এসএসসি পাশ করে পলিটেকনিকে ঢুকল রাসেল। ইচ্ছে ৪ বছরে ডিপ্লোমা সেরে চাকরির পাশাপাশি বিএসসি করবে। বাবা সরকারী ডাক্তার । কোন এক থানার হেলথ অফিসার। বাবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে পলিটেকনিকে ভর্তি হলো সম্পর্কে চাচাতো ভাই ফরিদের কথায় ।
ফরিদ ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত। জেলা সম্পাদক সে দলের ছাত্র সংস্থার। অনেক ক্ষমতা, দলীয় সরকারও ক্ষমতায়। বয়েসের রঙ্গীন চশমার কারনে বাস্তবতা না বুঝেই রাসেলও ভাবল আহা এইতো জীবন । অন্যদিকে ফরিদ ভয়ভীতিহীন রাসেলকে দেখেই বুঝেছিলো এই ছেলেকে দিয়ে ছাত্র রাজনীতি হবে।
ভয়ভীতিহীন রাসেলের ছোটবেলা থেকেই এডভেঞ্চারাস। রাজনীতি ঢুকে গেল প্রথম বছরেই। এরপরে তরতর করে উঠে যেতে থাকলো উপরে। ৩য় বর্ষে উঠার পরে সমগ্র কারিগরী ছাত্র সংস্থার সাধারন সম্পাদক ও নিজের প্রতিষ্ঠানের জি.এস হলো বিনা প্রতিদন্ধীতায়।
ভয়ভীতিতো আগেই ছিলো না রাজনীতিতে আসার পরে ক্ষমতা , অস্ত্র রাসেল হয়ে উঠলো বেপরোয়া । সারাদিন বাইকে করে ঘুরে বেড়ায়। মনপ্রান পুরা রাজনীতিতে । হঠাৎ একদিন পাসের কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের এক মেয়েকে দেখে মন মজে গেলো। সবাই চিনার সুবাদে সে মেয়েকে হোস্টেলে পাকড়াও করলো এরপরে প্রেম নিবেদন। নাম ফায়জা।
সেই শুরু। আসতে আসতে প্রেম শুরু হলো। শহরের কাউকে কেয়ার করে না রাসেল। সারা শহর চিনে। ভয় পায় । তার আর ভয় কি। দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠলো। সারা দিন বাইকের পিছনে ফায়জাকে নিয়ে ঘুরে। উদ্দাম প্রেম। যখন ইচ্ছে ওকে হোস্টেল থেকে বের করে নিয়ে আসে। যখন ইচ্ছে দিয়ে আসে। ওকে কে কি বলবে ?
রাসেলের মামার বাড়িও শহরেই। তবে তারা থাকেন গ্রামের বাড়িতে। এতা ভাড়া দেওয়া। হঠাৎ একদিন ভাড়াটিয়া চলে গেলো। রাসেল তার মামাকে জানালো ভাড়াটিয়া না পাওয়া পর্যন্ত সে এই বাড়িতে থাকতে চায়। মামাও খুশী যে বাড়ি খালি পড়ে থাকবে না। শুরু হলো রাসেলের চারিত্রিক অধঃপতন। প্রেমের নতুন এক অধ্যায় খুলে গেলো ওর সামনে ।
এরপরে ফায়জাকে নিয়ে থাকতে শুরু করলো সেখানে। ফায়জাও প্রতি ৩/৪ দিন পর পর হোস্টেলে যায়। হোস্টেলের সুপারের সাহস ও হয় না যে কিছু জিজ্ঞেস করবে। এমনি একদিন ভোরে ফায়জাকে ফোন দিলো তার বাবা । পাশে শোওয়া রাসেল ঘুমের ঘোরে নিজের মোবাইল মনে করে ধরল। ফায়জার বাবা পুরুষ কন্ঠ শুনে কিছু বলল না। রাসেল গালি গালাজ করে ফোন রেখে দিলো।
সেদিনই ফায়জার বাবা এসে কলেজ থেকে ফায়জাকে বাড়িতে নিয়ে গেলেন। এরপরে শুরু হলো অত্যাচার। ফায়জার কাছে সব জানতে চাইলো। ফায়জা সব অস্বীকার করে যেতে লাগল। এদিকে ফায়জা নেই রাসেলের কিছু ভালো লাগে না । মোবাইলও অফ। এমন সময় ফায়জা কোন ভাবে ওকে কল করলো। কল করে বলল ওকে নিয়ে যেতে ।
প্রেমের টানে রাসেল সদল বলে চলে গেলো মেয়ের বাড়িতে। গিয়ে মেয়েকে তুলে আনলো। এইখানেই জীবনের সবচেয়ে বড় ভূলটা করলো। ফায়জার চাচা সরাষ্ট্র সচিব তখন। রাসেল সেখান থেকে বের হওয়ার পরেই ফায়জার বাবা তার ভাইকে জানালেন।
শুরু হলো সংঘাতের পর্ব। রাসেল ফায়জাকে নিয়ে তুললো তার মামার সেই খালি বাসায়। তোলার কিছুক্ষন পরে ভাই ফরিদকে ফোন দিলো। সে রাসেলকে ডাকলো দেখা করতে। রাসেল গেল দেখা করতে। তখন রাত সাড়ে ১২টা।
- দাদা ডাকছ কেন?
