তে বলছে কেন??
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০১২ সকাল ১০:৩৮
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×