১.
ডঃ রুহুল হক একজন রোগীকে ওষুধ লিখে বললেন "নেক্সট "
রুমে একজন যুবক এক ছেলে কে নিয়ে ঢুকল।
"স্যার স্লামালাইকুম"
"বস"
"স্যার আমি শামিম, আপনার স্টুডেন্ট, ২য় বর্ষ "
রুহুল হক শামিম কে চিনতে পারলেন। দেখে তার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। আর একটা ভিসিট মিস। শালা দেশ ফকিরে ভরে যাচ্ছে।
"কি সমস্যা?"
"স্যার আমার ছোট ভাই। গতকাল মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিল "
রুহুল আমিন দেখেই বুঝলেন দুর্বলতার কারণে এই অবস্থা। চেহারা দেখলেই বুঝা যায় দুর্বল ছেলে।
বললেন " তোমার সমস্যা দুর্বলতা। বেশি করে দুধ খাবে, মাংস খাবে। খাওয়া দাওয়া কর না?"
ছেলে শুধু মাথা নাড়ল।
শামিম বলল" স্যার একটা কথা। '
"কি কথা?"
"স্যার ঐ স্কলারশিপ এর ব্যাপারে কিছু করা যায় না? মানে সবাই পেল শুধু ৩ জন পেল না। "
"মাত্র ২০০০ টাকাই তো। ঐ টাকা দিয়ে তো সবাই রেস্তরায় ফুর্তি করে। তোমার এত কি দরকার। ?"
" স্যার মানে টাকা টা খুব দরকার আমার"
রুহুল আমিন ভালো করে তাকিয়ে দেখলেন। জীর্ণ পোশাক। তার চেয়েও জীর্ণ স্যান্ডেল পড়া।
"তোমার বাবা কি করে?"
" রিক্সা চালাতেন। এখন অসুস্থ হয়ে পড়ে আছেন বিছানায়।"
শালা আসলেই ফকিরের বাচ্চা। ২০০০ হাজার টাকা নিয়ে আবার ঝামেলা করতেসে।
রুহুল হক মুখে বললেন " আচ্ছা দেখি কি করা যায় "
২.
আজকে রুহুল হকের মন খুব ভালো। তার ছেলে গোল্ডেন এ+ পাইছে। সারা মেডিকেল কলেজে মিষ্টির খাওয়ালেন তিনি। ছেলে টা একটু গাধা প্রকৃতির। কিন্তু সময় মত স্যার দের টাকা খাওয়ানোতে
ফার্স্ট বয় এর পাশে সীট পরছিল দেখে। আর প্র্যাকটিকেল স্যাররাই তো নাম্বার দেয়। মাত্র দশ হাজার টাকায় যে ছেলে টেস্ট এ এ- পায় তারে গোল্ডেন বানায়ে দিল।
রুহুল হক করিডরে শামিম কে দেখেই চিনলেন। এক কোনায় দাঁড়িয়ে কাঁদছে।
" এই ছেলে কাঁদছ কেন?"
"স্যার আমার ছোট ভাইটা এ বার পরীক্ষা দিয়েছিল কিন্তু এ+ ও পেল না। ৪.৮ পেল "
রুহুল হক বললেন "পড়ালেখা না করলে তো পাবেই না"
" না স্যার আমার ছোট ভাই টা অনেক ভাল পড়া লেখায় কিন্তু প্রাকটিকেলে স্যাররা ২০০০ হাজার টাকা চেয়েছিল কিন্তু দিতে পারি নাই"
রুহুল হক বললেন " আরে রেজাল্ট তো সব না। আর চিন্তা না করে কোন ভাল সরকারি কলেজে ভর্তি করে দাও। কেঁদে লাভ নাই"
"না স্যার আমি ওকে ডাক্তার বানাব। "
"এই রেজাল্টে আর ডাক্তারির কথা চিন্তা কিভাবে চিন্তা কর!!!? আমার মেয়ে গত বার ২ টা গোল্ডেন নিয়ে চান্স পেল না"
" স্যার আমার রেজাল্ট ছিল ৪.৫ কিন্তু আমি জানতাম আমি চান্স পাব। রেজাল্টই সব না। স্যার আমার ভাই এর জন্য দুয়া রাখবেন"
রুহুল হক এর মুখ তেতো হয়ে গেল। শালা ফকিরের বাচ্চারা কিনা চান্স পেয়ে যায় আর আমার পোলাপান পায় না।
৩.
রাস্তায় জ্যাম।
রুহুল হক ড্রাইভার কে বললেন " কিরে সামনে জ্যাম কিসের?"
"স্যার মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার জন্য সব আন্দোলন করতাছে "
" সব শুয়োরের বাচ্চা। টাকা পয়সা নাই আবার মেডিকেলে পড়তে চায়"
রুহুল হক গাড়িতে থাকতেই এক মন্ত্রিকে ফোন দিলেন " ভাই আন্দলনে আবার পরীক্ষা হবে না তো?? তোমাদের ভরসায় আছি। আমার পোলা চান্স পাইব তো?"
" আরে রুহুল চিন্তা কর কেন। সব কয়টাকে পুলিস দিয়ে এমন মাইর দিব যে বাপের নাম ভুইলা যাবে। তুমি শুধু ১০ লাখ টাকা রেডি রাইখ। তোমার পোলা ঢাকা মেডিকেলে পড়ব "
৪.
'ভাগ, রানা ,ভাগ পুলিস আইল " শামিম তার ছোট ভাই কে বলে
রানা প্রানপনে দৌড় দেয়। কিন্তু দুর্বলতার জন্য পথে পড়ে যায়।
"ঐ টারে ধর। ঐ যে পরছে "
৬ জন পুলিস রানা কে ঘিরে লাত্থি মারতে থাকে। ২-৩ টা মার খাওয়ার পর রানার জ্ঞান থাকে না। কোন কলম ধরবে সে রকম সম্ভবনা ও আরও ২ টা লাত্থি খাওয়ার পর শেষ হয়ে যায়।
৫.
" বাবা এবার কেমন আয় করলেন?"
" খারাপ না ২০০০ টা স্টুডেন্ট এর কাছ থেকে ১০-২০ লাখ করে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা"
" আমাকে বিএম ডাব্লিউ কিনে দিতে চাইসিলা যে?"
"সব হবে। এবার আমরা আম্রিকায় ৫০ কোটি দিয়ে বাড়ি কিনব। পরের ঈদ আম্রিকায় কাটবে আমদের"
" বাবা ইউ আর দা বেস্ট"
(পৃথিবীতে এমন কোন দেশ নাই যেখানে উচ্চমাধ্যমিক এর পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়ে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়া যায়। আমেরিকায় এই গোল্ডেন নিয়ে গেলে বলবে মুরি খাও তোমরা। ঐখানে এমক্যাট নামক দীর্ঘ এবং এমসিকিউ বেসড পরীক্ষা দিয়ে চান্স পাইতে হয়। আমাদের পাশের দেশ ভারতেও উচ্চ মাধ্যমিক এর পর জয়েন্ট এন্ট্রান্স ( এম সি কিউ বেসড) দিতে হয়। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রী মিথ্যা তথ্য দিয়ে সবাই কে বিভ্রান্ত করছেন। আমাদের সাথে কেন এমন করছেন তিনি?? )
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ৯:১৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




