করোনাকালিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা দুই বন্ধুর ফোনালাপ -
প্রথম বন্ধু : দোয়া করিস দোস্ত,আমি বর্তমানে তৃতীয় স্টেজ -এ আছি।
দ্বিতীয় বন্ধু :বুঝিয়ে বল, তৃতীয় স্টেজ মানে কি?
প্রথম বন্ধু : প্রথম স্টেজে থালাবাসন মাজতাম। দ্বিতীয় স্টেজে শাড়ি,পেটিকোট সব ধুয়েছি। তৃতীয় পর্যায়ে চলছে ফ্লোর মুছা,টয়লেট সাফ।আর তুই?
দ্বিতীয় বন্ধু : আমিও তৃতীয় স্টেজ পার করেছি।
প্রথম বন্ধু : মানে?তাহলে তোরও এখন ফ্লোর মুছা,টয়লেট সাফ স্টেজ চলছে?
দ্বিতীয় বন্ধু : না,বাসার কাজ না করায় বউএর হাতে এই নিয়ে তৃতীয়বার মার খেয়েছি তবুও কোনো কাজ করিনি। দোস্তরে! করোনা কয়েকদিনের মধ্যে চলে যাবে, কিন্তু বউ যদি একবার বুঝতে পারে যে, আমি এগুলো করতে পারি, তাহলে সারা জীবন আমাকে এগুলো করে যেতে হবে।
এ তো গেল দু বন্ধুর কথা এবার নিজের কথা বলি-‘বউ যদি একবার বুঝতে পারে যে, আমি এগুলো করতে পারি, তাহলে সারা জীবন আমাকে এগুলো করে যেতে হবে।‘ একদম সত্য কথা,ঘুমন্ত বউকে মশায় কামড়াচ্ছে দেখে কোন কুক্ষণে যে মশারী টাঙ্গিয়েছিলাম,সেই থেকে আমাকে নিয়মিত মশারী টাঙ্গাতে হয়। তিনি শুয়ে শুয়ে আধা ঘন্টা মশার কামড় খাবেন তবু নিজে মশারী টাঙ্গাবেন না!
একদিন গিন্নির গোসলের শেষ পর্যায়ে বাথরুমে ঢুকে ভাবে গদ গদ হয়ে বললাম-শাড়ী,পেটিকোট রেখে যাও আমি ধুয়ে দিচ্ছি।
ব্যাস! আজ পনের বছর বাথরুমে ঢুকে দেখি গিন্নীর শাড়ী,পেটিকোট,ব্লাউজ।বুদ্ধিমান পাঠক আমার দুঃখ দেখে হয়তো পরামর্শ দেবেন- আমি যেন গিন্নীর আগে গোসল করে ফেলি। এই বুদ্ধি আমার মাথায় যে আসেনি এমন নয়। একদিন গিন্নীর আগে আগেই গোসল সারিয়ে ফেল্লাম।পরদিনও একই ঘটনা ঘটাতে গিয়ে দেখি বাথরুমে যথারীতি শাড়ী,পেটিকোট,ব্লাউজ ! গত কালের গুলি!!!
আসলে আমার উপর এক বড় ভাইয়ের অভিশাপ পড়েছে। তিনি এত করে বুঝালেন---
সবে নতুন বিয়ে করেছি। বড় ভাই উপদেশের ঢালা খুলে বসলেন। এক পর্যায়ে বললেন-বউএর কাজ বউ করবে,আদর দেখাতে গিয়ে কোন দিন তার কাজ নিজে করবেনা।তাহলে আজীবন পস্তাবে।এক ভুলে আমি আজ দশ বছর বাল ফালাইতেছি।
‘বাল ফালানো’ শব্দটা আমাদের এলাকায় কথার কথা হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তার পরও বুঝতে না পারায় জিজ্ঞেস করলাম-সেটা কি রকম?
বড় ভাই বললেন- প্রতিবার বাড়ী আসার আগে বউকে চিঠি দিয়ে জানাই-‘অমুক মাসের অমুক তারিখ বাড়ী আসিতেছি’। একবার হঠাৎ ছুটি পেয়ে বউকে না জানিয়ে বাড়ী চলে এলাম। তখন রাত। দেখি বউ হারিকেন হাতে ঘরের বাইরে ল্যাট্রিনের দিকে যাচ্ছে। ডেকে জিজ্ঞাস করলাম কোথায় যাও?
জানালো,প্রতিবার আমি আসার আগে চিঠি দিয়ে জানাই কবে আসছি। সেই হিসাবে সে শরীর পরিস্কার(!) করে রাখে। আজ হঠাৎ চলে আসায় তার শরীর পরিস্কার করা হয়নি।তাই---
হো হো করে হেসে বললাম, এই কথা আসো ঘরে আসো। ঘরের ফ্লোরে পেপার বিছিয়ে বউকে বসালাম,তার পর দক্ষ হাতে ক্ষৌর কর্ম সেরে দিলাম।
সেই থেকে আজ দশ বছর। ঢাকা থেকে এসে কাপড় চোপড় চেঞ্জ করে ফ্রেশ হওয়ার আগেই দেখি উনি পেপার বিছিয়ে –টিকো- উলটে বসে আছেন!
পেটিকোট,ব্লাউজ আর মশারী কান্ডে আমার যথেষ্ট আক্কেল হয়েছে, আর না। তাই এবার লকডাউনের সময় ‘গৃহবন্দী’ থাকা অবস্থায় খাই,দাই,ঘুমাই,টিভিদেখি,ফেসবুক গুতাই,সামু দেখি,বই পড়ি। গিন্নি একদিন গায়ে ঢলে পড়ে হিহি করতে করতে বলল- আমার সাথে দুচারটা কাচকি মাছের পেট গেলে দাওনাগো। আরেকদিন বলল- আসো দুইজনে লতি গুলি কুটে ফেলি। নানা দিন নানা প্রস্তাব। ভাগ্য ভাল, এসব প্রস্তাব পাওয়ার সাথে সাথে আমার বড় ভাইয়ের কথা মনে পড়ে-'এক ভুলে দশ বছর--' তাই কউশলে সকল প্রস্তাব এড়িয়ে যাই।
গিন্নি একদিন রণরঙ্গিণী বেশে জানতে চাইল, ‘আচ্ছা শুধু স্ত্রী রান্না করবে স্বামী বসে বসে খাবে এটা কোন আইনে আছে?’
গম্ভীর হয়ে বললাম, ‘জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী বন্দীকে অবশ্যই খাবার দিতে হবে’।
পরিশেষে- সব সময় করোনা নিয়েই পড়ে থাকবেন না। দুশ্চিন্তা আর অস্থিরতা যাতে না বাড়ে সেজন্য হাস্যরস করুন। সঠিক তথ্য জানুন, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মেনে চলুন, ভালো থাকুন।