প্রবাসে বাংলাদেশের রক্তের উত্তরাধিকারী গুণীগন - পর্ব ১২৬ হইতে ১৩০
( এই পর্বে আরো আছেন -
১২৬/ ‘মিস মিসিসিপি’ পারমিতা মিত্র ।
১২৮ / বিশ্বের সেরা ফটোগ্রাফার হিসেবে প্রাপ্ত এওয়ার্ড ‘মাস্টার অব ফটোগ্রাফী’ বিজয়ী বাংলাদেশী-আমেরিকান মোহাম্মদ আলী সেলিম ।
১২৯ / বুলবুল হুসাইন -ব্রিটিশ হুইল চেয়ার রাগবি দলের তারকা
১৩০/ অনন্য কৃত্বিতের স্বাক্ষর রেখেছেন আটলাণ্টিক সিটিতে বসবাসরত বাংলাদেশী মেধাবী ছাত্রী নাজিফা চৌধুরী ।)
১২৬ / ‘মিস মিসিসিপি’ পারমিতা মিত্র ।
'' আমার স্বপ্ন হচ্ছে নভোচারী হওয়া । বাংলাদেশের প্রথম নভোচারী হিসেবে আমি নাসায় কাজ করতে চাই । ইতিমধ্যে প্রাথমিক কাজ আমি শুরু করে দিয়েছি । আমি স্পেসে যেতে চাই । অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চাই । এটাই আমার মূল লক্ষ্য । আমি বোঝাতে চাই বাংলাদেশের মানুষও পারে এতবড় একটি জায়গায় কাজ করতে ।
এক্ষেত্রে আমি নিজেও এদেশের সবাইকে অনুপ্রেরণা জোগাতে চাই ।
বাংলাদেশে আমার জন্ম । আমার দেশকে আমি অনেক ভালবাসি । তাই দেশকে সব সময় প্রতিনিধিত্ব করতে চাই বিশ্ব দরবারে । আমি আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলতে চাই, বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বের যে কোন প্রান্তে সর্বোচ্চ অবস্থায় যেতে পারে, সেই মেধা, যোগ্যতা ও ক্ষমতা আমাদের আছে । ''
চমৎকার দেশাত্ববোধের পরিচায়ক কথা গুলি যিনি বলেছেন , তিনি পারমিতা মিত্র । যার মাথায় সমপ্রতি উঠেছে মিস মিসিসিপি মুকুট । শুধু তাই নয়, মিস মিসিসিপি হয়ে তিনি অংশ নিয়েছেন সদ্য সমাপ্ত মিস ইউএসএ প্রতিযোগিতায়ও ।
বাংলাদেশের কোন মেয়ের এটাই প্রথমবারের মতো মিস ইউএসএ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া ।
এর আগে ২০০৯ সালে পারমিতা ''মিসিসিপি টিন'' প্রতিযোগিতায় প্রথম হন । ঐশ্বরিক সৌন্দর্য ছাড়াও খুব সহজ ও সরলভাবে মানুষকে আপন করে নেয়ার ক্ষমতা তার মধ্যে পুরোপুরি বিদ্যমান ।
এদিকে ভবিষ্যতে মিডিয়ায় কাজ করার আগ্রহ থাকলেও পারমিতা মূলত নাসায় কাজ করতে চান । হতে চান নভোচারী । সেই উদ্দেশ্যেই বর্তমানে রকেট বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করছেন ।
পারমিতার জন্ম বাংলাদেশের বরিশালে ।
তথ্য -
১২৭ / ফ্রান্স সেন্ট্রাল হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের প্রধান -ডাঃ খোদেজা আক্তার
খোদেজা আক্তার । ফ্রান্স সেন্ট্রাল হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের পিএইচ পদে আছেন । সেখানের ক্লিনিক্যাল শাখায় এটাই সর্বোচ্চ পদ । আজকের এই অবস্থানে আসতে তাঁকে পাড়ি দিতে হয়েছে দীর্ঘ পথ । এই পথে সহযাত্রী ছিলেন স্বামী চিকিৎসক রফিকুর রহমান ।
ঢাকার তেজগাঁও পলিটেকনিক স্কুলের বালিকা শাখা থেকে মাধ্যমিক এবং হলিক্রস কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন খোদেজা। এরপর ছোটবেলার স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে ভর্তি হন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে । সেখান থেকে পাস করে কিছুদিন শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করেন দেশে । এরপর ফ্রান্সে স্বামীর কাছে উড়াল দেন ১৯৮১ সালের অক্টোবরের দিকে। প্রথম দুই মাস ঘরে বসেই কাটে ।
এর মধ্যে বুঝতে পারেন, এখানে ফরাসি ভাষা শিখতেই হবে ।
