পৃথিবী জুড়ে লক্ষ লক্ষ লেখকের নাম পাওয়া যায়। তাদের অনেকের লেখা আমরা পড়েছি। অনেকের লেখা গ্রন্থবলী এখনও দৃষ্টি গোর হয়নি। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের লেখক করিম ভাই। মানুষের মুখে শুনি তার লেখার কথা। দেখা করতে গেলাম একদিন।
আষাঢ় মাস। বৃষ্টি ঝরছে। কখনও মুষল ধারে,কখনও টিপ টাপ করে। বাড়ির কাছে গিয়ে থমকে দাড়ালাম, কারন অন্য কিছুই নয়; তাঁর স্ত্রী বকছেন, বলছেন, কোন সকাল থেকে বসে বসে লেখছে আর লেখছে। বাইরে যতটুক ভিতরে ততটুক পানি। সকাল থেকে পেটে কোন দানা নাই। লেখছে কি করে সেটাই ভাবি। মাজা পিটও লেগে যায়না!
গলা খেঁকর দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলেন মহিউদ্দীন মিঞা। বকুনি থেমে গেল। বারান্দায় দাঁড়িয়ে রইল বাদেনুর। সালাম শ্রবন করা মাত্রই লেখা ছেড়ে সালামের জবাব দিয়ে বল্লেন; আলহামদুলিল্লাহ্; কি করে এত পা লম্বা হল মিঞাজী, বসুন।
আপনি কোন দিন আমার বাড়ি এসেছেন মনে পড়েনা মিঞাজি। কোথায় বসতে দিব আপনাকে? দয়া করে এই বিছানার উপরে উঠে বসুন। পায়ে কাদা লেগে আছে ভাই। তাহলে মোড়াতেই বসুন দয়া করে। আচ্ছা বলুন কি উপকার করতে পারি আপনার? কিছু না দাদু; শুধু দেখতে এলাম এক নজরে।
আমাকে দেখতে এলেন? বড় সৌভাগ্য আমার। বৃষ্টির জন্য বাইরে যেতে পারিনি। দুঃখ সিগারেট দিতে পারলাম না আপনাকে। বিষয়টি মিঞাজী বুঝতে পারলেন। সিগারেট বের করে বললেন, খান।
আপনার সিগারেট খাব? কিন্তু; উচিত তো ছিল আমারই খাওয়ানো। নেন টানেন। কখনো গাড়ির উপর নৌকা,নৌকার উপর গাড়ি।
জ্বী তা বটে।
চুপি চুপ বেশ কয়েকবার শুকরিয়া আদায় করলেন করিম ভাই। এটা কি
বই লিখছেন দাদু? জিজ্ঞেস করলেন মিঞাজি।
এটা একটা দর্শন গ্রন্থ ভাই; নাম হচ্ছে বির্তকের শেষ।
এজাবত কটি পান্ডুলিপি লিখ্লেন?
দুঃখিত, সঠিক জবাব দিতে পারলাম না আপনার প্রশ্নের।
একটা নোট রাখেন নি?
জ্বী না, মিঞাজী।
রাখাটা মনে হয় ভালো ছিল।
হয়তো ছিল কিন্তু; পারিনি।
পান্ডুলিপিটা হাতে নিয়ে এক পৃষ্ঠা পড়লেন মিঞাজী।
তার পর ভ্রুকুঞ্চি করে বল্লেন,- এগুলো ছাপানোর উদ্দ্যোগ নিচ্ছেন না কেন?
কোন উত্তর দিলেন না করিম ভাই। দেখা গেল, জানালার ফাঁক দিয়ে দূর মাঠের প্রানে কিছুক্ষন নির্নিমেষ চেয়ে থেকে নিরবে কাঁদছেন।
(চলবে......)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:১৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




