somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মোল্লা নাসিরুদ্দীন’র গল্প

১৯ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ১০:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
মূল বইঃ The Pleasantries of the Incredible Mulla Nasrudin

লেখকঃ Idries Shah



কারণ

মোল্লা একজন ধনী লোকের কাছে গেলেন ।

‘আমাকে কিছু টাকা দিন ।’

‘কেনো?’

‘আমি একটি…… হাতি কিনতে চাই ।’

‘তোমার কাছে যদি টাকা না থাকে, তাহলে তুমি ত হাতি রাখতেও পারবেনা ।’

নাসিরুদ্দিন বললেন, ‘আমি এখানে টাকা নিতে এসেছি, উপদেশ নয় ।’





টাকা খাওয়া

মোল্লা নাসিরুদ্দিন এমন এক এলাকার লোক, যেখানে ফল মানে ফলই, মাংস মানে মাংসই । তরকারির তেমন প্রচলন নেই । মসলাযুক্ত খাবার খাওয়াই হয়না বলতে গেলে ।

একদিন তিনি ভারতের একটা নোংরা রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলেন । মাত্র কিছুদিন হলো কাফিরিস্তানের সুউচ্চ পর্বতমালা থেকে এসেছেন । হঠাৎ তাঁর খুব তৃষ্ণা পেলো । মনে মনে বললেন, তাড়াতাড়ি এমন কোথাও যাওয়া দরকার যেখানে ভালো ফল কিনতে পারবো ।

ভাবতে না ভাবতেই তিনি এক কোণে গাছের ছায়ায় একজন লোককে দেখতে পেলেন, দেখতে ভালোই লাগছে এমন, একটা ঝুড়ি সামনে নিয়ে বসে আছে ।

ঝুড়িতে উজ্জ্বল রঙের ফলে ভরপুর, একেবারে গম্বুজের মতো বানিয়ে রেখেছে । ‘এইটাই ত আমার চাই’, নাসিরুদ্দিন বললেন । পাগরির একপাশ থেকে দুইটি তামার পয়সা বের করে তিনি এই ফলবিক্রেতাকে দিলেন ।

কোনো কথা না বলে লোকটা নাসিরুদ্দিনকে পুরো ঝুড়িটাই তুলে দিলো । এই ফল ভারতে বেশ সস্তা, আর মানুষ সাধারণত খুব কম পরিমাণে এগুলো কিনে ।

বিক্রেতা চলে যাবার পরে নাসিরুদ্দিন ঐ ফাঁকা জায়গায় বসে ফল খাওয়া শুরু করলেন । কয়েক মুহূর্তের মধ্যে উনার মুখ জ্বলা শুরু করলো, চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো, গলায় যেন আগুন লেগে গেছে । কিন্তু খাওয়া চলতে থাকলো ।

এক থেকে দুইঘন্টা সময় পরে, একজন আফগান পাহাড়িয়া লোক এদিকে যাচ্ছিলেন । নাসিরুদ্দিন হাঁক দিলেন, ‘ভাই, এই বিধর্মী ফলগুলো নিশ্চই শয়তানের মুখ থেকে এসেছে ।’

‘হায়রে বোকা! তুমি কি কখনো হিন্দুস্তানের মরিচের কথা শুনোনাই? এইগুলোকে একসাথে খাওয়া বন্ধ করো, নাহলে আজকের সূর্যাস্তের আগেই মারা যাবে ।’

‘পুরো ঝুড়ি শেষ হবার আগে আমি এখান থেকে সরছি না’, নাসিরুদ্দিন বললেন ।

‘পাগল! এইগুলো তরকারিতে দেয়ার জিনিস । এখনই ফেলে দাও সব ।’

নাসিরুদ্দিন উত্তর দিলেন, ‘আমি ত আর ফল খাচ্ছিনা ভাই, আমি আমার টাকা খাচ্ছি ।’





আলোর ব্যবহার

এক চায়ের দোকানে একদিন নাসিরুদ্দিন বললেন, ‘আমি অন্ধকারেও দেখতে পাই ।’

‘যদি এরকমই হয় তাহলে রাতে রাস্তা দিয়ে যাবার সময় তুমি সাথে আলো নিয়ে ঘুরো কেনো?’

