somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সত্যবতী তিনি হলেন বেদব্যাসের একজন জননী

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শান্তনু সত্যবতীর পাণিপ্রার্থনা করছেন
সত্যবতী হলেন মহাভারতে বর্ণিত হস্তিনাপুরের কুরুরাজ শান্তনুর মহিষী। তিনি কৌরব এবং পাণ্ডবদের প্রপিতামহী ও তিনি বেদব্যাসের জননী । তার উপাখ্যান মহাভারত, হরিবংশ এবং দেবীভাগবদ্পুরাণে বর্ণিত হয়েছে।সত্যবতী চেদীরাজ উপরিচর বসু এবং শাপগ্রস্তা মৎস্যরূপিণী অপ্সরা অদ্রিকার কন্যা। ধীবরদের রাজা দাশ তাকে তার যমজ ভাইয়ের সাথে অদ্রিকার উদরে প্রাপ্ত হয়। রাজা বসু পুত্র সন্তানটিকে নিজের কাছে রেখে সত্যবতীকে দাশের কাছে পরিপালন করতে দেন। তার ভাই মৎস্যরাজ নামে এক ধার্মিক রাজা হন। তার গায়ে তীব্র মাছের গন্ধ থাকায় তার আরেক নাম মৎস্যগন্ধা সেজন্য কেউ তার কাছে আসতে চাইত না। তাই পালকপিতার নির্দেশে তিনি যমুনার বুকে নৌকা চালানো আর জেলেনীর কাজ করতে থাকেন।একদিন ঋষি পরাশর তার নৌকায় উঠে তার সঙ্গে মিলন প্রার্থনা করেন যার ফলে বেদব্যাসের জন্ম হয়। পরাশর তার শরীরের দুর্গন্ধকে মৃগনাভির সৌরভে রূপান্তরিত করেন, সেজন্য তিনি যোজনগন্ধা ও গন্ধবতী নামেও পরিচিত। পরবর্তীতে রাজা শান্তনু তার সৌন্দর্য এবং গায়ের সৌরভে মুগ্ধ হয়ে তার প্রেমে পড়েন এবং দাশরাজের কাছে বিবাহের প্রস্তাব করলে দাশ বলেন যদি তার কন্যার সন্তানেরা রাজা হন তবেই তিনি কন্যাদান করবেন। সেজন্য শান্তনুর জ্যেষ্ঠপুত্র ভীষ্ম রাজা হননি। সত্যবতী শান্তনুর মাধ্যমে চিত্রাঙ্গদ ও বিচিত্রবীর্যের জন্ম দেন কিন্তু তার দুই পুত্রই কোন উত্তরাধিকারী না রেখেই মারা যান। এজন্য তিনি তার পুত্র ব্যাসকে ভ্রাতৃবধূদের গর্ভে সন্তান জন্মানোর জন্য নির্দেশ দেন যার ফলে ধৃতরাষ্ট্র এবং পাণ্ডুর জন্ম হয়, যারা কৌরব ও পাণ্ডবদের পিতা। তিনি পাণ্ডুর মৃত্যুর পর তার পুত্র ব্যাসের আশ্রমে তপস্যারত অবস্থায় মারা যান।
সত্যবতী সম্পর্কে মহাভারতে খুব কমই বলা হয়েছে । তবে হরিবংশ এবং দেবীভাগবত পুরাণে তার উপাখ্যান বিস্তারিতভাবে আছে । সত্যবতী মহাভারতে বিভিন্ন নামে পরিচিতা । তাকে দাশেয়ী, গন্ধকালী, গন্ধবতী, কালী, মৎস্যগন্ধা, সত্যা, বাসবী, যোজনগন্ধা ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হয়েছে । তার সপত্নীপুত্র ভীষ্ম তাকে দাশেয়ী নামেও সম্বোধন করতেন যেহেতু তিনি দাশরাজের কন্যা । বাসবী অর্থ বসুরাজের কন্যা । তার কালী নাম থেকে বোঝা যায় তিনি শ্যামাঙ্গী ছিলেন ।হরিবংশ অনুসারে সত্যবতী তার পূর্বজন্মে অচ্ছোদা নামে পিতৃগণের কন্যা ছিলেন যিনি শাপগ্রস্তা হয়ে পৃথিবীতে জন্ম নেন ।