somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রোহিঙ্গা মুসলমানদের ইতিহাস এবং মিয়ানমারের আরাকানে মুসলিম নির্যাতনের অজানা কাহিনী (৫)

৩০ শে জুন, ২০১২ রাত ১০:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বিপন্ন আরাকানের রোহিঙ্গা মুসলমান

মিয়ানমারের আরাকান প্রদেশে রাখাইন-মুসলিম ভয়াবহ দাঙ্গার রেশ এখনও কেটে উঠছে না। রাখাইন বৌদ্ধদের দেয়া আগুনের লেলিহানে দাউ দাউ করে জ্বলছে মুসলমানদের বাড়িঘর, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা। দিন দিন নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। মিয়ানমারের রাখাইন বৌদ্ধদের নির্যাতন, নাসাকা বাহিনী ও সামরিক জান্তার অমানবিক জুলুমের শিকার রোহিঙ্গা মুসলিমরা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে আর্তনাদ ও আহাজারির পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। ভুক্তভোগী মুসলমানদের জীবন কাটছে মানবেতর।

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সর্বোচ্চ নজরদারিতে রয়েছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি)। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশঙ্কায় সেন্টমার্টিন থেকে উখিয়ার মনখালীর ঘাট পর্যন্ত সব ধরনের নৌযান চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে অস্থায়ী ক্যাম্পও স্থাপন করা হয়েছে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশঙ্কায় উখিয়ার মনখালীতে অস্থায়ী যৌথ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। মনখালী থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত নৌযান চলাচল সীমিত করা হয়েছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড ওই এলাকায় টহল দিচ্ছে।

বর্তমান সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় এনে এ কথা অনেকেই বলেছেন যে, রোহিঙ্গা সমস্যা দিন দিন আরও জটিল হচ্ছে। এ অবস্থায় সকল মহলের এখন প্রশ্ন বাংলাদেশে বিরাজিত রোহিঙ্গা সমস্যার আদৌ কি কোন সমাধান হবে কি? বাংলাদেশের ভূখন্ডে রোহিঙ্গা সমস্যার রয়েছে এক সুদীর্ঘ ইতিহাস।

বর্তমানে মিয়ানমারের অন্তর্গত আরাকান প্রদেশ ছিল একটি সুপ্রাচীন আলাদা দেশ। মোঘল, তিববত, ভ্রহ্ম ও বহু উপজাতি নিয়ে প্রাচীন আরাকানের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী নিয়ে গঠিত। ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে ব্রহ্মরাজ বোধপায়া স্বাধীন আরাকান রাজ্যে দখল করে ব্রহ্মদেশের অন্তর্ভুক্ত করে। সে থেকে মূলত এ ভূখন্ডে রোহিঙ্গা সমস্যা বর্মী সৈন্যরা আরাকানের গ্রাম গ্রামান্তরে মুসলমানদের একত্রিত করে যত সম্ভব হত্যা করে। বর্মী সেনাদের অত্যাচার নির্যাতন সম্পর্কে তৎকালীন আরাকানী সর্দার অ্যাপোল-এর জবানীতে জানা যায়, বর্মী সেনারা নির্বিচারে ২ লাখ আরাকানীকে হত্যা করে এবং সমসংখ্যক দাস হিসেবে বার্মায় প্রেরণ করে। বর্মী রাজ্যের এ ধরনের নির্যাতন, খুন, হত্যা-নিপীড়নের ফলে আরাকান রাজ্যের সন্নিকটস্থ কক্সবাজারে আশ্রয় গ্রহণ করে।
এ বিষয়ে হেয়াল্টার হেমিল্টন লিখেছে যে, সে ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে রামুর শরণার্থী শিবিরে লক্ষাধিক আরাকানী শরণার্থীর অবস্থান দেখেছে।

সংশ্লিষ্ট মহল উল্লেখিত ঘটনা প্রবাহ বিশ্লেষণ করে জানায় এ ঘটনার মধ্যে দিয়ে মূলত আরাকান অঞ্চলে বসবাসরত মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সাথে বর্মীদের দূরত্ব সৃষ্টি হয়। একই রাষ্ট্রের নাগরিক হলেও রোহিঙ্গা মুসলিম ও বৌদ্ধ বর্মীদের মাঝে ২শ' বছরেরও বেশি সময় আগে থেকে শুরু হওয়া দ্বন্দ্ব সংঘাতের ধারাবাহিকতা আজকে পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় তাদের মধ্যে টানাপোড়েন অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছলে বা সীমা ছাড়িয়ে গেলে আরাকানে বসবাসরত রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠী নিরাপদ আশ্রয় অর্থাৎ কক্সবাজারের টেকনাফ চলে আসে। এভাবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা একদিনের জন্যও সম্ভবত থেমে নেই।
গত সোয়া ২শ’ বছরের ইতিহাসে ব্যাপকহারে অর্থাৎ এক সাথে ৩ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশে চলে আসে।

