যতটুকু মনে পড়ে তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি।সারাদিন হৈ চৈ করতে করতে দিন পার করি। বন্ধু বান্ধবের সাথে এত আড্ডা মারতাম যে আম্মু পর্যন্ত আমার ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত হয়ে গেল।আশে পাশের পাড়া প্রতিবেশি সবাই মোটামুটি আমার অত্যাচারে অতিষ্ঠ থাকত।কোন দিন ক্রিকেট খেলে কারও বাসার জানালার গ্লাস ভেঙ্গে ফেলা,কিংবা ক্রিকেট মাঠে কারও সাথে মারা মারি করা এগুলো ছিল আমার জন্যে নিয়মিত ঘটনা।এক কথায় প্রতি দিন আমার নামে অসংখ্য বিচার আসত।আম্মুর প্রশ্রয় কিনা জানি না,তাদের বিচারে আমার উৎসাহ আরও কয়েক গুণ বেড়ে গেল।গ্লাসই যদি না ভাঙ্গি তাহলে আমি কিসের ক্রিকেটার?
সারা দিন বাঁদরামি করেও আমার শখ মিটে না।তাই ভাবতে বসে গেলাম।ভেবে ভেবে মাথায় নতুন বুদ্ধি খেলল।রাত তো পরে আছে।রাতে কিছু তো করা যায়।পরদিন মহল্লার সব ছেলেদের নিয়ে একটা বৈঠক ডাকলাম।বৈঠকে সিদ্ধান্ত হল এখন থেকে যখন রাতে লোডশেডিং হবে তখন আমরা সবাই বাসা থেকে বাইরে হব।আর লুকোচুরি খেলা খেলব।আমি ৩ বার হুক্কা হুয়া বুলে ডাকলে সবাই বাসা থেকে বের হবে।যেই ভাবা সেই কাজ।আগে দোয়া করতাম যেন কারেন্ট না যায় আর এখন দোয়া করি কখন কারেন্ট যাবে? যথারীতি উপরওয়ালা আমার দোয়া শুনতে লাগলেন আর আমিও মহা উৎসাহ নিয়ে খেলতে লাগলাম।আশে পাশের ফ্রেন্ডদের বাবারা প্রতি দিন আমার বাবাকে বলতে লাগল ভাইসাহেব আপনের ছেলেটাকে একটু আটকান।সন্ধ্যাবেলায় আমাদের ছেলেদেরকে আমরা ঘরে রাখতে পারিনা।সবাই বাইর হয়ে যায়।বাবা কিছুই বলে না।শুধু মাথা নাড়ে।
যাই হোক একদিন কারেন্ট চলে গেছে।আর আমিও বের হলাম।তারপর হুক্কা হুয়া বলে তিনবার ডাকলাম।সবাই বের হল।আমি সেদিন হলাম চোর।নিয়ম অনুসারে চোরের কাজ হল সবাইকে নাম ধরে ডাকা।অনেক কে নাম ধরে ডাকলে তারপরেও তারা পালায়।তো সেদিন আমি সবাইকে খুজতে লাগলাম।হটাৎ দেখলাম বন্ধু মামুনকে।মামুন কে আমি ডাকলাম।মামুন এক্সপ্রেস।দেখি মামুন আমার কথা না শুনার ভান করে অপরিচিত মানুষের মত হাঁটতে লাগল। আমি আবার ডাকলাম।কিন্তু শালা এইবারও আমার ডাক অগ্রাহ্য করল।আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।আমি কাছে গেলাম।ও কে জড়িয়ে ধরে বললাম,"এইবার চান্দু তোমারে পাইছি।কই যাইবা এখন?" দেখি মামুনের শরীরটা কেমন যেন নরম নরম লাগছে।আর ওর চুলগুলোও বেশ বড় ।গা থেকে মিষ্টি পারফিউমের কড়া গন্ধ আসছে।কিছু চিন্তা ভাবনা করে বুজে উঠার আগেই আমি নারী কন্ঠ শুনতে পেলাম।"ভীত নারী কন্ঠ চিৎকার করে বলছে,"কে কে?"আমার আর তখন কিছু বুঝার বাকি রইল না।আমি তাকে একেবারে ছেড়ে দিলাম এক দৌড়।দৌড় বললে ভুল হবে মহা দৌড়।এক নিঃশ্বাসে বাসায় চলে আসলাম।
এদিকে আমার বন্ধুরা আমার অপেক্ষায় যে লুকিয়ে আছে আর তারা বের হচ্ছে না।এভাবে ঘন্টা খানেক তারা ছিল।অগ্যতা বিরক্তির চরম পর্যায়ে তারা আমার বাসায় এল।আমি তাদের সব খুলে বললাম।তারা তখন আমার অবস্থা দেখে মজা পেতে লাগল।
উল্লেখ্য সেদিনের পর আর লুকোচুরি খেলা হয় নি।