খোদেজা বলেন, ‘এই চিন্তা থেকেই লিও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম ফরাসি ভাষা শিক্ষা কোর্সে । নিজের চেষ্টায় প্রথমও হলাম । অনেক ভালো লাগছিল তখন । এবার শুরু হলো নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার পালা। আর আমাদের দেশ থেকে ডাক্তারি পাস করে ফ্রান্সে সরাসরি চিকিৎসক হিসেবে কাজ করার সুযোগ নেই , সেখানে আবার পরীক্ষা দিতে হয় ।
সেখানে উত্তীর্ণ হলেই চিকিৎসক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।’ ফ্রান্সেই জন্ম হলো খোদেজার প্রথম সন্তান মৌসুমী রহমানের । মাঝে কেটে গেল দুই বছর । এরপর স্যাভেলিয়ার একটি হাসপাতালে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করার সুযোগ মিলল । পাশাপাশি তিনি ভর্তি হলেন মেডিসিনে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করতে ।
তিনি বলেন, ‘আমি দেখলাম, এখানে প্রতিষ্ঠা পেতে হলে সব বিষয়ে পারদর্শী হতে হবে । অনেক পরিশ্রম করতে হতো । কিন্তু থেমে যেতাম না । শিখে ফেললাম গাড়ি চালনাও । এ সময় জন্ম হলো আমার দ্বিতীয় সন্তান প্লাবন রহমানের । দুই সন্তান সামলানো, কাজ আর পড়াশোনা সব মিলিয়ে অগোছালো অবস্থা । তবে আমার স্বামী যথেষ্ট সাহায্য করতেন ।’
সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল । এর মধ্যে স্বামী রফিকুর রহমান পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন । বিদেশ-বিভুঁইয়ে দুই সন্তানসহ অসহায় হয়ে পড়েন খোদেজা । সাত ও নয় বছরের দুই সন্তানকে নিয়ে শুরু হয় তাঁর টিকে থাকার লড়াই । পড়াশোনা, খণ্ডকালীন চাকরি, আবার দুই সন্তানের পড়াশোনা ও দেখভাল করা সবই করতে হয়েছে । হাল ছাড়েননি তিনি । সংসারের ব্যয় বেড়ে গেলে শুরু করলেন পূর্ণকালীন চাকরি ।
মাদক, মাদকাসক্তি ও মনোরোগ বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা চালিয়ে যেতে থাকেন । এবার প্রস্তুতি নিলেন ‘ইকুইভ্যাল’ পরীক্ষার জন্য। ইকুইভ্যাল হচ্ছে বাংলাদেশের এমবিবিএস সমমানের সার্টিফিকেট পরীক্ষা । উতরে গেলেন সেখানেও ।
সাহসটা বেড়ে গেল খোদেজা আক্তারের। এরপর দিলেন ফ্রান্সের পাবলিক সার্ভিস পরীক্ষা । সেখানেও সফল হলেন ।
খোদেজার ছেলে প্লাবন এখন প্রকৌশলী । বর্তমানে ফ্রান্সের সাউথ ওয়েস্টের গ্যাসলাইন রক্ষণাবেক্ষণের প্রধান । আর মেয়ে এ বছরই ফার্মাসিতে পড়া শেষ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন কম্বোডিয়ায় ।
কাজের খাতিরে বিদেশে অবস্থান করলেও দেশকে ভুলে থাকতে পারেননি খোদেজা। তাই তো প্রতিবছর সুযোগ পেলেই সন্তানদের নিয়ে এক বা একাধিকবার দেশে আসেন। আর সেই ধারা অব্যাহত রাখতেই এবারও দেশে এসেছিলেন মা-ভাইবোনদের দেখতে ।
তথ্য-
১২৮ / বিশ্বের সেরা ফটোগ্রাফার হিসেবে প্রাপ্ত এওয়ার্ড ‘মাস্টার অব ফটোগ্রাফী’ বিজয়ী বাংলাদেশী-আমেরিকান মোহাম্মদ আলী সেলিম ।
ফটোগ্রাফীতে সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ ‘মাস্টার অব ফটোগ্রাফী’ এওয়ার্ড ২০১৪ পেয়েছেন মোহাম্মদ আলী সেলিম ।
প্যারিসভিত্তিক দ্য ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফটোগ্রাফিক আর্ট (এফআইএপি) প্রতি বছর বিশ্বের একজন সেরা ফটোগ্রাফারকে এ সম্মান প্রদান করে থাকে । ফটোগ্রাফীতে সর্বোচ্চ মর্যাদার এ সম্মানপ্রাপ্তিতে মোহাম্মদ আলী সেলিম হচ্ছেন প্রথম বাংলাদেশী এবং দ্বিতীয় আমেরিকান ।
