somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘তিন পুরুষের রম্য কথা’ বইটি প্রকাশ করা হয়নি, জানতে পারিনি ‘এক রঙ্গা এক ঘুড়ি’ প্রকাশনীর এই অমানবিক আচরণের হেতু!

০৭ ই মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমার প্রথম বই ‘প্রবাসে বাংলাদেশী গুণীজন’ প্রকাশ করে দিব্য প্রকাশ। বইটি প্রকাশের ব্যাপারে প্রকাশক শ্রদ্ধ্যেয় মইনুল আহসান সাবের স্যারের সাথে আলাপ করলে বিষয়বস্তুর প্রতি তিনি খুব আগ্রহ প্রকাশ করেন। জানান, বইটি নিয়ে আমরা বইমেলা পর্যন্ত অপেক্ষা করব না। আমরা বইটি এক্ষুনি ছাপাব, আপনি পান্ডুলিপি পাঠিয়ে দিন।সেই হিসাবে আমার প্রথম বইটি প্রকাশ হয় মে ২০১৬ সালে।

বইটি সম্ভবত ভাল চলেছিল, এই থেকে অনুমান করছি যে,২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে স্যার আমাকে জানান এই টাইপের আরেকটি পান্ডুলিপি তৈরি করার জন্য যা বইমেলা ২০১৭ উপলক্ষে ছাপা হবে।এখানে উল্যেখ করা দরকার ইতোপুর্বে সামুতে প্রকাশিত আমার গুণীজন সিরিজটিতে আমি প্রায় ৩০০ জন গুণীকে নিয়ে পোস্ট করেছি বলে স্যারকে জানিয়েছিলাম।সেই মতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বীয় মেধায় ব্যাপক আলোচিত বাংলাদেশি ২২জন ক্ষুদে জিনিয়াসকে নিয়ে ছাপা হয় আমার দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘ক্ষুদে জিনিয়াসদের কথা’।

১৭এর বইমেলার মাঝামাঝি সময়ে আমি মেলায় গেলে স্টলে গিয়ে স্যারের পাশে বসলাম। স্যার বললেন- ক্ষুদে জিনিয়াসদের কথা প্রায় শেষের পথে। আমরা বইটির দ্বিতীয় মুদ্রনে যাবো।আরো জানালেন একটা পাঠ চক্র থেকে উনারা ক্ষুদে জিনিয়াসদের কথা এক হাজার কপির অর্ডার পেয়েছেন। তবে ক্রেতা পক্ষ চাইছে বইটি যেন ৭৬ পৃষ্ঠা থেকে ১০০ পৃষ্ঠায় উন্নিত করা হয়। আমি যেন বর্ধিত অংশের পান্ডুলিপি তৈরি করে পাঠাই। আমি তাই করলাম।

২০১৮ সালে সংকলন গ্রন্থ ‘লেখাজোকা’র সম্পাদনার দায়িত্ব দেয়া হয় আমি এবং শায়মাকে। আমাকে বলা হয় প্রকাশনীর সাথে আলাপ করার জন্য। পুর্বের পরিচয়ের সুত্রে আমি মইনুল আহসান সাবের স্যারকে ফোন দেই।বিষয় শুনে তিনি বললেন- আমরা এ বই ছাপাব না। আমি বললাম এ ক্ষেত্রে প্রকাশের খরচটা আমরা দেব।তিনি জানালেন- টাকা নিয়ে আমরা বই ছাপাই না। কথাটা শুনে আমার রাগ হওয়া উচিত ছিল। বাস্তবে তা না হয়ে একজন প্রকৃত প্রকাশকের প্রতি আমার শ্রদ্ধা আরো বেড়ে গেল।

দিব্য প্রকাশ ‘টাকা নিয়ে বই ছাপায় না’, আবার অনেক লেখকের অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায় এমন প্রকাশকের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয় যারা আক্ষরিক অর্থেই ‘টাকা নিয়েও বই ছাপায় না।‘

২০১৯ সালের মে মাসে ‘এক রঙ্গা এক ঘুড়ি’র পক্ষে ব্লগার,কবি নীল সাধু পোস্ট দিয়ে জানান তাঁরা ২০২০ বইমেলায় প্রকাশকের খরচে ১০০ বই ছাপাবেন। অন্য প্রকাশনায় দেয়ার জন্য আমার একটা পান্ডুলিপি তৈরি ছিল। নীল’দা ব্লগার মানুষ, তিনি আমাদেরই লোক। তাছাড়া বই মেলায় গেলে আমরা প্রায় ব্লগার ‘এক রঙ্গা এক ঘুড়ি’ স্টলের সামনেই আড্ডা দেই।তাই ভাবলাম পান্ডুলিপিটি নীল’দাকেই পাঠাই।ভাবনা মত ১৯শে মে ২০১৯ তারিখে আমি নীল’দাকে ‘তিন পুরুষের রম্য কথা’র পান্ডুলিপিটি পাঠাই। বিষয়বস্তু দেখে তিনি ফিরতি মেসেজেই আমাকে জানালেন, এই বই অবশ্যই তিনি ছাপবেন।

যারা লেখালেখির সাথে জড়িত তাঁরা জানেন প্রকাশক যদি বলেন ‘আপনার বই ছাপা হবে’, এই সংবাদ টা অনেকটা ‘আপনি পিতা হতে যাচ্ছেন’ সংবাদের মতই আনন্দময় হয়ে থাকে। শুরু হল আমার ‘সন্তান ভূমিষ্ঠ’ হবার সময়ের অপেক্ষার মত আনন্দময় অপেক্ষার পালা।

