somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘুরতে গেছিলুম ইউরোপ- ৩

০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সুইজারল্যান্ডের লুজান থেকে বিশ কিলোমিটার হবে একটা জায়গা নাম গ্রোয়ারখ। সেখানে পাহাড়ের উপর একটা কফি শপ আর গিফট শপ। সুজন আর আমাদের দুজন বন্ধু সাথে সুজনের ছেলে, চললুম সেখানে কফি খেতে। একটা কথা মনে পড়ল, গাড়িতে বাচ্চারা বসলে অবশ্যই তার জন্য বেবী সিট লাগাতে হবে তাতে বাচ্চাকে বেশ সীট বেল্ট লাগিয়ে টাইট ফিট হয়ে বসতে হবে।
এর অন্যথা হলে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বসলে ২০০ ফ্রাংক থেকে ৫০০ ফ্রাংক জরিমানা সাথে লাইসেন্স এর নম্বর কাটা যেতে পারে। বেশী নম্বর কাটা গেলে লাইসেন্স বাতিল হবে আর তাতে বছর খানেকের জন্য লাইসেন্স নেই, গাড়ী চালানো বন্ধ। জীবন শেষ!
কফি খাবার সাথে গিফট কেনাটাও আরেকটা উদ্দ্যেশ্য। ইচ্ছে করেই কিনা জানিনা চালক সুজন পথ ভুল করল। কুড়ি কিলোমিটারের জয়গাতে চল্লিশ কিলোমিটার হয়ে গেল। যখন পৌছলুম সবাই বেশী জার্ণী করানোর জন্য সুজনের উপর রাগ, আমি কিন্তু মহা খুশী। সুইজারল্যান্ডের আরো কিছু সুন্দর অংশ এই ফাঁকে দেখা হয়ে গেল।


গ্রোয়ারখ এর কিছু দৃশ্য, ছবির মানুষগুলোর কথা ভুলে যান। এডিট করা কঠিন পরিশ্রম।

অনেকক্ষন সেখানে কাটালুম, আর কফি খেলুম। ভারি সুস্বাদু সেই কফি। লাইন ধরে আগে টাকা দিয়ে কফি কিনতে হয় তারপর আপনার জায়গাতে বসে খেয়ে আবার সেই ট্রে নির্ধারিত জায়গাতে রেখে আসতে হবে। কটা বাচ্চা মেয়ে সেগুলো নিয়ে যায় ধোয়ার জন্য। গাড়ী পার্কিং নীচে, গাড়ী রেখে তারপর পাহাড় বেয়ে উঠতে হয় কফি শপে। অবশ্য লিফট আছে। চমৎকার কফি কফি খেতে খেতে চারিদিকের সেই শ্বাসরুদ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখা এক অসাধারণ আর দুর্লভ অভিজ্ঞতা।



দুরে লেক তার পারে ছোট ছোট বাসা ছবির মত। ওরা পাহাড়ে বাড়ি বানায় বটে তবে পাহাড়কে নস্ট করে কখনোই নয়। যদি একটা গাছ কাটতেই হয় তবে দশটা লাগাবে। ছবিগুলো দেখলেই বুঝবেন প্রকৃতিকে ওরা বিন্দুমাত্র বিরক্ত করেনা। লেকের পানি একেবারে পরিষ্কার, সরাসরি খাওয়া যায় ।



ভাল লেগেছে মানুষের স্বল্পতা আবার ভাল মানুষের অধিক্য, সবাই ভাল মানুষ। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, বিশ্বাস করুন।

কফি খাওয়ার পর গিফট শপে গেলুম কিছু কেনার জন্য। দামটা জিনিসগুলোর গায়েই লেখা আছে। আপনি যা নিবেন হাতে করে নিয়ে কাউন্টারে গিয়ে দাম দিন নগদ বা কার্ডে। ওখানে সব দোকানে সবাই কার্ড ব্যাবহার করে। নগদ টাকা বহন করেনা খুব একটা।


একটা সুইস নাইফ কিনলুম, পৃথিবীজোড়া সেগুলোর সুনাম আছে ।



দামটা জিজ্ঞেস করলেননা! বলছি, একখান নাইফের দাম ৬৫ ফ্রাংক, প্রায় ছ'হাজার টাকা! নাতির জন্য দুএকটা খেলনাও কিনলুম।

