somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অন্ধপ্রেম - শেষ পর্ব

২১ শে এপ্রিল, ২০০৯ রাত ৩:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অন্ধপ্রেম - ৩য় পর্ব

সুবর্না আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল , “ বসো । “

আমি ওর সামনাসামনি বসলাম । ও আমার দিকে তাকিয়ে বলল “এটা সম্ভব না । “
- কেন?
- কেন জান না? কত সমস্যা জান না তুমি?
- না বল ।
- সবচেয়ে বড় এবং একমাত্র সমস্যা হচ্ছে তুমি মুসলিম আমি হিন্দু ।

আমি পুরা আকাশ থেকে পড়লাম । কারন আমার মনেই ছিল না ধর্মীয় ব্যাপারটা । আমি ওর চোখে চোখ রেখে বললাম “ সু আমার জন্যে সবচেয়ে বড় ব্যাপার তুমি আমাকে ভালবাস কিনা ? ”
- তুমি আমাকে জানিয়েছ আমাকে ভালবাস কিন্তু প্রপোজ তো করনি ।
- “ কিহ!!!!! “ মেয়ের সেন্স অফ হিঊমার দেখে আমি পুরা থ ।
- হ্যা । তুমি একটা মেয়েকে ফিলিংস জানানো আর প্রপোজ করাকে এক মনে করো না।
- “সু …… ।“ আমি মোটামোটি শিওর যে ও আমার সাথে ফাজলামো করছে । “ তুমি কি আমার সাথে মজা করতেছ? “
- না ।

আমার তখনকার ফিলিংসটা বলে বুঝাতে পারব না । বিশ্বাস – অবিশ্বাসের দোটানায় দুলছিলাম । কারন সত্যি হলে আমার ভালবাসা , এত দিনের স্বপ্ন সত্যি হবে । আর মিথ্যে হলে সব আরও বেশী নষ্ট হবে । মন চায় বিশ্বাস করি মাথা বলে করো না । তাও ঠিক করলাম এইটা আজকেই এপার নাইলে ওপার করে ফেলব । মাঝামাঝি এইভাবে ঝুলে থাকার মানে নাই কোন।

আমি সুবর্নার হাত নিলাম আমার হাতে । মুভিতে দেখা স্টাইল ফলো করতে চাইছিলাম যে হাটু গেড়ে বসে প্রপোজ করব। কিন্তু ভাবলাম নাহ বেশী নাটকীয় হয়ে যায় ব্যাপারটা । তাই ওর সামনা সামনি বসলাম।

- সু । আমি তোমাকে ভালবাসি । আই জাস্ট ওয়ানা টু বি উইথ ইউ । তোমাকে সারা জীবন এমন করে ধরে রাখতে চাই ।
ও হেসে দিল । মেজাজ কেমন লাগে এমন সিরিয়াস সময় হাসলে।
- হাসো কেন?
- তুমি খুব বেশী ড্রামাটিক
- হু বলছে তোমাকে !!!! তোমাকে প্রপোজ করলাম । আর তুমি কিনা হাসো?
- তুমি যেইভাবে বললে আর যা যা বললে আমি না যে কেউই হাসবে ।
- তুমি আমাকে উত্তর দাও।
- তুমি ঠিক মত জিজ্ঞেস তো কর ।
- উফফফফ কত বার করব?
- যতক্ষন ঠিক না হয় ।
- তুমি কি থাকবে আমার সাথে । সবসময়?
- হ্যা ।

আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না । বললাম , তুমি যে তাহলে কালকে বললে ………

- হ্যা , বলেছি তোমার সাথে মরতে চাই না । কারন তোমার সাথে বাচতে চাই ।
- সু………… তুমি সিরিয়াস ।
- হ্যা । কিন্তু এটা সম্ভব না ।
- কেন?
- না তোমার পরিবার মেনে নিবে। না আমার । এটা হয় না ।

