somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আবুল হাসনাত বাঁধন
আবুল হাসনাত বাঁধন। জন্ম-২২ শে সেপ্টেম্বর, ১৯৯৭। লেখালেখির শুরুটা ক্লাস সেভেনে। মূলত ছোটগল্প আর কবিতাই লিখি। বেশ কয়েকটা গল্প সংকলন, কাব্য সংকলন ও সাহিত্য পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে আমার গল্প আর কবিতা। সাহিত্যের মাঝেই আটপৌরে বেঁচে থাকা আমার!

অগল্প আগল্প ইগল্প

০১ লা নভেম্বর, ২০১৯ রাত ২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘হাতটা ব্যথা করছে খুব। গতরাতে হয়তো অনুভূতিশূন্য ছিলাম। বিকেলে ওজু করার সময় পানি লাগায় প্রচণ্ড যন্ত্রণা হচ্ছে। অনেক দিন পর ফুলহাতা শার্ট পড়েছি যাতে আম্মার চোখে না পড়ে। পরিবার কিংবা সমাজের প্রশ্নবোধক দৃষ্টিগুলো আসলে খুবই মারাত্মক। শরীরের ভেতরের মানুষটাকে কতটা ছিন্নভিন্ন করে দেয় তা ওপারের উনিও জানেন কিনা সন্দেহ!

সন্ধ্যার পর আজ আকাশে চাঁদ ওঠেনি। আজ কি কৃষ্ণপক্ষ? জেনে লাভ নেই। কীই বা আসে যায়! এখন তো আর কেউ জোছনা কুড়োয় না। মসজিদের পাশের ডাস্টবিনটায় এক ঝাঁক মাছি ভনভন করছে। ইঁদুর মরেছে একটা। ইঁদুরের দুরন্ত জীবনচক্র বেশ লাগে আমার। ছোটবেলায় ভাবতাম, আমি যদি মানুষ না হয়ে ইঁদুর হতাম কিংবা ফড়িং! আমার নানি ইঁদুরের কল দিয়ে ইঁদুর মারতেন। আমি মনে মনে বলতাম, আমি ইঁদুর হলেও এতটা বোকা হতাম না কখনো, যে ছোট্ট একটা বিস্কিটের লোভে মারা পড়তে যাব। কিংবা ফড়িং হলে কখনো মাঠে নেমে আসতাম না। আকাশেই থেকে যেতাম, যাতে দুষ্টু ছেলেরা আমাকে ধরে ফেলতে না পারে।

ছোটবেলায় কত চালাক ছিলাম আমি! কেউ কখনো আমাকে ঠকাতে পারেনি। আর এখন? দিন দিন বড্ড বোকা হয়ে যাচ্ছি! আজকাল ইনিয়ে বিনিয়ে নিজেকে ঠকাচ্ছি নিজেই। আগের চেয়ে কত বদলে গেছি আমি! এই আমিই অন্যের মনে অনুপ্রেরণা জোগাতে জোগাতে হয়রান হয়ে যেতাম। অথচ আজ, নিজের বেলায় শূন্য। চারদিকে শুধুই অসীম শূন্যতা!

উঁচু উঁচু দালানের কারণে চাঁদের আলো আসতে না পারলেও, মাঝরাত্তিরে জানালার পর্দা গলে রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের আলো ঠিকই আসে আমার অন্ধকার রুমে। পুরোনো ইন্সোম্নিয়াক আমি। বিছানায় উঠে বসি। আম্মার তিরস্কার, বাকিদের কথার ছুরি, সব গিজগিজ করে আমার মাথায়। খেয়াল করি, একঝাঁক অদ্ভুত পোকা এসে আমার চারপাশ ঘিরে ধরেছে, সম্মিলিত শব্দকম্পন সৃষ্টি করছে। আমি চোখ বন্ধ করে কান পাতি। ‘লুজার! লুজার!’ ক্ষীণ তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের শব্দ আঘাত করে আমার কানের পর্দায়, মস্তিস্কের গহ্বরে। তখন আমার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে, ‘আমি পরাজিত নই! আমি পরাজিত নই!’