অনেকদিন হল জুয়া খেলিনা। জানতুম লুজানের কাছেই মনথ্রো বলে একটা সুন্দর জায়গা আছে সেখানে ক্যাসিনো আছে। ভাগ্নে সুজনকে বললুম চলতো বাপু একটু ক্যাসিনোতে। প্রোগ্রাম হলো রোববারে যাবো। বিকেলের দিকেই চললুম মনথ্রোর পথে।





দুরত্ব ত্রিশ কিলোমিটারের মত হবে। যাবার রাস্তাটি ভারি সুন্দর। একপাশে লেক একপাশে পাহাড় মাঝখান দিয়ে সরু রাস্তায় ৮০- ১০০ কিলোমিটার স্পীডে চালানো বেশ থ্রিলিং! কোথাও রাস্তা এত সরু যে একবারে একদিকেই যাওয়া যাবে, সিগন্যাল বাতি আছে অটোমেটিক জ্বলছে নিভছে কোন সমস্যা নেই। ক্যাসিনোতে পৌঁছে গাড়ি পার্ক করতে গেল পাক্কা পৌনে এক ঘন্টা! এক মহিলা হয়তো শনিবার এসেছিলেন আমরা যাবার কিছু পরে গাড়ি নিয়ে বাড়ি যাবেন তাই তার ছেড়ে দেয়া স্পেসটা খালি পেলুম। গাড়ি পার্ক করে ক্যাসিনোতে ঢুকলুম। পথেই পাসপোর্ট জমা দিলুম ভাগ্নে তার আইডি দিল। গেটের লেডি ওগুলো স্ক্যান করে ফেরৎ দিল। আমরাও ঢুকলুম।
মেশিনের স্লটে ১০ ফ্রাঁংক থেকে ১০০ ফ্রাঁংকের যে কোন নোট ঢুকিয়ে খেলা শুরু করতে পারেন। এক কোনে চা কফি কোল্ড ড্রিংকস রাখা আছে ফ্রি খান যত খুশি। খেলার মেশিনের সামনে বসে শুধু বিয়ার কিনে খেতে পারেন, হুইস্কি খাওয়ার নিয়ম নেই। ওটা খেতে হলে বারে যেতে হবে। বিভিন্ন টেবিলে ঘুরে ঘুরে দেখলুম। ২৪ ঘন্টাই খেলা হচ্ছে। লক্ষ লক্ষ ফ্রাংকের খেলা চলছে। অধিকাংশই দেখলুম হারছে। বেশীর ভাগ বুড়ো বুড়ি।

সুইশ রিটিয়ার্ড লোকদের অজস্র টাকা, খাওনের লোক নেই। ওরা অনেকে এই সব ক্যাসিনোতে স্পিন হুইল খেলে সময় কাটায়।
ভেতরে ছবি তোলার নিয়ম নেই। এসবে সরকারী অনুমোদন আছে, মাস্তানী করার কোন সুযোগ নেই, করতে গেলে খবর হয়ে যাবে। গোপন জায়গাতে বডিবিল্ডার টাইপ বিশালদেহী বাউন্সাররা আছে, ছোটখাট গন্ডগোল ঠেকাবার জন্য। সরকার এদের পৃস্ঠপোষকতা করে কারন প্রচুর ট্যাক্স দেয় এসব ক্যাসিনো। যতক্ষন ছিলুম কোন গন্ডগোলের আভাস পর্যন্ত দেখিনি!
ঘন্টা পাঁচেক কাটালুম ক্যাসিনোতে। বেশ ভাল লাগল। ভাল লাগল সুইশ আতিথেয়তা, সাহায্য করার মানসিকতা।

দেখলুম আরবী ভাষাভাষীদের টাকা উড়ানোর মচ্ছব। ইউএই সৌদি আরব কুয়েত কাতার এসব জায়গা থেকে রাজপরিবারের সদস্যরা পরিবার পরিজন নিয়ে সুইজারল্যান্ডে মাসের পর মাস কাটায় আনন্দ করে।
ঘন্টা পাচেক কাটিয়ে রাত বারোটার দিকে উঠলুম। চললুম বাসার দিকে। পকেট থেকে বেরিয়ে গেছে বেশ কিছু ফ্রাংক।
তবে অভিজ্ঞতা আর মজাটা অমুল্য!









চলবে--
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০২
৩০টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×