আমাদের সময় "ধাতুক্ষয়" নামক এক ধরনের অদ্ভুত রোগ ছিলো। সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত অল্প বয়সী ছেলেদের হতো। এই রোগের চরম ও চূড়ান্ত চিকিৎসা ছিলো বিবাহ।
আমার সমবয়সী বন্ধু বজলু এই অদ্ভুত ধাতুক্ষয় রোগে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী। ধাতু রোগের প্রভাবে তার শরীর স্বাস্থ্য ভেঙ্গে খানখান, চোখ ঢুকে গেছে গর্তে , দিনদিন সে কঙ্কালিক দেহাবয়বের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
বজলুকে বাঁচাতে তার বাপ চাচারা সলাপরামর্শ করে ধাতুক্ষয় রোগের চরম ও চূড়ান্ত চিকিৎসা বিবাহের বন্দোবস্তো করলো। দিন-দশেকের মধ্যেই পাশের গ্রামের এক ডাগর আঁখির চঞ্চলা হরিণীর সাথে বজলুর বিবাহকাব্য রচিত হলো।
নববিবাহিত বজলু হুড তোলা রিকশায় লাল চাদর পেঁচিয়ে নববধূ নিয়ে শ্বশুর বাড়ি যায়।
বউভক্ত বজলু বউয়ের জন্য রসগোল্লা কিনে, শ্বাশুড়ির জন্য পান সুপারি কিনে, ছোট্ট শালির জন্য আদুরে খেলনাপাতি কিনে।
বিবাহ সম্পাদনের পরপরই অভূতপূর্বভাবে বজলুর হারানো স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার হলো। ঈর্ষনীয় আনন্দময় জীবন পেলো ধ্বজভঙ্গ বজলু।
বজলুর এই জীবনধারা দেখে আমার মানসপটে একটাই আকাঙ্খা, কেন আমার ধাতুক্ষয় রোগ হচ্ছে না!
একদিন একান্ত আলাপে বজলুকে বললাম,
- বন্ধু, কি করলে এই রোগ হবে?
প্রিয় বন্ধু বজলু কাউকে না বলার শর্তে ধাতুক্ষয় রোগের প্রারম্ভিক ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কে বিস্তারিত জানালো। এবং আমি সে অনুযায়ী প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলাম।
তারপর একদিন আমার এক প্রতিবেশী দাদাকে ঘটনা জনালাম,
- দাদা, আমার তো বজলুর মতো ধাতুক্ষয় রোগ হইছে।
দাদাজান বিস্ময়ে চোখ কপালে তুলে বললেন,
- কস কী?
- জী দাদাজান, আব্বাকে বলেন চিকিৎসার বন্দোবস্ত করতে।
অতঃপর এক কাক ডাকা দুপুরে ধাতুক্ষয় রোগের চিকিৎসা সংক্রান্ত আলাপের জন্য আব্বা আমাকে ডেকে পাঠালেন। পিতাপুত্রে একটা আদবপরিপন্থি রোগ নিয়ে আলোচনা হবে,পুত্র হিসেবে আমার যতটুকু লজ্জিত হওয়া উচিত আমি তার চেয়েও বেশি লজ্জাবনত হয়ে আব্বার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।
কোনোকিছু বুঝার আগেই আব্বাজান আমার মাথা, কান ও গালের সম্মিলন স্থলে একটা কুংফু থাপ্পড় লাগালেন।
আব্বার থাপ্পড় শিল্প পর্যায়ের। প্রথমার্ধে ঝিমঝিম অনুভূতি হয় দ্বিতীয়ার্ধে ফার্স্ট টাইম গাঁজা খেলে যেমন অনুভূতি হয় তেমন লাগে।
থাপ্পড় খেয়ে আমি ঢলো ঢলো পায়ে মাতালের মতো হেঁটে গৃহ থেকে ক্ষানিক দূরের এক আম্রবাগানে পা মেলে বসে আছি।
মাথা কাজ করছেনা, মনে হচ্ছে মস্তিষ্কের ইকুইলিব্রিয়াম পুরোপুরি ডেমেজ হয়ে গেছে।
আব্বার ঐ থাপ্পড়ের সুদূরপ্রসারী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আমার ধাতুক্ষয় রোগ সমূলে উৎপাটন করতে সক্ষম হয়।
অভিবাদন হে পিতা।
(©উব্দাস্তু অনিক,কিঞ্চিৎ সম্পাদিত)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৩