মৌলবাদ প্রসারের আরো একটি মূল কারণ হচ্ছে বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলোর সীমাহীন ব্যর্থতা। স্বাধীনতার পরেও আমাদের দেশে যেমন একটি সত্যিকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিকশিত হয়নি, তেমনি দেশের অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানেও তারা চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। মুক্তবাজার অর্থনীতিকে উন্নয়নের অব্যর্থ মডেল হিসাবে গ্রহণ করা হলেও বস্তুতঃ দেশে কাঙ্খিত শিল্পায়ন ঘটেনি। ফলতঃ সমাজে যেমন শ্রেণী বৈষম্য তীব্র হোয়েছে, তেমনি বৃদ্ধি পেয়েছে গ্রাম ও শহরের মধ্যে বৈষম্য। উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কহীন এক শ্রেণীর শহুরে লুঠেরা ধনিকদের সীমাহীন জৌলুস-আধুনিক জীবন যাপন-আর অন্যদিকে গ্রামের বিশাল দারিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকার প্রাণান্তকর আদি সংগ্রাম-এ স্ববিরোধী বৈশিষ্ঠমণ্ডিত কোন সমাজ কখনো স্থিতিশীল হতে পারে না। বেকারের সংখ্যা তিন কোটির উপরে। প্রতি বছর ২১/২২ লক্ষ শিক্ষিত বেকার শ্রমের বাজারে প্রবেশ করছে। দুর্নীতি সর্বগ্রাসী রূপ পরিগ্রহ করে পুরো সমাজকে গিলে ফেলেছে। বিশ্বের সর্বাপেক্ষা দুর্নীতিগ্রস্থ দেশের কলঙ্ক তিলক আমাদের মাতৃভূমির কপালে শোভা পাচ্ছে বিগত চার বছর ধরে। স্বাধীনতার পর হতে আমাদের দেশের শাসকগোষ্ঠীর ধারাবাহিক ব্যর্থতার ফলশ্রুতিতে আজ গ্রামীণ ও শহুরে নিন্ম-মধ্যবিত্ত দরিদ্র যুবশ্রেণীর মনে যে হতাশা দানা বেঁধেছে তাকেই সুপরিকল্পিতভাবে কাজে লাগাবার প্রয়াস পাচ্ছে ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলো। আলজেরিয়া, মিশর ও তুরস্কের ঘটনাবলী পর্যবেক্ষণ করলেও আমরা একই রকম চিত্র দেখতে পাব যে, সে সব দেশেও সামাজিক বৈষম্য ও দারিদ্র দূরীকরণে মূল রাজনৈতিক শক্তিগুলোর ব্যর্থতা মৌলবাদের উদ্ভব ও বিকাশের উর্বর ক্ষেত্র তৈরী করে দিয়েছে। এহেন একটি আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে ক্ষমতাসীন চক্র মৌলবাদকে মোকাবেলার পরিবর্তে তাদের কর্মসূচীকেই আত্মীকরণ করে ফেলেছে। এক্ষেত্রে বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলো কে কতটুকু ধার্মিক, তা প্রমাণের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা কারিকুলাম চালু করার পরিবর্তে তারা ধর্মীয় অনুশাসন নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থার পৃষ্ঠপোষকতা করে চলেছে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০১৫ রাত ৯:০২