অন্ধপ্রেম - ৩য় পর্ব
সুবর্না আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল , “ বসো । “
আমি ওর সামনাসামনি বসলাম । ও আমার দিকে তাকিয়ে বলল “এটা সম্ভব না । “
- কেন?
- কেন জান না? কত সমস্যা জান না তুমি?
- না বল ।
- সবচেয়ে বড় এবং একমাত্র সমস্যা হচ্ছে তুমি মুসলিম আমি হিন্দু ।
আমি পুরা আকাশ থেকে পড়লাম । কারন আমার মনেই ছিল না ধর্মীয় ব্যাপারটা । আমি ওর চোখে চোখ রেখে বললাম “ সু আমার জন্যে সবচেয়ে বড় ব্যাপার তুমি আমাকে ভালবাস কিনা ? ”
- তুমি আমাকে জানিয়েছ আমাকে ভালবাস কিন্তু প্রপোজ তো করনি ।
- “ কিহ!!!!! “ মেয়ের সেন্স অফ হিঊমার দেখে আমি পুরা থ ।
- হ্যা । তুমি একটা মেয়েকে ফিলিংস জানানো আর প্রপোজ করাকে এক মনে করো না।
- “সু …… ।“ আমি মোটামোটি শিওর যে ও আমার সাথে ফাজলামো করছে । “ তুমি কি আমার সাথে মজা করতেছ? “
- না ।
আমার তখনকার ফিলিংসটা বলে বুঝাতে পারব না । বিশ্বাস – অবিশ্বাসের দোটানায় দুলছিলাম । কারন সত্যি হলে আমার ভালবাসা , এত দিনের স্বপ্ন সত্যি হবে । আর মিথ্যে হলে সব আরও বেশী নষ্ট হবে । মন চায় বিশ্বাস করি মাথা বলে করো না । তাও ঠিক করলাম এইটা আজকেই এপার নাইলে ওপার করে ফেলব । মাঝামাঝি এইভাবে ঝুলে থাকার মানে নাই কোন।
আমি সুবর্নার হাত নিলাম আমার হাতে । মুভিতে দেখা স্টাইল ফলো করতে চাইছিলাম যে হাটু গেড়ে বসে প্রপোজ করব। কিন্তু ভাবলাম নাহ বেশী নাটকীয় হয়ে যায় ব্যাপারটা । তাই ওর সামনা সামনি বসলাম।
- সু । আমি তোমাকে ভালবাসি । আই জাস্ট ওয়ানা টু বি উইথ ইউ । তোমাকে সারা জীবন এমন করে ধরে রাখতে চাই ।
ও হেসে দিল । মেজাজ কেমন লাগে এমন সিরিয়াস সময় হাসলে।
- হাসো কেন?
- তুমি খুব বেশী ড্রামাটিক
- হু বলছে তোমাকে !!!! তোমাকে প্রপোজ করলাম । আর তুমি কিনা হাসো?
- তুমি যেইভাবে বললে আর যা যা বললে আমি না যে কেউই হাসবে ।
- তুমি আমাকে উত্তর দাও।
- তুমি ঠিক মত জিজ্ঞেস তো কর ।
- উফফফফ কত বার করব?
- যতক্ষন ঠিক না হয় ।
- তুমি কি থাকবে আমার সাথে । সবসময়?
- হ্যা ।
আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না । বললাম , তুমি যে তাহলে কালকে বললে ………
- হ্যা , বলেছি তোমার সাথে মরতে চাই না । কারন তোমার সাথে বাচতে চাই ।
- সু………… তুমি সিরিয়াস ।
- হ্যা । কিন্তু এটা সম্ভব না ।
- কেন?
- না তোমার পরিবার মেনে নিবে। না আমার । এটা হয় না ।
ও যা বলছিল তা ঠিক ছিল । কিন্তু উঠতি বয়স গরম মাথা । ভালবাসার টান সব মিলিয়ে তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছিলো ।
সুবর্নার হাত আমি আরও একটু শক্ত করে ধরলাম।
- আমি তোমার হাত ছাড়ার জন্যে ধরিনি সু ।
- যদি ছাড়তে হয় ।
- তুমি ধরে রাখবে ।
- আমি কি করব বলতে পার? তোমাকে আমি ভালবাসি । কিন্তু আমাদের পরিবারের কথা মনে হলেই আর কিছু করার সাহস পাই না । না তোমার পরিবার আমাদের মেনে নিবে না আমার পরিবার । - ও কাদতে শুরু করল
- “ সু । এখন না প্লীজ । “ বলে ওকে আমি জড়িয়ে ধরলাম ।চোখ মুছিয়ে দিচ্ছিলাম।
- এমন করে সব সময় আমাকে সাথে রাখবে তোমার রাখবো ।
- এমন করে চোখ মুছিয়ে দিবে?
- না ?
- কি?
- হ্যা । তোমাকে আমি কখন কাদতেই দিবো না ।
তারপরে সুবর্না চুপ হয়ে গিয়েছিল । কিন্তু আমি আমার কথা রাখতে পারিনি দেড় বছর পর এক বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় আমাদের ছাড়াছাড়ি হয় । আমরা দুইজন দুইজনকেই অসম্ভব ভালবাসতাম । ওর পরিবার জেনে গিয়েছিল আমাদের সম্পর্কের কথা । চেয়েছিলাম পালিয়ে যেতে । কিন্তু না ওর সম্মতি ছিল না আমি ভিতর থেকে সায় পাচ্ছিলাম । এই দেড় বছরে আমি যতটুকু ভালবেসেছি এবং ভালবাসা পেয়েছি আমার মনে হয় এখনো আমি আমার পরিচিত কাউকে দেখিনি আমাদের মত ভালবাসা ছিল । আমি ওকে এই দেড় বছরে একবারের জন্যের কাদতে দেইনি । কিন্তু তারপরও আমি সুবর্নার কাছে অপরাধী কারন আমি ওকে কথা দিয়েছিলাম ওকে কখনও আমার থেকে দূরে যেতে হবে না । কখন কাদতে হবে না । পারিনি আমি । সেই শেষ সন্ধ্যায় ওকে বলাও হয়নি ভাল থেকো ।
সুবর্নার হাসিটা ছিল অসম্ভব সুন্দর । আমি এখনো চোখ বন্ধ করলে ওর হাসি আমার চোখের সামনে ভাসে । এখনো আমি ওর ভালবাসা অনুভব করি । আমি জানি ও ভাল আছে । এখনো বৃষ্টি হলে আমি যেমন ওর কথা মনে করি ও তাই করে । আমি ওকে বুড়ি ডাকতাম আর ও আমাকে ডাকতো বাবু । এখনো মাঝে মাঝে মনে হয় ও বুঝি এসে বলবে “তুই না আমার বাবু? তো তুই সিগরেট খাচ্ছিস কেন” আমরা আল্লাদ করে একজন আরেকজনকে তুই বলতাম ।
আমার আর সুবর্নার মাঝে চিঠি আদান প্রদানের একটা অভ্যাস ছিল । এখনো সব রাখা আছে যত্ন করে । আমাদের কোন চিঠি পড়লে হয়ত কিছুটা বুঝবেন কতটা ভালবাসা ছিল আমাদের মাঝে । আমার এক বান্ধবী ওর কয়েকটা চিঠি পড়ে কেদে দিয়েছিল যে আমি কেমন করে আছি ওকে ছাড়া ।
প্লীজ কেউ দুঃখ প্রকাশ করবেন না। আমি ভাল আছি । বেশ ভাল ।