somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় বাংলাদেশ: ক্ষমতার পালাবদল পাল রাজবংশ থেকে বাংলাদেশ

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দেশের মানুষকে জিম্মি করে রাজনীতিতে ফায়দা লুটার কায়দা অনেক পুরোনু, আদিকালের, আদিম প্রকৃতির। উৎপাদন ব্যবস্হার উৎকর্ষতা,মানুষে মানুষে যোগাযোগ, প্রযু্ক্তির উন্নতি,মানুষের মৌলিক মানবিক গুনাবলীর বিকাশের ফলে মানুষ আজ সভ্যতার উন্নত স্তরে পৌছেছে। পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, বিরোধী রাজনৈতিক মতামতের উপর গুরূত্বারোপই কেবল আমাদের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট সম্ভব। প্রথমত আমাদের ভাবতে হবে আমরা কি এই সংকটের সমাধান চাই কিনা। স্বাধীন দেশে মানুষ স্বাধীনভাবে চলাচল করবে এইটাই মানুষর মৌলিক অধিকার।আমাদের সংবিধান আমার এই অধিকার নিশ্চত করেছে।আমার সন্তানের শিক্ষার অধিকার কেড়ে নেওয়ার শক্তি আইন কিংবা রাষ্ট্রের সংবিধান কাউকে প্রদান করেনি। আবার বল প্রয়োগ করে কারো রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে হরন করাও অন্যায়,অন্যায্য,বেআইনি।এখানে রাষ্ট্র সমজোতার নীতি প্রয়োগ করবে,যাতে কারো অধিকার হরন না হয়। মানুষের শান্তি নিশ্চিত করা সরকারের প্রধান কাজ।আইন আদালত দিয়ে,শক্তি প্রয়োগে এই শান্তি নিশ্চিত করা অসম্ভব। আজ সব মানষের মনে ভীতি কাজ করছে;আমরা সবাই প্রয়োজনের তাগিদে ঘর হতে বের হচ্ছি কিন্তু সুস্হদেহে বাড়ি ফিরব তার নিশ্চয়তা কে দেবে ? ষোলকোটি মানুষকে জিম্মি করে রাজনীতিতে কেউ বিশেষ সুবিধা আদায় করতে পারবেনা। ক্ষমতায় আসতে হলে আবার জনগনের কাছেই ফেরৎ যেতে হবে। একটু ভেবে দেখুনতো আপনি জনগনের সামনে ভোটের জন্য দাড়াতে পারবেন কিনা ? মানুষের গনতান্ত্রিক মূল্যবোধ,পরমতসহিষ্ণতা,বিরোধীমতকে আস্হায় নিয়ে কাজ করা রাজনৈতিক দলগুলোর আদর্শিক ভিত্তিমূল হওয়া একান্তবাঞ্ছনীয়। ক্ষয়িষ্ণু আদর্শ,অগণতান্ত্রিক ধারায় রাজনীতি চর্চা আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধানতম শক্তি।পিতা বা স্বামীর আদর্শ ভিত্তি করে রাজনীতি চালালেও, বর্তমানে দলীয় কার্যক্রমে গণতান্ত্রিক ধারার অনুপস্হিতি ব্যাপকভাবে প্রকট,দৃশ্যমান এবং লাগামহীন। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে গণতান্ত্রিক ধারা প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্রহীনতাই বর্তমান সংকটের মূল কারন। ক্ষমতা কেন্দ্রীকরন, যে কোন উপায়ই তা হোক,স্বৈরতন্ত্রের জন্মদেয়।দলীয় স্বৈরতন্ত্রের কঠোরতর রূপ রাষ্ট্রীয় স্বৈরতন্ত্র। আজ আমাদের রাষ্ট্রীয় সংকটের যে প্রকাশ আমরা দেখতেপাই তারও মূল কারন এখানে নিহিত। রাজনৈতিক দল গুলোর মধ্যে সেচ্ছাচারী কার্যক্রম,দলীয় নেত্রীত্ব কাঠামোয় অরাজনৈতিক ব্যক্তিতের প্রাধান্য, দলের তৃণমূল কাঠামোয় মাস্তানদের দৌরাত্ব,বর্তমান সময়ের বেসামাল ছাত্র রাজনীতি,গ্রাম্যটাউটদের উপস্হিতি ভদ্র,সজ্জন শিক্ষিত মানুষদের কে রাজনীতি থেকে নির্বাসনে প্রেরন করেছে। দলীয় নেতা নির্বাচনের বর্তমান পদ্ধতির কাঠামোগত,দলীয় বিধানগত,আচরণগত,গুনগত ত্রুটিবিদ্যমান। নেতা হওয়ার যোগ্য মাপকাঠি হল শক্তিপ্রদর্শের মহড়া, ভয়ভীতি প্রদর্শন, দলের প্রতিপক্ষ কে নিধন; নেতার লেজুড়বৃত্তি।


