somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্রহ্মদত্যি ও থানকুনি একটি রম্য পোস্ট

১৫ ই জুন, ২০১৫ রাত ৮:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১ / ব্রহ্মদত্যি

ছোট বেলায় দেখেছি , জীন , ভুত , দেও ,পরীর খারাপ দৃষ্টি কাটান দিতে ''ভোগ'' দেয়া হতো ।

তিন রাস্তার সম্মিলিত স্থান বা তিন আইলের মিলিত স্থানে ''মুহাইঞ্জিন্না'' ( সূর্যাস্তের পর পর ) টাইমে , অশরীরী আত্মার সন্তুষ্টি কল্পে কিছু খাদ্য বস্তু রেখে দেয়া হতো । আমাদের ছনখোলা বনের ভিতর তিন আইলের মাঝে সারা গাঁয়ের মানুষ ''ভোগ'' দিয়ে যেতো ।


''ভোগ'' এর আইটেম গুলো খারাপ ছিল না । কয়েক টুকরা মাছ ভাজা , আতপ চাল আর গোটা চারেক সেদ্ধ ডিম ।

সকালে এসে যদি দেখা যেতো খাবার গুলো নাই , তাহলে ধরে নেয়া হতো অশরীরীর এসে ''ভোগ'' খেয়ে গেছে ।


এই ''অশরীরীর'' কম্মটা প্রায়শ আমি আর আমার ল্যাংটা কালের দোস্ত সেলিম কে করতে হতো ।


গ্রামের মানুষ খুশি , তাদের বাচ্চার উপর থেকে অশরীরীর বদ নজর কাটা যাচ্ছে । সাথে তারা আরও একটা বিষয়ে ধারণা পেলো ,
''এই ব্রহ্মদত্যির আতপ চাল আর টাকি মাছ ভাজায় রুচি নাই '' সুতরাং ঐ দু বস্তু বাদ দিয়ে ডিমের পরিমান বাড়ানো হলো ।


রমজান মাসে ইমাম সাহেবদের মত , এক অমাবস্যার রাতেতো শিডিউল দিতেই হিমশিম খাচ্ছিলাম ।
চার বাড়ী থেকে নাজরানা এসেছে । গোটা বিশেক ডিম ।
আটটা খেয়েই বমি করার জোগাড় । খোসা ছাড়ানো না হলে রেখে দিয়ে সকালের ব্রেকফাস্টটাও সারানো যেতো ।

কি করি ? কি করি ?
মাথায় উপায় একটা এসে গেলো । কমার্শিয়াল । উদ্রিত্ব পন্যের সফল বানিজ্যিকিকরন ।
জনটু , গবি , রিনটুকে অফার করা হোল , হালি আট আনা হিসাবে দাম দস্তুরও করা হল । তবে বাকিতে ।
হোক বাকি , আপাতত মাল টা গছাতে পারলেই আমরা বাঁচি ।

এই বাকিটা যে জনম বাকি হবে তখন বুঝতে পারিনি ।


২/ থানকুনি





শীতের শেষ । আমাদের উত্তরের পুকুরে মাছে কিলবিল করছে । বেশির ভাগ শিং মাছ । দুতিন দিন ধরে মাছ ধরা হচ্ছে ।
শিং মাছের ঘাই খেয়ে অনেকেরই নাকানি চোবানি অবস্থা ।


একটা কথা উল্যেখ করা দরকার । সেকালে মাছ ধরার কিছু আদব কেতা ছিল ।
তারই অংশ হিসাবে , পুকুরে অবস্থান কালিন শিং মাছের নাম ধরা নিষিদ্ধ ছিল । নাম নিলে তিনার ঘাই খাওয়ার সম্ভাবনা বহুগুন বৃদ্ধি পেত ।
তাই কেউ ঝুঁকি নিতে চাইতেন না । সকলে ডাকতেন ''মায়ু'' (মামা) ।


তার পরও কেউ মামার রোষানলে পড়লে , কার্যকরী চিকিৎসা পদ্ধতি ছিল - পুকুর থেকে উঠে একটু আড়ালে গিয়ে আক্রান্ত স্থানে ''পিশাব'' করে দেয়া । এতে বেশ আরাম পাওয়া যেতো । ( সম্ভবত গরম প্রস্রবনের কারনে এমনটি হতো )

