ইদানিং অদ্ভুত সব স্বপ্ন দেখি, গভীর পানিতে ডুবে যাচ্ছি আমি ... খুব শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।
এরই মধ্যে কোত্থেক্কে পুফি 'মিয়াও' করে ডেকে উঠে। মনে হতে থাকে মানিক মিয়া এভিনিউ এ আমি দাঁড়িয়ে আছি। হিমুভাই আর বাদল ব্যস্ত হয়ে আমাকে সিএনজিতে তুলছে। আমি খুবই অসুস্থ।
কোন এক হাসপাতালে আমি শুয়ে, হিমুভাই আমার মুখের উপর ঝুকে আছে, তার পাশে বাদল ; আর পিছনে তিতলী, রানু,জলিল সাহেব,জগলু,মৃণ্ময়ী,তিথী,শুভ্র,আসাদ,মজিদ,সুধাকান্ত,ছোট খালা আরো অনেকে কৌতুহলী চোখে তাকিয়ে আছে।
আমি হিমুভাইকে বলি 'হিমুভাই, আমিতো মারা যাচ্ছি! '
সে আমার হাত-পা টিপে টুপে দেখে গম্ভীরমুখে বলে,'হুম,কথা সত্য।'
আমি বলি,'ভাই আমি তো এত তাড়াতাড়ি মরতে চাচ্ছিলাম না, ভাবসিলাম একটা বিয়ে করব, ঢাকাইয়া শাড়ী পড়া টানা টানা চোখের এক মেয়েকে, লম্বা ঘোমটা টেনে সে সারা ঘরময় ঘুরে বেড়াবে। আমি মেট্রো রেলে পেপার বিক্রি করব, সে গার্মেন্টস এ কাজ করবে ; আমরা পুফিকে দত্তক নিব। ভাই, আমার বিয়ের কি হবে ?
হিমুভাই, 'চুপ কর গাধা! '
আমি চুপ করি।
হিমুভাই বলতে থাকেন, "শোন, এক নতুন পীরের খোজ পেয়েছি ; গোপিবাগ এরিয়ায়। ছাগলা পীর, আগে হিন্দু ছিল, মুসলমান হইসে ; খুবই জাগ্রত। সারাদিন শুধু ছাগল নিয়ে থাকেন ; পুরো দরবার জুড়ে ছাগলের গন্ধ। পীরের পায়ে ধরে কান্নাকাটি করলে যদি শুধু একবার ছাগলের মত 'ভ্যা' বলে তো কেল্লা ফতে।
রোগব্যাধি ন্যাংটো হয়ে পালাবে ।
আমি বলি, 'হিমুভাই আমার তো গন্ধে এলার্জি। সহ্য করতে পারি না। মাথা ঘোরে ।'
ভাই বল্ল ' চাপ নিস না, রুপাকে বলছি, ও তোর জন্য পারফিউম নিয়ে আসবে। পারফিউম নাকে লাগিয়ে গোপিবাগ যাব।'
এই বলে আমার বালিশের নীচে রাখা কটন বাড দিয়ে কান পরিস্কার করা শুরু করে, একটার পর একটা। আমি মারা যাচ্ছি, মন খারাপ করা বা বাসার মানুষগুলোর কথা ভাবা উচিত। কিন্তু আমার মাথায় শুধু একটাই ব্যাপার ঘোরে কটন বাডগুলা হিমুভাই শেষ করে ফেলবে নাতো!
নিরবতা ভেঙে জিজ্ঞেস করি, 'ভাই, মরব কখন, সময় ইট্টু আগেভাগে জানা যাবে ? আর আমার কান্নাকাটি করা উচিত? সবাই কখন কান্নাকাটি শুরু করবে? সিস্টেমটা কি ?
হিমুভাই কিছু বলার আগেই ছোটখালা ভীড়ের মধ্য থেকে চেঁচিয়ে উঠে, 'এই হারামজাদা এত বকবক করে কেন? ওরে একটা থাপ্পর লাগা।'
বাদল নির্বিকারে আমাকে থাপ্পর লাগায়।
একটু বাদে ওয়ার্ডের দরজা দিয়ে দেখা যায় রুপা আসছে, লালপেড়ে সাদা শাড়ী পরা অপূর্ব তরুনী।
হিমুভাইকে জিজ্ঞেস করি, 'ভাই, আপনার কি রুপা আপুকে বিয়ে করার কোন প্লান আছে? '
ভাই বলল, 'ধুর গাধা, বিয়ে তো আমি করবই না। আর তাছাড়া রুপার বয়ফ্রেন্ড আছে, একটা না। বেশ কয়েকটা। তাদের মধ্যে একজন ছাত্রলীগ লিডার, আমাকে তো ধরে নুনু কেটে দিচ্ছিল একবার। মহাপুরুষ হওয়ার আগে পুরুষ হওয়ার ক্রাইটেরিয়া হারালে বাবা খুব হতাশ হতেন।তাই এগুলা বাদ দিসি। '
রুপার হাতে ভিক্টোরিয়া সিক্রেট এর পারফিউম, লেডিস । ভাই বলছে মৃত্যুপথযাত্রীর বিশেষ কোন লিঙ থাকে না, আমি আলগোছে চেক করে দেখসি। আমারটা আছে ! তবুও ভাইয়ের কথা মিথ্যে হতে পারে না।
ব্যবহার করা কটন বাড এ পারফিউম লাগিয়ে আমার নাকে ডলে দেওয়া হচ্ছে। আমি অস্বস্তি বোধ করছি। দুহাত দিয়ে মোছার চেষ্টা করছি অধিভৌতিক সে গন্ধ। কিছুতেই যায় না।
হঠাত ঘুম ভেঙে গেল, ঘেমে একাকার হয়ে গেছি। খুব তেষ্টা পেয়েছে। পানির গ্লাসটা টেবিলের উপর। গ্লাসটা ধরার জন্য হাত বাড়াই।
তারপর......
তারপর....পোর্থহোল দিয়ে অনধিকার প্রবেশ করা হালকা চাঁদের আলোয় আবিষ্কার করি আমার হাত নেই ;শুধু সারা ঘর জুড়ে ছড়িয়ে আছে সবুজাভ তরল!
Ps: Sincere apology to the mighty creator of those characters I Dreamt of.
পূর্বে ফেসবুকে প্রকাশিত
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:৪১