গণতান্ত্রিক শাসনের পুরোধা হল প্রাচীন গ্রীক বিশেষত; এথেন্স নগরী। প্রাচীন গ্রীক রাষ্ট্রগুলো গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত পরিষদ দ্বারা শাসিত হত। গণতন্ত্র শব্দের উৎপত্তিগত বিষয়টি বিবেচনা করলেই তা সহজে অনুমেয়। গণতন্ত্রের ইংরেজি প্রতিশব্দ Democracy, originates from the Greek δημοκρατία (dēmokratía) "rule of the people", which was found from δῆμος (dêmos) "people" and κράτος (krátos) "power" or "rule. আধুনিক গণতন্ত্রের ধারনা এখান থেকেই প্রাপ্ত। কাজেই গণতান্ত্রিক শাসনের ইতিহাস অত্যন্ত সুপ্রাচীন। সময়ে সময়ে এর ধরন বদল হলেও কাঠামোগত দিকটি অবিচ্ছেদ্দ্যভাবে বিরাজমান। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গুরুজন,রাষ্ট্র প্রশাসকগন, গণতান্ত্রিক শাসনের ঐতিহ্য, মূল্যবোধ, প্রথা, আইন এই ব্যবস্তার উন্নতি সাধন করে। বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনচেতা,পরাধীনতার শৃঙ্খলে এদেশের মানুষ বেশীদিন অধীনেস্ত হয়ে থাকেনি। কিন্তু অত্যন্ত পরিতপের বিষয় এই অঞ্চলের সহজ সরল মানুষগুলো এক শাসনের কবল থেকে মুক্তি পাবার পর আবার আরেক শাসকের যাতাকলে পিষ্ঠ হয়।


এই বাংলার ইতিহাস সাক্ষ্যদেয়, পাল রাজ বংশের প্রতিষ্ঠাতা গোপাল (750 -770 AD শাসনকাল অনেকের মতে তা ৭৫৬-৭৮১) গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত শাসক। কিন্তু তিনি রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। জনগনের ইচ্ছার মৃত্যুঘটে। রাজা বদলায়,রাজ্যের আকার বদলায় এবং রাজার উন্নতি হয় কিন্তু প্রজার দূরবস্তা বাড়ে। রাজা বা রাজা প্রশাসকদের মতি বুঝাবার। রাজারা ছিল নির্মোহ,অত্যাচারী;কতিপয় রাজাকে প্রজা বৎসল বলা হলেও তারা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত ছিলেন না কিংবা জনগণের ইচ্ছার কোন প্রকাশ তাদের শাসনে প্রতিভাত হয়নি। পাল রাজাদের রাজত্ব্যের পর পর্যায়ক্রমিকভাবে চন্দ্ররাজবংশ এবং সেন রাজারা বাংলা অঞ্চল শাসন করে। রাজা লক্ষনসেনের পরাজয়ের মধ্যদিয়ে মুসলিম রাজত্বের প্রারম্বিককাল। ১২০৪ সালে নবদ্বীপ অধিকারের মাধ্যমে এই মুসলিম শাসনের সূচনা হয়। তবে ব্যবসা-বানিজ্য, ধর্মপ্রচারের জন্যে ৭ম শতকেই আরবের বণিক, সুফি সাধকদের আগমন ঘটে। তুলনমূলকভাবে এই নতুন ধর্ম উদার মানবিকতা ও মানুষে মানুষে কম ভেদাভেদ থাকায় ইসলামের প্রচার ও প্রসার দুটিই খুব দ্রুতঘটে।অত্যাচারিত সাধারন মানুষ হিন্দু –বৌদ্ধ ধর্ম ত্যাগ করে দলে দলে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নেয়। বখতিয়ার খিলজির ভারত অভিযান এই ধারাকে গতিশীল করে তোলে।


