অবশেষে সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে মুক্তি পেলো রাশান টিকা! সম্পূর্ণ রঙ্গিন, থ্রিডি এই ম্যুভির শ্রেষ্ঠাংশে কারা আছেন তাদের পরিচয় জানতে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। তড়িঘড়ি করে সম্পাদিত টিকা নিশ্চয়তা সরকারের অবিমৃশ্যকারী নিরুদ্বেগ মুখে ছিলো অতি প্রত্যাশিত চপেটাঘাত।বর্ধিত মুজিব বর্ষের সেরা অর্জন হিসেবে মহা মুজিব পদক দিয়ে রুশ টিকা আমদানি ও ব্যবস্থাপনাকে আশু স্বীকৃতি দিতে হবে দিয়ে দাও বলে ছাত্রলীগের পান্ডা বাহিনীর শাহবাগ দখল নেয়া উচিত। এই সাফল্যে পাপন বাহিনীকে শামিল করার ফিকিরও বের করতে হবে দ্রুত।
যে অলিখিত নিয়মের বাত্যয় না ঘটানোর জন্য এই ভুজুংভাজুং আসুন আমরা তা এখানে জেনে নিই - ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদন দিলে এবং যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ড—এই সাত দেশে ব্যবহারের অনুমোদন থাকলে সেসব ওষুধ, টিকা বা চিকিৎসাসামগ্রী বাংলাদেশে অনুমোদন দেওয়া হয়।’ কিন্তু রাশিয়ার টিকাটি ওই সব দেশ বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন এখনো পায়নি। সে কারণে টিকাটির বিশেষ অনুমোদন দরকার ছিলো। এখন দেখা যাক কোন যুক্তিতে এ ত্বরিত অনুমোদন। ‘ল্যানসেট-এর গবেষণায় দেখা গেছে, স্পুটনিক টিকার কার্যকারিতা ৯১ শতাংশের কিছু বেশি। মাঠ গবেষণায় দেখা গেছে কার্যকারিতা ৯৬ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। টিকাটি ৫০টির বেশি দেশে ব্যবহার করা হচ্ছে।’ ল্যানসেট যে বাইবেল নয় তা বুঝতে পিএইচডির দরকার নেই। এ পর্যন্ত যত টিকা দ্বিতীয় বা তৃতীয় পর্যায়ে ট্রায়ালে গেছে তারা কেবল ঐ দেশেই এর পরীক্ষা সীমাবদ্ধ রাখেনি বরং অন্যান্য দেশেও টিকার কার্যকরী কিনা তা যাচাই করেছে। সেরকম প্রস্তাব আমরা চীনথেকে আগে পেয়েছিলাম। সাধারনভাবে বলতে গেলে একই টিকার ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশে কার্যকারিতা বিভিন্ন। যেহেতু বাংলাদেশে স্পুটনিকের ট্রায়াল হয়নি সেজন্য ল্যানসেটের উল্লেখিত শতকরা ৯১/৯৬ গোল্ডেন এ প্লাস মার্কসে অতি উত্তেজনা চেপে রাখাটা জরুরী। এ প্রসংগে ব্রাজিলের উদাহরন আসবে। তারা কিন্তু সেইফটি কনসার্নের কারনে স্পুটনিক Vপ্রত্যাখ্যান করেছে। গতকাল সোমবার শেষবেলার গরম খবর এটি। স্লোভাকিয়াও এ মাসের প্রথম দিকে কয়েক ব্যাচ ফেরত পাঠিয়েছে। তাই এখানে বিধিহীন সতর্কীকরন।
টিকাতো নিন্দুকের মুখে ছাই দিয়ে যোগাড় হয়েই যাচ্ছে কিন্তু কমিশন এজেন্টের ইজারা কে পাবে তা-ই আগামী কয়েকদিনের মাঠ গরমের ঘটি গরম। আফসোস হচ্ছে যদি না এই টিকার জরুরী অনুমোদনের জন্য হাই ইনটেনসিভ দৌড়ঝাপে দর কষাকষি ও কমিশনখোরদের স্বার্থে আক্কেল সেলামির কাহিনীতে পর্যবসিত হয়!! কেন এমন বেয়াক্কেলে অলুক্ষনে কথা বলছি তা বলার আগে পাপন গংদের খবর দিতে চাই আপনাদের।
বলা বাহুল্য পাপনদের পেরেশানিতে সহানুভূতির বাতাস দিতে আমাদের গণমাধ্যমগুলো হাত পাখা নাড়াতে নাড়াতে এই তালপাকা গরমে নিজেরাই ঘেমে নেয়ে অস্থির। দরবেশ বাবার পানি পড়া খেয়েও পাপন রাজের দুশ্চিন্তা কাটছে না। সপ্তাহ-দশদিনের উচ্চকিত টিকা আদায় করে নেয়ার আন্দোলনের পুরোধা মুখ ফসকে বলেই দিলেন তিন কোটি ডোজের পুরো টাকা সেরামকে দেয়া হয়নি। ‘টাকা দিয়েছি, টিকা আটকানোর অধিকার সেরামের নেই’ - সেইরাম যুক্তিপূর্ণ হুঙ্কার শুনে মনে হয়েছিলো এর প্রতিক্রিয়ায় আদর পুনাওয়ালা কাপড়চোপড় নষ্ট করে জান বাচানো আইনে পাপন মনে করে বাঙ্কারে ঘাপটি দেবে। যদি এই হুঙ্কার ভবিষ্যতে ঐতিহাসিক ভাষণের বিশেষ মর্যাদা পেয়ে যায় কিংবা সাহিত্যে নোবেলের স্বীকৃতি; তবে পাঠকরা এই পোষ্টটি বুকমার্ক