তারপর একরাতে আমি হেরে যাই না। ভার্সিটিতে চান্স পাইনি বলে আমার জীবন শেষ তো হয়ে যায়নি। এইতো আমি বেঁচে আছি বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে। নতুন একটা ভোর হয়তো শুধু আমার জন্যেই হবে। স্নিগ্ধ সকাল, পাখির গান, আকাশের শুভ্র নীরদ, এক ফালি প্রাচীন রোদ; এসবই তো আমার হবে। মরে গিয়ে কী হবে? আমি তো চেয়েছিলাম কবিতার নায়ক হতে। চেয়েছি ভাঙা জোছনায় নীরব স্নান। আমি নীরেন্দ্রনাথের ‘অমলকান্তি’ হতে চেয়েছিলাম। রোদ্দুর হতে না পারলেও আমি ফেরিওয়ালা হতাম। আমায় মুগ্ধ করেছিল টুংটাং সুর, ফেরিওয়ালার তীব্র গলা। বেলুন বিক্রেতার ঝোলাটার প্রতি আমার ভীষণ লোভ ছিল। আমি স্বপ্নে দেখতাম, বেলুন বিক্রেতা হয়ে গ্যাস বেলুনে চড়ে উড়ে যাচ্ছি অনেক দূরে। আমি এক আকাশ মুক্ত পৃথিবী চেয়েছিলাম, অমলকান্তি হতে চেয়েছিলাম।

আমি ভার্সিটি পড়ুয়া মেকি নায়ক কিংবা শৃঙ্খলে আবদ্ধ মানুষ হওয়ার মিথ্যে স্বপ্নে বিভোর হয়ে সুন্দর পৃথিবীকে ফাঁকি দিতে চেয়েছি, দিইনি। এটা ঠিক, ভার্সিটিতে পড়া মানে নিশ্চিত ভবিষ্যৎ, ভালো চাকরি, সুন্দরী বউ। কিন্তু আসলেই কি ওরা সবাই সুখী হতে পারে? কখনোই না! সুখ আপেক্ষিক জিনিস, মনের ভেতরের জিনিস। পৃথিবীর বাহ্যিক জিনিস দিয়ে কখনো সুখী হওয়া যায় না। প্রকৃত সুখ আত্মসন্তুষ্টিতে নিহিত। আমি আত্মতৃপ্তি নিয়ে, আমিত্ব নিয়ে বেঁচে থাকতে পারছি কিনা সেটাই আসল!

আমি আজকাল বাঁচার মতোই বেঁচে থাকি। নিজেকে নিয়ে খুব সুখী আমি। প্রতিদিন বেশ ভালো থাকি কারও ফিরে আসার দীর্ঘতম অপেক্ষায়…!’


ইফাদ ভাইয়ের পুরোনো ডাইরি পড়ছিলাম। এখন আমি যতটা ফ্রাস্টেশনে আছি, ভাইয়াও ততটা ছিলেন। মরে যেতে চেয়েও মরেননি অনেক বার। অথচ, সে এখন জাবিতে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়াশোনা করছেন ২য় বর্ষে!

‘অগল্প আগল্প ইগল্প’ | © আবুল হাসনাত বাঁধন
(১৮/১১/২০১৬)
চট্টগ্রাম।

প্রথম প্রকাশ: গল্পীয়ান
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১৯ রাত ২:২৭
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড্রাকুলা

লিখেছেন সুদীপ কুমার, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১২

কোন একদিন তাদের মুখোশ খুলে যায়
বেরিয়ে আসে দানবীয় কপোট মুখায়ব।

অতীতে তারা ছিল আমাদের স্বপ্ন পুরুষ
তাদের দেশ ছিল স্বপ্নের দেশ।
তাদেরকে দেখলেই আমরা ভক্তিতে নুয়ে পড়তাম
ঠিক যেন তাদের চাকর,
অবশ্য আমাদের মেরুদন্ড তখনও... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×