somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিউ ইকোনমিক্সের ভাবনা; বাংলাদেশের সুখগাঁথা

১০ ই অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৫:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাসো বাঙালি, হাসো । প্রাণ খুলে হাসো । তোমাদের হাসির ইতিহাসের সর্বোচ্চ খোরাক নিয়ে হাজির হয়েছে ''নিউ ইকোনমিকস ফাউন্ডেশন ।'' তাদের কথামত সোনার বাংলা বিশ্বের ১১ তম সুখী দেশ । কি-খুশিতো? যে দেশকে ১১ তম সুখী দেশ বলা হলো সে দেশের মানুষ কতটা সুখী স
েটা বোধহয় মি. স্টুয়ার্ট ওয়ালিশ ভেবেও দেখেননি । তবে তার প্রয়োজন ছিল । সে সময় গত, এখন ভবিষ্যতের কথা বলবো ।

ভদ্রলোকের নাম স্টুয়ার্ট ওয়ালিস । 'নিউ ইকোনমিকস ফাউন্ডেশন ' এর চেয়ারম্যান । মনেহয় জীবনে কখনোই বাংলাদেশে আসেননি । খোঁজ-খবর নিয়ে যেটুকু জানলেন তা হলো-রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, খুন-গুম, ধর্ষণ, দুর্নীতি, লুটতরাজ, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, হরতাল, নৈরাজ্য, ক্ষমতাসীনদের একচ্ছত্র আধিপত্য; এগুলো সাধারণ বিষয় । কিন্তু একটা বিষয় মেলাতে পারলেন না । একগাদা মারাত্বক সমস্যার পরেও সুখী দেশর তালিকায় ১১ তম স্থান পায় কীভাবে? সিদ্ধান্ত নিলেন বাংলাদেশে যাবেন । কথা বলবেন খেটে খাওয়া মানুষের সাথে । যাচাই করবেন নিজের ম্যাগাজিনে প্রকাশিত সুখী দেশের প্রচ্ছদেরসত্যতা ।

কিন্তু বাধা অনেক । বাংলাদেশে যেতে হলে তার একজন এমন দোভাষী প্রয়োজন যে রাজনীতি, অর্থনীতি, প্রশাসন সকল বিষয়ে সমান জ্ঞান রাখেন ।
মোটা অংকের বেতনের কথা বলে আবেদন করলেন বাংলাদেশ হাই কমিশনে । ফলও মিলল খুব দ্রুত ।দিন পাঁচেক পর মাঝবয়সী এক ভদ্রলোক হাজির মি.স্টুয়র্টের অফিসে । নাম ডিপুল কুমার দাস । স্মিতহাস্যে গ্রহণ করলেন তাকে । প্রাথমিক আলাপচারিতার পর ঠিক হলো আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহেই ঢাকার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়বেন ।

১১ জুলাই রাত আটটা । বিমান থেকে নামার পর মি.স্টুয়ার্টের চক্ষু ছানাবড়া । ডাক দিলেন ডিপুলকে । ''কী ব্যাপার, তোমাদের এই বিমানবন্দরের নাম ছিলো জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, তাই না?'' ''জ্বী স্যার ।''
তবে........?
বেচারা ডিপুল, দেশের মাটিতে পা দিয়েই এরকম প্রশ্নের সম্মুখীন হবে ভাবতেও পারেনি । একটু ভেবে উত্তর দিলেন,
''স্যার, সে অনেক আগের ইতিহাস ।''
ডিপুল বুঝতে পারলেন, দেশের হালচাল দেখতে এসেছেন তাই খেঁচাবেন একটু বেশি । ভদ্রলোককেযতটা আরামে রাখার চেষ্টা করতে হবে । বিমানবন্দর থেকে মি. স্টুয়ার্টকে তিনি হোটেল রেডিসনে উঠলেন । রাতে সরকারী এবং বিরোধী দল নিয়ে একটু ধারণা দিলেন মাত্র ।

পরদিন সকাল । ডিপুল মি. স্টুয়ার্টকে বললেন,
''স্যার কীভাবে আপনি আপনার কাজ শুরু করবেন ।''
মুহূর্তের জন্য ভেবে নিয়ে তিনি বললেন, ''আমি সব শ্রেণী-পেশার মানুষের সাথে আলাপ- আলোচনা করতে চাই ।''
''ঠিক আছে স্যার, আগামীকাল আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ে যাবো ।''

