সময়ের ক্যারিকেচার হাতঘড়িটা পকেটে নিয়ে,
ধুয়াশা আর দুর্গন্ধের শহরে
ক্লান্ত পায়ে হেঁটে ফেরা হয় অবিরত...............
যদিও সময়ের সাথে আমার কোনও বোঝাপড়া নেই,
না আছে নির্ঘুম শহরের সাথে............
কেনন প্রতিনিয়ত ভুলের সাথেই সখ্যতা করি আমি ।
বাঁচতে হবে বলেই বেঁচে থাকার স্বপ্নে বিভোর একাকী স্বপ্নচারী ।
জোছনাহীন নিকষ রাত্রি, যে কিনা নিজেই নিজের কাছে ধর্ষিত !
সামনে খোলা পথ ; অজস্র বিজলী বাতি চাঁদ সাঁজতে ব্যস্ত ,
পতিতাদের দালাল , ঘর্মাক্ত রিকশাওয়ালা, খেপ না পাওয়া রমণী,
আয়হীন পকেটমার কিংবা শুঁটকির ব্যবসায়ী ;
সবাই তন্দ্রাদেবীর কাছে উপগত..................
গাঁজা কোমরে নিয়ে ছুটে ফেরা উদ্যত রমণীর কর্কশ আহ্ববান
“ মামা, মাল লাগব নাকি ?”
এবং নিকটেই ঝিলমিলে পোশাক পরা , চেহারায় চাপা ব্যাথার
ছাপওয়ালা তরুণীর ক্ষীণকণ্ঠে উচ্চারণ “ মামা, আমারে নিয়া যান” ।
কোথায় ? কখন ? কেন ? কিভাবে ? কোন জিজ্ঞাসা নেই; শুধুই আর্তি ।
জীবনের ন্যূনতম প্রয়োজন মেটানোর জন্যেই
আত্মসম্মান বেচে দিয়ে জোটে এদের মূলধন ।
তারপরও হাঁটি আমি..................... রাত বিরেতে......
অন্ধকার আর ধুয়াশার শহরে......... একলা ......
অতপর........................বামে ইউটার্ন...........................
(ভবিষ্যতের মত) অন্ধকার গলিতে অনুপ্রবেশ............
ডাস্টবিনের সুবাসিত হাওয়া...; পায়ের নিচে চেনা অচেনা অজস্র বস্তু ;
পরিত্যক্ত পলিথিন,ব্রাশ,বাচ্চার জুতা,খাবারের উচ্ছিষ্ট, মাছের কাটা,
কাগজ,ন্যাপকিন,টিস্যু,ওষুধের ক্যাপ,চুপসে যাওয়া কনডমসহ
হাজার গৃহস্থলি নীরবে সন্নিবেশিত .................................
আমি এগিয়ে যাই , .........অদ্ভুত শহর; অন্ধকার নিষিদ্ধ গলিতেও কিছু লোকের পসরা
স্তিমিত সোডিয়ামের আলোয়, হলুদ দাঁত আর চকচকে ছুড়িই
বলে দেয়, ওরা কত ক্ষুধার্ত , হিংস্র.....................।
বেঁটে মতন একজন এগিয়ে আসে , চোখে চোখ রেখে
বলে, “ ভাইজান, যা আছে বের করেন.......................”
আমি ভয় পেতে ভুলে যাই,লজ্জিত হই; কেননা
বের করার মত কিছুই নেই......................................................
তবু অনেক আশা নিয়ে পকেটে হাত ঢুকাই......।।
আছে... আছে... পকেট আমার বহু বছর আগে বিগত প্রেমিকার
দেওয়া বেলি ফুল আছে;
শুকনো, গন্ধহীন, নির্জীব এবং অর্থহীন......... তথাপিও দুর্গন্ধময় গলির
বঞ্চিত কুকুরের প্রতি করুনাবসত বের করি শুকনো বেলির মালা ;
কেঁপে ওঠে শহর, শিউরে উঠে তারা , ভয়ে পালায় ......।
( ভালোবাসায় ওদের তীব্র এলার্জি..............................)
নিওনিক জোছনায় শুস্ক বেলি সৃষ্টি করে এক বিভ্রান্ত অরোরা ।
শহরের সবগুলো ডাস্টবিনের নিজস্ব কুকুরগুলো ডেকে উঠে ।
টহলদার পুলিশ আর দারোয়ানেরা শুকর হবার স্বপ্ন দেখে............
জোনাকিগুলো বিদ্রোহ ঘোষণা করে দ্বায়হীন লোডশেডিংয়ের বিরুদ্ধে...
কবিতা লেখার দায়ে ফাঁসি হয়ে যায় কিছু নবীণ গল্পকারের...
আর পরিত্যাক্ত গলির নেংটি ইঁদুরগুলো সমশ্বরে ধিক্কার দেয় ,
“ ফাক ইউ, ম্যান” .................................।
আমি হেঁটে চলি এগিয়ে যাওয়ার ভান করে............
সামনে আমার ফাঁসির মঞ্চ তৈরি হয়... রাত বিরেতে হাঁটার অপরাধে......।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৮