করে রাখতে পারেন। কারণ এখানে আমি বিবিসি পরিবেশিত মূল খবর থেকে নেয়া চুম্বক অংশটি হুবহু তুলে ধরলামঃ "সরকার অগ্রিম টাকা দিয়েছে। সেটা কোনভাবেই তারা (ভারত) আটকাতে পারে না। অন্য দেশের সাথে কি হলো তা আমাদের জানার দরকার নাই। আমরা টাকা দিয়েছি। এটা আমাদের টাকা। টাকা নিয়ে দেবে না এটা গ্রহণযোগ্য না।" আমরা আরও জানলাম এ পর্যন্ত প্রাক্কলিত মূল্যের অর্ধেক সেরামকে দেয়া হয়েছে। আগের পোষ্টে (যারা পড়েননি তাদের জন্য Click This Link)টিকা কেনায় আগাম টাকা পরিশোধের জন্য এবং এদেশের দণ্ডমুণ্ডের কর্ত্রী ও তার আশীর্বাদপুষ্টদের টু পাইস কমিশন দেনায় জর্জরিত হয়ে বেক্সিমকো কেমনতর আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়লো সেই অসম্ভবের বাস্তবতার ইঙ্গিত করেছিলাম। আমার অজ্ঞতা স্বীকার করে নেয়ার সাথে এই সুযোগে বেক্সিমকো/দরবেশ বাবা/পাপন দাদার বেনিয়া বুদ্ধি ও প্রজ্ঞাকে সালাম জানাই। পাপনের এহেন স্বীকারোক্তির মধ্য দিয়ে সেরামের দেড় কোটি ডোজ টিকা বাংলাদেশে রপ্তানির দায়মুক্তি হলো। টিকা খরার এই সুযোগে সেরাম তাদের ভ্যাকসিনের দাম বাড়িয়েছে সম্প্রতি। এটা জানিয়ে রাখার কারন হলো বাঙ্গালির সমুদ্র জয়ের মতো সেরামের টিকা জয়ের বীরগাঁথা যদি মাস তিনেক পর রচনা করতেই হয় তবে আমাদের বাড়তি খরচ গুনতে হবে।
সরকার যদি তিন কোটি টিকা আমদানি বাবদ খরচের পুরোটাই বেক্সিমকোকে দিয়ে থাকে তবে তো দরবেশ বাবার পোয়াবারো। টিকা আনার মূলা ঝুলিয়ে বাড়তি টাকা দিয়ে আরেকবার শেয়ার বাজারে দাও মারার পরিকল্পনায় লগ্নি করা যাবে। কৈ এর তেলে এবার তিমি মাছ ভাজা। সাথে আকাশ। উহ জম্পেশ!!
বেক্সিমকোর ব্যবসায়িক ধুরন্ধরি স্বার্থ যে আমাদের জনগণ বা দেশের সামগ্রিক স্বার্থের চেয়েও কতটা কায়েমি তা আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের বিস্ফোরক ভাষ্যে উঠে আসে এভাবেঃ ‘ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষায় বেক্সিমকোর চাপেই সরকার টিকার বিকল্প উৎসে যেতে পারেনি। যদিও চীন ও রাশিয়া বাংলাদেশের সাথে চুক্তি করতে চেয়েছিল।’ যদিও সংবাদটি নয়াদিগন্ত পরিবেশিত এবং টাটকা। দিন দুয়েকের মধ্যে মন্ত্রী মহোদয়ের কথার সত্যাসত্য বেরিয়ে আসবে। টিকা কাহিনী কিন্তু শেষ হইয়াও হইলো না শেষ। পরবর্তী পর্বের আকর্ষন হবে কি দামে আমরা টিকা কিনবো। স্পুটনিক টিকা ভারত কিনছে ১০ ডলারের কমে টিকা প্রতি। দেখার বিষয় আম জনতাকে অন্ধকারে রাখতে আমাদের সরকার তাদের চিরাচরিত লুকোছাপা কত সুচারুভাবে পালন করবে। তার সাথে না চাইতেই বোনাস হবে আমাদের জন্য স্পুটনিকের শকিং দাম। আজকের জন্য লেখার ইস্তফা টানার আগে দুটো লঘু বিষয় টানাটানি করে শেষ করছি।
এক. টিকা সংকটের এই আখ্যানের চাপে বিএনপিঁও তৎপর জনগণের দুশ্চিন্তা বাড়ানোর ইন্ধন যোগাতে। নখদন্তহীন দলটির নিধিরাম সর্দার টিকা আদায়ে দরকার হলে ভারতকে আন্তর্জাতিক আদালতে নেয়ার হুমকি দিলেন। তার এ মুহূর্তে নিজ দলীয় নেত্রীর আশু করোনামুক্তির জন্য কোরআনখানির আয়োজন করা উচিত।
দুই. আমাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী জাতীয় দৈনিক ইত্তাকাকে টিকা সংকট এবং এতদসংক্রান্ত সব প্রতিবেদন ও খবরে বেক্সিমকোর নাম ঊহ্য রেখে ‘বাংলাদেশি একটি কোম্পানি’ লিখেই যাচ্ছে। সনাতনকালে এদেশের বিবাহিত মহিলারা অমঙ্গলের সংস্কারে নিজেদের স্বামীর নাম মুখে উচ্চারণ করতেন না। এ নিয়ে অনেক কৌতুক-চুটকি প্রচলিত আছে। পাঠকদের কাউকে অনুরোধ করবো এমন কয়েকটা কৌতুক শুনিয়ে ইত্তেফাকের পতিব্রতা গুনে মুগ্ধতা প্রকাশ করে বাধিত করবেন।
ছবিঃ এএমপিঁপ্রজেক্ট ডট ওআরজি থেকে পাওয়া
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১১:৪৯