১৪৫০ সাল পর্যন্ত দক্ষিন ও পূর্ববাংলায় দেব রাজত্ব বহাল ছিল। এমনকি মোগল আমলেও বার ভূঁইয়া সহ স্বাধীন হিন্দু রাজার রাজত্ব লক্ষ্য করা যায়।খিলজি শাসনের পর মামলুকর এই অঞ্চল শাসন করে। মোগলদের পূর্বে, শাহী,সূরী,কররানী রাজারা পর্যায়ক্রমে বঙ্গদেশ শাসন করে। ১৫২৬ সালে প্রথম ভারতবর্ষে তার রাজত্বের ভিত্তি স্হাপন করলেও, ১৫৭৫ ই প্রথম মোগলরা বঙ্গঅঞ্চলে তাদের অভিযান প্রেরন করে। মোগল সেনা কমান্ডার মোনিমখান আফগানী শাসক দাউদখান কররানীর নিকট হতে তৎকালীন বঙ্গীয় রাজধানী টান্ডা (Tanda) অধিকার করেন। মোনিম খান (1574 Sept -1575 Oct) হতে মুর্শিদ কূলি খান (1717-1727 স্বাধীন নবাব হিসাবে) পর্যন্ত ৩০জন মোগল শাসক বঙ্গ শাসন করেন। এই ১৫৭ বৎসর মোগলদের প্রত্যক্ষ শাসন বলা হলেও, মুর্শিদ কূলি খান এর ব্যতিক্রম। সম্রাট আওরঙ্গজের মৃত্যুর (Died on March 03 ১৭০৭)মূলত তিনি স্বাধীনভাবে বঙ্গ শাসন করেন; নাসিরী শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। একে নবাবী শাসনও বলা হয়ে থাকে। তিনিইবাংলার প্রথম স্বাধীন নবাব। মুর্শিদ কূলি খান পাল রাজাদের পর প্রথম ভারতীয় শাসক বঙ্গে ক্ষমায় আরোহন করেন; উল্লেখ যে তিনি দাক্ষিনাতের দরিদ্র উড়িয়া ব্রাহ্মিন পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন।কিন্তু দাস হিসাবে ইস্পাহানের অধিবাসী হাজি সফি ইস্পাহানী,উচ্চপদস্ত মোগলকর্মচারি, তাকে ক্রয় করে নিজ দেশে নিয়ে যান ।ধর্মান্তরিত ও শিক্ষা লাভের পর ভারতে ফেরৎ আসেন। ১৭০৩ সালে দিল্লির সম্রাট আওরঙ্গজেব তাকে বাংলার দেওয়ান নিযুক্ত করে প্রেরন করেন। তার ঢাকায় আগমন (জাহাঙ্গীর নগর) প্রিন্স আজিম –উস-শান (সম্রাট আওরঙ্গজের দোহিত্র) পছন্দ করেননি। সম্রাট আওরঙ্গজেব বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্দি করে প্রিন্স আজিম –উস-শান কে পাটনায় ( বিহার এবং মুর্শিদ কূলি খান কে মকসুসাবাদ ( মুর্শিদাবাদ) স্হানান্তর করেন। মুর্শিদ কূলি খান কে ১৭০৭ সালে সম্রাট আওরঙ্গজেব কারতলাব খান উপাধীসহ বাংলার গভর্নর নিযুক্ত করেন। ১৭০৩ সাল হতে ১৭১৭ সাল পর্যন্ত সময়কালে মুর্শিদ কূলি খান বৃহত্তর বাংলা,বিহার ও উড়িষ্যায় তার ক্ষমতা পাকাপোক্ত করেন । ১৭১৭ সালে মকসুসাবাদকে মুর্শিদাবাদ নামকরন করেন। নিজেকে সম্পূর্ন স্বাধীন নবাব হিসাবে দিল্লির অধীনতা ত্যাগ করেন। তবে দিল্লির সম্রাটকে নজরানা প্রদান অভ্যাহত ছিল। দিল্লির সম্রাট ফররুখ সিয়ার মুর্শিদ কূলি খানের নবাব পদবি ফরমান আকারে অনুমোদন করেন।মুর্শিদ কূলি খানের পর তার দৌহিত্র সরফরাজ খানকে উত্তরাধিকার মনোনয়ন দেন কিন্তু সরফরাজ খান তার পিতার সাথে দ্বন্দে জড়িয়ে পিতার অনুকূলে রাজসিংহাসন ত্যাগ করেন। কিন্তু বাংলার দেওয়ান পদে বহাল থাকেন। মুর্শিদ কূলি খানের পর নবাব সুজা উদ্দিন মোহাম্মদ খান বাংলার নবাব পদে অধিষ্ঠিত হন (1727-1739)। কিন্তু ১৭৩৯ পুনঃবার নবাব হিসাবে অধিষ্টহন।সরফরাজ খান ছিল হতভাগ্য নবাব; দ্বিতীয়বার ক্ষমতারোহনের অল্পকিছুকাল পর ১৭৪০ সালে আলীবর্দিখানের সাথে সরাসরি যুদ্দে পরাজিত ও নিহত হন। নাসিরী বংশেরর ক্ষমতার উপর আফসারী বংশের ক্ষমতার আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