পরবর্তী ১৯৭৯ সালে মিয়ানমারের ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি মোতাবেক ওই সময় ৩ লাখ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত নিয়ে যায়, ১৯৭৮ সালে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের পর এক যুগের ব্যবধানে আবারো ১৯৯১ সালের নভেম্বর মাসে পুনরায় বাংলাদেশে ২ লাখ ৬৫ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এ শরণার্থীদের নিয়ে শুরুতেই ঘটে শুভংকরের ফাঁকির একটি ঘটনা। এ সময় টেকনাফের অভ্যর্থনা পয়েন্টে বাংলাদেশ ২ লাখ ৬৫ হাজার শরণার্থীকে গ্রহণ করলেও তাদের ২০টি শরণার্থী শিবিরে রেখে সেখানে গণনার সময় মোট শরণার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ২ লাখ ৫০ হাজার ৮৭৭ জন। এ হিসাবের শুরুতেই প্রায় ১৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পালিয়ে যায় কৌশলে। বর্তমানে ২ লাখ ৫০ হাজার ৮৭৭ জন শরণার্থীর মধ্যে ২০ হাজার ৩৬৭ জন শরণার্থী প্রত্যাবাসনের অপেক্ষায় কুতুপালং এবং নয়াপাড়া শিবিরে অবস্থান করছে।

রোহিঙ্গা শরণার্থীরা চাচ্ছে তাদের সমস্যাটি দ্রুত সমাধান হোক। টেকনাফ নয়াপাড়ার শরণার্থী ক্যাম্পের রোহিঙ্গা যুবক আনছারুল্লাহ (২৫) জানান, তারা এখনো উদ্বাস্তু, বর্তমানে তারা রাষ্ট্রহীন নাগরিক। তাদের নাগরিকত্ব নেই মিয়ানমারে, নেই বাংলাদেশেও। তারা দাবি তুলছে তাদের স্বদেশে (মিয়ানমারে) ফিরিয়ে নেয়া হোক। অন্যথায় শিবির থেকে মুক্তি দিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করা হোক। এটিও সম্ভব না হলে তাদেরকে তৃতীয় কোন রাষ্ট্র পুনর্বাসিত করা হোক। আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে তারা লিখিতভাবে এ দাবি জানিয়েছেন। তবে তাদের দাবি সম্পর্কে বাংলাদেশের অবস্থান সুস্পষ্ট।

বাংলাদেশ সাফ জানিয়ে দিয়েছে রোহিঙ্গাদেরকে কোন মুহূর্তে নাগরিকত্ব প্রদান করবে না। তবে তাদেরকে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ অদ্ভুত সার্বিক পরিস্থিতিতে সত্যি রোহিঙ্গা সমাধানটি দিন দিন প্রকট হচ্ছে। সমস্যার জট অতি সহজে খুলবে এমনটি আশা করার কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না এ মুহূর্তে। গত ১ সপ্তাহ ধরে মিয়ানমারে আরাকান রাজ্যের মুসলিম রোহিঙ্গারা দেশটির নাসাকা, রাখাইন যুবক, লুণ্ঠন বাহিনীর ত্রি-মুখী বর্বরোচিত হামলার শিকার হয়ে প্রায় ১০ হাজার মুসলিম রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানা গেছে।
গত ১ সপ্তাহ ধরে মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ কালে প্রায় ১৫শ’ নারী-পুরুষ শিশুকে বিজিবি ও কোস্টগার্ড মিলে পুশব্যাক করা হয়।

এ দিকে আরাকানে সৃষ্ট দাঙ্গার প্রেক্ষিতে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতে জাতিসংঘ বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করলেও মিয়ানমারকে গণহত্যা বন্ধ করতে বলছে না। অপরদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছে কোন রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আর ঢুকতে দেয়া হবে না। তাই জাতিসংঘসহ ওআইসি’র উচিত মিয়ানমারের নাগরিক নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলমানদের গণহত্যা বন্ধ করা এবং যাতে তাদের বসতভিটে ফিরে পায় এবং নিরাপদে তাদের দেশে বসবাস করতে পারে সে ক্ষেত্রে মিয়ানমারের সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করা।
(ইনশাআল্লাহ চলবে)

১ম পর্ব এখান থেকে পরতে পারেন
২য় পর্ব এখান থেকে পরতে পারেন
৩য় পর্ব এখান থেকে পরতে পারেন
৪র্থ পর্ব এখান থেকে পরতে পারেন
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×