যুক্তরাষ্ট্র কেন্দ্রীয় সরকারে চাকরি করেন সেলিম । পেশার সাথে ফটোগ্রাফীর কোনই সম্পর্ক নেই । তবুও তিনি নিরন্তরভাবে ফটো তুলছেন ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার হিসেবে ।
নিউইয়র্কের রাস্তায় , আনাছে কানাছে হেঁটে গভীর পর্যবেক্ষণমূলক বহু ছবি তুলেছেন । সেখান থেকে ‘ দেয়াল লিখন’ (গ্র্যাফিটি) প্রকল্প
সংক্রান্ত ২০টি ছবি প্রতিযোগিতার জন্যে প্রেরণ করেন লুক্সেমবার্গে ।
লুক্সেমবার্গে ৫ দিনের বৈঠকে জুরিবোর্ডের সদস্যরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন ।
ফটোগ্রাফীতে সর্বোচ্চ মর্যাদার এ সম্মানপ্রাপ্তিতে তিনি ভীষণ খুশী এবং বাঙালির জন্যে এটি আরেকটি গৌরব বলে উল্লেখ করেন মো. সেলিম । তিনি বলেন, ‘আমার এ বিজয়ে বাংলাদেশের নবীন ফটোগ্রাফাররা উৎসাহ পাবেন । ''
তথ্য -
১২৯ / বুলবুল হুসাইন -ব্রিটিশ হুইল চেয়ার রাগবি দলের তারকা
মনোবলের অনন্য উদাহরণ বুলবুল হুসাইন । তিনি একজন রাগবি খেলোয়াড় । তবে তার বিশেষত্বটা অন্য জায়গায় । তিনি ব্রিটিশ হুইল চেয়ার রাগবি দলের খেলোয়াড় । লন্ডনে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় বুলবুলের মেরুদণ্ড ভেঙে যায় তার । এর পরও আগের মতো রাগবি খেলাটা ছাড়েননি । হুইল চেয়ারে বসেই চালিয়ে যান এ খেলাটা । এক সময় ব্রিটিশ হুইল চেয়ার রাগবি দলে জায়গা করে নেন বুলবুল ।
এখন দলটির অন্যতম তারকা তিনি । ঘরে বসে না থেকে খেলাটা চালিয়ে যেমন নিজেকে সুস্থ রেখেছেন, তেমনি সম্মানজনক স্থানও করে নিয়েছেন সবার মধ্যে । রাগবি এখন তার ধ্যান-জ্ঞান ।
২০১০ সালের বিশ্ব রাগবি চ্যাম্পিয়নশিপে তিনি অসাধারণ খেলেছিলেন । তার নৈপুণ্য দারুণ প্রশংসিত হয় । নিজের চেষ্টা আর সাধনা দিয়ে সাফল্যের শীর্ষে পেঁৗছতে দৃঢ়প্রত্যয়ী বুলবুল ।
তথ্য -
১৩০/ অনন্য কৃত্বিতের স্বাক্ষর রেখেছেন আটলাণ্টিক সিটিতে বসবাসরত বাংলাদেশী মেধাবী ছাত্রী নাজিফা চৌধুরী
নিউজার্সীর আটলাণ্টিক কাউণ্টিতে বসবাসরত কয়েকশত ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে ২০১১ সালে একাডেমিক এক্সিলেন্সী প্রোগামের আওতায় অসামান্য রেজাল্ডের জন্য কাউণ্টির ষ্টুডেণ্ট অব দ্যা ইয়ারে ভূষিত হন বাংলাদেশী নাজিফা চৌধুরী ।
এর পূর্বে নাজিফা চৌধুরী আটলাণ্টিক সিটির সভরেইন এভিনিউ হাইস্কুল থেকে কৃত্বিতের সাথে জুনিয়ার গ্রেজুয়েশন ডিগ্রি লাভ করেছেন । নাজিফা সভরেইন এভিনিউ হাইস্কুলে দুবার ষ্টুডেণ্ট কাউন্সিলর নির্বাচিত হন ।
নাজিফা দীর্ঘদিন ধরে এশিয়ান-আমেরিকান ক্লাবের সাথে জড়িত । তার কৃত্বিতের স্বাক্ষর হিসাবে ইতিমধ্যে নিউজার্সী ষ্টেট সিনেটর ফ্রাংক লুটেনবার্গ, কংগ্রেসম্যান ফ্রাংক লুবিণ্ডূ,নিউজার্সী ষ্টেট সিনেটর জিম হুইলেন, আটলাণ্টিক কাউণ্টি এক্সিকিউটিব ডেনিস লেবিনসন এবং আটলাণ্টিক কাউণ্টি বোর্ড অব এডুকেশান তাকে অভিনন্দন জানিয়েছে এবং সম্প্রতি আটলাণ্টিক কাউণ্টি বোর্ড অব এডুকেশনের পক্ষ থেকে হোটেল ক্লারিওনে তাকে আনুষ্টানিকভাবে সংবধনা প্রদান করা হয় ।
নাজিফা বিশিষ্ট কলামিষ্ট নাসির উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী এবং আটলাণ্টিক সিটি ডেমোক্রেটিক পার্টির কমিটি পারসন ও বাংলাদেশের সাবেক রাজনীতিবিদ শিরিন চৌধুরীর কনিষ্ট কন্যা । নাজিফাদের আদি নিবাস সন্ধীপ ।
তথ্য -
(বিঃদ্র- ডাঃ খোদেজা আক্তারের ছবি পাওয়া যায়নি , ব্যবহৃত ছবিটি প্রতীকী )
প্রবাসে বাংলাদেশের রক্তের উত্তরাধিকারী গুণীগন - পর্ব ১ হইতে ১০০ , এখানে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:২১