হাসিব বিন শহিদ, প্রাইমখবর
2012-09-01 সময় : 20:26:17
ঢাকা: চলতি মাসেই বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণা দেবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরী কমিশন (বিইআরসি) আর আজ থেকেই বিদ্যুতের নতুন দাম কার্যকর হবে। কমিশনের সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ ব্যাপারে বিইআরসি’র সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ প্রাইম খবরকে বলেন, ‘চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে অথবা সর্বোচ্চ ১০ তারিখের মধ্যেই বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়া হবে। এখানো মূল্য বৃদ্ধির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আর গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবটি আমাদের কাছে পেন্ডিং রয়েছে। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি সেপ্টেম্বরের মধ্যেই আমরা সুরাহা করবো।’
বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণা যাই আসুক ঘোষিত দর ১ সেপ্টেম্বর থেকেই কার্যকর করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, বিদ্যুতের ক্ষেত্রে নীতিগত সিদ্ধান্ত যেটা হয়েছে ৩টার পরিবর্তে ৬ থেকে ৭টি স্ল্যাব করা হবে। আগে ৪ টাকা ২৯ পয়সা থেকে সরাসরি ৭ টাকা ৮৯ পয়সার অনেক বড় একটি পার্থক্য ছিল। এ ধরণের জাম্প যাতে না থাকে এজন্য এক স্ল্যাব থেকে আরেক স্ল্যাবের পার্থক্য কম হবে। স্ল্যাবের সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে ৩শ’র ওপরে। এই অবস্থায় থাকলেও গ্রাহক কিছুটা স্বস্থি পাবে। আর যদি স্ল্যাবের সুবিধা পুন:বহাল করা হয় তাহলে বিল কমবে, রেট বাড়বে।
এর আগে ২৬ জুলাই বিকালে বিইআরসি’র কার্যালয়ে এ ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছিল। বিদ্যুতের কারিগরি মূল্যায়ন ও বিদ্যুতের দাম নিয়ে নতুন প্রস্তাব কমিশনে আসায় সব দিক বিবেচনা করে পরে এ বিষয়ে ঘোষণা দেওয়া হবে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন স্থগিত করে বিইআরসি।
সর্বশেষ গত ২৯ মার্চ বিদ্যুতের পাইকারি ও খুচরা মূল্য প্রতি ইউনিটে যথাক্রমে গড়ে ২৮ পয়সা ও ৩০ পয়সা করে বাড়ানো হয়। গত ১ মার্চ থেকে এই দাম কার্যকর করা হয়। সে অনুসারে বর্তমানে প্রতি ইউনিট পাইকারি বিদ্যুৎ বিক্রি হচ্ছে ৪ টাকা ২ পয়সায়। আর খুচরা গ্রাহকদের ১শ’ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটে ৩ টাকা ৫ পয়সা; ১শ’ থেকে ৪শ’ ইউনিট ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইউনিট প্রতি ৪ টাকা ২৯ পয়সা এবং ৪শ’ ইউনিটের বেশি ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটে ৭ টাকা ৮৯ পয়সা হারে দাম দিতে হচ্ছে।
ভর্তুকি কমাতে পাইকারি বিদ্যুতের দাম গড়ে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর জন্য গত জুন মাসের শেষের দিকে বিইআরসি’তে প্রস্তাব দেয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এ প্রস্তাব মূল্যায়ন করে বিইআরসি’র স্টাফ কমিটি গত ১৬ জুলাই জানায়, পাইকারি বিদ্যুতের দাম ২১ দশমিক ৮৯ শতাংশ বা প্রতি ইউনিটে ৮৮ পয়সা বাড়ানো হলে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমে আসবে।
এছাড়া গ্যাসের ক্ষেত্রে আবাসিক ছাড়া অন্যান্য আট খাতে গড়ে ৩৪ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করর্পোরেশন (পেট্রোবাংলা)। প্রস্তাবে পেট্রোবাংলা শিল্প-কারখানায় ক্যাপটিভ পাওয়ারে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম একশ’ ভাগ; রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি) দাম প্রতি ঘনমিটারে ১০ টাকা; ক্যাপটিভ পাওয়ারের বর্তমান দর ৪ টাকা ১৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে প্রতি ঘনমিটার ৯ টাকা ৮৯ পয়সা করার প্রস্তাব করেছে। শিল্প-কারখানায় বর্তমান দর প্রতি ঘনমিটার ৫ টাকা ৮৬ পয়সা থেকে ১ টাকা ৯১ পয়সা বাড়িয়ে ৭ টাকা ৭৭ পয়সা; সিএনজি গ্যাস ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা; সার কারখানায় ২ টাকা ৫৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২ টাকা ৮৩ পয়সা; বিদ্যুৎ উৎপাদনে ২ টাকা ৮২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২ টাকা ৯৭ পয়সা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বণিজ্যিক খাতে সরবরাহকৃত গ্যাসের বর্তমান মূল্য ৯ টাকা ৪৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকা ৩৬ পয়সা, চা-বাগানে ব্যবহৃত গ্যাস ৬ টাকা ৮২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৭ টাকা ৬ পয়সা করার প্রস্তাব দিয়েছে পেট্রোবাংলা।
উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০০৯ সালে বিইআরসি সব ধরণের গ্যাসের মূল্য ১১ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়িয়েছিল। এছাড়া গত বছরে দু’দফায় সিএনজির দাম বাড়িয়ে প্রতি ঘনমিটারে ৩০ টাকা করা হয়।