somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাঙলাদেশের জন্য প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (PR) নয়, কার্যকর গণতন্ত্রের জন্য প্রয়োজন FPTP (First Past The Post) পদ্ধতিতে নির্বাচন।

০৪ ঠা জুলাই, ২০২৫ ভোর ৬:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হঠাৎ কইরা বাজারে নয়া নির্বাচন পদ্ধতিতে ভোটের দাবি তোলা হচ্ছে। এই পদ্ধতির নাম, পিআর/PR (Proportional Representation)। কারা তুলছে এই দাবি?- যাদের জামানত হারানোর ভয় আছে কিন্তু নাম মাত্র পাওয়া ভোটে তারা সংসদে ঢুকে পড়তে চায়!

আসুন আমরা দেখি এই পিআর পদ্ধতিতে ভোট কেনো বাঙলাদেশে করা যাবে না।

গণতন্ত্রের অন্যতম ভিত্তি হলো সুষ্ঠু নির্বাচন ও কার্যকর প্রতিনিধিত্ব। আর সেই প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে যে ভোট পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়, তার প্রকৃতি রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখে। সম্প্রতি কিছু মহলে বাঙলাদেশে Proportional Representation (PR) চালুর আলোচনা শোনা যাচ্ছে, যেখানে ভোটের আনুপাতিক ভিত্তিতে সংসদে আসন বণ্টনের দাবি তোলা হচ্ছে।

কিন্তু বাস্তবতা হলো, বাঙলাদেশের রাজনৈতিক কাঠামো, সামাজিক প্রেক্ষাপট ও উন্নয়ন যাত্রায় PR পদ্ধতি নয়, বরং FPTP (First Past The Post) পদ্ধতি-ই সবচেয়ে উপযোগী ও কার্যকর। চলুন বিষয়টি যুক্তির আলোকে বিশ্লেষণ করা যাক।

PR ও FPTP পদ্ধতি :

PR (Proportional Representation) পদ্ধতি বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে একটি দল যত শতাংশ ভোট পায়, সে অনুপাতে আসন পায়।
যেমন, যদি কোনো দল ৩০% ভোট পায়, তবে তারা মোট আসনের ৩০% পাবে।

এই পদ্ধতিতে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে সংসদে আসন বণ্টন করা হয়, জনগণ ব্যক্তিকে নয়, দলকে ভোট দেয়। ফলে ছোট ছোট দলগুলিও সংসদে প্রবেশের সুযোগ পায়।

FPTP (First Past The Post) পদ্ধতি কী?
বর্তমানে বাঙলাদেশে প্রচলিত পদ্ধতিটি হলো FPTP। এখানে একেকটি নির্বাচনী এলাকায় একেকজন প্রার্থী নির্বাচিত হন। যে প্রার্থী সবচেয়ে বেশি ভোট পান, তিনিই জয়ী হন।
এটি সরাসরি ব্যক্তি প্রতিনিধিত্ব এবং এলাকা ভিত্তিক জনপ্রিয়তার উপর ভিত্তি করে চলে।

PR পদ্ধতির তুলনামূলক সমালোচনা: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে

১. স্থিতিশীল শাসনব্যবস্থার অন্তরায়।
- PR পদ্ধতির প্রধান সমস্যাগুলোর একটি হলো স্থায়ী সরকার গঠন কঠিন হয়ে পড়ে।
যেহেতু কেউ এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় না, তাই তৈরি হয় দুর্বল জোট সরকার।
বাঙলাদেশের মতো রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত দেশে এটি স্থায়ী অচলাবস্থার জন্ম দেবে, এবং প্রতিনিয়তই সরকার পরিবর্তন কিংবা দোদুল্যমান অবস্থায় থাকবে।
এতে করে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা থমকে যাবে।

২. জনবিচ্ছিন্ন প্রতিনিধিত্ব তৈরি করে।
- PR পদ্ধতিতে ভোটাররা ব্যক্তিকে নয়, দলকে ভোট দেয়। এতে সংসদে এমন লোকজন ঢুকে পড়েন, যাদের এলাকার মানুষ চেনেও না। তারা দলের তালিকাভুক্ত বলে আসন পায়, কিন্তু তাদের কোনো দায়বদ্ধতা থাকে না জনগণের কাছে।
এর ফলে জনগণের সঙ্গে জনপ্রতিনিধির সম্পর্ক ছিন্ন হয়, যা গণতন্ত্রের জন্য ভয়াবহ।

৩. সংসদে মৌলবাদ ও সুবিধাবাদী রাজনীতির প্রবেশদ্বার খুলে যায়।
- PR পদ্ধতিতে মাত্র ১-২% ভোট পেলেই সংসদে আসন পাওয়া সম্ভব। ফলে সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী, চরমপন্থী কিংবা বিদেশি এজেন্ডাভিত্তিক দলগুলো সহজেই সংসদে প্রবেশ করতে পারে। বাঙলাদেশে PR চালু হলে সংসদ হবে আদর্শহীন দলগুলোর অভয়ারণ্য।

৪. জাতীয় ঐক্যের বদলে দলবাজি ও ভাঙন বাড়বে।
- যেখানে FPTP পদ্ধতিতে বড় দলগুলো জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি তৈরি করে, সেখানে PR পদ্ধতিতে ২০-৩০টি ছোট ছোট দল সংসদে ঢুকে পড়ে। এতে একটি নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে গিয়ে বিভ্রান্তি, দেরি ও দ্বিধা তৈরি হয়।
বাঙলাদেশের মতো রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল দেশে এটা গণতন্ত্র নয়, বিশৃঙ্খলা জন্ম দেবে।