আলীবর্দি খানের জন্ম ১৬৪১ সালে আরবের সম্রান্ত পরিবারে; জন্মকালে তার নাম প্রদান করা হয় মির্জা মুহাম্মদ। তার পিতা শাহ কুলি খান ছিলেন সম্রাট আওরঙ্গজের পুত্রআজম শাহের রাজকর্মচারী। আজম শাহ মারা গেলে এই পরিবারে দারিদ্রতা নেমে আসে। আলীবর্দি খান ও তার ভাই মিরজা আহমদ অনেক চেষ্ঠা তদবির করে উড়িষ্যার সুবেদার (গভর্ণর) সুজা উদ্দিন এর অধীনে চাকরিতে যোগদান করেন। সুজা উদ্দিন বাংলার সুবেদার নবাব পদে নিযুক্ত হবার পর এই দুই ভাইয়ের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়। ১৭২৮ সালে মির্জা মুহাম্মদ কে আলীবর্দি খান উপাধী প্রদান সহ রাজমহলের ফৌজদার (জ়েনারেল) পদে নিযুক্ত করেন। ১৭৩৩ সালে বিহারের নায়েবে আমীর (Deputy Governor) পদে অভিসিক্ত হন। তার দক্ষতা, ও সুনামের জন্য তিনি বিভিন্ন উপাধিতে ভূষিত হন; যেমনঃ সুজাউল মুলক (Hero of the Country), হাশেম উদ্দৌলা ( Sword of the country), মহব্বত জঙ্গ ( Horror in War), এই খ্যাতি তাকে ক্ষমতার মোহে আচ্ছন্ন করে তুলে । ১৭৩৯ সালে সুজা উদ্দৌলার মৃত্যু হলে তার ক্ষমতারোহনের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। নতুন নবাব সরফরাজ খানের অধীনতা স্বীকার না করে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হন; গিরিয়ার যুদ্ধে নবাব সরফরাজ পরাজিত ও মৃত্যুবরন করেন। আলীবর্দি খান ১৭৪০ সালে বাংলা ও বিহারের নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করেন। ১৭৪১ সালে উড়িষ্যার নায়বে আজিম (Deputy Governor of Orissa) কে পরাজয়ের মাধ্যমে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার পূর্ণ নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করে। দিল্লির সম্রাট আহমদ শাহ বাহাদুর কর্তৃক নবাবী অনুমোদন ও সত্যায়ন করেন। অতঃপর ১৭৫৬ সাল পর্যন্ত বাংলা শাসন করেন।


নবাব সিরাজের ক্ষমতায় আসীন হওয়া একটা কূটিল –রাজনৈতিক ঘটনাবহুল এবং নাটকীয়তায় পূর্ণ বিষয়। নবাব সিরাজের জন্ম হয় ১৭৩৩ সালে। তিনি আলি আলীবর্দি খানের দৌহিত্র; আলি আলীবর্দি খানের কোন পুত্র সন্তান ছিলনা; তাই সিরাজের জন্ম রাজপ্রাসাদে আনন্দ বয়ে আনে। সিরাজ যে ব্ৎসর জন্ম গ্রহন করেন সেই বৎসর আলি আলীবর্দি খানের পদন্নতি ঘটে; তাই সিরাজ ছিল ভাগ্য বয়ে আনা সন্তান। ১৭৪৬ সালে মারাঠাদের সাথে যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন।এই যুদ্ধে সিরাজ কৌশলের পরিচয় দেন। ১৭৫২ সালে সিরাজকে উত্তরাধীকার মনোনয়ন করা হয়। ১৭৫৬ সালে আলি আলীবর্দি খানের মৃত্যুর পর মাত্র ২৩ বৎসর বয়সে সিরাজ মনসুরুল মুলক ( Victory of the country), সিরাজ উদ্দৌলা (light of the state) এবং হাউবৎ জঙ্গ ( Horror in War) উপাধী ধারন করে রাজ সিংহাসনে আরোহন করেন। সিরাজ উদ্দৌলার ক্ষমতাআরোহন, তার খালা ঘসেটী বেগম (মিহারুন নিসা বেগম), রাজা রাজবল্লভ, মিরজাফর,শওকত জঙ্গ, (সিরাজ উদ্দৌলার খালাত ভাই), চরমঈর্ষান্নিত হয়। গোপনে তারা