- তুই কি শুরু করছিস?
- কেনো কি হইছে?
- স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিজে ফোন করছিলো। তুই জানস মেয়ের চাচা স্বরাষ্ট্র সচিব?
- না।
- আমি তোরে ফোন করতাম না।
- কেন?
- কি করব বল। আমাকে সরাসরি মন্ত্রী বলছে এইটা দেখতে।
- তুমি কি করতে বলো?
- তুই মেয়েকে আগে এইখানে নিয়ে আয় ।
কিছুক্ষন রাসেল তার দিকে তাকিয়ে বলল “ দাদা আমার আজকে প্রথম মনে হচ্ছে রাজনিতিতে আসাটা ভূল ছিলো। ” তার ভাই মাটির দিকে তাকিয়ে বলল “আমার মনে হচ্ছে তোকে না আনলেই ভালো করতাম রাজনীতিতে ।” রাসেল বলল “ আজকে থেকে আমি এই দলের কোন অফিসে আর বসবো না।“ বলে বের হয়ে গেল সে কামরা থেকে।
বাইক নিয়ে মামার বাসায় ফিরে ফায়জাকে নিয়ে আবার গেলো ফরিদের বাসায় । দূর্ভাগ্যবসত সেখানে যাওয়ার পথে ডিবির ইনফর্মারের চোখে পড়ে গেলো। সাথে সাথেই থানা থেকে গাড়ি নিয়ে পুলিশ বহর রওনা দিলো ।
এদিকে ফরিদ ফায়জাকে বলল “ দেখো তুমি আমার ছোটবোনের মত। বোন প্লিজ তুমি বাসায় ফিরে যাও। নাইলে আমার এই ছোটভাইটা সহ পুরা পরিবার সমস্যায় পড়বে।” ফায়জা কোনভাবেই যেতে রাজী হলো না । এদিকে সাইরেন বাজিয়ে পুলিশ এলে ফরিদ , রাসেল দুইজনই চমকে উঠলো। ফরিদ বললো আমার বাইকটা নিয়ে তুই পিছন দিয়ে বের হয়ে যা। রাসেল ফায়জাকে নিয়ে বের হয়ে এলো। বের হওয়ার আগে ফরিদ বললো “ভাই আমার ওকে বাড়িতে দিয়ে আয়।“
রাসেল বাইক নিয়ে বের হয়ে পড়ল। চলে গেলো পাশের জেলায় আত্মীয়ের বাড়িতে। সেখানে তিন চারদিন লুকিয়ে থাকলো।
সিগারেটটা ধরিয়ে বন্ধুর দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসল রাসেল । ১০ বছর পর বন্ধু সাগরের সাথে দেখা। স্কুল জীবনের দুই বন্ধু। অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলো। ক্লাস নাইনে থাকতে রাসেল স্কুল ছেড়ে চলে যায় অন্য স্কুলে। দশ বছর কোন যোগাযোগ ছিলো না। কিছুদিন আগে যোগাযোগের পরে দেখা হলো আজকে। দুই জনের জমে থাকা কথা গুলো বলছিলো।
- কিরে খুব অবাক হচ্ছিস?
- তোর এতো কাহিনী হয়ে গেলো । আমি কিছুই জানলাম না ।
- হা হা ।
- হাসিস কেনো ভাবী কই?
- ভাবী ?
- হ্যা । কেন বিয়ে করিস নি পরে ?
- আরে নাহ। অনেক কাহিনি বাকি আছে ।
- তাহলে বল।
রাসেল আবার তার গল্প শুরু করলো ।
এদিকে রাসেলের বাবাকে ডাকলেন সিভিল সার্জন। ডেকে বললেন দেখেন আমাদের উপ্র প্রেসার আছে আপনাকে প্রেসার দিতে যাতে আপনার ছেলে মেয়েকে ফিরিয়ে দিয়ে আসে। রাসেলের বাবা আবার রাজনীতিতেও সম্পৃক্ত। এবং দূর্ভাগ্যবসত বিরোধি দলের সাপোর্টার তিনি। ফলে তার উপরে প্রেশারটা দ্বিগুন ছিলো।
তিনি ছেলেকে ফোন করে সব জানালেন। এরপরে রাসেল নিজের পরিবারের কথা ভেবে ফায়জাকে দিয়ে আসে তার বাড়িতে । এরপরে রাসেলের নামে তিনটা মামলা দেওয়া হয়। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যেখানে সরাসরি ফোন করে বলে দেয় সেখানে রায় কি হতে পারে বলার অপেক্ষা রাখে না।
তখন রাসেলের সামনে বাচার একটাই উপায় ছিল প্রতিরক্ষা বাহিনীতে যোগ দেওয়া। তার ভাই ফরিদ থানার ওসিকে অনুরোধ করায় ভ্যারিফিকেশনে এলে তিনি জানান রাসেলের নামে কোন মামলা নেই। এরপরে রাসেল প্রতিরক্ষা বাহিনীতে যোগ দেয় ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০০৯ রাত ২:০১