পরবর্তিতে ব্লগার নীলসাধু ও প্রকাশক শিমুল আহমেদ ‘এক রঙ্গা এক ঘুড়ি’,থেকে যে বইগুলি প্রকাশ হবে তার তালিকা জানিয়ে পুনঃ পুনঃ পোস্ট দেন। দেখলাম সেখানে ‘তিন পুরুষের রম্য কথা’র নাম রয়েছে।
১৩ই ডিসেম্বর তারিখে তাঁরা বইটির প্রচ্ছদ প্রকাশ করেন।প্রচ্ছদ সহ বইটির বিষয়বস্তু নিয়ে নীল’দা একটি পোস্ট দেন আরো লিখেন-মেলার প্রথম দিন থেকেই বইটি ‘এক রঙ্গা এক ঘুড়ি’,আত্মজা,ও মেঘফুলের স্টলে পাওয়া যাবে।

আমার ‘তিন পুরুষের রম্য কথা’ বইটি আগামী বইমেলায় আসছে জানিয়ে আমি ব্লগ ও ফেসবুকে পোস্ট দেই। এতে পাঠকের বেশ সাড়া পাই।এক ফেসবুকেই আমি ৩৩ টা বইয়ের অর্ডার পাই। পরবর্তিতে দেয়ার জন্য আমি আরো কয়েকটা পোস্ট তৈরি করে রাখি।

অবশেষে শুরু হল ২১শে বইমেলা ২০২০। আজ আসছে কাল আসছে করে আমার বই আর মেলায় আসেনা। ৭ তারিখে নীল’দা জানালেন মেলা পুরোদমে শুরু হয় ১৪/১৫ ফেব্রুয়ারীর পর থেকে তার আগেই ‘তিন পুরুষের রম্য কথা’ প্রকাশিত হবে। ১৭ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করে নীল’দাকে ফোন দিলাম। তিনি জানালেন-২২ তারিখে আমরা লেখক,ব্লগার আড্ডার ঘোষণা দিয়েছি, এর আগেই ‘তিন পুরুষের রম্য কথা’ বের হবে।

২২ তারিখ লেখক,ব্লগার আড্ডার দিন মেলায় যাওয়ার জন্য আমি প্রস্তুতি নেই।ইতোমধ্যে আরো অনেকেই বইয়ের জন্য আমাকে নক করেন। অনেকে মেলায় গিয়ে বই না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে আসেন। সকলকে আমি জানিয়ে দেই ২২ তারিখে বই বের হবে। যারা আমার কাছ থেকে সংগ্রহ করতে চান তাঁরা ২৩ তারিখে বই পাবেন।

২২ তারিখ পর্যন্তও আমার বই প্রকাশ হয়নি।৬ বছরের ভিতর এই প্রথম আমারও বই মেলায় যাওয়া হলনা, দেখা হলনা জাদিদ ভাই, বিদ্রোহী ভৃগু,কাওসার চৌধুরী,অগ্নি সারথি,কাজী ফাতেমা ছবি,লিলিয়ান আপু সহ অনেক প্রিয় মুখের সাথে।

মেয়ের কয়েক বান্ধবী মেলায় গিয়ে বই পায়নি, আরো কয়েকজন বই নিতে চাচ্ছে,তার স্যাররাও বইয়ের খোজ খবর নিচ্ছে। মেয়ের সাথে আমিও লজ্জায় পড়ে যাই। সবচেয়ে বেশি লজ্জায় পড়ি- আমার এক প্রবাসী আত্মীয়া মেলায় গিয়ে বই না পেয়ে প্রবাসে চলে যান। যাওয়ার আগে উনার ভাই মারফত কিছু টাকা পাঠিয়ে জানান, আমি যেন উনার ভাইয়ের কাছে কিছু বই দেই।

লজ্জায় পড়ে, লজ্জার মাথা খেয়ে আবার নীল’দার সাথে আলাপ করি।মেসেজ পাঠাই তিনি যেন অন্তত ৫০ কপি বই হলেও ছাপান। এবং এই ৫০ কপি বই আমি নিয়ে আসার জন্য এডভান্স পে করারও প্রস্তাব দেই।
সিন হলেও এই মেসেজের কোন রিপ্লাই পাইনি। এবং আমি এখনো জানতে পারিনি,প্রায় ১০ মাস আগে পান্ডুলিপি পাঠানোর পরেও আমার ‘তিন পুরুষের রম্য কথা’ বইটি বইমেলা ২০২০এ কেন প্রকাশিত হয়নি, জানতে পারিনি আমার প্রতি প্রকাশকের এই নিষ্ঠুর আচরণের হেতু!

পুনশ্চঃ অনেকেই ইনবক্সে বইটির খোঁজখবর নিয়েছেন, কেন প্রকাশিত হয়নি জানতে চেয়েছেন।কোন কারন জানতে পারিনি বিধায় আমি নিরুত্তর থেকেছি।আজ এই পোস্টের মাধ্যমে জবাব দিলাম। সাথে যারা বইটি সংগ্রহ করতে চেয়েছেন তাঁদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ক্ষমা প্রার্থনা করছি।


সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৫
৬৫টি মন্তব্য ৬২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×