এর একটা অসুবিধাও ছিল , মিনিটে মিনিটে মামার ক্রুদ্ধ আচরণ , সে তুলনায় ''দাওয়াইর'' স্টক ছিল সীমিত । সবাই ঝুঁকির মধ্যে থাকায় , কেউ কাউকে ও বস্তু ধার কর্জও দিতে চাইতেন না ।

এ অবস্থায় সেলিম এক ধন্বন্তরি প্রতিরোধ উপায় সন্ধান পেলো ।

আদুনি (থানকুনি) পাতা লুঙ্গীর হাঁইর (কোঁচড়ে) ভিতর ঢুকিয়ে রাখলে , শিং মাছের জারিজুরি ফেল । অনেক সন্ধান করে চরনারায়ন থেকে দুজন গিয়ে জিনিষটা সংগ্রহ করলাম ।

মাছ ধরা পর্বের শুরু হতে প্রায় আধা ঘনটা বাকি । আমি আর সেলিম জনপ্রতি প্রায় ১০০ গ্রাম করে থানকুনি পাতা হাঁইর (কোঁচড়ে) ভিতর গুজে বেশ ভাব নিয়ে ঘুরছি । ( সেলিম আমার চোখে ধুলি দিয়ে ভাগে একটু বেশি নিয়েছিল ,তার প্রায়শ্চিত্যও তাকে করতে হয়েছে )

ভাব নেয়ার বিষয়টা সেলিমের নানা ওয়ালী আহাম্মদ মিয়ার নজর এড়ালো না ।( ইনি সেলিমের মায়ের চাচা, আমার জেঠাতো ভাই) তিনি আমাদের দিকে কেমন যেন চিকন চোখে তাকালেন ।

তিনি ছুটে গেলেন আমার আম্মার কাছে ,'' চাচী আম্মা , আমনের হুতে বিড়ি খায় , তার হাঁইর ভিতর আবুল বিড়ির পুরা বান , আমি নিজে দেখেছি ।''

আমার আম্মা অতিশয় সরল মহিলা , বললেন , আমনে হেতারে চোবান্নো কিল্লায় ? ( চড় মারেন নাই কেন ?)

চড় মারা কর্মে ওয়ালী আহাম্মদ মিয়ার উৎসাহ অসীম । হাত যশও ঈর্ষনীয় । পূর্বে তিন জনের ''মুতে'' দেয়ার ইতিহাস আছে ।
এত দিন অভিভাবকদের বিনা অনুমতিতে চড় মারার চর্চা চালিয়েছেন । আজ অনুমতি পেয়ে উনার চোখ চকচক করছে ।

ভাব খানা এমন - আগে তিন জনরে মুতাইছি , আইজকা আর মুতানিতে পোষাইবো না , আজকের মিশন ''হাগু'' । ( অরুচিকর শব্দ চয়নের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি )

উনাকে বেশি খুঁজাখুঁজির ঝামেলায় জেতে হয়নি , একটু এগিয়েই তিনি আরেক মজুতদারের সন্ধান পেয়ে গেলেন ।

- '' সেলিমা , এদিকে আয় । বাব্বা ! তোর হাঁইতো দেখতেছি লিটইন্নার হাইর থেকেও বেশি ফুলা , ম্যাচ ও আছে মনে হয় । ( ইনি কাউকে ভালো নামে ডাকতেন না , আরও উল্যেখ্য যে , সেলিমের কোঁচড়ে মালের পরিমান ছিল ১৫০ গ্রামের মত)

উনি কি বললেন, সেলিম তা বুঝার চেষ্টা করছে , এমত সময়ে -

''ঠা'''''''''''শ '' ।

উঠানে পড়ে সেলিমের তিন চার গড়াগড়ি ।
কোথাকার লুঙ্গী কোথায় , আদুনিতো আরো দূর ।

না , কাঙ্ক্ষিত পারফরমেন্স উনি দেখাতে পারেন নি , তবে এই প্রথম কাউকে চড় মেরে আনন্দিত হওয়ার চেয়ে তাঁকে লজ্জিত হতে দেখলাম ।

কাহিনী এখানেই শেষ ।

উৎসুক পাঠক জানতে চাইবেন , মাছ ধরার কি হল ?

তাদের জ্ঞাতার্থে - মাছ ধরা যথারীতি চলেছে । সেলিমে খাইছে তিন ঘাই , আমি পাঁচ । এটা আমাদের জীবনের সর্বচ্ছো স্কোরও ।

বোনাস হিসেবে সেলিমের ঠ্যাং জড়িয়ে ধরেছিল ''ঢোরা'' সাপে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০১৫ বিকাল ৫:৫২
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×