হারুন আল রশীদ
আবদুল মান্নান ভূঁইয়া ও এম শামসুল ইসলাম কখনো ভাবেননি, এক জীবনে তাদেরকে ফাটকে যেতে হবে। কিন্তু নিয়তির বিধান কি কেউ খণ্ডাতে পারে! শেষ পর্যন্ত তাদেরকে ফাটকে যেতেই হলো। শুনেছি গতরাতে জেলের সেলে তাদের ভালো ঘুম হয়নি। কারণ রাত জেগে তারা ছারপোকার চুমু, তেলাপোকার তড়পড়ানি, আর ইদুরের ইতরামির সঙ্গে অভ্যস্থ হওয়ার চেষ্টা করেছেন।
সিক্ত নয়নে মাথা নত করে ফাটকে ঢুকলেও মান্নান ভূঁইয়া এবং শামসুল ইসলামের পুরনো দুর্নীতিবাজ সতীর্থরা জেলের অভ্যন্তরে তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছেন। অভিনন্দন জানিয়েছেন আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করার জন্য। বিষয়টি সত্যও বটে। আক্ষরিক অর্থে রাজনীতিবিদ বলেই আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করতে পেরেছেন।
আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পন করায় আপাত দৃষ্টিতে মান্নান ভূঁইয়া-শামসুল ইসলাম লাভবানও হয়েছেন। কারণ সন্ধ্যের পরে পুলিশ গিয়ে গ্রেফতার করলে এক রাত ক্যান্টনমেন্টে কাটাতে হতো। সেক্ষেত্রে মুখে কিছু না জোটলেও কপালে এবং পশ্চৎদেশের জন্য নির্ঘাৎ অনেক কিছু বরাদ্দ থাকত।
সন্দেহ নেই, নিজামী একটু অতি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। সম্ভবত তার ধারনা ছিল সরকার তাকে গ্রেফতার করার মতো অতো বড় সাহস দেখাবে না। কিন্তু সরকার তাকে এক হাত দেখিয়েই ছাড়ল। রাত-দুপুরে পুলিশ গিয়ে তাকে ন্যাক্কারজনকভাবে গ্রেফতার করেছে।
অন্য দুই নেতার মতো আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করলে নিজামীকে ক্যান্টমেন্টেও রাত কাটাতে হতো না। কান্টনমেন্টে রাত কাটালে কপালে এবং পশ্চাৎদেশে কী যে জোটে সেটা আর বর্ণনা না করাই ভালো। আবার কিছুটা ধারণা না দিলেও নয়। ভুক্তভোগীদের কাছে শুনেছি, ক্যান্টনমেন্টে রাত কাটালেই পশ্চাৎদেশ দিয়ে নাকি হংস ডিম্ব, কিংবা উট পাখির ডিম্ব জাতীয় দ্রব্য প্রবেশ করানো হয়। ক্যান্টনমেন্টের এ জাতীয় অভ্যর্থনার ধরন সম্পর্কে নিজামীর পরিবারের লোকজনও নিশ্চয় কমবেশি ওয়াকিফহাল। এ অবস্থায় ঘরের অভিভাবককে নিয়ে বহুমুখী চিন্তা করে তাদের ঘুম নষ্ট হওয়াটাই স্বাভাবিক।
এম কে আনোয়ারের কথা ভেবে কষ্ট হচ্ছে পুরো জাতির জন্য। তার রাজনৈতিক শিস্টাচার বহির্ভূত আচরণে যে কেউই হতাশ হবেন। যত যা'ই হোক না কেন, তিনি একজন সাবেক আমলা। লে. জে. এরশাদের দুঃশনামলে তিনি ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে সচিব। তারপর রিপুর তাড়নায় এসে পড়লেন জাতীয়তাবদী ঘরানার রাজনীতিতে।
এই এম কে আনোয়ার কিনা আদালতে আত্মসমর্পন করলেন না। গ্রেফতারের জন্য পুলিশ রাতে তার বাসায় হানা দিয়েও ফুলিশ বনে গেছে। কারণ তিনি তিনি বিকেল থেকেই লাপাত্তা। শোনা গেছে, তিনি নাকি ডাক্তারের কাছে যাচ্ছেন বলে বিকেলেই বাসা ত্যাগ করেছেন। এ পর্যায়ের একজন আস্ত গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তি ডাক্তারের কাছে গিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেলেন। সত্যি বিষ্ময়কর। ভদ্রলোক রাস্তায় গাড়ি চাপা পড়ে মারা গেছেন, নাকি ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে মারা পড়লেন, এ নিয়ে রাষ্টেরও কোনো মাথাব্যাথা নেই। এ কেমন রাষ্ট?
আবার এমনও ভাবার অবকাশ নেই যে, এম কে আনোয়ার সন্ন্যাসে গিয়েছেন। কারণ ভগবান গৌতমবুদ্ধের সঙ্গে তার তুলনা করার মতো দৃষ্টতা কারোরই থাকা উচিত নয়। আসলে ভদ্রলোক যে শুধু শারীরিকভাবে হীনবল এমন নয়, নৈতিক মানদণ্ডেও তিনি যথেষ্ট দুর্বল। তিনি একাই নন, সব আমলার ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য। দুর্ভাগ্যজনক হলো এমন মেরুদণ্ডহীন ডজন ডজন সাবেক আমলঅকেই এদেশের মানুষ ভোট দিয়ে আইন প্রণয়নের জন্য সংসদে পাঠিয়েছিল।
আমার ধরনা এম কে আনোয়ারকে কুমিরেও খাবে না। কুমির অধ্যুষিত কঙ্গো নদীতে নিক্ষেপ করা হলে তিনি তার অঙ্গের কোনো রকম হানি না ঘটিয়েই সাতরে অন্য পারে গিয়ে উঠবেন। এ বিষয়ে আরেকটু বিস্তারিত বলি। কুমির অধ্যুষিত নদী কঙ্গো নদীতে সাঁতার কেটে এপার থেকে ওপারে গিয়ে উঠেছেন এমন নজির নেই। মাঝপথে কুমির সাতারুকে গিলে খাবে, এটাই স্বাভাবিক।
আরো বলতে হয়, স্বভাবজাত কারণে কুমির মেরুদণ্ডী প্রানী ছাড়া অন্য কোনো প্রাণীকে ভক্ষণ করে না। চেয়ালের দু'পাশের ধারালো দাঁত দিয়ে কামড় দেওয়ার পর মেরুদণ্ডের মটমট শব্দ শুনে সম্ভবত কুমির পুলক বোধ করে। অন্যদিকে মেরুদণ্ডহীন যত বিশাল প্রাণীই কমিরের পাশ দিয়ে যাক না কেন, তাতে তার বিন্দু মাত্র লোভ নেই।
সুতরাং আমাদের এম কে আনোয়ার যদি বঁচার জন্য কঙ্গো নদীতেও ঝাঁপ দেন, সন্দেহ নেই, তিনি সাঁতরে ওপারে গিয়ে উঠতে পারবেন অবলীলায়। কারণ মেরুদণ্ডহীন এমন একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিকে বিন্দুমাত্র বিরক্ত করার মতো নীতি বিরুদ্ধ কাজ কুমির করবে না। যদি তিনি নদীতে সত্যি মারা যান, সেখানেও কুরিকে কোনো দোষ দেওয়া যাবে না। ধরে নিতে শারীরিক অক্ষমতার কারণে তিনি নদীতে ঢুবে মরেছেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০০৮ রাত ৯:৪১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