৫. স্থানীয় উন্নয়নে বাধা।
- FPTP পদ্ধতিতে একজন সংসদ সদস্য তার এলাকার মানুষকে নিয়ে চিন্তা করেন, কারণ তিনি জানেন তারা ভোট দিয়ে তাকে নির্বাচিত করেছেন। PR পদ্ধতিতে নির্বাচিতরা দলের প্রতি দায়বদ্ধ, জনগণের প্রতি নয়। এতে স্থানীয় উন্নয়ন, অভাব-অভিযোগের সমাধান, ও জনসংযোগ ভেঙে পড়ে।

৬. রাজনৈতিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে
- PR পদ্ধতিতে বেশি বেশি ছোট দল তৈরি হওয়ার প্রবণতা থাকে। দল বানিয়ে ভোটে অংশ নেওয়া যেন একটি ব্যাবসায়িক কৌশলে পরিণত হয়। এতে রাজনীতি নেশা বা পেশা নয়, বাণিজ্যে পরিণত হয়। FPTP সেখানে দল গঠনের আগে জনভিত্তি গড়ে তোলার প্রয়োজন তৈরি করে।

FPTP-এর বাস্তব উপযোগিতা:

বাঙলাদেশের মতো দেশে, যেখানে
জনগণের রাজনৈতিক সচেতনতা ধীরে ধীরে বাড়ছে, উন্নয়ন নির্ভর স্থিতিশীল শাসন দরকার, দলীয় শৃঙ্খলা ও নেতৃত্ব নির্ধারণ জরুরি, সেখানে FPTP পদ্ধতি হলো সবচেয়ে কার্যকর ও বাস্তবভিত্তিক পথ। এটি সরাসরি জবাবদিহি নিশ্চিত করে। এলাকা ভিত্তিক জনপ্রতিনিধিত্ব গড়ে তোলে। স্থায়ী ও নির্ভরযোগ্য সরকার তৈরি করে। দলগুলোকে জনভিত্তি তৈরিতে উৎসাহিত করে।

Proportional Representation পদ্ধতি যতটা তাত্ত্বিকভাবে চমকপ্রদ, বাস্তবে বাঙলাদেশের জন্য ততটাই অকার্যকর, অস্থিরতামূলক এবং জনবিচ্ছিন্ন।
এ দেশের রাজনীতির জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত এবং ফলদায়ক ব্যবস্থা হলো First Past The Post (FPTP)।

তাই গণতন্ত্রের নাম করে বিভাজন নয়, দরকার জনগণের সরাসরি রায় ও জবাবদিহির ভিত্তিতে প্রতিনিধিত্ব।

গণতন্ত্রের চেতনায় মুজিববাদই হোক আমাদের একমাত্র রাজনৈতিক পথ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০২৫ ভোর ৬:৫৬
১৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিএনপি তথা তারেক রহমান কেন বলছেন না......

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৩ ই জুলাই, ২০২৫ দুপুর ২:৩৮



জামাত, গৃহপালিত জাতীয়পার্টি, পতিত ও নিষিদ্ধ ঘোষিত আম্লিগ এবং বিএনপি এই চারটি রাজনৈতিক দলই বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল। অন্য যে আরো ৩০/৪০ দল আছে সেগুলো বলতে গেলে প্যাডে পোস্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রেম-বিবাহ সমাচার !:#P

লিখেছেন আরোগ্য, ১৩ ই জুলাই, ২০২৫ বিকাল ৪:৩০




১. আমার এক আত্মীয় ভাই প্রেম বিবাহ করে। ওগো জোড়া পুরা "রাব্ব নে বানাদি জোড়ি", মাশা-আল্লাহ! ভাইও গুন্ডা, ভাবির বাপও গুন্ডা। ভাইয়ের পরিবার বিয়াতে রাজি না দেইখা ইতিহাসের পাতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ৬০ টাকা নিয়ে চট্টগ্রাম এসেছিলেন, আজ ৪৫টি কাচ্চি রেস্টুরেন্টের মালিক[/sb

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৩ ই জুলাই, ২০২৫ বিকাল ৪:৫২





শাহাবুদ্দীন তালুকদার ২০০১ সালে বাবার দেওয়া ৬০ টাকা নিয়ে বরিশাল থেকে চট্টগ্রাম এসেছিলেন কাজের সন্ধানে। তখন বয়স মাত্র ১৫/১৬ বছর।সেই শাহাবুদ্দীন তালুকদার এখন সমগ্র চট্টগ্রাম বিভাগে প্রসিদ্ধ ৪৫টি কাচ্চি বিরিয়ানির... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকে ধুয়ে নিজেদের গা মুছছে এনসিপি!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ৯:২৫


আহ্, কী দিনকাল পড়লো! রাজনৈতিক দলগুলো যেন একেকটা কমেডি থিয়েটার খুলে বসেছে। আর সাম্প্রতিক সময়ে 'জাতীয় নাগরিক পার্টি' (এনসিপি) নামের নতুন দলটির কাণ্ডকারখানা দেখলে মনে হয়, তারা যেন আমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

১২.৫ লিটার সিলিন্ডারে ৮লিটার গ্যাস, বাকিটা বাতাস আর পানি

লিখেছেন অপলক , ১৪ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ২:৫১



একটা ম্যাজিক স্টিক দরকার। আমার তো নেই। তাই স্রোতের বিপরীতে গিয়ে লিখতে বসলাম। টপিকস হল: দেশে কি আছে , কি পাচ্ছি, কতটা ফাঁকিবাজি।



দেশে শাসক বদলেছে, শাসন ব্যবস্থা বদলায়নি:
---... ...বাকিটুকু পড়ুন

×