‘অন্যরা যাতে আমার সাথে এসে না লেগে যায়, শুধুমাত্র সেইজন্য ।’





তুমি কেনো করো না?

নাসিরুদ্দিন একটা দোকানে গেলেন যেখানে সবরকমের জিনিসপত্র রয়েছে ।

জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার কাছে পেরেক আছে?’

‘আছে।’

‘আর চামড়া? ভালো চামড়া?’

‘হ্যাঁ, আছে ।’

‘সুতা?’

‘আছে ।’

‘রঙ?’

‘হ্যাঁ ।’

‘হায় আল্লাহ! তাহলে তুমি একজোড়া জুতা কেনো বানাচ্ছোনা?’





বিচক্ষণতা

মোল্লা একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হলেন । ওই বাড়িতে তিনি আগে যেদিন গিয়েছিলেন, কেউ দরজা থেকে তাঁর জুতা নিয়ে গিয়েছিলো । এইবার স্যান্ডেল দরজায় না রেখে তিনি তাঁর কোটের ভিতরের পকেটে নিলেন ।

অনুষ্ঠানের কর্মকর্তা উনাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনার পকেটে কী বই আছে?’

‘লোকটা মনে হয় আমার জুতার দিকে নজর দিলো’, নাসিরুদ্দিন মনে মনে ভাবলেন । ‘তাছাড়া আমাকে সবাই একজন জ্ঞানী লোক বলেই জানে ।’ তিনি জোড় গলায় উত্তর দিলেন, ‘যে বইটা দেখতে পাচ্ছেন, এটার বিষয় হলো বিচক্ষণতা ।’

’বাহ! কোন লাইব্রেরীতে বইটা পেলেন?’

’আসলে আমি এটা একটা জুতার দোকানদারের কাছ থেকে পেয়েছি ।’





অনুমান

‘ভাগ্যের অর্থ কী, মোল্লা?’

‘অনুমান ।’

‘কীভাবে?’

“আপনি অনুমান করেন সবকিছু ঠিকঠাকভাবে যাবে, কিন্তু তা হয়না; বলেন দুর্ভাগ্য । অন্যদিকে ধরে নেন সবকিছু সাবলীলভাবে হবেনা, সমস্যা হতে পারে । কিন্তু কোনো সমস্যা না হলে তখন তাকে বলেন সৌভাগ্য । এভাবে আপনি ধরে নেন যে, কোনো একটা ঘটনা ঘটতে পারে, অথবা নাও পারে । আবার, আপনি আপনার এই ধারণাকে মাঝেমধ্যে এতটাই হারিয়ে ফেলেন যে মনে করেন ভবিষ্যৎটাই অজানা । আর যখন একেবারে ধরা খেয়ে বসেন— তখন তাকে বলেন ভাগ্য ।”





মনে করো

একদিন মোল্লা গভীর চিন্তায় নিমগ্ন হয়ে গ্রামের রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলেন । এইসময়ে কিছু দুরন্ত শিশু তাঁর দিকে পাথর ছুঁড়ে মারা শুরু করলো । হঠাৎ এমন ঘটনায় তিনি আশ্চর্য হলেন, আর তাছাড়া তিনি ওতো বড় মানুষও নন ।

‘এমন করো না, আমি তোমাদেরকে একটা মজার ব্যাপার বলবো ।’

‘আচ্ছা ঠিকাছে । কী সেটা? কোনো গভীর জ্ঞানের কথা নয় ত?’

‘আমির সকল আগন্তুককে বিনামূল্যে ভোজ দিচ্ছেন ।’

নাসিরুদ্দিনের বলার ভঙ্গিতে মনে হলো এ এক বিরাট আনন্দযজ্ঞ আর খাবারটাও অতি সুস্বাদু । এই শুনে বাচ্চাগুলো আমিরের বাড়ির দিকে ছুটলো ।

তিনি দেখলেন ওরা সবাই দূরে মিলিয়ে গেলো । হঠাৎ তিনি তাঁর আলখেল্লাটা টেনে বাচ্চাগুলোর পেছন পেছন দৌড় শুরু করলেন ।

ভাবলেন, ‘আমি বরং গিয়েই দেখিনা একবার, এ ত সত্যও হতে পারে!’
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ১০:১৭
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×