somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তোমার দেহে বাস করে কারা, ও মন জানোনা; তোমার দেহে বসত করে কয়জনা?

১৭ ই জুন, ২০০৯ সকাল ৮:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"ধারণা করা যেতে পারে, আমাদের দেহের একটা উল্লেখযোগ্য পরিমান পরমাণু, প্রায় ১০০ কোটির মত, শেক্সপিয়ারের দেহ থেকে এসেছে। আরও ১০০ কোটি এসেছে বুদ্ধ, বেটোফেন, যিশূ, মুসা, চেঙ্গিস খান, ........ বা অন্য যেকোন ঐতিহাসিক ব্যক্তির নাম আপনি মনে করতে চান তাদের দেহ থেকে। "

বিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী রিচার্ড ফাইনম্যান (Richard Feynman) একবার বলেছিলেন যদি বিজ্ঞানের ইতিহাসকে একটি ছোট্ট অথচ গুরুত্ত্ব পূর্ন বাক্যে প্রকাশ করতে হয় তবে সেটা হবে, "All things are made of atom". জগতের সব কিছুই পরমাণু দ্বারা গঠিত। আমাদের চারপাশে যেখানেই তাকাই না কেন পরমাণুরা বিদ্যমান। শুধু মাত্র কঠিন জিনিষ যেমন দেয়াল, টেবিল, চেয়ারই না বরং মাঝখানের ফাঁকা জায়গার বাতাসও পরমানু দিয়ে গঠিত। আর পরামণুর সংখ্যাটা এতই বেশি যে সেটা আমাদের কল্পনাকেও হার মানাবে।পরমাণু গুলো খুবই ছোট। ৫ লাখ পরমাণুকে যদি কাধে কাধ মিলিয়ে পাশাপাশি রাখা যায় তবে সেগুলোকে মানুষের একটি চুলের পেছনে লুকিয়ে রাখা যাবে।

পরমাণুরা সাধারনত আলাদা থাকতে পারে না, দুই বা ততধিক পরমানু মিলে গঠন করে একটি অনু। রসায়নবিদরা সাধারণত পরমানুর বদলে অনুর হিসাবে সবকিছু প্রকাশ করে থাকেন যেমনটি লেখকেরা করেন অক্ষরের পরিবর্তে শব্দের দ্বারা। সমুদ্র উচ্চতায় শূণ্য ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এক বর্গ সেমি বাতাসে (লুডু খেলার একটা ছক্কার সমান) প্রায় ৪৫০০০ কোটি অনু থাকে। আর এই সংখ্যাটা আমাদের চারপাশের প্রতিটি এক বর্গ সেমি জায়গাতেই বিদ্যমান। সংক্ষেপে বলা যায় পরমাণুর সংখ্যা প্রচুর এবং বিস্ময়করভাবে পরমানুর স্হায়ীত্বকালও অনেক সুদীর্ঘ।

মানব দেহের এক গ্রাম টিস্যুতে প্রায় ১০০ কোটি কোষ থাকে। আর তার মানে একজন মানুষের ওজন যদি ৭০ কেজি হয় তবে তার দেহে প্রায় ৭০ ট্রিলিয়ন কোষ আছে। দেহের বিভিন্ন ধরেনের কোষের স্হায়ীত্বকাল বিভিন্ন হয়ে থাকে। কোন কোন কোষ বেঁচে থাকে কয়েক ঘন্টা আবার কোন কোন কোষ বেঁচে থাকে কয়েক বছর। সাধারণতঃ গড়ে আমাদের দেহের সবগুলো কোষ প্রতিস্হাপিত হয় প্রত্যেক সাত বছরে। তার মানে প্রতি বছর প্রতিস্হাপিত হয় ১০ ট্রিলিয়ন কোষ। প্রতিদিন প্রতিস্হাপিত হয় ২৭ বিলিয়ন (২৭০০ কোটি) কোষ। আর প্রতি মিনিটে প্রতিস্হাপিত হয় ১৮.৭৫ মিলিয়ন (১ কোটি ৮৭ লাখ) কোষ। আর আমাদের দেহের প্রতিটা কোষ গড়ে ৭*১০^১৫ বা ৭০০০ বিলিয়ন পরমাণু (৭ লক্ষ কোটি) পরমানু দ্বারা গঠিত।

মৃত্যুর পরে আমাদের দেহের অনু-পরমাণু গুলো প্রতিনিয়ত রিসাইকেল(ড) হয়ে থাকে এবং রিসাইকেলড হওয়ার পরে সেগুলো পৃথিবী, সৌরজগৎ, এবং মহাবিশ্বে ছড়িয়ে পরে। সে কারণে বলা যায় যে এই পরমানুগুলো এমন কোন জায়গা নেই যেখানে ভ্রমণ করেনি। আমাদের দেহ এই মূহুর্তে যে পরমাণু গুলো দিয়ে তৈরী সে গুলো আমাদের নিজস্ব হয়ে ওঠার আগে হ্য়ত অসংখ্য নক্ষত্র ভ্রমন করে এসেছে বা কোন এক সময় লক্ষ লক্ষ জীব বা প্রাণীর দেহ গঠনে সহায়ক ছিলো।

আমরা যখন মারা যাই তখন আমাদের দেহের পরমাণুগুলো আলাদা হয়ে ছড়িয়ে পরে এবং অন্য কোথাও খুঁজে নেয় তাদের প্রয়োজনীয়তা। হয়ত হয়ে ওঠে একটা পাতার অংশ, একটা শিশির বিন্দু, অথবা অন্য কোন মানুষের দেহ। পরমাণুদের এই পথ চলা চিরকালিন। কেউ সঠিক ভাবে বলতে পারবে না একটা পরমাণু কতদিন টিকে থাকে। বিজ্ঞানী মার্টিন রিসের মতে সম্ভবত ১০^৩৫ বছর। সংখ্যাটা এতই বিশাল সেটা আর একলাইনে লিখে প্রকাশ করলাম না।

ধারণা করা যেতে পারে, আমাদের দেহের একটা উল্লেখযোগ্য পরিমান পরমাণু, প্রায় ১০০ কোটির মত, শেক্সপিয়ারের দেহ থেকে এসেছে। আরও ১০০ কোটি এসেছে বুদ্ধ, বেটোফেন, যিশূ, মুসা, চেঙ্গিস খান, মুহাম্মদ বা অন্য যেকোন ঐতিহাসিক ব্যক্তির নাম আপনি মনে করতে চান তাদের দেহ থেকে। কিন্তু তাদেরকে অবশ্যই ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব হতে হবে কারণ পরমাণুগুলো রিসাইকেলড হতে অনেকগুলি দশকের প্রয়োজন হয়। তাই বলা যায় আইনস্টাইন, এলভিস প্রেসলি, বা শেখ মুজিবর রহমানের দেহের পরমাণু গুলো এখনও আমাদের দেহের অংশ হয়ে ওঠেনি।

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০০৯ সকাল ৮:২৩
২৯টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×