জিপিএ ৫ পাওনি ? কিংবা ফেল ? / অন্যরা যাই বলুক , তুমিই সেরা !!
ছাত্রদের আমরা একটা কথা প্রায়ই জিজ্ঞেস করি , তোমার রোল কত ?
যখন শুনি ১/২ বা ৩ , আমার মনটা খারাপ হয়ে যায় । চোখের সামনে ভেসে উঠে এক লাইভ রোবটের ছবি ।
যারা ভোরে উঠে নাকে মুখে নাস্তা গুঁজে বইয়ের বিশাল বোঝা নিয়ে ছুট লাগায় প্রাইভেট পড়তে , এর পরেই স্কুলের ক্লাশ , স্কুল থেকে ফিরে খেয়ে দেয়ে ফ্রেশ হতে না হতেই প্রাইভেট পড়াতে চলে আসছে ধর্মীয় টিচার , কারো নাচের , গানের টিচার । সন্ধ্যার পরেই অংক ইংরেজির প্রাইভেট টিচার । ঘুমানোর আগ পর্যন্ত পরের দিনের স্কুল,প্রাইভেট ,কোচিঙের পড়া রেডি করতে চলে বই খাতা নিয়ে ফাইট !
কোথায় এদের খেলাধুলা, কোথায় বিনোদন , আর কোথায় বিশ্রাম । অদুরদর্শী শিক্ষা পদ্বতি আর অভিভাবকদের গোঁয়ার্তুমি কেড়ে নিচ্ছে তাদের আনন্দময় শৈশব ।
ক্লাশে ১৫০ জন ছাত্র , সবার রোল ১ হওয়া সম্ভব নয় । একথা অভিভাবকরা বুঝতে চান না । যে সব অভিভাবক একাডেমীক জীবনে পরীক্ষার খাতায় বেশির ভাগই গোল্লা পেয়েছেন , বা পেয়েছেন টেনে টুনে ৩৩ ।
তথাকথিত ভাল ছাত্র হতে না পারার লজ্জা তাঁদের কুরে কুরে খায় । তারা নিজেরা যা হতে পারেন নি সেই ব্যর্থতা পুষিয়ে নিতে চান তাদের ছেলে মেয়ের জীবনে । এঁরা রোল ১ আর জিপিএ ৫ ছাড়া অন্য কিছু বুঝেন না, এঁদের বিলাসী চাহিদার নিচে চাপা পড়ে পিষ্ট হচ্ছে শিশুদের জীবন ।
আমি আসলে ''শিবের গীত''এর দিকে চলে যাচ্ছি ! আমি লিখতে চাইছিলাম আজ যারা জিপিএ ৫ পাবেনা তাদের নিয়ে ।
আজ এস,এস,সি পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে । আমি দিব্য দৃষ্টিতে দেখতে পাচ্ছি তোমাদের উপর আজ কটু বাক্যবান বয়ে যাচ্ছে , কারো পিঠে পড়ছে দুদ্দাড় কিল । কোন বাড়ী থেকে ভেসে আসছে অষ্টম শ্রেণীতে ৩ বার ফেল করা মায়ের মরা কান্না ''হায় হায় রে ! কি অপদার্থ পোলা/মাইয়া পেটে ধরেছিলামরে , !!!!''
এই সবে তোমরা একটুও মন খারাপ করবেনা । আমাদের দেশের অমিত নামের একজনকে টেস্টে ফেল করায় পরিক্ষাই দিতে দিচ্ছিলনা শিক্ষকরা , আজ তিনি ক্যানাডা ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ভিসি । এডিসনকে পর পর তিন বার একই ক্লাসে ফেল করায় স্কুল থেকে বের করে দিয়েছিলেন শিক্ষকরা , এরকম নজীর ভুরি ভুরি ।
মহাজ্ঞানী মহাজন বা সভ্যতাকে এগিয়ে নেয়ার কাজে যারা আমাদের কাছে প্রাতঃস্মরণীয় তাঁরা কেউ জীবনে ভাল ছাত্র ছিলেন না ।
পৃথিবীতে সফল মানুষের ইতিহাস এক কথায় ''ফেল্লা''দের ইতিহাস ।
যারা ভাল ছাত্র তাদের কোন ভাবেই আমি ছোট করছিনা । সমস্যা হচ্ছে ভাল ছাত্রদের জীবন নির্দিষ্ট চকে বন্দী হয়ে যায় ভাল রেজাল্টের কারনে ।
উদাহরণ স্বরূপ এইচ এস সিতে ভাল রেজাল্ট করা ছাত্রটি তখনি তার জীবনের লক্ষ্য স্থির করে ফেলছে , সে হবে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার । এর বাইরে সে কিছু ভাবছেনা । অথচ খারাপ রেজাল্ট করা ছাত্রটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য খোলা রয়েছে হাজার হাজার পথ যা ভাল ছাত্রটির নেই ।
হতাশ হওয়ার কিছুই নেই , তোমরাই এগিয়ে নেবে দেশকে , তোমাদের দিকে চেয়ে আছে বিশ্ব ।পরিশেষে অভিভাবকদের নিকট আবেদন, আপনাদের বুঝতে হবে পরীক্ষায় পাশ না করার ফলে সবচেয়ে বেশি যদি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকে তাহলে তা পাচ্ছে আপনার সন্তান।
আমি জানি “তুমি পারবে” বা “চেষ্টা করলেই তুমি পারো” এধরনের উৎসাহব্যঞ্জক কথা বলুন। - আপনার সন্তানকে বুঝাতে হবে যে আমরা সবাই মানুষ আর প্রত্যেকটা মানুষকেই অনেক চরাই-উৎরাই পার হয়ে সামনে বাড়তে হয়। খারাপ কিছু হলে তাই ভেঙে পরতে হয়না। - আপনার সন্তান কেন পরীক্ষা খারাপ করলো আগে সেটা বুঝার চেষ্টা করুন। - যেই কারনে পরীক্ষা খারাপ হয়েছে সে কারণগুলো যেনো পরবর্তীতে আবার না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। - কোন বিষয়ে দুর্বল থাকলে আপনার সন্তানকে সেই বিষয়ে আরও জোর দিতে সাহায্য করুন। হঠাৎ করেই প্রেশার দেয়া শুরু করবেন না, আপনার সন্তানকে আগে পড়ালেখার গুরুত্ব ভালোভাবে বুঝিয়ে বলুন তাহলে সে নিজেই আরও বেশি মনোযোগী হবে । - সবচেয়ে ভালো হয় আপনি যদি আপনার সন্তানকে নিয়ে কয়েকদিন বাইরে কোথাও ঘুরে আসেন, তাকে আরেকটু বেশি সময় দেন। তাহলে তাঁর মন ফ্রেশ হবে আর আবার নতুন করে শুরু করার আগে রিফ্রেশমেন্টের দরকারও বটে।
(আজ এসএসসি'র রেজাল্ট দিয়েছে, সময়ের প্রাসঙ্গিকতা বিবেচনায় রিপোস্ট। লিখাটি পুর্বে দৈনিক ডেস্টিনিতে প্রকাশিত)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০১৯ রাত ৮:১৫