ও যা বলছিল তা ঠিক ছিল । কিন্তু উঠতি বয়স গরম মাথা । ভালবাসার টান সব মিলিয়ে তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছিলো ।

সুবর্নার হাত আমি আরও একটু শক্ত করে ধরলাম।

- আমি তোমার হাত ছাড়ার জন্যে ধরিনি সু ।
- যদি ছাড়তে হয় ।
- তুমি ধরে রাখবে ।
- আমি কি করব বলতে পার? তোমাকে আমি ভালবাসি । কিন্তু আমাদের পরিবারের কথা মনে হলেই আর কিছু করার সাহস পাই না । না তোমার পরিবার আমাদের মেনে নিবে না আমার পরিবার । - ও কাদতে শুরু করল
- “ সু । এখন না প্লীজ । “ বলে ওকে আমি জড়িয়ে ধরলাম ।চোখ মুছিয়ে দিচ্ছিলাম।
- এমন করে সব সময় আমাকে সাথে রাখবে তোমার রাখবো ।
- এমন করে চোখ মুছিয়ে দিবে?
- না ?
- কি?
- হ্যা । তোমাকে আমি কখন কাদতেই দিবো না ।
তারপরে সুবর্না চুপ হয়ে গিয়েছিল । কিন্তু আমি আমার কথা রাখতে পারিনি দেড় বছর পর এক বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় আমাদের ছাড়াছাড়ি হয় । আমরা দুইজন দুইজনকেই অসম্ভব ভালবাসতাম । ওর পরিবার জেনে গিয়েছিল আমাদের সম্পর্কের কথা । চেয়েছিলাম পালিয়ে যেতে । কিন্তু না ওর সম্মতি ছিল না আমি ভিতর থেকে সায় পাচ্ছিলাম । এই দেড় বছরে আমি যতটুকু ভালবেসেছি এবং ভালবাসা পেয়েছি আমার মনে হয় এখনো আমি আমার পরিচিত কাউকে দেখিনি আমাদের মত ভালবাসা ছিল । আমি ওকে এই দেড় বছরে একবারের জন্যের কাদতে দেইনি । কিন্তু তারপরও আমি সুবর্নার কাছে অপরাধী কারন আমি ওকে কথা দিয়েছিলাম ওকে কখনও আমার থেকে দূরে যেতে হবে না । কখন কাদতে হবে না । পারিনি আমি । সেই শেষ সন্ধ্যায় ওকে বলাও হয়নি ভাল থেকো ।

সুবর্নার হাসিটা ছিল অসম্ভব সুন্দর । আমি এখনো চোখ বন্ধ করলে ওর হাসি আমার চোখের সামনে ভাসে । এখনো আমি ওর ভালবাসা অনুভব করি । আমি জানি ও ভাল আছে । এখনো বৃষ্টি হলে আমি যেমন ওর কথা মনে করি ও তাই করে । আমি ওকে বুড়ি ডাকতাম আর ও আমাকে ডাকতো বাবু । এখনো মাঝে মাঝে মনে হয় ও বুঝি এসে বলবে “তুই না আমার বাবু? তো তুই সিগরেট খাচ্ছিস কেন” আমরা আল্লাদ করে একজন আরেকজনকে তুই বলতাম ।

আমার আর সুবর্নার মাঝে চিঠি আদান প্রদানের একটা অভ্যাস ছিল । এখনো সব রাখা আছে যত্ন করে । আমাদের কোন চিঠি পড়লে হয়ত কিছুটা বুঝবেন কতটা ভালবাসা ছিল আমাদের মাঝে । আমার এক বান্ধবী ওর কয়েকটা চিঠি পড়ে কেদে দিয়েছিল যে আমি কেমন করে আছি ওকে ছাড়া ।

প্লীজ কেউ দুঃখ প্রকাশ করবেন না। আমি ভাল আছি । বেশ ভাল ।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×