রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাছ কর্তন, শতাধিক শামুকখোল পাখির মৃত্যু! এমন সংবাদে আৎকে উঠেছি আমি। শামুকখোল পাখিরা এই সময়টাতে বাসা বানায়, বাচ্চা দেয়। বর্ষার শেষটা ওদের প্রজনন মৌসুম। কিন্তু শামুকখোলদের কাঁচা ঘড়বাড়ি নিমিশেই ভেঙে দেয়া হলো। ওদের চিৎকারে আকাশ বাতাস ভারী হয়েছে ঠিকই কিন্তু পাষন্ড মানুষদের হৃদয়ে সে কান্নার আওয়াজ পৌঁছেনি। সবে মাত্র বাচ্চার জন্ম দিয়েছে শামুকখোলেরা। ছানাগুলো এখনো ভালো করে উড়তে শিখেনি। এখনো ওদেরকে মুখে তুলে খাইয়ে দিতে হয়। উড়তে শিখলো হয়তো হতাহতের পরিমানটা কম হতো। আচমকা এক ঝড়ে সাজানো সংসার আর স্বপ্নগুলোর অপমৃত্যু মেনে নিতে হলো মা পাখিদের।
ওরা আর কতকাল নিজেদের আশ্রয় বদলাবে? প্রায় ৮ বছর আগে শামুকখোল পাখি নিরাপদ আশ্রয় হিসাবে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের ভিতর এবং আশপাশের গাছগুলোতে বাসা বাঁধে। এখানে শামুকখোল প্রজাতির কয়েক হাজার পাখি নিরাপদেই ছিল। পরে ২০১৯ সালে কারা প্রশিক্ষণ একাডেমির নির্মাণ কাজ শুরু হলে অনেক গাছ কেটে ফেলা হয়। এতে পাখিগুলো আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে।
নতুন আশ্রয় হিসাবে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনের গাছগুলোকে খুঁজে নেয়। এখানে এসেও হারাতে হয় বাসস্থান। ২০২০ সালে হাসপাতালের গাছের ডালপালা কাটার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। দ্বিতীয়বারের মত আশ্রয় হারিয়েও রাজশাহী ত্যাগ করেনি শামুকখোলের দল। তারা দ্রুতই হাসপাতালের পূর্ব পাশের রাস্তার ধারের গাছগুলোতে আশ্রয় নেয়। সে আশ্রয়ও হারাবার পথে, ওদরে এখন বেঁচে থাকাই অনিশ্চিত!
গাছকাটার ফলে অর্ধশতাধিক পাখির ছানা প্রাণ হারায়। যারা পঙ্গুত্ব বরণ করে তাদেরও শেষ রক্ষা হয়ে উঠেনি। হাসপাতালের স্টাফরা আহত ছানাগুলোকে জবাই করে নিয়ে গেছে! এই বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক দায়সারা গুছের কথা বলেন। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, এই হাসপাতালের গাছগুলোতে বরাবরই প্রজনন মৌসুমে শামুকখোল পাখিরা এসে বাসা বেঁধে বাচ্চা ফোটায়। হাসপাতাল চত্বরের যে গাছগুলোর আশপাশে মানুষের আনাগোনা বেশি, সেগুলোতেই পাখিরা বেশি বাসা বাঁধে।
গাছ কেটে ফেলায় শামুকখোল পাখির ছানা মারা যাওয়ার ঘটনাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে জানান তিনি। অথচ এর আগে হাসপাতালের এক কর্মকর্তার গায়ে পাখির বিষ্ঠা লাগায় তিনি গাছ কেঁটে ফেলার অনুমতি দেন। রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, হাসপাতাল এলাকা কখনো পাখির অভয়ারণ্য হতে পারে না। এটি হাসপাতালের কনসেপ্টের সঙ্গে যায় না। পাখির বিষ্ঠায় হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় সমস্যা হচ্ছে। এ কারণেই জরুরি বিভাগ ও শৌচাগারের সামনের দুটি গাছের ডালপালা কাটার পরিকল্পনা ছিল তাদের।
সরকারী জমিতে গাছে বাসা বাঁধা পাখিদের তাড়ানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে অথচ বেসরকারী ভাবে রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকার বাগান ভাড়া নেয়া হচ্ছে পাখিদের বাঁচানোর জন্য। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের আমবাগানে শামুকখোল পাখির বাসা ভাড়ার জন্য পাঁচজন বাগান মালিককে তিন লাখ ১৩ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। আমচাষিদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে এ বরাদ্দ দেওয়া হয়।
বেশ কয়েক বছর ধরে বর্ষাকালের শেষে বাচ্চা ফোটানোর আগে খোর্দ্দ বাউসার এই আমবাগানে বাসা বাঁধে শামুকখোল পাখি। গত বছর বাগান মালিক বাগান পরিচর্যায় পাখিদের উচ্ছেদের উদ্যোগও নেন। তাতে বাধা দেন স্থানীয় পাখিপ্রেমীরা। পরে কেন ওই এলাকাকে পাখির অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন উচ্চ আদালত। পরে আদালতের নির্দেশেই ক্ষতিপূরণ পান বাগান মালিকরা।
তবে আশার কথা হচ্ছে আজকে বন বিভাগের এক চিঠিতে গাছ কাটা বন্ধ করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এখন দেখার বিষয় সরকারী সংস্থাগুলো পাখিদের রক্ষায় কি পদক্ষেপ নেয়।
বিস্তারিত:
এক গাছ কেটেই শত শামুকখোল ছানা হত্যা
শামুকখোল পাখি বাঁচাতে গাছ না কাটতে পরিবেশ অধিদফতরের চিঠি
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১১:৫২