somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরীক্ষার ঝামেলায় লিখা পড়াই করতে পারছিনা । :D

১২ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১০:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



- আব্বু , মামা বানান করতে পারি ।
- কর ?
- ক আকার মা , চ আকার মা = মামা ।
শুনে আমি মূর্ছিত ।
অভিনব বানান রীতির প্রচলন কারী এই জ্ঞান তাপস আমার পুত্র , বয়স ৫ এর আসে পাশে ।
সবে প্লেতে ভর্তি হয়েছে । সারাদিন জ্ঞানের চর্চার মধ্যে আছে ।
অ লিখার পর তার বিস্ময়ের সিমা নাই ।সকালে তার আম্মুও বলছে এটা অ ,দুপুরে মামাও একই কথা বলছে ,রাতে আমিও বলার পর আমাকে প্রশ্ন করল, আব্বু আমিতো অ লিখেছি এটা ঠিক আছে কিন্তু সবাই বুঝলো কিভাবে ।

টিভি স্ক্রিন , ব্যানার , পোস্টার , সাইনবোর্ডের কিছু কিছু অক্ষর চিনতে পারে । স্কুলে নেয়ার পথে প্রায়ই চিৎকার করে উঠে- আব্বু- ম , কখনো আব্বু- ৫ ইত্যাদি । থ্রি হুইলারের উপরের CNG পড়তে পারার আনন্দে সি এন জি সিএনজি বলে এমন চিৎকার দিল আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম ।

প্রতিদিন ২/১ টা অক্ষর শিখছে ,পৃথিবীর জ্ঞানের দরজা তার জন্যে একটু একটু করে ফাঁক হচ্ছে । এই আনন্দটা সে ধরার চেষ্টা করছে । এই আনন্দ আমার মাঝেও সংক্রামিত হচ্ছে ।

জ্ঞান চর্চার পাশাপাশি তার দিনের একটা বৃহৎ অংশ কাটে , ব্যবহারিক বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিস্কারের নেশায় ।
সেদিন বাসায় গিয়ে দেখি মন খারাপ করে খাটে বসে আছে । ব্যাপার কি জিজ্ঞেস করায় বলল , আম্মু বকেছে ।
আরো বিশদে গিয়ে জানা গেল---
খাটের উপর থেকে ফুটবল নিক্ষেপ করে কিভাবে টিভির সুইচ অন অফ করা যায় এই আবিস্কারে প্রায় সফল হয়ে গিয়েছিল , মাঝখান থেকে গ্লাসটা ভেঙ্গে সবকিছু বরবাদ হয়ে গেল । তার আম্মু শব্দ শুনে কিচেন থেকে এসে দেখে এই কাণ্ড । তার পর-------
সান্ত্বনা দিয়ে বললাম , বাবারে , সব আবিস্কারকদের আবিষ্কারই সমসাময়িক জনগণ ভাল ভাবে নেয় নি । তাদেরকে প্রায়ই বকা ঝকা আর মাইর ধরের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে , আমিও জনগনের বাইরে নই , তাই রিমোট থাকার পরও ফুটবল নিক্ষেপ করে টিভি সুইচ অন অফ করতে হবে কেন ? তা আমারও মাথায় ডুকচেনা । চেহারা দেখে বুঝলাম আমার মূর্খতার প্রমান পেয়ে সে নিরানন্দ বোধ করছে ।

টবে পেয়াজ রোপণ করে শত ভাগ সফলতা অর্জনের পর ইদারনিং সে উদ্ভিদ বিদ্যার প্রতি ঝুঁকেছে ।
সেদিন জিজ্ঞেস করলো , আব্বু, পয়সা কি আইস্ক্রিম ?
বললাম , বুঝলাম না ।
-- বলছিলাম , পয়সা আর আইসক্রিম কি একই জিনিষ ?
একদিন ২ টাকা দামের একটা আইসক্রিম টবে রোপণ করেছিল । উদ্দেশ্য পরিষ্কার । ডং ডং শব্দ শুনে বাসা আর গেট দোড়াদোড়ি আর কাঁহাতক সহ্য হয় । তার চেয়ে যদি গাছ গজানো যায় -------
গবেষণা কর্মের সর্বশেষ অবস্থা আমাকে জানানোর পর বললাম , চল দেখি ।
মাটি খুঁড়ে দেখা গেল আইসক্রিম উধাও ।
আইসক্রিম পানি তাই গলে গেছে । এটা তাকে বুঝিয়ে বললাম ।
সেইম ঘটনা আজও ঘটেছে । তবে বীজ ভিন্ন । ৫ টাকার কয়েন ।
পরে দেখা গেল এই বীজটাও উধাও । তাই সে জানতে চাইছিল পয়সা আর আইসক্রিম কি একই জিনিষ কিনা ।
পাশে দাঁড়ানো আমার মেয়েটার মিটিমিটি হাসি দেখে বুঝলাম , পয়সা আইসক্রিম হয়ে কার পেটে গলেছে ।

তার মধ্যে বিবিধ বিকট প্রতিভার অভাব নাই । জন্মের পর পরই বিকশিত এক প্রতিভার চর্চা এখনো ধরে রেখেছে ।
মাঝে মাঝে ঘুমের মধ্যে ওই প্রতিভার প্রকাশ ঘটিয়ে সকালে সন্ধিহান হয়ে পড়ে , '' বিছানাটা ঘামে ভিজেছে ? নাকি -----।
একদিন বিছানার ভিজা অংশ আমার দিকে একটু বেশি হওয়ায় নিজেই প্রায় গান পয়েন্টে পড়ে গিয়েছিলাম ।

সকালে ছেলেটার জিবনের প্রথম পরীক্ষা ( মাসিক ) ।
বাসায় গিয়ে রাতে জিজ্ঞেস করলাম , পড়া লিখা কেমন হয়েছে ?
বলল পরীক্ষার ঝামেলায় সে লিখা পড়াই করতে পারছেনা ।
ঝামেলা গুলি হচ্ছে -
১/ পরীক্ষা কেন্দ্র কলেজে নাকি পাইলট হাই স্কুলে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য নাকি সে পায় নি ।
২/ সকালে সবার সাথে দেখা করতে গেলে কে কত টাকা সেলামি দিবে , সে ব্যাপারে কোন কানা ঘুষা সে শুনছেনা ।
৩/ মিষ্টি কয় কেজি , কোন ধরনের আনা হবে তারও কোন আলোচনা নাই ।
বললাম তোমার আপুর বেলায় রেজাল্ট দেয়ার পর মিষ্টি আনা হলেও তোমার বেলায় আগামী কালই আনা হবে , এবং তোমার পছন্দের ক্ষীরমোহন । বাকি বিষয়গুলিও বুঝিয়ে বলে পিতা পুত্র ঘুমাতে গেলাম ।

পরিশেষে ,শিশুর দুষ্টামি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিনোদন । তাই ,শিশুদের প্রতি সদয় হোন ।
আল্লাহ আমাদের প্রত্যেকের সন্তানদের আনন্দময় শৈশব , উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আর নিরাপদ জীবন দান করুন ।

৭২টি মন্তব্য ৭২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭



ছবি সৌজন্য-https://www.tbsnews.net/bangla




ছবি- মঞ্চে তখন গান চলছে, মধু হই হই আরে বিষ খাওয়াইলা.......... চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী গান।

প্রতি বছরের মত এবার অনুষ্ঠিত হল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪। গত ২৪/০৪/২৪... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

×