somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিরাজউদ্দৌলা থেকে শেখ মুজিবঃ ষড়যন্ত্রকারীদের ভাগ্য

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ৯:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৭৫৭ সালের ৩ জুলাই তারিখে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে যে বিশ্বাসঘাতক ক্ষমতালোভীর দল হত্যা করেছিল, তাদের পরিণতির ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিলে ১৯৭৫ সালের চক্রান্তকারীরা ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটাত না এবং নিজেরাও অনেকে পলাশীর বিশ্বাসঘাতকের পরিণতি বরণ করত না।
নবাব সিরাজের ঘাতকদের পরিণতিঃ
মীরজাফর নবাবী হারিয়ে কুষ্ঠরোগে ভুগে অত্যন্ত শোচনীয় অবস্থায় মারা যান।
তার ছেলে দুর্বৃত্ত মীরনের মৃত্যু হয় বজ্রপাতে।
মহারাজ নন্দকুমার একটি মামলায় অভিযুক্ত হয়ে ফাঁসির দড়িতে ঝুলে মারা যান।
জগৎশেঠ ও স্বরূপচাঁদকে গঙ্গাবক্ষে নৌকাডুবি ঘটিয়ে হত্যা করা হয়।
রায়দুর্লভ জেলে অর্ধাহারে ও অনাহারে মারা যান।
উমিচাঁদ (সিরাজের বাল্যবন্ধু) উন্মাদ অবস্থায় মুর্শিদাবাদের রাস্তায় ‘আমার ১৩ নম্বর ধারা কই’ বলে চিৎকার করতেন এবং সেই অবস্থাতেই রাস্তায় মারা যান।
কৃষ্ণচন্দ্র মুঙ্গের দুর্গে বন্দি অবস্থায় ছেলেসহ নিহত হন।
রাজা রামনারায়ণ, রাজবল্লভ ও ছেলে কৃষ্ণদাসকে গঙ্গাবক্ষে নিক্ষেপ করে হত্যা করা হয়।
ক্লাইভ বিলাতে ফিরে গিয়ে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ ও জালিয়াতির জন্য অভিযুক্ত হয়ে আত্মহত্যা করেন।
ওয়াটসনের মৃত্যু হয় কলকাতায় মহামারীতে।
স্ক্রাপটনের মৃত্যু হয় জাহাজডুবিতে।
ইয়ার লতিফ হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যান। তার মৃতদেহ আবি®কৃত হওয়ার পর দেখা যায় তাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে।
মীরজাফরের জামাই এবং তার পরবর্তী নবাব মীর কাশেম বক্সারের যুদ্ধে ইংরেজ-দের হাতে পরাজিত হন এবং দুই ছেলেমেয়ে গুল ও বাহারকে নিয়ে পালিয়ে যান। ইংরেজ সৈন্যদের গুলিতে গুল ও বাহার নিহত হওয়ার পর মীর কাশেম ভিক্ষুকের বেশে বিভিন্ন স্থাান ঘুরে বেড়ান। অতঃপর তার করুণ মৃত্যু ঘটে দিল্লির রাজপথে। তার মৃতদেহ বেওয়ারিশ অজ্ঞাতনামা লাশ হতে যাচ্ছিল, তখন একটা পুঁটলি থেকে তার ব্যবহৃত চাপকান পাওয়া যায় এবং তাতে জানা যায় , এই লাশটি মুর্শিদাবাদ থেকে পলাতব ভূতপূর্ব নবাব মীর কাশেমের।
ভগবানগোলায় ভন্ডপীর হিসেবে কুখ্যাত দানা শাহ (যিনি অভুক্ত সিরাজ পরিবারকে তার আস্তানায় আশ্রয় দিয়ে মীরজাফরকে গোপনে খবর পাঠিয়ে ধরিয়ে দিয়েছিলেন) বিষাক্ত সাপের কামড়ে মারা যান।
মুজিব হত্যায় জড়িতদের পরিণতি-ও এদের মতো। মানুষের আদালত থেকে মুক্তি পেলেও ইতিহাসের আদালত থেকে কেউ মুক্তি পায়নি।