মহাভারত, হরিবংশ এবং দেবীভাগবত পুরাণ অনুসারে সত্যবতী শাপগ্রস্তা অপ্সরা অদ্রিকার কন্যা । অভিশাপের কারণে অদ্রিকা মৎস্যে পরিণত হয়ে যমুনায় বাস করত । একদা চেদীরাজ উপরিচর বসু বসন্তকালে বনে মৃগয়া করতে গিয়ে তার ঋতুস্নাতা স্ত্রীকে স্মরন করে স্খলিতবীর্য হন । তিনি সেই রেত এক শ্যেন পাখির সাহায্যে তার পত্নীর উদ্দেশ্যে পাঠান কিন্তু পথে আরেক শ্যেন পাখির সাথে যুদ্ধের ফলে সেই রেত যমুনার জলে পড়ে এবং অদ্রিকা তা গ্রহণ করে গর্ভবতী হয় । তারপর সে দাশ নামক ধীবরের জালে ধরা পরে যে তার পেট থেকে দুটি সন্তান পায় । সে শিশুদুটিকে রাজার কাছে নিয়ে গেলে রাজা পুত্র সন্তানটিকে গ্রহণ করেন এবং কন্যা সন্তানটিকে দাশকে পালন করতে দেন । সত্যবতীর যমজ ভাই মৎস্যরাজ নামে মৎস্যরাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা এক ধার্মিক রাজা হন । সত্যবতী বড় হয়ে তার বাবার আদেশে ধর্মার্থে নৌকা বাইতে লাগলেন ।


সত্যবতীর পুত্র বেদব্যাস যিনি মহাভারতের রচয়িতা
পরাশর - সত্যবতীর সহবাস এবং ব্যাসের জন্ম
দেবীভাগবত পুরাণের বর্ণনা অনুসারে যখন কালী অর্থাৎ সত্যবতী যমুনা নদীতে ঋষি পরাশরকে খেয়া পার করছিলেন তখন পরাশর তার কামনা পূরণের উদ্দেশ্যে কালীর ডান হাত ধরেন । সত্যবতী তাকে নিবৃত্ত করার জন্য বলেন তার মত বেদজ্ঞ ঋষির পক্ষে এমন এক নারীর সহবাস প্রার্থনা অনুচিত যর গা থেকে মাছের দুর্গন্ধ বের হয় । অবশেষে সত্যবতী পরাশরের জেদের কাছে হার মানেন কারন তার ভয় হয় পাছে ঋষি ক্রোধে মাঝ নদীতে নৌকা ডুবিয়ে দেন । সত্যবতী সম্মত হয়ে ঋষিকে অপেক্ষা করতে বলেন যতক্ষন না নৌকা অপর পাড়ে পৌছায় । নৌকা পাড়ে পৌছাতেই ঋষি পুনর্বার সত্যবতীর হাত ধরেন কিন্তু সত্যবতী বলেন তার গায়ে মাছের দুর্গন্ধ তাই তাদের মিলন সুখকর হবে না । তারফলে পরাশর সত্যবতীর দুর্গন্ধকে সুগন্ধে পরিণত করেন । যার ফলে তার নাম যোজনগন্ধা হয় । কিন্তু সত্যবতী পুনরায় বলেন প্রকাশ্য দিবালোকে তাদের মিলন হলে তাদের সবাই দেখে ফেলবে আর তার কুমারীত্ব নষ্ট হলে সমাজ তাকে গ্রহণ করবে না । এতে ঋষি যমুনার কুলে ঘন কুয়াশার সৃষ্টি করেন এবং তাকে এই বর দেন তার সাথে মিলন হলেও সত্যবতী কুমারীত্ব হারাবেন না এবং সে রাজপত্নী হবে । তখন সত্যবতীর মনে আর কোন সংসয় রইল না। মহাত্মা ঋষির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা আর তার ঔরসে এক বিদ্বান পুত্রকে গর্ভে ধারণ করার অভিলাষ জাগে তার মনে। ঋষি নির্বিবাদে তার সূক্ষ্ম বসন খুলে নিলেন, আর তাকে ক্রোড়ে নিয়ে ভূমিশয্যায় শয়ন করলেন। পরবর্তীকালে সাধারন নরনারীর মতন তারা সম্ভোগে রত হলে। কিছুকাল সত্যবতীর অন্যান্য অঙ্গ ভোগ করার পর মহর্ষি তার শিশ্ন