ষড়যণ্ত্র করতে থাকে। নবাব বিদ্রোহের আশংকায়, ঘসেটি বেগম কে গৃহ বন্দি করে রাখেন। মতিঝিল প্রসাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেন। প্রাসাদ ষড়যণ্ত্র, ইংরেজ বিদ্রোহ, মারাঠা আক্রমন, আফগানদের আক্রমন ইত্যাদি সমস্যায় জর্জরিত তরুন নবাব ১৭৫৭ সালে ইংরেজদের সাথে যুদ্ধের লিপ্ত হন ও পরাজিত হন। নবাব সিরাজ উদ্দৌলার পরাজয় ইতিহাসে বেদনাদায়ক, করুন এবং স্বাধীন বাংলার ইতিহাসের স্বপ্নের মৃত্যু হয়। ১৭৫৭ সালের এই যুদ্ধ ছিল একটি পাতানো খেলা; প্রধান সেনাপতি মিরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতা যুদ্ধের ইতিহাসে বিরল; আজো কোন সন্তানের নাম মিরজাফর রাখা হয়না। মিরজাফরকে বিশ্বাসঘাতকের প্রতিক হিসাবে আজো মানুষ এই নামে গালি দেয়। ইংরেজরা এই যুদ্ধে বিজয়ী শক্তি। যুদ্ধে পর সিরাজ পুনঃরায় শক্তি সঞ্চয় করার উদ্দেশে প্রথমে মুর্শিদাবাদ এবং পরে পাটনা যান কিন্তু তিনি মিরজাফরের সৈনদের হাতে ধরা পরেন; ১৭৫৭ সালের ২ জুলাই তাকে মৃত্যু দন্ড দেয়া হয়। এই মৃত্যু দন্ড প্রদানের আদেশ প্রদান করেন মিরজাফরের পুত্র মিরন। মোহাম্মদ আলি বেগ নবাবের মৃত্যু দন্ড কার্যকর করেন। যুদ্ধের পর বাংলার দেওয়ানী ইংরেজদের হাতে চলে যায়; ইংরেজরা মিরজাফর কে ক্ষমতায় বসায়। মীরজাফরই হল প্রথম নবাব যাকে বহিঃশক্তি অথাধ ইংরেজ বণিক কর্তৃক নবাব বানানো হয়। মিরজাফরকে ক্ষমতায় বসালেও প্রকৃত ক্ষমতা ইংরেজদের হাতেই ছিল; ইংরেজরা দেওয়ানী –বিষয়াবলী অর্থাৎ খাজনা, আদায়, ভূমি রাজস্ব ইংরেজ প্রকৃত নির্ধারন ও আদায় করা হত। মিরজাফরকে শুধুমাত্র প্রশাসনিক প্রধান হিসাবে বিবেচনা করা হত। তথাপী তার কোন স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ছিলনা।ইংরেজদের হাতের সাজানো পুতুল হিসাবে তাকে রাখা হয়। পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার সাথে বিদ্রোহী আচরণ করা এবং বিশ্বাস ঘাতকতার মাধ্যমে তার ক্ষমতা কাঠামোর ভিত্তি তৈরী করলেও মূ্লতঃ তিনি ব্রিটিশ বেণিয়াদের দালাল ও ইতিহাসের অন্যতম জঘণ্য ঘৃণ্য ব্যক্তিতে পরিনত হন। তার লোভ ও লালসা যুদ্ধ ক্ষেত্র হতে তার অনুগত বাহিনীকে অস্রধারনে বিরত রাখে, রবার্ট ক্লাইভের সঙ্গে একটি গোপন চুক্তি এবং তার পুরো সৈন্যদলসহ আত্মসমর্পণ করতে দ্বিধা বোধ করেনি।
পলাশীর যুদ্ধ নিয়ে আবার নতুন করে কি লেখার আছে। অনেক ইতিহাসবিদ, সাহিত্যিক, নাট্যকার, বুদ্ধিজীবি, গবেষক অনেক লেখালেখি করেছেন; কিন্তু আমার কাছে এখনও এর অনেক তাৎপর্য বিদ্যমান; ২৩শে জুন ১৭৫৭ সাল ইতিহাসের এই ঘটনা –বার বার মনে করিয়ে দেয় ছলনা –বিশ্বাসঘাতকতার রুপ কেমনহতে পারে, পলাশীর আম্রকানন কৌতক করছিল;ভাগীরতী নদীর পানি প্রতিদিনের মত বয়ে চলছিল, মেঘেভরা ছিল আকাশ, ক্ষনিক বৃষ্টিও হয়েছিল।
যুদ্ধের পুর্বেই রবার্ট ক্লাইভ মীর জাফরের সাথে গোপন চুক্তি করে; এই চুক্তির ১২টি শর্তছিল; ( চলমান-
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:৪৭
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×