প্রথমেই খোন্দকার মোশতাক আহমদের নাম বলতে হয়। মুজিব-হত্যার পর তিনি খুনি মেজর ও কর্নেলদের পাহারায় ‘নব্বই দিনের’ নবাব হয়েছিলেন। তিনি প্রথমে দুর্নীতির দায়ে জেলে যান। তারপর মুক্তিলাভের পর প্রাণের ভয়ে স্বগৃহে স্বেচ্ছাবন্দি হন। এই দুঃসহ নিঃসঙ্গ জীবন কাটান তিনি বহু বছর। বাড়ির দরজায় তালা ঝুলিয়ে তিনি তেতলায় কঠোর পাহারায় বাস করতেন। মুজিব-হত্যাকারী হিসেবে তার বিচার হতে পারে এই ভয়ে তিনি শেষ জীবনে বিলেতে পালিয়ে আসতে চেয়েছিলেন। পারেননি। মৃত্যুর পর ঢাকায় তার জানাজার নামাজ হয়নি। গ্রামের বাড়িতেও তার জানাজার নামাজে কেউ শরিক হতে চায়নি।
মীর কাশেমের চরিত্রের সংগে তুলনীয় চরিত্র জেনারেল জিয়াউর রহমানের।এই লক্ষ্মীটেরা সেনাপতির নিষ্ঠুরতার কোর তুলনা ছিল না। কর্নেল তাহেরের মত তার জীবন রক্ষাকারী মুক্তিযোদ্ধা বন্ধুকে পর্যন্ত তিনি বিচার প্রহসনে ফাঁসি দিয়েছেন। জিয়াউর রহমানের শোচনীয় মৃত্যু ঘটে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে তারই বিদ্রোহী সৈন্যদের গুলিতে। তাকে এক অজ্ঞাত স্থানে মাটিতে পুঁতে কবর দেওয়া হয়। সেই গলিত লাশ তুলে এনে পরে ঢাকায় কবর দেওয়া হয়। শোনা যায় এই লাশ ঠিক-
ভাবে শনাক্ত করা সম্ভভব হয়নি।
মুজিব-হত্যার ষড়যন্ত্রের আরেক হোতা বলে কথিত কুমিল্লা একাডেমির এককালের পরিচালক মাহবুবুল আলম চাষী। তিনি ছিলেন খোন্দকার মোশতাকের ডান হাত। মানুষের আদালতে দন্ড এড়াতে পারলেও তিনি ইতিহাসের দন্ড এড়াতে পারেননি। মক্কায় হজ্জ্ব করতে যাওয়ার পথে তার গাড়িতে গ্যাস লিক হতে শুরু করে এবং দরজা-জানালা বন্ধ সেই গাড়ি থেকে যথাসময়ে বেরুতে না পেরে তার নির্মম মৃত্যু ঘটে। তার শরীর পুড়ে প্রায় অঙ্গার হয়ে গিয়েছিল।
তাহেরউদ্দিন ঠাকুর ছিলেন বঙ্গবন্ধুর অন্যতম প্রিয় শিষ্য এবং তার বিশ্বাসভাজন মন্ত্রী। তিনি ষড়যন্ত্রে সজ্ঞানে হাত মেলাননি কিন্তু তলে তলে মোশতাকের গোপন বৈঠকে শরিক হতেন। তিনিও ইতিহাসের দন্ড এড়াতে পারেননি। নিঃসঙ্গ, পরিত্যক্ত মানুষ হিসেবে তিনি বেঁচে আছেন বটে; কিন্তু প্রতিভাশালী সাংবাদিক এবং উদীয়মান
রাজনৈতিক নেতা হিসেবে জনসমাদৃত প্রতিষ্ঠা লাভের কথা ছিল, তিনি আজ ধিক্কৃত।
বঙ্গবন্ধুর ভাড়াটিয়া ঘাতকদের মধ্যে কর্নেল ফারুকসহ অনেকেই জেলে। তাদের কেউ কেউ ফাঁসির আসামি। একজন ঘাতক মহিউদ্দিন আটলান্টিকের ওপারে বছরের পর বছর পালিয়ে থেকেও রক্ষা পায়নি। তাকে গ্রেফতার করে মার্কিন সরকার বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। আর যারা বিদেশে পালিয়ে আছে, তারা মানুষের সমাজে প্রকাশ্যে বের হতে পারছে না। পলাতক ঘৃণ্য জীবনযাপন করছে।
সিরাজ-হত্যার বিচার মানুষের আদালতে হয়নি। হয়েছে ইতিহাসের আদালতে। কঠোর। বঙ্গবন্ধুর ঘাতক এবং তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের কয়েকজনকে তো ইতোমধ্যেই ইতিহাস দন্ড দিয়েছে। তারা সিরাজ-হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের মত একই ভাগ্য বরণ করেছেন। বাকি যারা বেঁচে আছেন, কেউ কেউ বিচারাধীন এবং কেউ কেউ পলাতক। তারা মানুষের আদালতে সর্বোচ্চ শাস্তি এড়াতে পারলেও ইতিহাসের আদালতে তা এড়াতে পারবে বলে মনে হয় না। এখন শুধু অপেক্ষা করা এবং দেশদ্রোহী বিশ্বাসঘাতকদের শেষ পরিণতি দেখার জন্য ধৈর্য ধরা।

৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×