তার সঙ্গিনীর যোনিতে প্রবেশ করিয়ে রতিক্রিড়ায় লিপ্ত হলেন। কিছুকাল সঙ্গমের পর মহর্ষি বীর্যপাত করলেন। তারপর সত্যবতীকে তিনি ত্যাগ করলেন। তাদের মিলনের ফলে মহর্ষির ঔরসে গর্ভবতী হয় সত্যবতী। কিছুকাল পরে সে এক পুত্রসন্তান প্রসব করে। সেই পুত্র জন্ম মাত্রই পূর্ণতা প্রাপ্ত হল । তার গায়ের রঙ কালো বলে নাম হল কৃষ্ণ আর দ্বীপে জন্ম বলে নাম হল দ্বৈপায়ন । পরবর্তীতে তিনি বেদকে চার ভাগে ভাগ করে বেদব্যাস নাম প্রাপ্ত হন । তিনি তার পিতার সাথে তপস্যা করতে চলে যান আর মাকে বলেন তাকে স্মরণ করলেই তিনি সত্যবতীর সাহায্যের জন্য আসবেন ।


দেবব্রতের ব্রহ্মচর্যের ভীষণ প্রতিজ্ঞা
একদিন হস্তিনাপুরের কুরুরাজ শান্তনু মৃগয়া করতে যমুনার তীরে গিয়েছিলেন এমন সময় মৃগনাভির সৌরভে তিনি বিমোহিত হন । গন্ধের উৎস অনুসন্ধান করে তিনি সত্যবতীর গৃহে উপস্থিত হন এবং সেখানে সত্যবতীকে দেখে তার প্রেমে পড়েন । তিনি সত্যবতীর পিতা ধীবরনেতা দাশরাজের কাছে সত্যবতীর পাণিপ্রার্থনা করেন কিন্তু দাশ বলে যদি তার কন্যার গর্ভজাত পুত্রেরাই রাজা হয় তবেই সে কন্যা সম্প্রদান করবে ।রাজা মর্মাহত এবং বিমর্ষ হয়ে ফেরে এলেন কারন এর পূর্বেই তিনি তার পুত্র দেবব্রতকে যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করেছিলেন । পিতার পীড়া দেবব্রতকে কষ্ট দিচ্ছিল তিনি এক মন্ত্রীর কাছ থেকে সেই ধীবরের শর্তের কথা শুনেন । তৎক্ষণাৎ তিনি সেই ধীবরের কাছে উপস্থিত হন এবং দাশরাজের কাছে তার পিতার পক্ষ থেকে সত্যবতীকে প্রার্থনা করেন কিন্তু ধীবর পুনরায় তার শর্তের কথা জানায় এবং বলে শান্তনুই তার জন্য উপযুক্ত ছিলেন যেজন্য ব্রহ্মর্ষি অসিতের প্রস্তাবও ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে ।দেবব্রত সত্যবতীর পুত্রদের জন্য সিংহাসনের দাবী ত্যাগ করলেন । কিন্তু দাশ বলল যদি তার অনুপস্থিতিতে তার পুত্রেরা সিংহাসন নিয়ে বিবাদ করে । এতে শান্তনু আজীবন ব্রহ্মচর্য পালনের ভীষণ প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করেন । দাশরাজ তখনই তাকে কন্যা দান করে । এমন ভীষণ প্রতিজ্ঞা করার জন্য দেবব্রতের নাম হয় ভীষ্ম । ভীষ্ম সত্যবতীকে শান্তুর কাছে উপস্থিত করলেন । রাজা খুশি হয়ে ভীষ্মকে ইচ্ছামৃত্যু হওয়ার বর প্রদান করলেন । দেবী ভাগবত পুরাণে সত্যবতীর কানীন পুত্র বেদব্যাস এই বলে আক্ষেপ করেন যে তার মাতা তাকে শিশু অবস্থায় ত্যাগ করেছেন । তিনি তার জন্মস্থানে মায়ের খোঁজে আসেন কিন্তু লোকমুখে শুনেন তার মাতা এখন হস্তিনাপুরের রাণী ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১১:১৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×