গল্পটা কয়েক বছর আগের একটা ঘটনার প্রেক্ষিটে লেখা ; কবিতাংশটি চতুর্মাত্রিকের “বর্ষার মেঘমালা” ভাইয়ের কাছ থেকে ধাঁর করা । ভাইয়ের কবিতা আমার অত্যাধিক পছন্দের তাই ব্যবহার করে ফেলেছি !!
মেয়েটির বয়স ১৮ এর কাছাকাছি । হয়তো কেউ না জানলে ভাববে ২৪-২৫ বা তারও বেশী । বিশেষ কোন শারীরিক আকার নয় , বরং তার মুখে দুঃখ আর বেদনার ছাপ এত সুস্পষ্ট যে তা তার বয়সকে বাড়িয়ে দিয়েছে ।
এখন প্রশ্ন হল , মেয়েটি কি জন্ম থেকেই এরকম বয়সের চেয়ে কয়েক বছর এগিয়ে ? উত্তরঃ না” । মাত্র
কয়েক বছর আগেও যখন তার বয়স ছিল ১৭ তখন এক উচ্ছ্বল , উদ্যমী আর সদা হাস্যময়ী তরুনী
হিসাবে তাকেই সব্বাই চিনত । বন্ধুদের সাথে কথায় কথায় হাসি , দিনভর দুরন্তপনা , লাফালাফি ,
নাচানাচি কি নেই যা সে করেনি !!
তাহলে কি ঘটল এই এক বছরে যা তার স্বভাব , চেহারা এমনকি প্রকৃতিকেও এমনভাবে পালটে দিল ?
কারন টা আম জানি , হয়তো তোমরাও জান । সবাই জানে এ পাড়ায় ।
কত মানুষ কারনটা শুনে দৌড়ে আসে দেখতে । জিজ্ঞেস করে কখন হল ? কিভাবে ? কতজন ?কোন পথে ? খুব কি
লেগেছিল ? এখনো কি ব্যাথা আছে ? সে মরেনি কেন ?
অধিকাংশ সময়ই সে উত্তর দেয় না । কেননা তার কান্না পায় । সে গোপনে কাঁদে । ........................কিভাবে চারপাশের মানুষগুলো হটাত করেই অপরিচিত হয়ে যায় , সহমর্মী হয়ে উঠে ; কিছু মানুষ হয়ে যায় চিরদিনের জন্য অচেনা ................
সে কাঁদে ........................
একাদশীর চাঁদ যখন পশ্চিমাকাশে নিজস্ব একাকীত্ব ঘোষনা করে অদ্ভুত হাহাকার ছড়িয়ে দেয় পৃথিবীর বুকে তখন সে কাঁদে ।
তার কান্নার শব্দ হয়তো শুনতে পায় রাতজাগা কোন হুতোম পেঁচা; মুরগীর লোভে আসা আশাহত বন বিড়াল; অন্ধকারে কোন্সভরা চোখে ছুটে ফেরা কোন নিশাচর অথবা আমার মত জ্যোৎস্নাপ্রেমী গৃহত্যাগী যুবকেরা ।
এক অদ্ভুত অসুখ সে ধারন করে নিজের মধ্যে । আমি মাঝে মাঝে তার কাছে যাই , তার বাম হাতে হাত রেখে নিরবে বসে থাকি । কান্না পেলে নিজেও কাঁদি । কিছুটা সময়ের জন্য হলেও ওর কষ্টগুলো নিজের মাঝে শুষে নেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করি ।
তারপর যখন সন্ধ্যা নামে। চিরায়ত পরাজিত বীরের মত আমি ফিরি তার কাছ থেকে ; হলুদাভ গোধুলিতে বিষণ্ণ মুসাফিরের মত নীড় খুজে ফিরি ।
আমার কিছু করার নেই । কারোরই কিছু করার নেই ; কেননা সময় কখনও উল্টা পথে হাঁটে না আমরাই শুধু উল্টা পথে হাঁটি ।
“ গভীর অন্ধকারগুলো আমরা নিজেরাই সৃষ্টি করি ,
তারপর যখন ডুবে যেতে থাকি সেই সব আঁধারে ;
সামান্য আলোর জন্য আমাদের সেকি আর্তনাদ ।”
প্রায় ৯ মাস আগে আমার প্রিয় বান্ধবীটি হারিয়েছে ওর সব । মা-বাবা , ছোট ভাই , খালামনি সবাইকে ।
ফরিদপুর-গোপালগঞ্জ মহাসড়কে ওদের মাইক্রোবাস আর এক যাত্রীবাহী বাসের মুখমুখি সংঘর্ষে মাইক্রোবাস খাদে পড়ে যায় । ও আর ড্রাইভার বাদে সবাই মারা যায় ।
ও গুরুতর আঘাত পায় ওর শরীরের বাম দিকটায় । ধ্বংস হয়ে যায় পুরো বাম পাশের নার্ভাস সিস্টেম ।
ও কেন বেঁচে আছে আমরা জানি না । জানতেও চাই না ।
কেননা পৃথিবীতে সবগুলো প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় না ।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