তৃতীয় দিন সকাল দশটা । বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে মি. স্টুয়ার্ট যা দেখলেন মনে হলো তিনি পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্যের সামনে দাঁড়িয়ে । বেতন-ভাতার দাবীতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের পেটাচ্ছে পুলিশ। একটু সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের দু-গ্রুপ শিক্ষার্থীরা রক্তাক্ত পরিবেশে মারামারি করছে । দেখে বোঝার উপায় নেই এরা দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠের সন্তান । পাশেই প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক ধর্মঘট ।
রাতে মি. স্টুয়ার্ট দিনের বিষয়গুলো নিয়ে পর্যালোচনা করলেন । নাহ্, যে দেশের শিক্ষকদের বেতন-ভাতার দাবীতে রাস্তায় নেমেপুলিশের কাছে লাঞ্ছিত হতে হয়, সে দেশকে অন্তত সুখী দেশ বলা যায় না । সিদ্ধান্ত নিলেন, দেশে ফিরে তালিকা পুনর্মূল্যায়ন করা হবে ।

পরদিন সকালে মি. স্টুয়ার্ট পৃথিবীর নবম আশ্চর্যের সন্ধান পেলেন যা মোটেও সুখকর নয় । ক'দিন আগে নিজ বাসায় নৃশংসভাবে খুন হয় সাংবাদিক দম্পতি । দেশ যখন এটা নিয়ে উত্তাল তখন প্রধানমত্রীর বক্তব্য ''কারো বেডরুম পাহারা দেওয়া সরকারের দায়িত্ব নয় ।'' মি. স্টুয়ার্ট যেন আকাশ থেকে পড়লেন । নিজের অজান্তেই মনে মনে বললেন, ''তবে সরকারের দায়িত্ব কী?'' ডাক দিলেন ডিপুলকে । বললেন,
''তোমাদের প্রধানমন্ত্রী যা বললেন তোমার কি তাই মনে হয়?''
''না ।''
''দেশের মানুষ?''
''সবাই, কেউ এটা মেনে নিতে পারবেনা ।''
''তবে তারা প্রতিবাদ করছেনা কেন?'' ডিপুল অনেকটা বিজ্ঞের মত উত্তর দিলেন-
''স্যার, বাইরে প্রতিদিন যে মানুষগুলো দেখেনএগুলো শুধুই মাথা । পেটের ভাত যোগাড় করতেই এরা ব্যস্ত । প্রতিবাদের কোনো সময় এদের নেই ।রাস্তায় যখন কোনো প্রতিবাদীকে পাবেন সে বিএনপি নাহয় আওয়ামী লীগ । এরা নিজেদের জন্য প্রতিবাদ করে, সবার জন্য নয় ।''
মি. স্টুয়ার্ট বুঝতে পারলেন এই দেশকে ১০০ তমতালিকার ভেতরে রাখা মানে পাপ করা । তিনি মহাপাপ করে ফেলেছেন । কাল শেষবারের মত পরিদর্শন করেই দেশে ফিরে যাবেন ।

সকালে যথারীতি ডিপুলকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন । কিন্তু কয়েক মিনিট যেতে না যেতেই গাড়ী ট্রাফিক জ্যামে আটকে গেল । এভাবে প্রায় ঘন্টাখানেক, দুই, তিন ঘন্টা । মাথার উপর কাঠফাটা রোদ, চারিদিকে গাড়ীর ভেঁপু আর কালো ধোয়া । মি. স্টুয়ার্ট একটু অসুস্থ বোধ করছেন। বিষয়টা তিনি ডিপুলকে জানালেন । কিন্তু কিছুই করা যাবেনা যতক্ষণ রাস্তা স্বাভাবিক না হয় । এদিকে অবস্থা ক্রমেই খারাপ হচ্ছে । মি. স্টুয়ার্ট একটু পরেই জ্ঞান হারালেন ।


যখন তার জ্ঞান ফিরে এলো তিনি সেখান থেকেই পত্রিকার সম্পাদককে ফোন করে বললেন ''নতুনভাবে দুঃখী দেশের তালিকা প্রকাশ করা হোক ।''
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×